Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কাওয়াই দ্বীপের রহস্য : ঝিঁঝিদের নিঃশব্দ বিপ্লব

সোমদেব ঘোষ

 

ঝিঁ-ঝিঁ-ঝিঁ…

উফফ, কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। কী করব বলুন, গ্রামেগঞ্জে সন্ধেবেলা, তায় বাড়ির চারপাশে ঝোপঝাড়, তার পাশে কাঁটাবন, আর সেই কাঁটাবনে ঢুকে শিবনেত্র হয়ে বসে আছি। ঢুকেছি এক বিশেষ কারণে, তবে এখন মশার কামড় খেয়ে আর ঝিঁঝির ঝিঁঝি ডাক শুনে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাও ভালো, বুদ্ধি করে তিন শিশি ওডোমস [নোট ১] আর পাঁচ টিন হিটস্প্রে মেখে [নোট ২] এসেছি, মশাটা নিউট্রালাইজ হয়ে গেছে। দুঃখের বিষয়, কানের ঠুলিস্কোপটা বাক্সঘরের দেরাজেই ফেলে এসেছি। অতএব আমি কালা হয়ে যাচ্ছি। বদ্ধ কালা। আহা, এ যদি হাওয়াই দ্বীপের কাওয়াই দ্বীপ হত।

যাঁরা জানেন না, তাঁদের বলি, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ তিনটে জিনিসের জন্য বিখ্যাত : ওবামা, পার্ল হারবার, ও রবারের চটি। এটি মার্কিন মুলুকের আন্ডারে, যদিও ভৌগোলিকভাবে অনেকটা বাঁদিক, থুড়ি, পশ্চিমে। এতে ছোটবড় প্রচুর দ্বীপ রয়েছে (আন্দামান হল এর ছোটভাই [নোট ক]), তার মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ব্রোঞ্জ মেডেল পেতে পেতে পায়নি এই কাওয়াই দ্বীপ। ব্যাস মোটামুটি কিলোমিটার চল্লিশেক, আর চারপাশটা একবার ঘুরে আসতে ওডোমিটার দেখাবে একশো তিরিশ [নোট ৩]।

এদিকে মার্লিন জুক (মার্কিন জুকার্বার্গের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলেই খবরে প্রকাশ) তো গেছেন এই কাওয়াই দ্বীপে ঝিঁঝিপোকা স্টাডি করতে। সে আজকের কথা নয়, সেই নব্বুইয়ের দশক থেকেই ঝিঁঝিপোকাদের সঙ্গে তাঁর চাবিস্কুট খাওয়া। কোত্থেকে এত কানের রেস্ত পান কে জানে। নব্বুইতে তো আবার ঠুলিস্কোপও বেরোয়নি। আশ্চরিয়া কি বাত, কোয়ার্টার সেঞ্চুরিতেও তাঁর শ্রবণক্ষমতা হ্রাস তো পায়নি, বরং বৈজ্ঞানিক জগতে তাঁর নাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। কেন সেটাই বলি।

ঝিঁঝি স্পেশালিস্ট প্রফেসর মার্লিন জুক

ওর্মিয়া ওক্রাচিয়া (উচ্চারণটা আবার ছড়ালাম কিনা কে জানে) বলে এক প্রজাতির মাছি আছে। তার বাস মার্কিন মুলুকে। মেক্সিকোতেও এর দেখা মেলে। এরা প্যারাসাইট, পরজীবী। এদের শ্রবণশক্তিও অসাধারণ। ঝিঁঝির ডাক শুনতে পেলেই দশরথের শব্দভেদী বাণের মতো সোজা ঝিঁঝিমশাইয়ের পিঠে চড়ে বসে ডিম পেড়ে আসে। অবিশ্যি ততক্ষণে ডিম ফুটে শূককীট বা লার্ভা বেরিয়ে পড়েছে। সেই লার্ভাব্যাটা তারপর ঝিঁঝিটার পিঠ ছ্যাঁদা করে ভেতরে ঢুকে যায়। হপ্তাখানেক বাদে পুরুষ্টু হয়ে আঙুল চাটতে চাটতে যখন বেরিয়ে আসে, তদ্দিনে অনেক লেট, মানে দেরি হয়ে গেছে, কারণ ঝিঁঝিবাবাজী তদ্দিনে লেট, মানে গত হয়েছেন।

তো এই ওর্মিয়া বা দশরথমাছি নর্থ আমেরিকায় বেশ ছিল। খাচ্ছিল-দাচ্ছিল অ্যায়েশ করছিল — সেখানে প্রচুর ঝিঁঝি, খাবারের স্টক প্রচুর। হঠাৎ কী খেয়াল জাগল, এদের কেউ কেউ পাড়ি দিল হাওয়াইয়ের দিকে। উড়ে তো আর যেতে পারে না, কাওয়াই থেকে মার্কিনমুলুকের পশ্চিমতট চার হাজার কিলোমিটার। আর এরা মাছি, আর্কটিক টার্ন নয় [নোট খ]। গেছে জাহাজে চেপে, ডব্লুটি। এটা নব্বুইয়ের দশকের ঘটনা। কাওয়াইতে এই দশরথমাছি আসার কয়েক বছরের মধ্যেই সর্বনাশ। ঝিঁঝিপোকা উধাও! ২০০১ সাল নাগাদ গুটিকয়েক ঝিঁঝির ডাক তাও রেকর্ড করা গিয়েছিল। ২০০৩ নাগাদ সব চুপ। চারিদিক নিস্তব্ধ। মার্লিন জুক ভাবলেন, যাঃ, সব খেয়েটেয়ে শেষ করে ফেলেছে। “ওরে পাজি ওর্মিয়া, তুই দৌড়ে পালা” এই গোছের কথা জুকের মুখে শোনা গিছল কিনা তার কোনও প্রমাণ নেই। হাপুস-হুপুস শব্দে তিনি কাঁদিয়াছিলেন কিনা সে গুরুচণ্ডালি খবর উইকিতেও নেই।

দশরথমাছি ওর্মিয়া ওক্রাচিয়া (Ormia ochracea)। অবিশ্যি এটি মহিলা মাছি, আর যেহেতু মহিলারাই ডিম-লার্ভা-শূককীট হ্যানত্যান করে, একে কৈকেয়ীমাছি বললে কেমন হয়?

যাই হোক, গবেষক তো, পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে, কাজ সম্পূর্ণ শেষ না করে, ফাইল বন্ধ করতে নেই। বা ফোল্ডার। ২০০৩ সালের সন্ধেবেলা হেলমেটে আলো লাগিয়ে জুক একবার শেষবারের মতো বেরোলেন। যদি একটা-দু’টো ডাক এখনও শোনা যায়। শুনতে কিছুই পেলেন না বটে, কিন্তু হেলমেটের আলোয় সামনের দৃশ্য দেখে স্রেফ থ মেরে দাঁড়িয়ে গেলেন।

একটা নয়, দু’টো নয়, চারটে নয়, হেলমেটের আলোয় দেখলেন শ’য়ে শ’য়ে ঝিঁঝিপোকা এদিকওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে সব যে মহিলা ঝিঁঝি তাও নয়। কিন্তু কেউ মুখ দিয়ে টুঁ শব্দটি অবধি করছে না। যেন সাইলেন্ট ফিল্ম চলছে। ঝিঁঝি, কিন্তু ঝিঁঝি নয়।

খুবই পুঁদিচ্চেরী ব্যাপার।

ঝিঁঝিপোকারা সবাই যে ওরকম হাঁড়িচাচার মতো আওয়াজ করে তা কিন্তু না। মশারা কি সবাই কামড়ায়? পুরুষ মশা অত্যন্ত হার্মলেস ভেজিটেরিয়ান স্পীশিস, মানুষ দেখলেই পাঁইপাঁই করে পালায় [নোট ৪]। কামড়ায় ওই ডেঞ্জারাস মহিলা মশাগুলো। অবশ্য তাও ডিম পাড়ার জন্য। কী সব প্রোটিন-ফোটিন লাগে, নয়তো ডিমই তৈরি হবে না। কিন্তু তার জন্য আমাদের রক্ত কেন বাপু? আহা, যদি ভেজিটেরিয়ান (বা ভেগান) মহিলা মশা হত, এই পৃথিবীটা আরও সুন্দর হত।

ঝিঁঝিপোকাদের মধ্যেও শুধু পুরুষগুলোই ডাকে। মহিলারা স্পিকটি-নট হয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে লাভ নেই। ঝিঁঝি মুখ দিয়ে আওয়াজ করে না। পুরুষ ঝিঁঝিদের ডানাগুলো মহিলাদের চেয়ে আলাদা। একটা ডানার পেছনে লাইন দিয়ে করাতের মত দাঁত থাকে। সেই দাঁত দিয়ে অন্য ডানার পেছনের চাঁছনির মতো জিনিসটার ওপর বেহালা বাজালেই কানের অবস্থা বেহাল। এর নাম স্ট্রিডুলেশান।

ঝিঁঝির ডানা। ফাইল হল করাত, স্ক্রেপার হল চাঁছনি

পুরুষ ঝিঁঝিরা সবসময় যে ডাকে তা নয়। সুদূর ভেরোনা শহরের রোমিওভায়াও কি সারাক্ষণ ম্যান্ডো হাতে জুলিয়েটদিদিমণির বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে “দেখোরে নয়ন মেলে” গায়? গায়, কিন্তু সময় বুঝে, সুযোগ বুঝে। পোকামাকড়দের দুনিয়ায় জুলিয়েটঝিঁঝিদিদিমণির কোনও গুঁফো বাবা বা দেড়েল দাদা নেই, যে রোমিওঝিঁঝিভায়াকে পিটিয়ে পোস্তচচ্চড়ি করবে। গানের মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করাটা তাই ঝিঁঝিসমাজে অনেকটা নিরাপদ।

পুরোটা নয়, অনেকটা। কারণ দশরথমাছি।

দশরথমাছির কান ভাল আগেই বলেছি। রোমিওঝিঁঝি ম্যান্ডোর তারে টাং দিয়ে ডানা ছেড়ে গান ধরেছে কি ধরেনি, প্লপ। পিঠে রামলার্ভা। তারপর তো স্রেফ আরসালান ব্যাপার।

তাহলে উপায়? হে চিত্রগুপ্ত, আপনার কাওয়াই/ঝিঁঝিপোকা ফাইল তো একেবারে ভর্তি। কী হবে?

সুনৎজু বলে গেছেন, সরাসরি যুদ্ধে যদি শত্রুর মোকাবিলা করতে না পারো, তাহলে স্রেফ লুকিয়ে পড়ো [নোট ৫]। ওসব যুদ্ধুফুদ্ধু বীরবিক্রমরাজপুত ব্যাপারস্যাপার ব্রুসলির নেফিউ ভনসালির… থুড়ি, সিনেমাতেই মানায়। চিশিনলুমশাইও একই কথা বলে গেছেন। বিশ্বাস না হয় ওনার “থ্রি বডি প্রবলেম” নামক ট্রিলজি বই পড়ে দেখো (https://www.goodreads.com/series/189931-remembrance-of-earth-s-past), “ডার্ক ফরেস্ট”-এ যে চুপচাপ গা-ঢাকা দিয়ে থাকাটাই শ্রেয়, সেটা হাড়েহাড়ে টের পাবে।

অবাক কাণ্ড, কাওয়াই দ্বীপের রোমিওঝিঁঝিরা নাকি সুনৎজু পড়েছে, পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। অর্থাৎ স্রেফ চুপ মেরে গেছে। যাতে দশরথমাছি তাদেরকে সাবমেরিনের সোনারের মতো লোকেশন পিনপয়েন্ট না করতে পারে। এ এক উব্যর ব্যাপার।

ওলা! কী মজা! ঝিঁঝিদের আনন্দ আর ধরে না।

এইখানে আপনি হাঁহাঁ করে বাধা দিতেই পারেন। ঝিঁঝিখেলা যতই জাতীয় খেলা হোক না কেন [নোট ৬], তাদের কাকসুলভ ক্যাপ্টেন্সি বুদ্ধি থাকবে [নোট ৭], এটা ভাবা অন্যায়। ঝিঁঝিরা চুপ মেরে গিয়ে বেঁচে যাচ্ছে বটে, কিন্তু চুপ করলেই যে তারা বেঁচে যাবে, আগেভাগে তা তো তাদের জানার কথা নয়। বাই ইনস্টিঙ্কট তারা ডানায় ডানা ঘষে ম্যান্ডো বাজানোর চেষ্টা করবেই করবে। তাহলে?

আচ্ছা, ম্যান্ডোটাই যদি কেড়ে নিই?

আঃ, ধীরে বৎস। ধৈর্যং ধরয়তি। স্পয়লার দিতে নেই।

ঝিঁঝির করাতকে মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেললে যা হয়

ব্যাক্টেরিয়া যে অতি গ্যালিগ্যার্নিস ব্যাপার সেটা সবাই জানেন। পেটে থাকে, খাবার হজমটজম করায়, আমরাও হ্যাপি ওরাও খুশ। মাঝেসাঝে কয়েকটা চ্যাংড়া ব্যাক্টো এসে ক্যাঁচম্যাঁচ করে বটে, কিন্তু ফ্লেমিঙের দয়ায় তারাও মোটামুটি ঠান্ডা। বিংশ শতাব্দীতে বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়েছে বটে, কিন্তু তার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের নাম যে একেবারে ওপরের দিকে থাকবে, সে নিয়ে বোধ করি ত্রিলোকেশ্বরবাবুরও সন্দেহ নেই। গত আশি বছরে এই ব্রহ্মাস্ত্রটি যে কত লক্ষ কত কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ব্যাক্টেরিয়া, মানে যারা দুষ্টু ব্যাক্টেরিয়া, তাদের একেবারে নাহারগড় অবস্থা। ভ্যানিশ হতে আর বেশিদিন বাকি নেই।

তাই কী? খবর তো অন্য কথা বলছে। সুপারম্যানের পর এখন বাজারে সুপারবাগ এসেছে। লাল চাড্ডি নীল টাইট ডিডি গেঞ্জি ঘাড়ে লাল গোবিন্দামার্কা গামছা নেই বটে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিককে সে অতি সহজেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লা-কেলাস মানুষ মারছে। অবিশ্যি ব্যাক্টোদের যেহেতু আঙুল নেই, তাই যে আঙুলটা দেখাচ্ছে সেটা বুড়ো আঙুল নাকি অন্য কোনও আঙুল সে নিয়ে এক্সপার্টরা দ্বিধায় আছেন।

বাট… বাট… ব্যাপারটা কী হল? অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিপ্টোনাইটের এ অবস্থা কেন?

সোজা উত্তর, ক্যামুফ্লেজ।

প্রাণীদের কোষের মধ্যে থাকে ডিএনএ। নামটা খটমট, কাজটা সহজ [নোট ৮]। ডিএনএ আসলে একটা রান্নার রেসিপি বই। সেই রেসিপি পড়ে পড়ে কোষের মধ্যে প্রোটিন তৈরি হয়। এই প্রোটিন দিয়েই প্রাণ চলে। তবে, এই রেসিপি বই ঠিকঠাক পড়াটা তেমন সহজ কাজ নয় (ঠিক কতটা সহজ সেটা নিচের নোট নং ৮ পড়লেই বুঝবেন)। ভুলচুক হয়েই থাকে। বুড়োক্রেসি তো [নোট গ]। কিন্তু এই ভুলই হল ক্রিপ্টোনাইটকে লেক্সলুথার করার উপায়।

অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং, পেনিসিলিনের আবিষ্কারক

অ্যান্টিবায়োটিক হল একধরনের ভাড়াটে সৈন্য গোছের। তাদের সাফ সাফ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, রাক্ষসদের মারতে হবে। রাক্ষস কীভাবে চিনব স্যার? জনৈক অ্যাবা’র এই প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ফিজিশিয়ান একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, আট ফুট লম্বা তিনফুট শিং একফুট দাঁত লাল চোখ হাতে মুগুর। আহা, যেন কানপুর স্টেশনে প্রখর রুদ্রের ডেস্ক্রিপশন দিচ্ছেন স্বয়ং বার-অ্যাট-ল দত্ত। জনৈক অ্যাবা খুশি হয়ে মেশিনগানে গুলিটুলি ভরে রাক্ষসবংশ নির্মূল করেটরে আমসত্ত্ব খেতেখেতে ফিরে এল। জেনারেল ফিজিশিয়ান বিড়ি ধরিয়ে বললেন, মিশন সাকসেস? অল রাক্ষস ফিনিশ? অ্যাবা স্যাল্যুট-ট্যাল্যুট করে বলল, হ্যাঁ স্যার। রাক্ষস যতগুলো ছিল, সবক’টাকে শেষ করেছি। জেনারেল ফিজিশিয়ানের মনে কীর’ম সন্দেহ জাগল। জিগাইলেন, হ্যাঁ হে অ্যাবা, রাক্ষস ছাড়াও আর কিছু ছিল নাকি ওখানে?

–হ্যাঁ স্যার, ছিল বৈকি।

–সেকি! কী ছিল? কেমন দেখতে?

–দেখতে? ওই যে, অনেকটা ওই রাক্ষসদেরই মতো। লাল চোখ হাতে মুগুর।

–যাব্বাবা, তাহলে ফিনিশ নয় কেন?

–না, মানে, ওরা তো খোক্কস, খামোখা ওদের মারতে যাব ক্যান?

–খোক্কস?! সে আবার কী জিনিস?

–কেন? আট ইঞ্চি লম্বা তিন ইঞ্চি শিং এক ইঞ্চি দাঁত? বাকিটা রাক্ষসের মতোই দেখতে বটে, হাইটে স্রেফ বাঘাবাইন।

বোঝো ঠ্যালা।

এই ক্যামুফ্লেজ অতি কান্ডারিকার ব্যাপার। এটা পসিবেল হয় ওনলি বিকজ, ওই যে বললুম, বুড়োক্রেসি। প্লাস প্রাণীদেহের কোষ তো, ঠিক যেন মাছের বাজার, গোলমাল লেগেই রয়েছে। কারখানার ফোরম্যান বলে তো কিছু নেই, বা নেই অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টর, যে যের’ম পারছে সেভাবে ডিএনএ পড়ছে, সেখান থেকে এম-আরএনএ ট্রানস্ক্রাইব করছে, তাকে ট্রানস্লেট করছে প্রোটিনে… সে এক এলাহি কাণ্ডকারখানা। তাও যে এত সুষ্ঠুভাবে কাজটা হচ্ছে, তা প্রাণবাবাজীর ফোরটিন ফোরফাদার্সের ফোরচুন। এদিকে অত চেঁচামেচির মধ্যে ভুলচুক হয়েই যায়। ফলে হয় ম্যুটেশন। ছিল রাক্ষস, হয়ে গেল খোক্কস। অ্যাবা-বাবুও বোকা বনে গেলেন [নোট ৯]।

একদম ওপরেরটা রোমিওঝিঁঝি, ডানায় ম্যান্ডো। তলায় জুলিয়েটঝিঁঝি, নো ম্যান্ডো। মাঝে ম্যুট্যান্ট ম্যুট মূক ফ্ল্যাটউইং কাওয়াই ঝিঁঝি, নো ম্যান্ডো।

জেনেটিক ম্যুটেশন সব প্রাণীদের মধ্যেই দেখা যায়। ম্যুটেশন হলেই যে ভালো হবে তার কোনও মানে নেই। বরং উল্টো ফল হবারই সম্ভাবনা। ওর্মিয়া মাছিদের উৎপাত শুরু হওয়ার আগেও কাওয়াই ঝিঁঝিদের মধ্যে এমন কিছু ম্যুট্যান্ট ঝিঁঝি পাওয়া যেত, যাদের ডানায় ওই করাত-ছাঁচনি ব্যাপারটাই নেই। সে বেচারারা যত জোরেই ডানা ঘষুক না কেন, আওয়াজ নো বেরতং। তাতে মুশকিল, কেননা আওয়াজ না দিলে… থুড়ি, গান না গাইলে জুলিয়েটঝিঁঝি তার সঙ্গে অ্যাপো করতে যাবে কোন দুঃখে? ফলে এই ম্যুট্যান্ট ম্যুট ঝিঁঝিগুলোর বংশবৃদ্ধি তেমন হতটত না। কিন্তু দশরথমাছি আসতেই ফুল পিকচারটাই পাল্টাফাই। নন-ম্যুটান্ট নন-ম্যুট পুরুষ ঝিঁঝিরা মাছিখাদ্য হতে শুরু করল। এদের সংখ্যা যত কমে আসতে লাগল, মহিলা ঝিঁঝিরা পড়ল ফাঁপরে। গান নাই তো প্রাণ নাই কথাটা চরণদাস বলতে পারেন হয়ত, কাওয়াই আনম্যারেড মহিলাঝিঁঝি সবুজসংঘ-র [নোট ১০] সদস্যদের মতো প্র্যাক্টিকাল লোকে বললে যে জাত যাবে। অতএব, ২০০৩ সালে মার্লিনদিদিমণি হাঁ হয়ে দেখলেন, রাক্ষস ঝিঁঝির জনসংখ্যা শূন্য, সব ভ্যানিশ। কাওয়াইতে এখন খোক্কস ম্যুট্যান্ট ম্যুট ঝিঁঝিদেরই রাজত্ব। জুক এই মূক মাছিদের নাম দিলেন ফ্ল্যাটউইং। আর তিনি বুঝলেন যে এই মিরাকেলের কারণ একটাই…

ইভোল্যুশন!

কথাটার মধ্যে না, একটা যাকে বলে, দম আছে। মানে ওই মাউন্টেন-ড্যু বা মাণিকলাল চন্দমল জর্দা টাইপের দম নয়, রোববার সকালে গরম গরম ফুলকো ঘিয়েভাজা লুচির সঙ্গে নতুন ফ্রেশ চন্দ্রমুখী আলুর শিবার মা’র হাতে তৈরি শিবার মাথায় বওয়া সুরুৎলেভেলের দম। আহা, ডারউইন সায়েব যদি একবারটি আলুরদম টেস্ট করে যেতে পারতেন…

পারেননি। কিন্তু অগ্নিপথ লেভেলের একটা ডায়লগ লিখে গেছেন বটে।

>> On the Origin Of Species by Means of Natural Selection, or the Preservation of Favoured Races in the Struggle for Life, পুরা নাম। বাপ কা নাম, চার্লস রবার্ট ডারউইন। মা কা নাম, প্রকৃতি। গাঁও বিজ্ঞান। উমর ১৫৮ সাল, ৩ মহিনা, ৩ দিন আউর ইয়ে পহলা ঘন্টা চালু হ্যায় হাঁয়।

অন দি অরিজিন অফ স্পিশিস বইয়ের মূল প্রচ্ছদ

বিবর্তন, ম্লেচ্ছ ভাষায় যাকে ইভোল্যুশন বলে, অতি অদ্ভুত একটা জিনিস। ট্রায়েড এন্ড টেস্টেড একটা থিওরি। আমরা ভারতীয়রা জন্মিয়েটন্মিয়ে বছর কয়েক তানাবানা করে তারপর জেলে… থুড়ি, ইস্কুলে ভর্তিটর্তি হয়ে বছর দশ-বারো ধরে ফি-বছর মিনিমাম দু’টো [নোট বেগুনি] করে পরীক্ষা দিয়ে থাকি। তারপর কালেজে ভর্তি হই। আগেকার দিনে কালেজ [নোট ইন্ডিগো] বলতে লোকে বুঝত হিরন্ময় নীরবতা, স্তুপাকৃত প্রেমকাটলেট, ছেঁড়াফতুয়া ঝোলাব্যাগ বেশিদুধচিনিদেওয়া কফির কাপ, আর জেনারেলে বি-এস-সি বা বি-এ। বি-এ পাশ ফতুয়াধুতি যে বিয়ে পাশ-ও করবে, সে নিয়ে গ্রামের বা পাড়ার কারুর মনেই বিশেষ সন্দেহ থাকত না। আর এখন? বিএসসি মানে হ্যাঃহ্যাঃ, বিএ মানে এবাবাছ্যাঃছ্যাঃ, আর বিয়ে পাশ? দেখি বাবা ম্যানেজমেন্ট কোত্তেকে পাশ করেচ সাঁটিপিকেট দেখিইইই।

দেশটা এখন সব ম্যানেজারে ভরে গেল।

সে যাই হোক, কালেজ। কালেজ-এ গিয়ে আরও তিন/চার বছর এগজ্যাম চলত। এত এগজ্যাম দিয়ে দিয়ে জনৈক দুগ্ধপোষ্য স্ট্যুয়ার্ট ডেন্ট নামক স্টুডেন্টের গলায় যে এগটোস্ট জ্যাম হয়ে গিয়ে বিষম খেয়েটেয়ে সে চন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়নি সেটা তার ফোর্টিন ফোর্ফাদার্সের ফরচুন।

এই ক’টা বছর এগজ্যাম দিয়ে দিয়েই আমাদের হালহকিকত হনোলুলু হয়ে যায়। তাইলে ভেবে দেখুন, বেচারা বিবুকে দেড়শো বছর ধরে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে। দেএএএ-ড় শো-ওওওও। শুনে যে আপনার চোখ উল্টে যায়নি সেটা আপনার ফোর্টি… ও, আচ্ছা, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে? যাক। অ্যাক্সিডেন্টাল ড্রনিং নয়তো আবার? চেক করে নিন মশাই। যা শ্রী হয়েছে সত্যদেবীর আজকাল।

চার্লস রবার্ট ডারউইন, বয়স ৪৬, সন ১৮৫৫, অরিজিন অফ স্পিশিস প্রকাশ পেতে তখনও চার বছর

১৫৮ সাল, ৩ মহিনা, ৩ দিন। ঠিক এতগুলো দিন ধরে বিবর্তনবাদবাবুভাই বা বিবুকে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে। আরও হবে। সে হোক গে। গত দু’শো বছরে বিজ্ঞানে যতগুলো ভাল ছাত্র এসেছে, তাদের মধ্যে আসল ফার্স্ট বয়ের তকমাটা বিবু পেতেই পারে। সে মুখার্জিমশাই যতই নালিশ করুন না কেন।

কিন্তু ঝিঁঝি? কাওয়াই? রহস্য??

উতলা হবেন না। আসছি। রোয়েট। পেশেন্স। ক্রিকেট ধৈর্য্যের খেলা, সে যতই আইপিএল-যাইপিএল-মাইপিএল হোক না কেন।

রহস্যটা একটু রিক্যাপ করে নিই। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাওয়াই দ্বীপে এককালে প্রচুর ঝিঁঝিপোকা ছিল। নব্বুই দশকের শেষে ও একুশ শতকের প্রথম দিকে হঠাৎ দেখা গেল, কাওয়াইতে ঝিঁঝিপোকার সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। তার কারণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে এক প্রজাতির মাছি এসে কাওয়াইতে ঘাঁটি গেড়েছিল। এই ওর্মিয়া অক্রাচিয়া মাছি ঝিঁঝিদের ডাক শুনে তাদের পিঠের ওপর শূককীট ছেড়ে আসে, সেই লার্ভা ঝিঁঝিদের শরীরের ভেতর ঢুকে হপ্তাখানেক ফিস্টি চালিয়ে তারপর যখন বেরিয়ে আসে, ক্রিকেটখেলা তখন শেষ। এই দশরথমাছি ও তার রামলার্ভার প্রকোপে কাওয়াইক্রিকেট লেট, অর্থাৎ গত হতে চলেছিল। বৈজ্ঞানিক ও ঝিঁঝিবিশেষজ্ঞ মার্লিন জুক ২০০৩ সালে একবার শেষ বারের মতো কাওয়াই দ্বীপে গিয়েছিলেন। আশা ছিল, (ঝিঁঝিদের প্রতি) ভালবাসা ছিল। স্যাড গলায় গানের পরের লাইনটা গাওয়ার আগেই টর্চের আলোয় দৈববা… থুড়ি, বিবুবাণী হয়…

“ও’র’ম মনে হয়।”

দেখা গেল, কাওয়াই ঝিঁঝিগণ ভ্যানিশ হননি। ক্যামুফ্লেজ নিয়েছেন। অর্থাৎ চুপ মেরে গেছেন। জেনেটিক ম্যুটেশন হয়ে তাদের ডানার স্ট্রাকচারই এমনভাবে পাল্টে গেছে যে শতচেষ্টা করেও তারা সেই মনমাতানো কানকাঁপানো ঝিঁ-ঝিঁ ডাক দিতে পারবে না। এই নতুন মৌন মূক ম্যুট ঝিঁঝিদের ডানায় নন-ফ্ল্যাটউইং ঝিঁঝিদের মতো করাত-ছাঁচনির কম্বো নেই, তাই জুক ভালবেসে এদের ফ্ল্যাটউইং বলে ডাকেন। ঝিঁঝিরা চুপ মেরে যেতেই ওর্মিয়া দশরথমাছিও কাত। শব্দই যদি না থাকে, শব্দভেদী বাণ আর ভারতবর্ষের এক্সট্রাডিশন এফর্টের মধ্যে ফারাক সামান্যই। কয়েক বছরের মধ্যেই পিলপিল করে কাওয়াই দ্বীপ ছেয়ে যায় এই ফ্ল্যাটউইং ঝিঁঝিতে। এবং এই মিরাকেলের জন্য দায়ী…

ইভোল্যুশন!

সে তো বুঝলাম। কিন্তু ইভোল্যুশন তো আর প্লাস্টিক সার্জেন নয়, বরাত দিলেই এসে নিপ/টাক করে টাকে নিপ মানে চুল গজিয়ে দেবে [নোট নীল]। বিবর্তন, বা বলা ভাল ম্যুটেশন অতি র‌্যান্ডম প্রসেস, ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের মতো যখন খুশি যা খুশি করে দিতে সিদ্ধহস্ত। তার বেশিরভাগই ড্রেনলিক্যুড, কখনও কখনও লেগে গেলেও যেতে পারে। অন ডিম্যান্ড তাকে দিয়ে কিছু করানো আম পচে বেল হওয়ার মতোই ভূগণ্ডগোল ব্যাপার।

তাহলে ব্যাপারটা কী হল? ওর্মিয়া মাছি ফুলটুস দশরথ মোড নিতেই শ্রবণকুমার ঝিঁঝি স্পিক্টি-নট? ই কিমোন বেপার হোলো মাইবাপ?

আহা, শান্ত শান্ত। দোন্ত তেক প্লেসার। তেক প্রেসার। মাচ বেতার। [নোট সবুজ]

ব্যাপারটা হল, কোনও স্পিশিসে ম্যুটেশন হতেই থাকে, কাওয়াই দ্বীপেও স্বাভাবিক গাইয়েঝিঁঝিদের সঙ্গে মৌনঝিঁঝিরাও ছিল। সংখ্যায় হয়ত প্রচুর কম ছিল, কেননা মৌনঝিঁঝি হলে ঝিঁঝিসমাজে বিয়ে হওয়া ঠিক ততটাই মুশকিল, যতটা মুশকিল ভারতসমাজে মেয়ের গায়ের রং ফেয়ার‌্যান্ডলাভ্লি অ্যাডের “বিফোর” হলে। তাই মৌনঝিঁঝিরা সংখ্যায় বাড়েনি। এদিকে দশরথমাছির দাপটে গাইয়েঝিঁঝিরা সাবাড় হতে শুরু হতেই মৌনঝিঁঝিরা ভাবল, এই তো সুযোগ। তারাও দুমদাম সংখ্যায় বাড়তে লাগল। ২০০৩ সালে জুক আবিষ্কার করলেন যে কাওয়াই দ্বীপের প্রায় সব ঝিঁঝিই ফ্ল্যাটউইং। এই ঘটনা ঘটতে সময় লেগেছে মাত্র বছর দু’য়েক বা ২০ ঝিঁঝি-প্রজন্ম [নোট হলুদ]। বিবর্তনের দিক থেকে একেবারে তুফান এক্সপ্রেস। তুলনায় মানুষের মানুষ হতে সময় লেগেছে প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর। কুড়ি বছরে এক মানুষ-প্রজন্ম ধরলে এক লক্ষ প্রজন্ম দাঁড়ায়। ইভোল্যুশন মোটামুটি এই স্কেলেই কাজ করে। সেখানে কুড়ি প্রজন্মে পুরো আট কোর্সের ডেগাস্টেশন মিল শেষ করে ফেলা একেবারে যোগসর্প ব্যাপার।

মানুষ কীভাবে বড় হল

ইভোল্যুশন হিপহিপহুর…

রুকুন। প্রব্লেম হ্যাজ। নয়তো এতক্ষণ হ্যাজ দিয়ে ন’শো শব্দ খরচ করে রিক্যাপ দিতাম না।

ঝিঁঝিদের মধ্যে ডাকে…শব্দ করে শুধুমাত্র পুরুষ ঝিঁঝি। ব্যাচেলর পুরুষ ঝিঁঝিদের মনে লাভ পেলে তারা ঝিঁঝিঁ করে, যাতে তাদের লাভ লাভ হয়। এই ঝিঁঝিঁ ডাক শুনে ব্যাচেলর মহিলা ঝিঁঝিরা ব্যাচেলর পুরুষ ঝিঁঝিদের লোকেট করে সস্তার হোটেল খোঁজে। কিন্তু ফ্ল্যাটউইং ব্যাচেলররা তো বোবা। দ্বীপশুদ্ধু সবাই বোবা হয়ে গেলে মহিলা ঝিঁঝিরা বর খুঁজবে ক্যামনে?

মুশকিলের ব্যাপার। বিবুদা এক হাতে দেন তো অন্য হাতে নেন। বোবা হয়ে গিয়ে ক্যামুফ্লেজ করে কাওয়াই ঝিঁঝিরা ওর্মিয়ামাছির হাত থেকে রক্ষা পেল বটে, কিন্তু বিয়েটিয়ে করা বহুত প্রবলেম হোয়ে গেলো। কনেই হল ঘটক, সেই যদি বর লোকেট না করতে পারে, তবে তো চিচিংফাঁক কেস। তাই ফ্ল্যাটউইংরা বেরোল বউ খুঁজতে। এতে রিস্ক প্রচুর, কারণ আশেপাশে আছে শ্রীশ্রীকেনটোডমশাই, সোজা বাংলায় যাকে বলে ব্যাঙ। অন্ধকারে অন্ধের মতো এদিকওদিক লাফাতে লাফাতে ফ্ল্যাটউইংভায়া যদি কেনটোডমশাইয়ের হাঁ-য়ের ধারেকাছে এসেছেন তো…

কপাৎ!

আনন্দ বাবুমোশাইকে বলে গিয়েছিল, জিন্দগী বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বী নেহি। রিস্ক তো থোড়া থোড়া বনতা হ্যায় বস্!

কিন্তু শুধু রিস্ক নিলেই কি লেক্কাফতে? কাওয়াইদ্বীপের মহিলাগণ (ঝিঁঝি উহ্য রাখছি) কি এত সহজেই নতুন টাইপের বর মেনে নেবেন? ছিল ইউএস ফেরত ম্যান্ডোবাজানেওয়ালা, হল মনমোহনসিং। মহিলাদের মনে অসন্তোষ জাগতেই পারে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে যে ট্র্যাডিশন মেনে আসছেন তাঁরা, সেটা মাত্র কুড়ি প্রজন্মের মধ্যে বর্জন দেন কী করে? লোকে কী বলবে, সমাজ কী বলবে, দেশ কী বলবে? লজ্জা বলে কি কোনও জিনিস নেই এই পোড়াদেশে? বোবাগুলোকে জোর করে বর সাজানো, অ্যাঁ? রামঃ রামঃ।

সুখের কথা, মানুষমহিলাদের চেয়ে (মানুষপুরুষ ও মানুষপ্যাট্রিয়ার্কদের চেয়ে) ঝিঁঝিমহিলারা অনেক বেশি প্র্যাক্টিকাল ও ফ্লেক্সিবেল। বা বলা উচিত ফ্লেক্সিবেল হতে বাধ্য। ধরুন অস্ট্রেলিয়া। সেখানে প্রচুর ঝিঁঝি আছে, হাওয়াইয়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাদের মধ্যে তাই জেনেটিক ভেরিয়েশন অনেক বেশি। কোনও ঝিঁঝি হয়ত মুগুর ভাঁজতে বেটার, কোন ঝিঁঝি হয়ত সুপার্ব ছবি আঁকে, আর কিছু ঝিঁঝি তো নির্ঘাত ঝিঁঝিখেলা খেলে। মানে হতেই হবে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপাব্লিক ক্রিকেট খেলে না আর নোটবন্দি সাকসেসফুল এ দুটো জিনিসই অবিশ্বাস্য। ঝিঁঝিমহিলাদের তাই প্রচুর অপশান, ঝিঁঝিম্যাট্রিমনি ডটকমে গেলেই লাখ লাখ চয়েস। তাই অস্ট্রেলিয়ার মহিলাঝিঁঝিরা এক পয়সাও ফ্লেক্সিবেল নন। ওদিকে হাওয়াইতে ঝিঁঝিম্যাট্রিমনি বলে কোনও জিনিসই নেই। জেনেটিক ভেরিয়েশন এতটাই কম যে প্রায় হোমোজিনিয়াস বলা চলে। তাহলে হাওয়াইয়ের গল্প আলাদা কেন?

ব্যাকগ্রাউেন্ড বেজে উঠল, হোয়াই-হাওয়াইইই…

(নোনতা ভিজে রুমালে নাক ঝাড়ার আওয়াজ)

প্রশান্ত মহাসাগরে মাইক্রোনেশিয়া, মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া

প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশটাকে ওশিয়ানিয়া বলা হয়, সেখানে তিনটে মুখ্য সংস্কৃতি পাশাপাশি পাওয়া যায়। ন্যুগিনি ফিজি সলোমন আইল্যান্ড নিয়ে পশ্চিমে মেলানেশিয়া, পালাউ মার্শাল আইল্যান্ড কিরিবাতি নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে মাইক্রোনেশিয়া, আর ন্যুজিল্যান্ড কুক আইল্যান্ড সোসাইটি আইল্যান্ড ইস্টার আইল্যান্ড ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে পলিনেশিয়া। এই পলিনেশিয়ার লোকজন (অনেকসময় ভেলায় চেপে) সমুদ্রযাত্রা করতে বিশেষ পারদর্শী ছিল। রাতের বেলাতেও এরা দিক হারাত না। ঝিঁঝির ডাক হল মৃত পূর্বপুরুষের আত্মার আর্তকান্না, এই বিশ্বাস তাদের ছিল। তাই তারা তাদের সমুদ্রযাত্রায় ঝিঁঝি নিয়ে যেত। এদ্বীপ-ওদ্বীপ করতে করতে শেষে আটশো বছর আগে এরা হাওয়াইতে এসে পৌঁছয়। হাওয়াইতে ঝিঁঝিদের আগমনও মোটামুটি এই সময়তেই। এই পলিনেশীয়দের যাত্রা কোনও এক সুদূর কালে শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানে তাদের সঙ্গে যে ঝিঁঝিরা ছিল, তাদের মধ্যে জেনেটিক ভেরিয়েশন বেশ ভালমতনই ছিল। এদ্বীপ-ওদ্বীপ করতে করতে যখন শেষে এরা হাওয়াই পৌঁছয়, বেশিরভাগ ঝিঁঝিই তখন বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে গেছে। তাই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে তো বটেই, কাওয়াই দ্বীপেও ঝিঁঝিরা জেনেটিকভাবে বড়ই দরিদ্র। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এই অবস্থায় কাওয়াইমহিলাদের পক্ষে টিন্ডার খুলে সোয়াইপ করার মতো অবস্থা নেই। অতএব বেগার্স ক্যানট বী চুজার্স এই মোটো ফলো করে বোবা বরেদের গলায় মালা দিতে বাধ্য হয় কাওয়াই আনম্যারেড মহিলাঝিঁঝি সবুজসংঘ। ভাঙলে চলে? কভি কভি মচকানা ভি পড়তা হ্যায়।

ওয়াহু দ্বীপের ওয়াইকিকি সমুদ্রসৈকতে পলিনেশীয় ক্যানু (বিংশ শতকের গোড়ার ছবি)

তবে যাই বলুন আর তাই বলুন, বিবর্তন চার্লসডারউইন চৌহান কিন্তু বেড়ে আদমি। মরতে বসেছিল বেচারা ইনোসেন্ট ঝিঁঝিগুলো, কেমন হ্যারিপটার করে ওয়ান্ড ঘুরিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিল, তাই না? উইঙ্গার্ডিয়াম ফ্ল্যাটিওসা!

এত অবধি পড়ে যদি আপনার মনে হয় শ্রীবিবু অতি গো-টু-ট্যাক্স পার্সেন, তাহলে বলব আরেকটু পড়ুন। হ্যারিপটারের ওয়ান্ড ঘোরানো দেখলেন, থোড়া সা হ্যারিহুডিনির অ্যাব্রাক্যাডাব্রা দেখুন।

আগেই বলেছি, মাছিরা তেমন উড়তে-টুড়তে পারে না। ঝিঁঝিরাও যে চ্যাম্পিয়ান ফ্লায়ার তা ভাবার কোনও কারণ নেই। তাও, মার্কিন মূলমুলুক থেকে হাওয়াই যেমন ৪০০০ কিমি, কাওয়াই থেকে ওয়াহু মাত্র ১০০ কিমি। সেখান থেকে হাওয়াই (দ্বীপ, পুঞ্জ নয়) আরও শ’দুয়েক কিলোমিটার। ওদিকে হাওয়াইতে হাওয়াটাও বেশ জোরেই বয়, নাহলে হাওয়া-হাওয়াই বলে কখনও (ফ্যাঁচ-ফোঁচ)। হাওয়ায় ভেসে হুটহাট কয়েকটা ফ্ল্যাটউইং ঝিঁঝি ওয়াহুতে টুক করে গিয়ে পড়তেই পারে। ওয়াহুতেও ওর্মিয়া মাছির উৎপাত, তাই ধরে নেওয়াই যেতে পারে সেখানেও মূকঝিঁঝিরাই রাজত্ব শুরু করবে।

অনুমান নির্ভুল। ২০০৫ সালে ওয়াহুতে যত ঝিঁঝি ছিল, তার ৪৫% দেখা গেল ফ্ল্যাটউইং। এমনকি তার পাঁচ বছর বাদে ফ্ল্যাটউইং পাওয়া গেল হাওয়াই দ্বীপে (২%)।

কাওয়াই, ওয়াহু ও হাওয়াই দ্বীপে কবে কত ফ্ল্যাটউইং বোবাঝিঁঝি

কাওয়াই তো তাহলে সাংঘাতিক দ্বীপ মশাই। কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চয় আছে, নয়তো শুধু ওখানেই এই ক্যামুফ্লেজ ঝিঁঝি জন্মায় ক্যান? নির্ঘাত ঝিঁঝি ঠাকুরের কাণ্ড। কাওয়াইঝিঁঝিদের প্রতি তিনি প্রীত হয়েছেন, পুরুষঝিঁঝিদের বর দিয়েছেন, মহিলাঝিঁঝিদের বর দিয়েছেন। কী ফ্যান্টামিরিন্ডা গণেশদুধ কাণ্ড মশাই। চলুন চলুন সেখানে গিয়ে গোটা পাঁচশো মন্দির খুলে ফেলি। রিলিজিয়ান বেস্ট বিজনেস। নো খর্চা। ওনলি মুনাফা।

থ্যাঙ্কফুলি, ভগ… আহেম, বিজ্ঞান আছেন।

কিন্তু তাও… বিবুদার ইঞ্জিন আদপে জেনেটিক ম্যুটেশন, র‌্যান্ডম ব্যাপারস্যাপার, তার পক্ষে একইভাবে দু’দু’বার একই ম্যাজিক করা বেশ চাপের ব্যাপার। তার চেয়ে ওই কাওয়াই অরিজিন স্টেশন ব্যাপারটাই বেশ কিমাকলিজা লাগছে, তাই না? ওটাই থাকুক বরং, কী বলেন?

