Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দশটা দশের গল্প

পীযূষ ভট্টাচার্য

 

অলৌকিক বলতে কেবল মাত্র ঘড়ির কাঁটাটা দশটা দশে পৌঁছে বন্ধ হয়ে গেছে। সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘণ্টার কাঁটা না মিনিটের কাঁটার মধ্যে মিশে আছে বোঝা না গেলেও ধরে নেওয়া যায় মানুষটা দশ দশেই চলে গেছেন। এরপরেও আরও কিছুক্ষণ ডাক্তার নাড়িতে আঙুল রেখে বসে থাকেন এমনভাবে বিরল একদণ্ড সময় যা চব্বিশ মিনিট তা অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত তিনি নাড়ি থেকে আঙুল সরাবেনই না। একসময় আঙুল তুলে নিলেন এবং একবারের জন্য দেওয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলেন — দশটা দশে। তাঁর কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির সময় তাঁর নিজস্ব সময়। তিনি জানিয়ে দিলেন ঠিক চব্বিশ মিনিট আগে।

শুধু দেয়াল ঘড়ির চলতে চলতে স্থির দাঁড়িয়ে পড়া ছাড়া আর অন্য সবকিছুই স্বাভাবিক। এতটাই স্বাভাবিক এই মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটার উদ্বাহু নৃত্যভঙ্গির মধ্যে যে উল্লাস ধরা পড়ছে তাকে অস্বীকার করতে ইচ্ছে করছে না। ঠিক যে বুঝেছি এ উল্লাসের হেতু কী তা কিন্তু বলা যাবে না। কেবলি মনে পড়ে যায় শিবের নৃত্যমুদ্রার কথা, সেখানেই নাকি স্থির থাকে জন্মমৃত্যু। চার চারবারের এমপি সতীশ চন্দ্র’কে এভাবে দেখার মধ্যে থেকে গেছে চূড়ান্ত নির্বাচন হয়ে গেল তাই এত উল্লাস। পাশাপাশি একটি বহুজাতিক ঘড়ি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল সেখানে সব ঘড়িই দশটা দশ। যে সুরটা বেজে ওঠে বিজ্ঞাপনে তা পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও মনে করতে পারলাম না। কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে মানুষটার সঙ্গে ছিলাম এখন মনে হচ্ছে — তিনি যেন অতি সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন। না হলে কেউ নাচতে নাচতে চলে যায়!

আর তখনই ডাক্তারের কাছে জানতে চাই — খবরটা কি ছেলেকে দেওয়া যাবে?

ডাক্তার হাত দিয়ে মানা করে মুখে বলেন ‘এখুনি নয়।’ তারপর রৌদ্রময় বলয়ের মধ্যে ঢুকে গেলেন। এখনও রোদ জানলা দিয়ে আসছে — উত্তরায়ণের সময়েই এই রোদের আসা তথাপি এ ঘর অন্ধকার নয়। প্রায়ান্ধকারও নয়, ছায়াচ্ছন্ন। ঘরে স্থাপত্য এরকমই, মহাকাশে সূর্যের গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়েই যেন ওই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জানলার পর্দাটা টেনে দেওয়া উচিত কিনা বুঝে উঠতে পারছি না। ডাক্তারের রোদের প্রয়োজন আছে কিনা জানা নেই। তিনি নাড়ি থেকে আঙুল সরিয়ে হাতটাকে বুকের উপর রেখে দিয়েছেন অনেকক্ষণ। আঙুলের অসারত্ব ভাঙবার জন্য আঙুলগুলোকে মটকে নিলেন, গিঁটের শব্দ উঠতেই তিনি এমনভাবে তাকালেন গর্হিত কাজ করে ফেলেছেন। ভয়মিশ্রিত চোখে আরও একবার মৃতদেহকে দেখে নিলেন এমনভাবে চার চারবার জেতা এমপি বেঁচে থাকলে তার সামনে আঙুল মটকানো? কীভাবে তিনি যে নিতেন তা তার চিন্তার বাইরে।

নৈঃশব্দের মধ্যে তখন কেবলই মনে হচ্ছিল — এই বুঝি আকাশ থেকে জলদগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করা হবে — চার চারবারের একটানা এমপি সতীশ চন্দ্র পরলোকে গমন করেছেন। কিন্তু তা হয় না, এমনকী ঘড়ির কাঁটাটা আবার সামনের দিকে চলতে শুরু করে বুঝিয়ে দেবে আবার শুরু হয়ে গেল। তাও হয় না। এখানে সবকিছুই স্থির। শুধু রোদ জানলা থেকে সরে গিয়ে বারান্দায় গড়াচ্ছে।

এরপর ডাক্তার আমাকে ডাক দেন তা যে কতক্ষণ পর তা সঠিক মনে নেই। কাছে যাওয়া মাত্র একটুকরো তুলো হাতে ধরিয়ে বললেন — সলতের মতো করে পাকাতে। মনে করিয়ে দিলেন এক প্রান্ত যেন সূচের মতন ছুঁচলো হয়। সেরকম হচ্ছে না, অনেকটা বর্শার ফলার মতন হয়ে যাচ্ছে দেখে, তাতে চলবে কিনা জানতে চাইবার মধ্যে দেখি ডাক্তার চার্জারে বসানো টর্চটাকে খুলে নিয়ে ছড়ানো ফোকাসকে একবিন্দুতে নিয়ে এসে চোখটাকে খুলতে বললেন। চোখটা খুলতে অনেক মেহনত — রীতিমতন বলপ্রয়োগ করতে হচ্ছে। একসময় তা সম্পূর্ণ হলে সলতের বর্শার ফলার দিকটা চোখের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত নিয়ে যেতে বললেন ডাক্তার। স্ট্রেইট যাবে। সরলরেখাতে তো? অপর প্রান্তে পৌঁছে মনে হয় এই সরলরেখা শেষ হবার নয় — অনন্তর দিকে যাত্রা যেন! ডাক্তার না থামালে হয়তো সেদিকেই তুলোর বর্শার ফলাকে নিয়ে যেতাম আর তখনই ডাক্তার আরও একটুকরো তুলো হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন — এটাকে রেডি করুন। যার অর্থ তুলোর সলতেকে আবার বর্শার ফলার মতো করে তৈরি করা। এবারে দ্বিতীয় চোখ। আবার বলপ্রয়োগ করে চোখের পাতাদুটি খুলে তুলোর বর্শাকে নিয়ে যাচ্ছি — পেছনে টর্চের বিন্দুর মতন তীব্র আলো প্রথম চোখের মতন তুলোর বর্শার ফলাকে অনুসরণ করছে। সবকিছু শেষ হলে চোখের মণির বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুরতে তুলোর বর্শার ফলা একবার স্পর্শ করেছিলাম। তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা নেই নিজের কাছে — কেন করেছিলাম? পরপর চারবারের এমপি সতীশ চন্দ্রের আপ্তসহায়ক জানতে চায় সতীশ চন্দ্র জীবনের বৃত্তের কোন বিন্দুতে পৌঁছতে চেয়েছিল? এখন সবকিছুই নিথর — খোলা চোখ দুটো বলপ্রয়োগের দ্বারা বুজিয়ে দিতে হবে। যেন মৃতদের এমনই চাহিদা থাকে সবকিছুতেই বলপ্রয়োগ ঘটুক।

ডাক্তার আবার ব্লাডপ্রেসার মাপবার যন্ত্রটা নিয়ে বসলেন, যা তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার মেপেছেন। সেই একই সূচক কিনা যাচাই করে দেখে নিলেন। কাঁটা শূন্যতেই দাঁড়িয়ে আছে। — এবারে খবরটা পাঠান।

একবারের জন্য ডাক্তার বললেন না — মারা গেছেন। চারবারের এমপি’কে মৃত ঘোষণ করতে এখনও আতঙ্ক! কেননা এবারে দাঁড়ালেও তিনি জিতে পঞ্চমবারের জন্য এমপি হতেন।

মোবাইল বন্ধ। সন্দীপকে খবরটা দেওয়া গেল না। এবারে যাবার সময় সন্দীপ পই পই করে বুঝিয়ে গেছে — কিছু ঘটলে তবে জানাবেন। সেও একবারের জন্য বলেনি — মারা গেলেই জানাবেন। সরাসরি মৃত্যু কথাটা কেউ উচ্চারণ করতে চায় না। ‘ঘটনা’ দিয়ে মৃত্যুকে বোঝাতে চাওয়ার পেছনে যে যুক্তি বারবার প্রয়োগ করা হয় তা এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জন্ম হলেই মৃত্যু হবেই। নির্বাচনের মাস তিনেক আগে রোগটা ধরা পড়ে। নিশ্চিত হতে দিল্লির এইমস্‌, ক্যানসারই, ডাক্তাররা জানায় মাস তিনেক বড় জোর। সন্দীপ সন্তুষ্ট না হয়ে সতীশ চন্দ্রকে উড়িয়ে নিয়ে যায় কেরালার আয়ুর্বেদ সেন্টারে। সেখানে গিয়ে মোটামুটি হিসেব কষে বলে — তার মাস ছয়েক চাই।

আয়ুর্বেদ আচার্য জানিয়ে দেন — হবে।

এবারে সন্দীপের বৌ’এর নম্বরে চেষ্টা করি। রিং হচ্ছে একসময় কল ডাইভারটেড হয়ে যায়। ল্যান্ড লাইনও ডেড। সাধারণত এমপিদের ল্যান্ড ফোন ডেড থাকে না কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতায় তাই বলে। পার্লামেন্টে কিছু একটা ঘটেছে নিশ্চয়।

তখনই রান্নাঘর থেকে মধুর সঙ্গে কেরালা থেকে আনা ভেষজটা জ্বাল দেওয়া হয় তার মিষ্টি গন্ধে ঘর ভরে গেলে সতীশচন্দ্রের দিকে চোখ চলে গেল। মানুষটার মাথাভরতি চুল এখন যদিও কুড়ি বছর যাবৎ দেখে এসেছি টাক মাথা।

সতীশ এমপি হবার পর শহরের বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন জেদ করে। সন্দীপ প্রথম শুনেই আপত্তি করেছিল। শহরের বাড়িতে চিকিৎসার কত সুবিধে ও বাড়ি তো এখন পোড়োবাড়ি রিপেয়ার না করলে যাবে কী করে?’

–বাড়িটা নির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যেই –

কথাটা উড়ে আসতেই সন্দীপ কথা না বাড়িয়ে চুপ করে যায়। অনেক দিন পর মা’র কথা মনে পড়ে। বাবা কিন্তু নির্বাচনী প্রচার শুরু করতেন গ্রামের বাড়ি থেকে। সে কিন্তু তা করেনি, একবার সদলবলে গিয়েছিল গ্রামের লোকদের বোঝাতে বাবা মৃত্যুশয্যায় তার এসব ভালো লাগছে না। কিন্তু বাবার শেষ ইচ্ছে — তাই আসা।

রাতে যখন তার স্ত্রী বলে — ও বাড়িতে তোমার জন্মকথার গল্প বলছিলেন ড্যাড তখনই খুশির কথা মনে পড়ে যায়। এক্কা দোক্কা খেলায় কেনা ঘর থেকে সাইড ধার দিত যাতে বেশি লাফাতে না হয়। অবশ্য প্রতিবারই মুখে বলত — তোকে দান করলাম। অথচ এসব অতীতের নভেলের টাইপের প্রেমের মধ্যে সে নেই কেননা তার স্ত্রী আলোর মধ্যেই রাতের পোশাক পরছে।

ডাক্তার ডেড বডিতে অভ্যাসবশত সাদা চাদর দিয়ে ঢাকতে যাচ্ছিল, মানা করলাম কেননা মধু মিশ্রিত ভেষজটা নিয়ে রান্নার লোক এখুনি চলে আসবে, ওভাবে দেখলে বুঝে যাবে। গোপনীয়তার ব্যাঘাত ঘটবে। সন্দীপের নির্দেশ এরকমই খবরটা যদি প্রকাশ করতেই হয় তা সে নিজেই করবে। এরমধ্যে কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হবে কিনা জানি না।

এবারে পার্লামেন্টের সেশনে যোগ দেবার আগে সস্ত্রীক এসেছিল। নিজে সব খোঁজখবর নেয় — কেরালা থেকে আনা ভেষজ কতখানি আছে? ‘এইতো আবার লোক পাঠিয়ে আনা হল’। শুনে পালটা প্রশ্ন করে — মধু? সুন্দরবনের যে মধু দিত তাকে কিন্তু বাঘে তুলে নিয়ে গেছে। খোঁজ অবশ্য চলছে নতুন লোকের।

কিছুক্ষণ ঘৎ ঘৎ শব্দ তুলে সতীশ চন্দ্র জানতে চান বৌমা কোথায়?

পিঙ্কি ‘এই তো আমি’ বলে ঘরে ঢুকেই হতবাক। সতীশচন্দ্রর মাথায় পরচুলা, যা তাকে এত রোগভোগের মধ্যে যৌবনের প্রান্তসীমানায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

ঘর ঘর শব্দ তুলে জিজ্ঞেস করলেন — কেমন লাগছে?

–টু ইয়াং।

কথাটা শোনার পরই ক্লান্তিতে চোখ বুজে এল। কিছু একটা চিন্তা করে আমাকে হুকুম দিলেন — ওকে পারিবারিক অ্যালবামটা দেখাও। বলেই তার পরপরই ঘুমিয়ে পড়লেন। ছেলের বউ অ্যালবাম যদি দেখে ভালো, না দেখে তবুও ভালো, তার কিছুতেই কিছু যায় আসে না। শহরের বাড়িতে অবশ্য বহু অ্যালবাম, তার সব ছবিই এমপি’র কর্মকাণ্ডের বিবরণ। যাকে বলা হয় রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ।

আমি আরও একবার সন্দীপকে ধরবার চেষ্টা করি। সুইচড অফ। পিঙ্কির মোবাইলের একই অবস্থা কল ডাইভারটেড হয়ে কোথায় যে যাচ্ছে কে জানে!

পার্লামেন্টে কী এমন হচ্ছে যাতে করে মোবাইল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হচ্ছে? সাইলেন্ট বা ভাইব্রেশন মোডে রাখা যাচ্ছে না?

সেবার বিকেলে একবার গ্রামে গিয়েছিল সস্ত্রীক। গ্রামে যাবার জন্য সন্দীপই আলমারি খুলে মায়ের একটা শাড়ি পিঙ্কিকে বের করে দিয়েছিল। পিঙ্কির লাগেজে শাড়ি থাকবে না তা জানা তাই পিঙ্কি বলেছিল ‘থ্যাঙ্কু’। শাড়ির সঙ্গে বাদবাকি পোশাক যা লাগে পিঙ্কি আলমারি হাতড়ে পেয়ে যায়। বিয়ের পরপরই সতীশ চন্দ্র অসুস্থ হয়ে পড়েন, গ্রামের বাড়িতে আর আসাই হয়নি। এমবিএ পাশ করা পিঙ্কি কখনও সন্দীপের স্ত্রী, কখনও সেক্রেটারি হয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছন্দে। আত্মীয় বয়োজ্যেষ্ঠকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম, কাউকে হাতজোড় করে নমস্কার করে। সকলের প্রশ্নের উত্তর দেয় সে নিজেই।

–ওদিকে তো যমদূতের মতন পাহারাদার ঘেঁষাই যায় না।

–চারবারের এমপি’র সিকিউরিটির ব্যবস্থা তো থাকবেই। বাবার এখন যা অবস্থা নিকটজন দেখলেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে, কেন মিছিমিছি দোষের ভাগী হবেন? মায়ের স্মৃতি মনে পড়ে যেতে পারে বলে রান্নার লোক পর্যন্ত পুরুষ মানুষ, কোনও মহিলাকে রাখা হয়নি।

সকলে যখন একবাক্যে মেনে নেন — কথাটা ঠিক তখনই সন্দীপ বলে — কিছু ঘটলে তো আপনারাই সব্বার আগে খোঁজ পাবেন।

সন্ধের মুখে রাতের ট্রেন ধরবে বলে বেরিয়ে পড়ে। আগামীকালই দিল্লির ফ্লাইট। স্টেশনের দূরত্ব এখান থেকে আশি কিলোমিটার। সন্দীপ যখন বেরিয়ে আসে তখন দেখে সতীশ চন্দ্র ঘুমোচ্ছেন অঘোরে। একবার জাগাতে চেয়েছিল, ডাক্তার মানা করেন। দ্বিতীয়বার চেষ্টা না করে স্টার্ট দেওয়া গাড়িতে উঠে বসে বলে — ঘুমোচ্ছেন।

–ড্যাড যে ঘুমিয়ে থাকবেন জানতাম। কে চলে যাচ্ছে, কে আসছে কোনও মূল্যই নেই ওনার কাছে। সন্দীপ দেখে পিঙ্কি শাড়িটা চেঞ্জ করেনি।

‘আমার মনে হয় হোর্ডিং, কাট আউটের বিষয়টা বাবা জেনে গেছেন’।

পিঙ্কি চুপ। বুদ্ধিটা তো তারই, হোর্ডিং-কাট আউটে মৃত্যু পথযাত্রী তার পুত্রকে আশীর্বাদ করবার দৃশ্য। তাইতো রেকর্ড ভোটে জয় — সতীশ চন্দ্রকে ছাপিয়ে গেছে তার পুত্র।

এরপর তারা দুজনেই ভীষণ অন্যমনস্ক।

–উইগটা কিন্তু ভীষণ অ্যাকুয়রেট।

–বোম্বে থেকে লোক আনিয়ে তৈরি করা — ফিল্মস্টারদের উইগ তৈরি করে ওরা। এটাই ছিল বাবার শেষ ইচ্ছে।

মানুষের কেন অদ্ভুত শেষ ইচ্ছে হয় তার কারণ খুঁজে না পেয়ে দু’জনেই বাদবাকি পথ কথা না বলে চুপ করেছিল। বিশেষ করে পিঙ্কি।

মোবাইল বেজে উঠতেই দৌড়ে ধরি, এটা বিজ্ঞাপনের, কেটে দিই। এরপর কেন যেন সন্দীপকে ধরবার চেষ্টাই করলাম না। সেই ফোন এল বিকেলের দিকে। পিঙ্কি হয়ত ডাইভারটেড কল লিস্ট থেকে ইম্পরটেন্ট দেখে সন্দীপকে খোঁজ পাঠিয়েছে।

–কখন ঘটল?

–দশটা দশে। কিছু ব্যবস্থা করতে পারছি না তোমার ইন্সট্রাকশান ছাড়া।

–দাঁড়ান দাঁড়ান, পার্লামেন্টে অনাস্থা নিয়ে চর্চা চলছে। টিভিতে তো সরাসরি দেখাচ্ছে।

–এই অবস্থায় কে টিভি দেখে।

–বডির কন্ডিশান কেমন? আরও চার পাঁচ দিন এই অবস্থায় থাকবে?

–ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করি।

–থাকবে। এর মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনার কাজ হচ্ছে খবরটা যাতে লিক না হয়। বাউন্সারদের বলুন কেউ যেন ঢুকতে বা বেরোতে না পারে, সিল করে দিতে। ডাক্তারকাকুকে ফোনটা ধরিয়ে দিন তো। হ্যালো কাকু বডি কিন্তু আরও চার পাঁচদিন থাকবে কোনও ওষুধপত্র লাগলে বলুন —

–ফর্মালিন জোগাড় করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

–ফর্মালিন তো ওপেন মার্কেটে পাওয়া যায় না। হসপিটাল আর মিলিটারিদের কাছেই থাকে। ওষুধ লাগলে বলুন।

–বরফেই থাকবে। এরপর ডাক্তার আমাকে মোবাইলটা ধরিয়ে দেয়।

–বলছি।

–কাকু কাল অনাস্থার উপর ভোট। পাশ হয়ে গেলে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, গেজেট নোটিফিকেশান হয়ে নতুন মন্ত্রীসভা হবে পরশু বা তরশু তারপর যাচ্ছি। আপনি শুধু ম্যানেজ করে নেবেন, টাইম টু টাইম পিঙ্কির মোবাইলে মেসেজ পাঠাবেন — এখন রাখছি। রাতে কথা হবে। ও, হ্যাঁ রান্নার লোকটাকে বাড়ি যেতে দেবেন না। আমাদের দুজনের ছাড়া কারও কল রিসিভ করবেন না।

টিভি খুললে হয়তো এখনকার রাজনীতির হালচাল জানা যেত কিন্তু ইচ্ছেই করল না। সন্দীপদের সমর্থনে এই মন্ত্রীসভা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সাপোর্ট তুলে নিতেই সঙ্কট। এসব তো একদিনে ঘটে না অনেক বৈঠক, দর কষাকষি চলে এতদিনের অভিজ্ঞতায় বলে। যার আঁচ সতীশ চন্দ্র অবধি পৌঁছতে দেয়নি সন্দীপ। তিনি জানলে একে নির্ঘাৎ বলতেন — ডিগবাজি।

একেবারে কফিন তৈরি থেকে বরফ দেওয়া কমপ্লিট হয়ে যাবার পর সন্দীপের ফোনা আসে। সব ঠিকঠাক হয়েছে কিনা।

যখন শোনে উইগটা খোলাই যায়নি, বেশি টানাটানি করলে মাথার খুলিটাই উঠে আসবার সম্ভাবনা ছিল। তাই সেই অবস্থাতে কফিনবন্দি করা হয়েছে।

কিছুক্ষণের জন্য সন্দীপ চুপ করে থেকে হতাশ কন্ঠে বলে ওঠে — কেন যে এরকম হয় বুঝে উঠতে পারি না কাকু। ধরাগলায় ভেসে ওঠে — কফিনের মুখটা সিল করে দিন। এরপর ধীরে ধীরে জানায় — ঘরে যেন সবসময় এসি চলে –

–কফিনের ডালা বন্ধ করা হয়েছে। তুমি ওদের জানিয়ে দিও এরপর আসবার সময় সঙ্গে করে এখনকার মানে যখন সুস্থ ছিলেন তার একটা ছবি যেন বাঁধিয়ে আনে শ্রদ্ধা জানাবার সময় লাগবে –

–ভালো মনে করিয়েছেন।

যখন দেখলাম উইগটা খুলছেই না বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোনওরকমভাবে কেটে তোলা যায় কিনা সে চেষ্টাও হয়েছিল। ওরা যখন বলে একেবারে সেঁটে গেছে, কাটতে গেলে বডির ক্ষতি হবে। চুলগুলোকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে বলি শেষ পর্যন্ত। তখনই মনে পড়ে যায় মানুষটা বোধহয় এভাবে অতীতে ফিরে যেতে চেয়েছিল। অতীতে ফিরে যাবার পদ্ধতি ওনার এরকমই বুঝি।

ঘড়িটা যে দশটা দশে বন্ধ হয়ে গেছে সে কথা বলতে এবারও ভুলে গেলাম। অনাস্থার ফলাফল, নতুন মন্ত্রীসভা ইত্যাদির কোনও খোঁজ নিতে আগ্রহই হয়নি। যেমন চলছিল সবকিছু তেমনই চলতে থাকে। দরজা জানলা বন্ধ করে এসির ঠাণ্ডা কফিনের ভিতর হিমশীতল বরফ ঠাণ্ডার মধ্যে সতীশ চন্দ্র, অন্যঘরে আমরা বসেই থাকি কেননা অপেক্ষা করাটাই আমাদের কাজ।

বরফের চাঁই সমেত সন্ধ্যার মুখে কফিনের ছেলেগুলো চলে এসে জানায় ‘ব্রেকিং নিউজ’ দিচ্ছে, দেখছেন না? বাঁধানো ছবিটা আমার হাতে তুলে দিয়ে জানিয়ে দিল বাইরে এত কাণ্ডকারখানা চলছে আপনারা কিছুই জানেন না। শ্মশানঘাটে টেন্ট খাটানো হয়ে গেছে, ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে হেলিপ্যাডের কাজ চলছে, টিউবওয়েল বসছে কয়েকশো, ক্যাটারাররা সব ট্রাক বোঝাই করে আসতে শুরু করেছে। কত হাজার শ্মশানবন্ধু হবে তার তো কোনও হিসেব নেই।

সত্যিই কিছু জানি না। আজকে নিয়ে কতদিন হল চার না পাঁচ? সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। বরফটা না পালটালেও চলত তবু তারা কোনও রিস্কের মধ্যে থাকবে না। কাজ শেষ করে জানিয়ে দেয় সৎকার না হওয়া পর্যন্ত তারা থাকবে — কখন কী দরকার পড়ে!

বাইরে অনেক লোকের ভিড় দেখে ওরা ফিরে আসে। কেননা ওদের একমাত্র ভয় জোর করে যদি কফিন খুলে মুখ দেখাতে বলে, তখন কী করবে? একজন বাউন্সারকে ডেকে নিয়ে আসতে বলে ওদের দিয়ে সাদা চাদর দিয়ে কফিনটা ঢেকে তার উপর ছবিটা বসিয়ে দিই।

বাউন্সার একজন একজন করে লোক পাঠায়। সকলের একই প্রশ্ন মুখটা দেখা যাবে না? উত্তর একটাই — হাওয়া লাগলে দেহ পচে যাবে। বেশিরভাগ মানুষ পচনের দায় নিতে চায় না বলে কথা বাড়ায় না। শুধু সন্দীপের ন’পিসি মুখ দেখবে বলে বসেছিল অনেকক্ষণ শেষপর্যন্ত এসির ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে চলে যায়।

লোকজন চলে গেলে কফিনের ছেলেগুলো বলে — বাঁচালেন স্যার। পরচুলাটা কেন যে এমন বেইমানি করল আমরাও বুঝে উঠতে পারছি না।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সমস্ত বিষয়টা প্রশাসনের হাতে চলে যায়। ডি.এম., এস.পি. আসে। এসেই আমার খোঁজ, এগিয়ে যেতেই অনারেবল মিনিস্টারের ট্যুর প্রোগ্রাম ধরিয়ে দেয়। ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিই।

প্রথমেই তারা খাটটা সরিয়ে দিতে বলেন। ‘পুরানো আমলের চাবি দেওয়া খাট, চাবি ছাড়া খোলা যাবে না। চাবি কোথায় জানা নেই’। চাবি দেওয়া খাট কেমন হয় একবার দেখে নিল সকলেই। তুলে যে অন্যঘরে নেওয়া হবে তারও সম্ভাবনা নেই, দরজা ছোট।

‘দাঁড়ান’ বলে আমি সন্দীপকে মোবাইলে ধরি — ডি.এম. সাহেব বলছেন খাটটা সরাতে, খাট খোলার চাবি কোথায়?

–জানি না । আমি তো বুঝতে পারছি না খাটে থাকলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে।

–প্রোটোকলে বোধহয় বেদি লেখা আছে।

–খাটটাকে বেদি বানাতে বলুন, সাড়ে দশটায় ল্যান্ড করে যাব ওয়েদার ভালো থাকলে।

‘খাটটাকে বেদি বানিয়ে দিন’। ডেকোরেটারকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে তারা অন্যান্য কাজ পরিদর্শনে চলে যান। কফিনের দু’পাশে দু’জন সেন্ট্রি এখন।

সকালে উঠে খাটটাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। খাটের মাঝখানে বেদি তৈরি করে দু’পাশটা সাদা কাপড়ে ঢেকে দেবার ফলে উড়ন্ত পাখার মতন, তার পিঠে কফিন। যেন অনন্ত যাত্রার নিদর্শন। ভালো লাগল। গতরাতে এসব কিন্তু চোখের সামনেই হয়েছে, কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি। কফিনের উপর হাসিমুখের ছবি সহ সতীশ চন্দ্র। চোখাচোখি হয়ে গেল। বাইরে তখন অনেক মানুষের কণ্ঠস্বর — মানুষটার পুরো নাম সতীশ চন্দ্র চন্দ ছিল কাট আউট না দেখলে জানতামই না। সতীশ চন্দ্র চন্দ অমর রহে ধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনটা শুরু হয়ে গেল।

সাতসকালে পার্টির সেক্রেটারি প্রেস সামলাচ্ছেন দার্শনিক কথাবার্তা দিয়ে — আজকাল জন্মক্ষণকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু চলে আবার দিনক্ষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জন্মাষ্টমীতে কত বেবিকে মা সিজার করে জন্ম দেয় তার হিসাব রাখেন? জন্মের পর চলে যাবেই এ যখন সকলের জানা তখন দিনক্ষণ দিয়ে কী হবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটা দেখে নিন –

পকেটে ভাঁজ করা প্রোগ্রামটা দেখে নিলাম। সকালে আটটায় জাতীয় পতাকা পরিয়ে সম্মান প্রদর্শন।

দু’জন বিশেষ সেন্ট্রি ঘরের দরজার মাপ দেখে নিয়ে জানায় বাইরে হবে না যা করার ঘরের মধ্যে করতে হবে। ঘরের একদিকে প্রেস, অন্যদিকে বিউগলম্যানরা। ড্রামের সাইজ বড় বলে আলমারি দুটোকে পাশের ঘরে নিয়ে গেল। ঘরটা এমনিতে বড়, পরিষ্কারই ছিল কফিনের ছেলেগুলোকে দেখে পরিষ্কার করতে বললাম। অসুস্থ হবার আগে যে ধূপকাঠির গন্ধ তিনি পছন্দ করতেন সেগুলোকে ধরাবার জন্য বের করে দিলাম — ভুলে গেলাম অসুস্থ হবার পর তার গন্ধে নসিয়া হত। ডাক্তার মানা করে দিয়েছিল।

ঘড়ির কাঁটা যখন আটটা বিশেষ সেন্ট্রি দু’জন বিশেষ কায়দায় জাতীয় পতাকার ভাঁজ খোলে, বিশেষ কায়দায় কফিনের কাছে পৌঁছায়। সাদা চাদর ও ছবি কফিন থেকে আগেই তুলে নেওয়া হয়েছে। ডি.এম. নিজের হাতে কফিনের উপর ছবি রাখে। এস.পি. একটু দূরে দাঁড়িয়ে মাঝখানে ঠিকঠাক বসানো হল কিনা দেখে নেন। বিউগল বেজে ওঠে। ডি.এম. ফুলের রিং রাখেন কফিনের মাঝখানে প্রথমে। কিন্তু ছবি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে দেখে নীচে কফিনের গা ঘেঁষে রাখেন। তারপাশে এস. পি.’ও। তারপর পুলিসের ব্যান্ডে জাতীয়সঙ্গীত বেজে উঠতেই স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে থাকে সকলে। ঘরের চার কোণে চারটি ক্যামেরা ছবি তুলে যাচ্ছে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে। এরপর পার্টির সেক্রেটারি বিশাল একটি মালা ছবি বাঁচিয়ে আলগোছে কফিনকে পরিয়ে দেয়।

