Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

রামরাজ্যে কাফিল খান

বিষাণ বসু

 

“No, it is not I, it is someone else who is suffering.

I could not have borne it. And this thing which has happened,

Let them cover it with black cloths,

And take away the lanterns………

Night.”

–Anna Akhmatova

রামরাজ্যের কথা সবাই জানে। সেখানে প্রজাদের অপার সুখ, শান্তি। বুকভরা হাসি আর গোলাভরা ধান। রাজার ইচ্ছেয় উন্নয়নে ভরা সাজানো বাগান। হাসিগানে গো-পালনে দিন কেটে যায়। রাজার। প্রজাদেরও।

ক্ষোভ নেই। দুঃখ নেই কারও জীবনে। তাই, আদালতের কোনও দরকার আছে কি? না, তা নিষ্প্রয়োজন। সপারিষদ রাজা তো আছেনই। মিডিয়া? না না, মিডিয়া তো থাকবেই। নয়তো, এই অপার সুখের খবর দুনিয়া জানবে কী করে! তবে, রাজানুগত মিডিয়া আনন্দের খবর পৌঁছে দেয় দেশে-দেশান্তরে; অশান্তির চোরাস্রোতের খবর আসা সেখানে মানা। সেদেশে, “আপাতত সবই শান্তিকল্যাণ হয়ে আছে”।

হাসিখুশির সেই শান্তির রাজ্যে, বলা-ই বাহুল্য, সবাই অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী। কেননা, এ তো সবাই জানে, স্বাস্থ্যই সম্পদ। ভুলক্রমে, দৈবাৎ, যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদের জন্যে রয়েছে প্রজাপালক সরকারের, হাসপাতাল।

এমনই এক দেশে, রাজার খাসতালুকে, একটি হাসপাতাল। বাবা রাঘব দাস মেডিকেল কলেজ। সংক্ষেপে বিআরডি মেডিকেল কলেজ। তার শিশুবিভাগ।

বছরের প্রথম সাতমাসে, শিশু ভর্তি হয় ৩৮৭৮, মারা যায় ৫৯৬, শতকরা পনেরো শতাংশ। আর সদ্যোজাতদের জন্যে বিশেষ আইসিইউ, মানে এনআইসিইউ, সেখানে ভর্তির সংখ্যা ২৩৮৬, মৃতের সংখ্যা ৯৩১, প্রায় চল্লিশ শতাংশ। কলিযুগের হিসেবে এই মৃত্যুহার বেশি শুনতে লাগলেও, রামরাজ্যে এই প্রশ্ন অবান্তর।

অবশ্য, ২০১৭-র আগস্ট মাসের শেষে বাৎসরিক শিশুমৃত্যুর নতুন যে হিসেব পাওয়া যাবে, তা এর তুলনায় অনেকটাই কম। রাজা যদি রামচন্দ্র হন, তাহলে তো তাঁর ইচ্ছেয় সূর্যচন্দ্র অস্ত যায়, সামান্য শিশুমৃত্যুর হিসেবের এদিক ওদিক আর এমন কী? কিন্তু, সেইসব পরের কথা পরেই হবে।

আপাতত, চলুন, আবারও নজর ফেরাই আনন্দ-হাসি-গানে।

************

কুকুরের পেটে ঘি সয় না। আর কলিযুগের পাপীতাপীদের রামরাজ্য। কিন্তু, নিন্দুকের কুনজর? সে তো সর্বত্রগামী।

এই যে সাধুদের পরিত্রাণায় আর বিনাশায়চ দুষ্কৃতাং, মহর্ষি যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশে, রামের পবিত্র জন্মভূমি ঘিরে যে রামরাজ্যটি স্থাপন করেছেন, তার ট্যাগলাইনে তো লেবুলঙ্কা না ঝোলালেই নয়।

যোগীজির খাসতালুক গোরখপুর। সেখানে সরকারি মেডিকেল কলেজ। শিশুমৃত্যুর হার তো শুনলেনই। কিন্তু, সে তো অনেকাংশেই গরীবগুর্বোর বাচ্চা। দু’চারটে মরলে কারই বা যায় আসে। আমি-আপনি ভাবতে যাব কোন দুঃখে? যোগীজিও ভাবেননি। আর, এ তো জানাই কথা, স্বয়ং রাজা রামচন্দ্র যদি না ভাবেন, তাইলে চ্যালাচামুণ্ডাদের ভাবতে ভারি বয়েই গেছে।