কনভার্জেন্ট ইভল্যুশন বলে একটা ব্যাপার আছে। সেটা কী বোঝানোর আগে চট করে ডাইভার্জেন্ট ইভল্যুশনটা কী বলে নিই। গ্যালাপ্যাগস দ্বীপে বহুদিন আগে এক প্রজাতির ফিঞ্চপাখি [নোট কমলা] এসে বাসা বাঁধে। সেই একটা প্রজাতি এখন পনেরোটা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারুর ঠোঁট সরু তো কারুর মোটা, কারুর লম্বা তো কারুর ছোট, কেউ হিন্দুস্তানি গায়ে তো কেউ কর্ণাটকি। এদের সবাইকে একসঙ্গে ডারউইন’স ফিঞ্চেস বলা হয়। একই প্রজাতি এভাবে বিভিন্ন লাইনের বিবুট্রেনে চাপাকে বলে ডাইভার্জেন্ট ইভোল্যুশন। কনভার্জেন্ট ইভোল্যুশন এর উল্টো। আলাদা আলাদা স্টেশনে দাঁড়িয়েও বিবুট্রেন ধরে শেষে একই স্টেশনে এসে নামলে সে যাত্রাকে বলে কনভার্জেন্ট ইভোল্যুশন।

গ্যালাপ্যাগস দ্বীপের ফিঞ্চপাখি (“ডারউইনের ফিঞ্চ”)

যেমন ওয়াহু ও কাওয়াইদ্বীপের ফ্ল্যাটউইং ঝিঁঝি।

বলে না, লাইটনিং নেভার স্ট্রাইক্স টোয়াইস। মিথ্যে কথা।

২০১৪ সালে ওয়াহু ও কাওয়াইদ্বীপের ফ্ল্যাটউইংদের জেনেটিক টেস্টিং করে দেখা যায় যে এরা মোটেও সবাই কাওয়াইদ্বীপের নয়। এদের মধ্যে সাদৃশ্য আছে বৈকি, কিন্তু প্রচুর তফাতও আছে। সেটা বুঝতে তাদের জিন ঘাঁটতেই হবে তাও নয়। ডানা দেখলেই খানিক মালুম পাওয়া যায় বৈকি। করাত-ছাঁচনিটা যেমন কাওয়াইফ্ল্যাটউইংদের একেবারেই নেই, ওয়াহুফ্ল্যাটউইংদের খানিকটা আছে। তাতে ম্যান্ডো বাজবে না বটে, কিন্তু তফাতটা চোখে পড়ার মতো। জেনেটিক দিক থেকে ৭০০০ জিন মার্কারদের মধ্যে মাত্র ২২টা মার্কার এদের মধ্যে এক। কুম্ভমেলার হাইপথিসিস তাই গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়াই ভাল। কাওয়াই এমন কেউকেটা কেউ নয় যে জুক এফেক্ট [নোট লাল] সেখানেই হতে হবে। ওয়াহুতেও ওর্মিয়ামাছি দাপট, একইরকম সিলেকশান প্রেশার এসেছে ওয়াহুর ঝিঁঝিদের ওপরেও। তাই কাওয়াই মন্দিরপ্ল্যান ক্যান্সেল।

কাওয়াই বোবাঝিঁঝি বনাম ওয়াহু বোবাঝিঁঝি

একসময় মানুষ মনে করত তারাই বুঝি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সমস্ত সৃষ্টি নাকি তাদেরই জন্য, স্রষ্টা ভগবানমশাই বহু খেটেখুটে মানুষের জন্য সমস্তকিছু তৈরিফৈরি করে তারপর পিট্টান দিয়েছেন। এখন অবশ্য সেই ভুল ভেঙেছে। তবে হ্যাঁ, খবরটা কিছু বিশেষ ধর্মীয়দের দেবেন না। দা হাতে তেড়ে আসবে। বলবে, এইসব মিরাকেল একমাত্র পরমেশ্বরই পারেন করতে।

কুকথায় কান দেবেন না। আসল ম্যাজিক আছে বিজ্ঞানে, আর তার হ্যারিহুডিনি হল…

ইভোল্যুশন!

____________________________________________

গল্প শেষ, নটেগাছও ফর্সা। হাজারচারেক শব্দের মধ্যে সামহাউ বেঁধে দিয়েছি। এই গল্পের আরও বোর আছে, ক্যালিবার আছে, মেক আছে, শুধু এই ঠাঁয়-ঠাঁয়-ঠাঁয়-ঠাঁয়-ঠ-ঠাঁয় পড়লেই চলবে? আরও জানতে চাইলে, মানে সত্যিকারের এতক্ষণ হাইটাই তুলে মাটিতে চিনেবাদামের ছাড়ানো খোসার দোকান না খুলে বসে থাকলে বা চূড়ান্ত দেখতেপেলেইপেটাব লেভেলের বোরড না হয়ে থাকলে সোজা চলে যান নার্ড্রুইডের পাতায়, এইখেনে : http://nerdruid.com/druidcraft/the-very-quiet-crickets-of-hawaii-rapid-convergent-evolution/। আশা করি আমোদ পাবেন। না পেলে অবিশ্যি কিছু করার নেই, আমসত্ত্ব শেষ।

____________________________________________

পাদটীকা

নোট ১ : ওডোমসের শিশি দেখেননি? বেঁচে গেছেন।

নোট ২ : বাচ্চারা, বাড়িতে এসব করতে যেও না। “পাঁচটিন হিটস্প্রের দাম জানিস রে উল্লুক?” এইসব বলে তোমার মা জননী তোমায় ঘরছাড়া করবেন।

নোট ৩ : গাড়ির স্পিডোমিটারের মধ্যে যে সুটকেসের কম্বিনেশনের মতো কয়েকটা নম্বর পিটপিট করে তাকিয়ে থেকে কিলোমিটার মাপে, তার নামই ওডোমিটার। ওডোমসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলেই খবরে প্রকাশ। আর একশ তিরিশ মানে যে কিলোমিটার, সেটা আশা করি বলে দিতে হবে না। এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে মাইলফাইল ব্যবহার করে শুধুমাত্র গুটিকয়েক বর্বর বন্দুকপ্রিয় দেশ।

নোট ৪ : আহা, পাঁইপাঁই করে মশা পালাচ্ছে, ভাবলেই ভালো লাগে, সে হোক না পুরুষ মশা।

নোট ৫ : সুনৎজুমশাই ঠিক এই কথাই লিখে গেছেন কিনা বলতে পারব না। “আর্ট অফ ওয়ার” বইটা বাড়িতে শেল্ফে অতি যত্ন করে তোলা আছে। হপ্তাদুই অন্তর অন্তর ধুলোটুলোও ঝাড়া হয়।

নোট ৬ : আদপে কবাডি, কিন্তু তাতে কী আর এসে গেল?

নোট ৭ : মার্টিনক্রোমশাই ন্যুজিল্যান্ডের সবচেয়ে দিলচস্প ক্যাপ্টেন ছিলেন যে তাই নয়, বর্ডারের অস্ট্রেলিয়াকে বিরানব্বুইয়ের ওয়ার্ল্ড কাপে যেভাবে ঘোল খাইয়েছিলেন, সেটা অভিষেক মুখার্জির লেখা পড়লে স্পষ্ট বোঝা যাবে :  http://www.cricketcountry.com/articles/world-cup-1992-martin-crowes-new-zealand-stun-australia-at-eden-park-as-dibbly-dobbly-wibbly-wobbly-rule-roost-257331

নোট ৮ : ঠিক যেমন আমাদের, মানে স্ট্যান্ডার্ড মাছভাত খাওয়া ননগাঙ্গুলি বাঙালির পক্ষে শারজায় আটানব্বুই সালে শচীন তেন্ডুলকরের মতো ক্রিজ ছেড়ে লাফিয়ে বেরিয়ে এসে বোলারদের সোজা সাইটস্ক্রিনের ওপরে পাঠানোটা সহজ, অনেকটা সেইরকম।