সন্দীপ এসে ভীষণ কান্নাকাটি করল প্রকাশ্যেই। কাঁদতে কাঁদতে একসময় খাটে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে শিশুর মতন জলভরা চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। পিঙ্কিও পাশে বসে — মানুষ আসে মানুষ দাঁড়ায়, দেখে চলেও যায়। সবকিছু ক্যামেরাবন্দি হয়ে যাচ্ছে। বাইরে ভিড়, শ্মশানঘাট, পাত পেতে খাবার জায়গা, সবখানেই ক্যামেরা। এটা নিশ্চয় পিঙ্কির প্ল্যান। সে জানে এই মন্ত্রীসভা ফুলটার্মের জন্য নয় — নির্বাচন হবেই। জ্যোতিঃপুঞ্জ থেকে সতীশ চন্দ্র পুত্রকে আশীর্বাদ করছে কাট আউটটি পার্টির সব ক্যান্ডিডেটদের ব্যবহার করতে দেবে শুধু বদলে যাবে সন্দীপের জায়গাটা। যে যেখানে ক্যান্ডিডেট তার ছবিটা থাকবে। কিন্তু ক্যামেরাবন্দি ছবিগুলো সন্দীপের জন্য ববহার হবে।

দেয়াল ঘড়ি দশটা দশে নৃত্যভঙ্গিমায় বন্ধ হয়ে আছে তারও ছবি উঠে যাচ্ছে ক্যামেরায়। কেউ কোনও প্রশ্ন করছে না ঘড়ি বন্ধ কেন কোনও ভ্রূক্ষেপ এ নিয়ে।

সতীশ চন্দ্রকে যে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হচ্ছে তা যে সন্দীপই আদায় করে এনেছে। এতে দলের কতটা লাভ হল তার হিসেব-নিকেশ করতে করতে সেক্রেটারি শবযাত্রার সঙ্গে হাঁটছে। এখন প্রতিটি পদক্ষেপ ফ্রেমবন্দি হয়ে যাচ্ছে। শ্মশানে গান স্যালুট, বিউগল বাজানো, জাতীয় পতাকা গোটানোর আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির মধ্য থাকলেও থেকে যেতে পারে গুলির শব্দে উড়ে যাওয়া পাখির দৃশ্য।

সন্দীপ ঘাটকাজের জন্য নদীর দিকে গেলে ক্যামেরাম্যানরা গুলির প্রতিধ্বনিতে জলের তির তির কেঁপে ওঠার দৃশ্যও তোলে।

কফিনের ছেলেদুটো পায়ের দিকটা আগে খুলে নিয়ে মাথার দিকটা এক হ্যাঁচকায় খুলে পাঁজা কোলা করে চিতায় তোলে। মাথার দিকে ছেলেটা এমনভাবে ঝুঁকে ছিল যেন তার কোলের মধ্যে মাথা, চিতায় তুলে মাথাটা কাঠ দিয়ে ঢেকে দেয়। কেউ কিছু বোঝার আগেই সন্দীপ মুখাগ্নি করে দেয়। ছেলে দুটো জানতই তাদেরও ছবি তোলা হচ্ছে — ভালো পোশাক পড়ে এসেছে — এখন বরফ ভর্তি কফিন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে –

সন্দীপের কাছে যে ব্যক্তি এবারে রেকর্ড ভোটে হেরেছে সেই বলে ওঠে ‘মাথার পেছনে চুল দেখলাম মনে হয়’?

–যৌবনে ওঁর মাথায় প্রচুর চুল ছিল, প্রথমবার এম.পি. হবার পরও পিছনের দিকে ছিল। পরে পড়ে যায়। একজন বৃদ্ধ তথ্যটা জানিয়ে দিলেন।

–স্বর্গের পার্লামেন্টে এম.পি. হয়ে গেলেন।

বৃদ্ধ কথার উত্তর না দিয়ে এমনভাবে তাকালেন — দৃষ্টিতে ফুটে উঠল এবারে ওর জামানত জব্দ করে ছাড়ব।

এদের কথাবার্তার মধ্যে নিজের রিস্টওয়াচ কাঁটাটা দশটা দশে পিছিয়ে দিই। জানি সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না। দিনরাত্রিতে একটু পিছিয়ে আসবে দশটা দশ। অসময়েই দেখব ঘড়ির নৃত্যভঙ্গিমা। মাঝের সময়টাকে ধরে নেব অতীত বলে।