************

এদিকে, এই রামরাজ্যের ঠেলায় মহা ফ্যাসাদে পড়েন দুই পক্ষ।

একদিকে, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। পুষ্প সেলস। তাঁরা ব্যবসা করে খান। ভুজুংভাজুং-এ ভুলে থাকলে তাঁদের ব্যবসা হয় না। বিশেষ করে, এই অক্সিজেন সরবরাহের কন্ট্র্যাক্ট পেতে তাঁদের বেশ টুপাইস খরচ করতে হয়েছে। পরবর্তী তদন্তে কোন উপায়ে তাঁরা কন্ট্র্যাক্টটি বাগালেন, সেই প্রশ্ন উঠে আসবে, আর চট করে ধামাচাপাও পড়ে যাবে। কিন্তু, চলুন, আমরা অস্বস্তি এড়াতে সেই প্রশ্ন ভুলে যাই আর অক্সিজেন সরবরাহের জন্যে নিয়োজিত, পুষ্প সেলস, তাঁদের সমস্যাটি দেখি একবার।

২০১৬-র অক্টোবর থেকে তাঁরা বকেয়া মেটানোর দাবিতে তাগাদা দিচ্ছেন, কিন্তু মাঝেমধ্যে খুদকুঁড়ো বাদ দিয়ে বিশেষ কিছুই মেলে না। বকেয়ার পরিমাণ বাড়তেই থাকে।

অক্সিজেন সরবরাহ করেও তাঁরা পয়সা পান না, মাসের পর মাস।

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ২০১৭-র মার্চ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লাগাতার তাগাদা, সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়ে চিঠি, এমনকি আইনি নোটিশ।

সরকারের সম্বিৎ ফেরে না। মার্চ থেকে জুলাই পার হয়ে আগস্ট মাস আসে, সরকারের নজর ফেরে না, অক্সিজেনের বিল মেটানোর কথা মাথায় আসে না কারওই।

আরেকদিকে, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল এবং বাকি আধিকারিক। তাঁদের সমস্যাও কিছু কম নয়। তাঁদের হাতে মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতাল পরিচালনার ভার। কিন্তু, সরকার অর্থের জোগান নিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। মাঝেমধ্যে, এমনকি, কর্মচারীদের মাইনে দেওয়া যায় না নিয়মিত। পাওনাদারদের তাগাদায় হাসপাতাল-পরিচালকদের জীবন অতিষ্ঠ। পুষ্প সেলসের সমস্যার কথা তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান, কিন্তু সুরাহা মেলে না।

অবশেষে, অনেক জুতোর শুকতলা ক্ষয়ের পর, ২০১৭-র জুন-জুলাই মাস নাগাদ, সরকারবাহাদুর বেশ কিছু টাকা পাঠালেন মেডিকেল কলেজ খাতে। সাথে পরিষ্কার নির্দেশিকা, এই টাকা শুধুমাত্র আগামী দিনের খরচের জন্যেই। কোনওক্রমেই যেন পুরনো কোনও বকেয়া মেটানোর কাজে এই অর্থ ব্যবহৃত না হয়। সরকারি কর্মচারী মাত্রেই সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করার পরিণতি জানেন। আর রামরাজ্যে? আহ, সেও কি বলে দিতে হবে?

যদিও, পরবর্তীকালে, তদন্তের শেষে, ঠিক এই কারণেই প্রিন্সিপালের গর্দান যাবে, যে, তিনি, টাকা থাকা সত্ত্বেও, বকেয়া না মিটিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধের পরিস্থিতি ডেকে এনেছিলেন।

কিন্তু, দেখেছেন, গল্পটা কিছুতেই সাজিয়ে বলতে পারি না, পরের কথা আগে বলে একেবারে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি।

**********

৩১শে জুলাই, ২০১৭ — ইলেকট্রনিক মিডিয়া স্তম্ভিত হয়, গোরখপুরের সরকারি মেডিকেল কলেজ আর বাকি হাসপাতালের বেহাল দশা দেখে। এনকেফেলাইটিসের বাড়বাড়ন্তের মোকাবিলায় হাসপাতালগুলো কতটা অপ্রস্তুত, তাই নিয়ে হয় আলোচনা। শিশুরোগ বিভাগের অন্যতম চিকিৎসক ডাঃ কাফিল খান জানান, এই হাজারো সমস্যা আর না-পাওয়ার মাঝেই কেমন করে তাঁরা লড়ে যাচ্ছেন শিশুদের বাঁচাতে, বাড়তি হাততালির আশায় নয়, স্রেফ নিজের মানবিকতা আর কর্তব্যের তাগিদেই।

কাফিল তখনও জানতেন না, যবনিকা কম্পমান। কলিযুগের রামরাজত্বে, সত্যভাষণ সদা পরিহার্য।

***********

৪ঠা আগস্ট, ২০১৭ — মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের কাছ থেকে মেডিকেল শিক্ষার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে একই বিষয়ে যাওয়া সাত-আটটি চিঠির সর্বশেষটি পৌছায়। শেষের চিঠির বিষয়, অনেক নিষ্ফলা  হুমকি চিঠির পর অক্সিজেন সরবরাহের সংস্থা, অবশেষে, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করেছেন। সঞ্চয়ে যেটুকু অক্সিজেন আছে, তা শেষ হলে কী হবে, জানা নেই।

(যদিও, সবার শেষে, তদন্ত করে, অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতির জন্যে গ্রেফতার হন প্রিন্সিপাল, সপরিবারে। কেননা, তিনি নাকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সচেতন করেননি। এত চিঠির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ মেডিকেল ডিরেক্টর জেনারেল বা সেক্রেটারি সাহেবের কেশাগ্রও স্পর্শ করা হয় না।)

৯ই আগস্ট, ২০১৭ — বিআরডি মেডিকেল কলেজে সাজো সাজো রব। যোগী আদিত্যনাথ, স্বয়ং, সশরীরে আসবেন হাসপাতাল পরিদর্শনে। তিনি এলেন, দেখলেন এবং ব্যবস্থা করলেন। বহু চিঠিচাপাটিতে যা হয়নি, যোগীজীর এককথায় হয়ে গেল। পরদিনই এল টোকেন। ১১ তারিখ টাকা পৌঁছাল অক্সিজেন সরবরাহকারী কোম্পানির অ্যাকাউন্টে।

কিন্তু, ততক্ষণে, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

১০ই আগস্ট, ২০১৭ — কাফিল খান ছুটিতে ছিলেন। রাত বাড়তেই শিশুবিভাগের চিকিৎসকদের নিজস্ব হোয়াটস্যাপ গ্রুপে জানতে পারেন, সেন্ট্রাল লাইন দিয়ে শিশুদের কাছে পৌছোনো অক্সিজেন কমে আসছে। হাসপাতালে মজুত যে ক’টি সিলিন্ডার, মাত্র বাহান্নটি, তা নেহাতই অপ্রতুল।

ঝাঁপিয়ে পড়েন কাফিল। প্রথমে ফোন। সব চেনা নার্সিং হোম বা বেসরকারি হাসপাতালে। তারপর হাতড়াতে থাকেন সব সম্ভাব্য স্থানেই। এমনকি সুরক্ষা সীমা বল, তাঁদের কাছে থাকলেও থাকতে পারে, এই আশায়।

নিজের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে জোগাড় করেন সিলিন্ডার। নিজের গাড়িতে করে সিলিন্ডার পৌঁছে দেন হাসপাতালে।

সেই রাতেই মারা যায় ছত্রিশটি শিশু। মতান্তরে তেত্রিশ। রামরাজ্যে, একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে, একটি চব্বিশ ঘণ্টায় কজন শিশু মারা গিয়েছে, তাঁর সঠিক তথ্য পাওয়াও বেশ চ্যালেঞ্জিং। তার দিনকয়েকের মধ্যেই, আরও প্রায় চল্লিশ। (একই রাত্রে, সেই একই অক্সিজেনের অভাবেই, মারা যান আঠেরো জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও। কিন্তু, সেই খবর নিয়ে হইচই হয়নি তেমন।)