নোট ৯ : জেনারেল ফিজিশিয়ান এসব শুনেটুনে তো ফায়ার। সোজা অ্যাবা’কে মিশন রিপিট করতে বললেন। অ্যাবা ফেরত গিয়ে দেখে, কয়েকটা রাক্ষস এখনও বেঁচে আছে। মেশিনগানের এক বার্স্টে তাদের উড়িয়ে দিয়ে বাকি আমসত্ত্বটুকু চিবোতে চিবোতে সে ফিরে আসতে না আসতেই তাকে ফের মিশনে বেরোতে হল। জেনারেল ফিজিশিয়ান রেগে রাস্টাপপুলাস, এবারেও খোক্কসদের মারতে পারলি না রে হতভাগা অ্যাবা। এর’ম করে এক হপ্তা ধরে অ্যাবাকে বারবার মিশনে পাঠানো হল। রাক্ষসবংশ একেবারেই ভ্যানিশ হয়ে গেল। দুঃখের বিষয়, অ্যাবারাও একটু হ্যাবা গোছের, প্রথমপাঠের পর আর তাদের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারে কিছু ঢোকে না, ভীষণ ইনফ্লেক্সিবেল। খোক্কসগুলো বেঁচে গেল, বংশবৃদ্ধি করল, ম্যুটেটেড ব্যাক্টো সেজে ফের চিনেবাদাম খেতে খেতে মানুষ মারতে শুরু করল।

নোট ১০ : সংঘ থাকলে সঙ্গে একটা সবুজ না থাকলে ঠিক জমে না। ঠিক যেমন ক্লাব থাকলে সেটা ইয়ুথ না হলে খিচুরি ঠান্ডা ফুচকায় চিনি।

নোট ক : আন্দামান-নিকোবর-লাক্ষাদ্বীপ হল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জর মেজ-সেজ-ছোটভাই। অঞ্জন চৌধুরী খুশ হোতেন।

নোট খ : গিনিসবুকে আর্কটিক টার্নের নামের পাশে “বছরে সত্তর হাজার কিলোমিটার” কথাটা লেখা আছে। বছরে। সত্তর হাজার কিলোমিটার। মাইগ্রেটরি বার্ডস, ডানারতলায়সর্ষে পাখি। বছরে কেন, লাইফে সত্তর হাজার কিলোমিটার ট্র্যাভেল করেছি কিনা কে জানে। (https://en.wikipedia.org/wiki/Arctic_tern)

নোট গ : যারা মনে বুড়ো। ইনফ্লেক্সিবেল। ঠ্যাটা পাব্লিক। যাদের দেখলেই বেঞ্চিতে চুইঙ্গাম লাগিয়ে দাঁত বার করে হেসে বসতে বলতে ইচ্ছে করে।

নোট বেগুনি : ম্যাক্সিমাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না মাইরি।

নোট ইন্ডিগো : ও’সব কলেজফলেজ ম্লেচ্ছ বানান [নোট কালো]।

নোট নীল : কোনও একটা ভাষায়। ক্লিঙ্গন নয় আমি শিওর। এর চেয়ে বেশি কিছু জিগাইবেন না।

নোট সবুজ : অনুবাদ —> মামু, টেনশন লেনে কা নহী, দেনে কা।

নোট হলুদ : ১ প্রজন্ম = ১/২ গড় আয়ু। এটা আমার হিসেব। তাই, মানুষের গড় আয়ু যেহেতু গত কিছু লক্ষ বছর ধরে মোটামুটি ৪০, তাই ১ মানুষ-প্রজন্ম = ২০ বছর। ঝিঁঝিদের আয়ু মোটামুটি তিন মাস, অতএব ২০ প্রজন্ম = দেড় বছর। আইব্বাপ! আমিও লিখতে লিখতে চমকে গেলাম মাইরি।

নোট কমলা : ফিঞ্চের বাংলা করতে গিছলুম গুগল ট্রান্সলেটে। বলে কিনা “এক প্রকারের গায়কপাখি”। কী ইউজফুল মাইরি।

নোট লাল : আমি এর নাম দিলাম জুক এফেক্ট। দুটো কারণে। এক, মার্লিনদিদিমণি প্রচুর খেটেছেন, তাঁর একটা রিকগনিশান দরকার। দুই, অত টাইপ করতে গিয়ে আমার আঙুলের পোপোক্যাটাপুলটিশ হবে।

নোট কালো : বানান বানান। বুঝলেন? বানান বানান। না পড়তে পারলে পরশুরামের চলন্তিকা কিনুন। তাও না পারলে কুঠার তো আছেই। একেবারে কচাং কুঃ।

____________________________________________

সোর্স, রেফারেন্স, সাইটেশন, লিঙ্ক, ইত্যাদি ইদ্যাতি…

Sources : Articles and Interviews

(0) Nerdruid Article : http://nerdruid.com/druidcraft/the-very-quiet-crickets-of-hawaii-rapid-convergent-evolution/

(1) NatGeo Phenomena : “The Silence of the Crickets, The Silence of the Crickets” http://phenomena.nationalgeographic.com/2014/05/29/the-silence-of-the-crickets-the-silence-of-the-crickets/

(2) Berkeley Evolution News : “Quick evolution leads to quiet crickets” https://evolution.berkeley.edu/evolibrary/news/061201_quietcrickets

(3) Beacon Centre Blog : “Tropical crickets hitchhike their way to rapid evolution” https://beacon-center.org/blog/2011/04/04/beacon-researchers-at-work-tropical-crickets-hitchhike-their-way-to-rapid-evolution/

(4) Interview with Marlene Zuk : “Strange Cricket Silence” http://askabiologist.asu.edu/explore/strange-cricket-silence

Sources : Wikipedia and other information sources

(1) Stridulation : (a) https://attractingamatewithsound.weebly.com/stridulation—the-crickets.html (b) https://en.wikipedia.org/wiki/Stridulation

(2) Parasitoid : https://en.wikipedia.org/wiki/Parasitoid

(3) Ormia ochracea : https://en.wikipedia.org/wiki/Ormia_ochracea

(4) How Long Ago? : http://www.howlongagogo.com/

(5) Origin of Species : https://en.wikipedia.org/wiki/On_the_Origin_of_Species(4) How Long Ago? : http://www.howlongagogo.com/

(5) Origin of Species : https://en.wikipedia.org/wiki/On_the_Origin_of_Species

Sources : Original papers

(1) Science paper about Ormia sonolocating crickets

“Acoustically Orienting Parasitoids: Fly Phonotaxis to Cricket Song”

http://science.sciencemag.org/content/190/4221/1312

doi : 10.1126/science.190.4221.1312

(2) Current Biology paper about convergent evolution on Oahu

“Rapid Convergent Evolution in Wild Crickets”

http://www.cell.com/current-biology/fulltext/S0960-9822(14)00524-7

doi : 10.1016/j.cub.2014.04.053

(3) JEvolBiol paper on island hopping crickets

“Island hopping introduces Polynesian field crickets to novel environments, genetic bottlenecks and rapid evolution”

http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/j.1420-9101.2011.02255.x/abstract

doi : 10.1111/j.1420-9101.2011.02255.x

(4) Biology Letters paper by Zuk et al reporting the original phenomenon

Silent night: adaptive disappearance of a sexual signal in a parasitized population of field crickets

http://rsbl.royalsocietypublishing.org/content/2/4/521

doi : 10.1098/rsbl.2006.0539

(5) Animal Behaviour paper on how flatwings have to “leg it”

“Roaming Romeos: male crickets evolving in silence show increased locomotor behaviours”

https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S000334721400476X

doi : 10.1016/j.anbehav.2014.12.023

(6) Heredity journal article on the Kauai flatwings

“Rapid evolutionary change in a sexual signal: genetic control of the mutation ‘flatwing’ that renders male field crickets (Teleogryllus oceanicus) mute”

https://www.nature.com/articles/6801069

doi : 10.1038/sj.hdy.6801069

Sources : People

(1) Marlene Zuk : https://cbs.umn.edu/contacts/marlene-zuk