আমাদের গুরুজনেরা
এখনও আমার বৈদ্যুতিন পত্রিকা দেখা তেমন অভ্যাস হয়নি, আস্তে আস্তে বিষয়টা ধরে নেবার চেষ্টা করছি। ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’ যেটুকু দেখেছি, বেশ ভালো লেগেছে। পরিচ্ছন্ন সজ্জা, স্পষ্ট কথা, মানবিক আর যুক্তিসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি — এই সব প্রিয় অনুষঙ্গে সমৃদ্ধ। দিন দিন এর পাঠক বাড়ুক।
পবিত্র সরকার
আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়েব ম্যাগাজিনের খুব ভক্ত ছিলাম না। মনে হত, দায়িত্বজ্ঞানহীন সহজিয়া উড়ো খইয়ের আস্তানা এগুলো; ব্যক্তিপরিসর আর জনপরিসরকে কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো মিশিয়ে কিমাকার করে দেওয়া হচ্ছে এখানে। কিন্তু চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম আমার ধারণা বদলাতে বাধ্য করেছে। চিন্তার গভীরতা, ভাষার বাঁধুনি, যুক্তির শান এবং অবশ্যই বৃত্তিনিপুণ সম্পাদনা, অঙ্গসজ্জা ও উপস্থাপনা এর সম্পদ। আমার বিশেষ করে ভালো লাগছে বাংলা ভাষার মূল ধারার প্রতি এই পত্রিকার আনুগত্য, যার অভাব ইদানীং নানা ‘দেওয়ালে’ পীড়াদায়করূপে প্রকট। আশীষ লাহিড়ী
আজ পয়লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। কেন ‘মে ট্রি’-র কথা মনে এল আমার ! ১৮৮৬-র মে দিবসের রক্তাক্ত ঘটনার পূর্বে গোটা মে মাস জুড়েই একসময় নাকি বসন্ত উৎসব পালিত হত পশ্চিমের শীতের দেশগুলোতে। হ্যাঁ, সে উৎসবে সুন্দর ‘মে ট্রি’ বানানোর জন্যে পুরষ্কৃত হতেন মানুষজন ও সম্বর্ধিত হতেন নতুন নতুন প্রেমিক-প্রেমিকারা। এই আবহেই জীবনের কিছু অমোঘ দাবি রেখেছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। তার পরের ঘটনাসমূহ আমরা জানি।
আজ ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’-এরও জন্মদিবস।
মনে পড়ছে, প্রথম যে দিন এই ওয়েব-ম্যাগাজিনের কথা শুনি, ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’ নামটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। মে দিবসের সঙ্গে এর কী কোনও সম্পর্ক আছে, এরকম ভেবে নিয়ে মনে মনে একটি অবয়ব কল্পনা করেছিলাম। অখ্যাত ও অজানা কোনও এক স্টেশনের ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’ — তার একটি দিকে রেললাইন পাতা, যা এই ‘প্ল্যাটফর্ম’-এর মানুষজনকে যুক্ত রেখেছে রাষ্ট্রিক জীবনের সঙ্গে আর অন্যদিকে রেলওয়ে সাইডিং পেরিয়ে ধানের মাঠ — মাঠে মাঠে, আলপথে-পথে পায়ে-পায়ে-হাঁটা মানুষের চলাচল — আদিগন্ত তাদের কথার চলাচল…
মাইলের পর মাইল ফসলের জমি লুট হয়ে যাচ্ছে এ দেশের। লুট হয়ে যাচ্ছে নদী-অরণ্য-পাহাড়। সাহেব আর মোসাহেবদের জন্য তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল হাউসিং কমপ্লেক্স-রিসোর্ট-হাব। বিরোধিতা করলেই সংঘাত। শয়ে-শয়ে-শয়ে খুন হচ্ছেন প্রান্তিক মানুষ। এসব আড়াল করতে ধর্মোন্মাদনা। তাতেও সামাল দেওয়া না-গেলে এমনকী মন্দিরেও ধর্ষণ, খুন। গুণ্ডা-পুরোহিত-পুলিশ-বিধায়ক মিলেমিশে একাকার।
একটা প্ল্যাটফর্ম খুঁজছেন অপমানিত মানুষ ও তার শিল্পী-সাহিত্যিকরা। তাঁদের অপমানের সঙ্গেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এ দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, এই দেশ। ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’ তাদের দাঁড়াবার জায়গা দিক। শুভেচ্ছা…
বিপুল চক্রবর্তী
চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম পত্রিকা খুব সাহসী। গল্পের বাইরেও নানা লেখা ছাপে যা কিনা সময়কে বিম্বিত করে। সময়ের নানা ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেয় এই পত্রিকা। সমাজ এবং দেশ দুইই প্রতিফলিত হয় এই পত্রিকায়। তার ফলে নিয়মিত পড়তে হয়। নিজেকে অবহিত করতে হয় চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম পড়ে।
অমর মিত্র
ওয়েবপত্রিকা আমি বিশেষ দেখিনি, লিখেওছি খুব কম। চারনম্বর প্ল্যাটফর্ম কাগজটি যতটুকু দেখেছি, চমৎকার লেগেছে। এককথায়, আমি অভিভূত। সবচেয়ে ভালো লেগেছে এঁদের বিষয়-নির্বাচন, বহু বিচিত্র বিষয়ে নিয়মিত আলোকপাত করার চেষ্টা। একইসঙ্গে সাহিত্যধর্মিতা ও সংবাদমনস্কতাও এই পত্রিকার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। কাগজটির শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।
পীযূষ ভট্টাচার্য
চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম সত্যি-প্ল্যাটফর্মের মতো পাঁচমিশেলি চরিত্র। কেউ অপেক্ষায়, মেল ট্রেন ঢুকবে না লোকাল। কেউ সারাদিন বেঞ্চিতে বসে যাতায়াত দেখছে। চা-দোকান। ঝালমুড়ি।আইসক্রিম। হ্যাঁ এমনটাই। কখনও শশী কাপুর। কখনও কবিতা। কখনও সামাজিক টালমাটাল। সবমিলিয়ে ভারি বৈচিত্র্যময় এই প্ল্যাটফর্ম। চোখ রাখলেই টের পেতে যে-কেউ বাধ্য!