সংখ্যাটা বাড়তেই পারত। ডাঃ কাফিল খান, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জোগাড় করেন আড়াইশোটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। এগুলি না পেলে, কী হত, কল্পনা করলে শিউরে উঠতে হয়।

অবশ্য, পরবর্তী তদন্তে, ঘটনাবহে কোনও তারিফ তো নয়ই, কাফিলের বিরুদ্ধে তোলা হয় অক্সিজেন চুরির অভিযোগ। (কাফিলের ভাই প্রশ্ন তোলেন, সেন্ট্রাল লাইনে আসা তরল অক্সিজেন চুরি করা কীভাবে সম্ভব!! কিন্তু, স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর কথা গুরুত্ব পায় না)।

***********

মাত্র একটি রাত্রে, অক্সিজেনের অভাবে, তিরিশেরও বেশি শিশু মারা যাওয়ায়, সারা দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সাথে সামনে আসে, ডাঃ কাফিল খানের মানবিক প্রয়াসের কাহিনী। সারা দেশের সামনেই, ডাঃ কাফিল খান, এক চিকিৎসকের অতিমানবিক হয়ে ওঠার প্রতীক হয়ে ওঠেন।

পাশাপাশি, কঠোর সমালোচনায় পড়েন যোগী আদিত্যনাথের সরকার।

ডাঃ কাফিল খানের জন্যে ষড়যন্ত্রের জাল গোটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় খুব দ্রুততার সাথেই।

************

ফ্ল্যাশব্যাক — স্বচ্ছল, শিক্ষিত পরিবারের সন্তান কাফিল। দক্ষিণের দুর্মূল্য মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেন স্নাতক আর স্নাতকোত্তর দুইই।

পাশ করার শেষেই মোটা মাইনের কর্পোরেট হাসপাতালের অফারও ছিল তাঁর সামনে।

কিন্তু, কাফিল, সরকারি চাকরিতে থেকে মানুষের কাছে থাকতে চেয়েছিলেন। আর চেয়েছিলেন বাড়ির কাছে থাকতে। গোরখপুরের মেডিকেল কলেজে চাকরি করলে, এই দুই সদিচ্ছেই পূরণ হওয়া সম্ভব।

ধনী পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে পছন্দ করতেন দামী জামাকাপড়, দামী গাড়ি। ছিলেন বন্ধুবৎসল, স্পষ্টবাদী। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার আশেপাশে ঘুরঘুর করা ছিল তাঁর নাপসন্দ।

হ্যাপি-গো-লাকি ধাঁচের হলেও ছিলেন রোগীদের বন্ধু। বড়লোকি কলেজ থেকে পাশ করেও থাকতে চেয়েছিলেন, সেই সরকারি হাসপাতালেই।

কাফিলের সমস্যায় পড়ার কারণ তাহলে কী? ক্ষমতার চোখে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠা? তাঁর ধর্মীয় পরিচয়? সহকর্মীদের ঈর্ষা? নাকি নেহাতই পরিস্থিতির শিকার? বলির পাঁঠা?

************

একরাত্রে একসাথে অতগুলো শিশুর মৃত্যু, মিডিয়ার হইচই, একেবারে জাতীয় স্তরে ছিছিকার। তদন্ত তো করতেই হয়।

আপনি কি হরিশঙ্কর পরসাইয়ের লেখা অসামান্য সেই হিন্দি গল্পটি পড়েছেন? “ইনস্পেক্টর মাতাদীন চাঁদ পর”? পড়ুন। তাহলে তদন্ত পদ্ধতিটি একটু চেনা লাগবে।

ইন্সপেক্টর মাতাদীনের তদন্তপদ্ধতির মূলনীতিই ছিল, প্রমাণ খুঁজে অপরাধীর সন্ধান নয়; আগেই একজনকে অপরাধী হিসেবে ঠাউরে তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ সাজাও।

***********

দেশের সামনে যোগীজির নাক কাটা যাওয়া। পাশাপাশি, একজন সামান্য ডাক্তারের মানবিকতার প্রতীক হয়ে ওঠা। হ্যাঁ, একজন সামান্য ডাক্তার। ব্যক্তি উদ্যোগেও যে অনেককিছু করা সম্ভব তার জাজ্বল্যমান নজির হয়ে ওঠেন কাফিল।

আর, সামান্য ব্যক্তির একক উদ্যোগেই যদি এতটা সম্ভব, তাহলে সমষ্টি উদ্যোগ নিলে কী হতে পারত? আর রাষ্ট্র উদ্যোগ নিলে?

