অশোক মুখোপাধ্যায়
(গত সংখ্যার পর)
জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র
জ্যোতির্বিজ্ঞান ভারতে স্বাধীনভাবে খুব বেশি দূর বিকশিত হয়নি। বৈদিক সাহিত্যে সূর্য এবং বৃহস্পতি, শুক্র ইত্যাদি দু একটি গ্রহের নাম আছে। কিন্তু তা নিয়ে সময়কাল নির্ধারণের কোনও প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে না। খ্রিