Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দুমড়ানো ফুল বা তেতো চকোলেট — আরও কিছু কথা

শতাব্দী দাশ

 

শিশু যৌন নির্যাতন নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে,  সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে অনেক ঘটনা জানাও যাচ্ছে। আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি, ক্ষেপে উঠছি। সংক্ষেপে, ‘শিশু যৌন নির্যাতন’ (Child Sexual Abuse) এমন এক অপরাধমূলক ঘটনা যেখানে নির্যাতক প্রাপ্তবয়স্ক, পরিণত মানুষ ও নির্যাতিত শিশুমাত্র। ফলে, নির্যাতক বয়সের ব্যবধান, নির্যাতিতর অজ্ঞতা, পারিবারিক সম্পর্ক বা শ্রদ্ধার সম্পর্ক, নিজের সামাজিক সম্মান ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে যৌন নির্যাতন চালাতে পারে।

কখনও কখনও এই নির্যাতন হয় দীর্ঘমেয়াদী।

এরকমই বেশ কিছু ঘটনা এবং তথ্য দিয়েছিলাম ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’-এ প্রকাশিত কিছুদিন আগের একটি লেখায়পুনরুক্তিতে যাচ্ছি না, বরং আলোচনা করি তার পরবর্তী ধাপটি নিয়ে। শিরোনামের ‘আরও’ শব্দটির তাৎপর্য এটাই।

সমস্যার গুরুত্ব বোধগম্য হলে, পরবর্তী ধাপটি অবশ্যই প্রতিকার, প্রয়োজনে প্রতিরোধ। তার উপায়গুলি জেনে নেওয়া দরকার।

শিশু যৌন নির্যাতন থেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার সন্তানকে?

অভিভাবক বা শুভাকাঙ্খী হিসেবে, দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে এই ধরণের যৌন নির্যাতন থেকে শিশুকে বাঁচাতে কী কী করবেন? আসুন জেনে নিই। বিষয়গুলি নিয়ে আমরা পয়েন্টভিত্তিক আলোচনা করব, ফলে লেখাটিকে সামগ্রিকভাবে একটি নির্দেশিকা মনে হতে পারে। সেটাই উদ্দেশ্য।

ক) নিরাময়ের চেয়ে সতর্কতা শ্রেয়/ Prevention is Better than Cure:

খ) কী কী লক্ষণ দেখে সন্দেহ করবেন যে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকতে পারে?

এইসব করা সত্ত্বেও কোনও কারণে যদি শিশু সব কথা বলতে না পারে, তাহলেও তার সমস্যা বুঝতে পারা জরুরি। তাই চোখ কান খোলা রাখতে হবে আর সংবেদনশীল হতে হবে। বাচ্চার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট আচরণগত পরিবর্তন বা শারীরিক লক্ষণ দেখা দিলে বোঝার চেষ্টা করুন, তা নির্যাতনের ফলে নয় তো?

  1. সে কি হঠাৎই আতঙ্কিত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, বেশি চঞ্চল বা খুব বেশি চুপচাপ, মনমরা, বন্ধুবিচ্ছিন্ন বা রাগী, আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে?
  2. আবার নতুন করে বিছানায় প্রস্রাব বা আঙুল চোষা শুরু করেছে? কথা কম বলছে বা আধো আধো কথা বলছে, তোতলাচ্ছে? অচেনা লোক দেখলে ভয় পাচ্ছে? অথবা অন্য কোনও শিশুসুলভ আচরণ করছে, যা করার বয়স সে পেরিয়ে এসেছে?
  3. কোনও পরিচিত জায়গা বা মানুষ সম্বন্ধে অকারণ ভয় পাচ্ছে? স্কুলে যেতে চাইছে না বা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে চাইছে না? অথবা কোনও গান, নাচ, আঁকার ক্লাস বা প্লে হাউজে যেতে ভয় পাচ্ছে? কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কোথাও যেতে বললে কি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাচ্ছে?
  4. পড়াশুনা কি হঠাৎ খারাপ হতে আরম্ভ করেছে? স্কুল কামাই বেড়েছে?
  5. খাওয়া বেড়ে বা কমে গেছে? ওজন দ্রুত বাড়ছে বা কমছে? ঘুম আসছে না, দুঃস্বপ্ন দেখে কাঁদছে, তাড়াতাড়ি জেগে যাচ্ছে বা খুব বেশি ঘুমোচ্ছে?
  6. পোশাক ঠিকমতো পরছে না? দাঁত মাজা, স্নান করা, পরিচ্ছন্ন থাকা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অনাগ্রহ চোখে পড়ছে?
  7. নেশা করতে শুরু করেছে বা অন্য কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে?
  8. আচার ব্যবহারে অপ্রত্যাশিত যৌনতার ছাপ ফুটে উঠছে কি, যা শিশুর বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন?
  9. যৌনাঙ্গ, পায়ু বা স্তন জাতীয় অংশে কোনও ব্যথা, জ্বালা, ঘা হচ্ছে কি, অথবা সেসব জায়গায় বারবার হাত দিচ্ছে? পেচ্ছাপে জ্বালা বা ইনফেকশন হচ্ছে?

এগুলো অন্য রোগের লক্ষণও হতে পারে, কিন্তু নির্যাতনের ফলেও হতে পারে। এসব যদি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্য শারীরিক বা মানসিক রোগ যে নেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি অন্য কারণ না খুঁজে পান, তাহলে শিশু বা কিশোর/কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা বোঝার চেষ্টা করুন। এমনভাবে প্রশ্ন করবেন, যাতে ভয় না পেয়ে যায়। ভালোবেসে সাহচর্য দিয়ে তাকে সহজ করার পরেও যদি সে নিজে থেকে না বলে, তবে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন, কিন্তু প্রশ্ন করার সময় ক্রমাগত বাচ্চাকে অভয় দিন যে তেমন কিছু ঘটে থাকলে সে নির্ভয়ে বলতে পারে এবং তা বলার ফলে তার বা তার ঘনিষ্ঠ কারও কোনও ক্ষতি হবে না। এসব ক্ষেত্রে অভয় দেওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে কারণ নির্যাতিতকে সম্ভবত ভয় দেখানো হয়েছে, যার ফলে সে কষ্ট গোপন করছে। 

গ) অঘটন ঘটে যাওয়ার পর:

এবার ধরুন, আপনার শিশু ইতোমধ্যেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেক্ষেত্রে কী করবেন?

আরও বিশদে বলা হয়ত সম্ভব। কিন্তু আপাতত একটি রূপরেখা দেওয়া গেল। আপনার শিশু ভালো থাকুক। আমাদের সকলের শিশু সুস্থ ও নিরাপদ থাকুক। এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শুভেচ্ছা!