আদৌ কি যেত একটিও শিশুর প্রাণ? স্রেফ অক্সিজেনের অভাবে? বেঘোরে?

রাষ্ট্র তাড়াহুড়ো করতে থাকে। সব্বার মনে প্রশ্নগুলো জাগার আগেই একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে।

শোনা যায়, এই সময়ে, হাসপাতাল পরিদর্শনের সময়, মুখোমুখি হন কাফিল আর যোগী আদিত্যনাথ। অধস্তন স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে, যোগীজি কাফিলকে হুমকির সুরেই বলেন, হিরো হয়েছেন খুব ভালো, এইবার দেখুন আমি কী করতে পারি। শোনা কথা, প্রামাণ্য কোনও নথি নেই।

না, ডাঃ কাফিল খান সরকারি ভাষ্য মেনে, ঘোষণা করতে রাজি হননি যে শিশুদের মৃত্যুর কারণ এনকেফেলাইটিস আর অক্সিজেনের অভাব তেমন কোনও অসুবিধে করেনি।

তবে, ক্ষমতার ভাষ্যের সাথে তো আমাদের সম্যক পরিচয় আছে। তাই, আমলাশোলে মানুষ মারা যায় অসুখবিসুখে, অনাহারে নয়; বিদর্ভে চাষীরা আত্মঘাতী হয় পারিবারিক অশান্তিতে, ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে নয়; বসিরহাটে গ্রাম উজাড় হয়ে যায় অজানা জ্বরে, কিন্তু সেই জ্বর ডেঙ্গু নয়; আর গোরখপুরে শিশুরা মারা যায় এনকেফেলাইটিসে, অক্সিজেনের অভাবে নয়। হ্যাঁ, ক্ষমতারই হাতে আছে সেই অমোঘ সোনার কাঠি, যার পরশে লাল-সবুজ-গেরুয়া-নীলসাদা সব্বাই একই সুরে গলা চড়ায়।

************

১২ই আগস্ট — যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করলেন, শিশুমৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে তাঁরা গঠন করবেন বিশেষ কমিটি।

যেকোনও তদন্ত কমিটির মূল মজা হল, রাষ্ট্র বা ক্ষমতার সামনে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে কমিটির প্রধান কে হবেন। কাজেই, খেলা শুরুর আগেই, পরিষ্কার দু’গোলে এগিয়ে থাকা যায়। আর, তারপরেও, খেলায় হার হলে তো থেকেই যায় সুযোগ রিপোর্ট ঠান্ডা ঘরে পাঠানোর, তবে সে অন্য গল্প, এইখানে প্রাসঙ্গিকও নয় তেমন।

এখানে তদন্তের নেতৃত্বে থাকেন ডাঃ কে কে গুপ্তা। জবরদস্ত বায়োডাটা তাঁর। দুর্নীতি আর তেমন ধরণের অভিযোগে স্বয়ং চাকরি খুইয়েছিলেন বছরকয়েক আগেই। যোগীজি, তাঁকে, প্রায়, তুমি কোথায় ছিলে ওস্তাদ তুমি কোথায় ছিলে বলে ফিরিয়ে এনেছেন। আর, তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর চেয়ে কাকেই বা বেশি মানায়। জানেনই তো, ফেল করা ছাত্র সবসময়েই ভালো প্রাইভেট টিউটর হয়ে থাকেন।

ইনস্পেক্টর মাতাদীনের ঘরানায় সাজানো হতে থেকে কেস। অপরাধী ডাঃ কাফিল খান। কোন ধারায় সাজানো যায় কেস? কী কী পদ্ধতিতে এগোলে বেশ জমজমাট হতে পারে সেইসব ধারা?