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
ঠিক এই মুহূর্তে আমার খুব ইচ্ছে যে এই পোর্টাল বাংলার ফিকশন লেখকদের নন-ফিকশন লেখার একটা মঞ্চ হয়ে উঠুক। বিশ্বসাহিত্যে বর্তমানের প্রত্যেক যশস্বী ফিকশন লেখকই নন-ফিকশনেও, দেখা যাচ্ছে, অপরিসীম যোগ্যতার পরিচয় রাখছেন। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম কি ধীরে ধীরে বাংলার ফিকশন লেখকদের নন-ফিকশনে আমন্ত্রণ জানানোয় বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে? আমি জানি, ফিকশন লেখকরা নন-ফিকশন গোত্রের লেখা চার নম্বর প্ল্যাটফর্মকে ছাপতে দিলে সোৎসাহে তা গৃহীত হবে। তা ছাড়াও বিশেষ কোনও পরিকল্পনা অবলম্বন করে তাঁদের লেখা নন-ফিকশন কি পাঠকদের কাছে নিয়মিত পৌঁছে দেওয়া যায়? বুক-রিভিউ দিয়েই সাবলীলভাবে শুরু করা যায়। প্রত্যেক নতুন সংখ্যার পরিকল্পনায় অন্ততপক্ষে অর্ধেকসংখ্যক বুক-রিভিউ কি যশস্বী ফিকশন লেখকদের লিখতে অনুরোধ করে রাজি করানো যায়? চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম যেহেতু নানা দিক থেকেই অভিনব একটা প্রচেষ্টা, নানা দিক দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাধর্মী হয়ে ওঠাই অতএব এর কাছে প্রত্যাশিত। অভিজিৎ মুখার্জি
দুর্দান্ত ইস্টিশান! এ তো আর নারায়ণ-পাকুড়িয়া-মুড়াইল এর পেলাটফরম নয় যে সারা দিনে একখান করে লোকাল টেরেন থামতিছে: এখানে উই খড়্গপুর ইস্টিশানের মতো দম দেওয়া সিঁড়ি, ইস্কুলেটার না কী যেন, দিন রাত উঠতিছে আর নামতিছে! চার লম্বর পেলাটফরম বেজায় ব্যস্ত, দুনিয়ার গাড়ি থামিতেছে আর চলতিছে। ইস্টিশন মাস্টার সিগ্নাল বাবুরা আবার বেজায় লাজুক, কিছুতেই মুখ দেখাতে চান না! কিন্তু কী কলই বানাইছে ভাই এরা, পেলাটফরম ঝকঝক করতিছে, বড় বড় বাবু লেখকেরা আসতেছেন যাইতেছেন! দেখলে গড় করতে মন লাগে! নিঘঘাত কোনো বাঙ্গালের কাজ গো মোড়ল: একটা চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া জনম ভইরা ঘুরতে আছে! তা ঘোরার কি শেষ আছে বাবুরা? এই তো সবে এক বচ্ছর! ঘুরতে থাকো বাবু সকল! আমরা তিন পয়সার পালাদাররা বেজায় খুশি হইছি বচ্ছরখানেক আগে কে জানে কোত্থেকে এই চার লম্বরী বাবুরা মার মার করে আমাদের পাড়ায় এসে পড়ায়! যুগ যুগ জিও গো!
নিরুপম চক্রবর্তী
চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম পড়তে উৎসাহ পাই ভেতর থেকে। আধুনিক জীবনের সব দিকগুলো নিয়ে লেখালিখি থাকে — সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজ, রাজনীতি। কৃতবিদ্যদের লেখার পাশাপাশি নতুন প্রতিশ্রুতিবানদের মতামত জানতে পারি। শুধু চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্প নিয়ে কোন মনোগ্রাহী লেখা পড়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। চোখ এড়িয়ে গিয়েও থাকতে পারে। আমার সবচেয়ে পছন্দ প্ল্যাটফর্মের সারা শরীরে বড় যত্নের ছাপ। এত সুন্দর সম্পাদনা, প্রাসঙ্গিক ছবি ভিডিও ক্লিপিংয়ের সুচিন্তিত ব্যবহার! আমি নেটে পড়ায় খুব স্বচ্ছন্দ নই, কিন্তু চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম টানে। বসে অপেক্ষা করতে বলে। নতুন কামরাগুলো হাতছানি দেয়। তারপর ভরে দেয় নতুন নতুন অভিজ্ঞতায়। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের জন্য অনেক শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা।
প্রতিভা সরকার
‘আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশে’। জীবনানন্দ জানতেন না একদিন হরফগুলি ছাপাখানার দরজা পার হয়ে, সীমানা ছাড়িয়ে কতদূর চলে যেতে পারে। জানলে কী খুশি যে হতেন! লেখকের হাতে এই ডিজিটাল ইস্তেহার এক ধরনের বিপ্লব। আপনাদের দেওয়ালে আগুনের সেই ফুলকি আঁকা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা! সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
আমাদের শৈশব জুড়ে ছিল ট্রেন। ট্রেন, বেড়ানো, প্ল্যাটফর্ম, জলের বোতল ভরে ছুট্টে চলন্ত ট্রেনে ওঠা। এইসব অনুষঙ্গ হারাল না, শুধু নতুন জিনিস যোগ হতে শুরু করল যখন, ঠিক এক বছর আগে, আমরা পেলাম নতুন এক ওয়েবব্লগ, বা ওয়েবজিন। নাম তার চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম। লেখালেখির প্ল্যাটফর্ম, একেক কামরায় একেক পসরা। গুরুগম্ভীর থেকে লঘুচিত্ত, সব রকমের যাত্রী এতে অনায়াসে উঠে পড়তে পারেন। অনেক দূর যাক চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম। যশোধরা রায়চৌধুরী
শব্দ যেখানে সত্যের গভীর থেকে উঠে আসে, চাই আমাদের সকলের জন্য তেমন এক প্ল্যাটফর্ম গড়ে দিক চারনম্বর প্ল্যাটফর্ম। ট্রেনের কমপার্টমেন্ট বিভিন্ন ক্লাসের, কিন্তু রেলের প্ল্যাটফর্ম সবার জন্য। সবার উপস্থিতি সমান সেখানে। লেখা আর পড়ারও তেমনই জায়গা হয়ে বেঁচে থাক এই ওয়েবজিন। এমন একটা জনপরিসর না-থাকলে যে গণতন্ত্রও থাকে না।
স্বাতী ভট্টাচার্য
বাংলা ভাষায় ভালো ওয়েবজিন বেশ কিছু আছে। তবু যদি সার্বিক ভাবে আন্তর্জাতিক মানের কোনও বাংলা পত্রিকার কথা ভাবি, খুব বেশি নাম মনে আসে না। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম। এবং প্রথম থেকেই। বিষয় নির্বাচন, উপস্থাপনা, বিতর্ক উসকে দেওয়ার মত লেখা ছাপা, সব বিভাগেই এই পত্রিকা এতটা নজর কাড়ে, যে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার থাকে না। আর এই সবটাই ওঁরা করে ফেললেন মাত্র এক বছরে। আজ জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এই পত্রিকাকে। আবহমান হোক তাঁদের যাত্রা। সর্বজিৎ সরকার
সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষত ব্লগ বা ই-ম্যাগাজিন বা সাহিত্যের বিভিন্ন পোর্টাল অনলাইন আসার পর লিটল ম্যাগাজিন আর ‘ফিজিক্যালি’ বেঁচে থাকতে পারে না। খোলস ছেড়ে এখন সে অন্যরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারই একটি ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’। চিন্তা ও বিতর্ক উস্কে দেওয়া প্রতিবেদন বা নিবন্ধের জন্য যে প্ল্যাটফর্মে আমায় দাঁড়াতেই হয়। তবে উৎকৃষ্ট নিবন্ধ যতটা পাই, গল্প-কবিতার ক্ষেত্রে এই একবছরে কিঞ্চিৎ খামতি থেকেছে মনে হয়। আশা করি, পরবর্তী সংখ্যাগুলোয় এই অপ্রাপ্তি মিটে যাবে। একবছরের জন্মদিনে শুভেচ্ছা। টিম-‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’-এর জয় হোক। দেবতোষ দাশ