************

আপনি, যিনি এতক্ষণ ধরে কষ্ট করে পড়েছেন এই লেখা, নিশ্চয়ই অবাক হবেন না শুনে যে, বিচারে ডাঃ কাফিল খান দোষী সাব্যস্ত হলেন। প্রায় সাথে সাথেই চাকরি থেকে সাসপেন্ড হলেন তিনি।

তাঁর সাথে দোষী সাব্যস্ত হলেন কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ রাজীব মিশ্র আর তাঁর স্ত্রী ডাঃ পূর্ণিমা শুক্লা।

অভিযোগ অনেক। মূল কথা, শিশুদের মৃত্যু এনকেফেলাইটিসে। ডাঃ কাফিল খানের গাফিলতি। তাছাড়া এঁরা সবাই মিলে দুর্নীতির আখড়া করে ফেলেছিলেন হাসপাতালটাকে। অসুবিধের কথা ইচ্ছে করেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। ডাঃ কাফিল খান হাসপাতাল চালানোর পাশাপাশি একটি নার্সিং হোম চালিয়ে বিবিধ অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত। মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির মধ্যমণি প্রিন্সিপালের স্ত্রী ডাঃ পূর্ণিমা শুক্লা। ইত্যাদি। ইত্যাদি।

প্রসঙ্গক্রমে জানাই, ডাক্তারদের সংগঠন আইএমএ থেকেও একটি কমিটি গড়ে ঘটনার তদন্ত করা হয়। সেইখানে ঘটনার জন্যে দায়ী করা হয় পরিকাঠামোর অভাব, রোগীর তুলনায় ডাক্তারের অপ্রতুলতা, সরকারের গড়িমসি ইত্যাদি বিষয়কে। মোটামুটি ৩১শে জুলাই তারিখে টিভি ক্যামেরার সামনে ডাঃ কাফিল খান যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছিলেন, সেইগুলোই আরও তীক্ষ্ণতর ভাষায় উঠে আসে আইএমএ-র রিপোর্টে।

শহরের চিকিৎসকদের মধ্যে কান পাতলেও শোনা যায় একই কথা। মোটামুটি সবাই একমত। কাফিল উদ্যোগ না নিলে, আটচল্লিশ ঘন্টাতেই মৃতের সংখ্যা একশো ছাড়াতে পারত।

সত্যিটা তো সরকারের চেয়ে ভালো করে কেউই জানতেন না। তাই, সত্যি ঢাকার আয়োজন হয় নিশ্ছিদ্র।

***********

২৪শে আগস্ট, ২০১৭ — রাজ্য সরকারের নির্দেশে ডাঃ কাফিল খান, ডাঃ মিশ্র, ডাঃ শুক্লাসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে দাখিল হয় এফআইআর। এঁদের মধ্যে থাকে অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ সতীশের নামও, যিনি, পদাধিকারবলে, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের ভারপ্রাপ্ত। সাথে মেডিকেল কলেজের অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ক্লার্ক, অক্সিজেন সরবরাহ সংস্থার স্থানীয় কর্তারা।

পুলিশের কাছে এফআইআর দাখিল করেন স্বাস্থ্যবিভাগের ডিজি, হ্যাঁ, সেই কে কে গুপ্তা-ই। স্বাস্থ্যবিভাগের ডিজির তরফে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল, প্রায় নজিরবিহীন ঘটনা। তবে, কলিযুগে রামরাজত্বও তো আখছার দেখা যায় না। কাজেই, অবাক হলে চলবে না।

যোগী আদিত্যনাথ জানান, সরকার, ডাঃ খান, ডাঃ মিশ্র আর ডাঃ সতীশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২৯শে আগস্ট, ২০১৭ — বিআরডি মেডিকেল কলেজের সাসপেন্ড হওয়া প্রিন্সিপাল ডাঃ রাজীব মিশ্র আর তাঁর পত্নী ডাঃ পূর্ণিমা শুক্লাকে উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করে, কানপুর থেকে। তাঁরা উকিলের সাথে পরামর্শ করতে গিয়েছিলেন, সে সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি।

১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ — বিশেষ আদালত বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ঠিক তার আগের দিনই, এই একই আদালত, ডাঃ মিশ্র আর ডাঃ শুক্লার জন্যে চোদ্দ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত বরাদ্দ করেন।

২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ — উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হন ডাঃ কাফিল খান। গোরখপুরে, শ্বশুরবাড়ির দিকের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে।

***********

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দাখিল হওয়া অভিযোগের তালিকাটি দীর্ঘ।

দুর্নীতি, কর্তব্যে গাফিলতি, ক্রিমিনাল নেগলিজেন্স। মামলা দুর্নীতিদমন আইনে, ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্টের ধারায়, ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ৮, ৩০৮, ৪০৯, এমনকি ৪২০ ধারাতেও।

ডাঃ মিশ্রর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি ইচ্ছে করে অক্সিজেনের বিল মেটাননি আর সময়মতো অক্সিজেনের সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি — এইজন্যেই শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন যে, সরকারের বয়ান অনুসারে শিশুরা মারা গিয়েছে অক্সিজেনের অভাবে নয়, স্রেফ এনকেফেলাইটিসে। তাহলে ডাঃ মিশ্রর গাফিলতিতে অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যা হলেও, তা নিশ্চয়ই শিশুমৃত্যুর কারণ হতে পারে না? কিন্তু, আগেই বলেছি, অবান্তর প্রশ্ন করার জায়গা রামরাজ্যে নেই। ডাঃ মিশ্রর স্ত্রী, ডাঃ শুক্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হাসপাতালে দুর্নীতিচক্রের মুখ্য হোতা।

ডাঃ কাফিল খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। প্রথমত, তিনি সরকারি চাকরি করেও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন। যদিও মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, স্বয়ং, রায় দিয়ে জানিয়েছেন, ডিউটির সময় বাদ দিয়ে সরকারি ডাক্তার প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতেই পারেন, তাতে বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকারে হাত দেওয়ার সামিল। কিন্তু, ওই যে বললাম, রামরাজত্বে প্রশ্ন তোলা মানা। দ্বিতীয়ত, তিনি চাকরির নিয়ম লঙ্ঘন করে একটি বেসরকারি নার্সিং হোম চালান। আর অক্সিজেন চুরি করেছেন। এক্ষেত্রেও জানাই, ওই নার্সিং হোমের মালিক ডাঃ কাফিল খান নন, মালিক তাঁর স্ত্রী, যিনি নিজেও ডাক্তার এবং তিনি সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সাথে আদৌ যুক্ত নন। আর, নেহাত অলৌকিক দক্ষতা ছাড়া সেন্ট্রাল লাইন ছাড়া অক্সিজেন চুরি করে নিজের নার্সিং হোমে ব্যবহার করা খুব দুঃসাধ্য কাজ। তৃতীয়ত, ডাঃ খান এনকেফেলাইটিস বিভাগের নোডাল অফিসার হওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করেননি, কাজেই শিশুমৃত্যুর জন্যে তিনি সরাসরি দায়ী। এখানেও জানানোর কথা এই, যে কাফিল জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের নোডাল অফিসার। মেডিকেল কলেজের শিশুবিভাগে তিনি একজন লেকচারার, পদাধিকার অনুসারে তিনি অনেকই জুনিয়র, কাজেই এনকেফেলাইটিস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার তিনি হতেই পারেন না।

**********

এতক্ষণে আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে নিশ্চয়ই, যে, অনেকে গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও আমি ডাঃ কাফিল খানের কথা দিয়ে লেখা শুরু করলাম কেন? উত্তরাধুনিক উপন্যাসের চলন মেনে, আমারও তো উচিত ছিল, অনেক চরিত্রের মাঝে কাফিলও একজন, এইভাবে গল্পটা সাজানো। তা না করে, একেবারে ক্লাসিকাল ঘরানায় একজনকেই কেন্দ্রীয় চরিত্র, এইটা তো বাড়াবাড়ি।

বিশ্বাস করুন, দোষ আমার নয়। প্রশ্ন করার সাহস থাকলে, স্বয়ং যোগী আদিত্যনাথকে করুন।

গ্রেফতারের পর ন’জনেরই স্থান হয় জেলে। কিন্তু, খেলাটা বদলাতে শুরু করে খুব দ্রুত। দিনদুয়েক পরেই, বাকি আটজনের থেকে কাফিলকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। ডাঃ কাফিল খানকে রাখা হয় আর পাঁচজন সাধারণ অপরাধীর সাথে একসাথে। বাইরের কোনও মানুষের সাথে তাঁর দেখা করা হয়ে যায় প্রায় নিষিদ্ধ। খাতায়কলমে কারণ হিসেবে দেখানো হয়, কাফিল অসুস্থ, অত্যন্ত উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, কাজেই দেখাসাক্ষাৎ করায় ডাক্তারের নিষেধ। আঃ, অমন করে চাইবেন না, রামরাজ্যের কাজকম্মে পাপীতাপীদের বিস্মিত হওয়াও মানা।

কাফিলকে জেলে পাঠানোর পর, কাফিলের বিরুদ্ধে, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয় যা শুরু করেন জেলাশাসক, আর পরবর্তীতে সেই তদন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন স্বয়ং মুখ্যসচিব। এরপরেও বলবেন কাফিলকে আলাদা করে গুরুত্ব দিচ্ছি কেন?

২৪শে নভেম্বর, ২০১৭ — গোরখপুর সেসনস কোর্টে ডাঃ কাফিল খানের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি বা ওই ধরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। পুলিশ মুখ্য অভিযোগ হিসেবে তুলে আনে শিশুমৃত্যুর পেছনে কাফিলের ভূমিকার বিষয়টিই। যে সে ভূমিকা নয়, আনা হয় একেবারে ইচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার অভিযোগ।

১৭ই জানুয়ারি, ২০১৮ — দুর্নীতিদমন শাখার বিশেষ আদালতে বিচারক কাফিলের জামিনের আর্জি নাকচ করেন। কিন্তু, দুর্নীতির অভিযোগ যে আগেই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে?

কাফিল এখনও জেলে। গোরখপুরের বিছিয়া জেলে। আর পাঁচটা সাধারণ দাগী অপরাধীর সাথে কাটছে তাঁর দিনগুলো। কেমন আছেন তিনি, বাইরের জগতের কেউই জানেন না।

**********

গোরখপুরের বসন্তপুর মহল্লা। বাড়ির নম্বর ১৭২।

আপনি যদি দরজায় দাঁড়ান, বেল বাজান, ওপার থেকে সন্দিগ্ধ কিছু চোখ আপনাকে দেখে। যে সন্দেহের জন্ম আতঙ্ক থেকে। তারপর, সন্তর্পণে, খোলা হয় দরজা।

বাড়ির সবাই পারতপক্ষে বেরোতে চান না বাইরে। প্রায় সর্বক্ষণ কিছু লোক অপেক্ষা করে বাইরে। ভেসে আসে খিস্তির সাথে আইএসআই-এর চর, পাকিস্তানি ইত্যকার শব্দবন্ধ।

ঝলমলে তরুণ যে ডাক্তার অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজের মহল্লায় ফিরতে চেয়েছিল, তাঁর ঘরে তালা। তাঁর স্ত্রী নিজের একবছরের শিশুকন্যাটিকে নিয়ে ফিরে গিয়েছেন বাপের বাড়িতে। এই দমচাপা আতঙ্কের পরিবেশে শিশুকে নিয়ে থাকা, অসম্ভব।

সেই তরুণের মা, অঘটনের সময় গিয়েছিলেন তীর্থযাত্রায়। হজ করতে। আল্লাহর দোয়া পেয়েছিলেন কি তিনি? জানি না। তবে, তাঁর দীর্ঘশ্বাসে শান্তি নেই।

বাইরে বসন্ত পার হয়ে কঠোর গ্রীষ্ম আসছে। গ্রীষ্ম এসেছে আপনার আমার শহরে, গ্রামে। গোরখপুরেও।

১৭২ নং বাড়ির বন্ধ জানালার ওপাশে ঋতুবদলের খবর পৌঁছোয় কি? নাকি, সেখানে শুধুই জমে আছে শীত, আতঙ্কের হিম?

কিন্তু, না, কোনও প্রশ্ন করব না। উত্তর তো জানা।

চোপ, রাষ্ট্র চলছে। থুড়ি, রামরাজ্য চলছে।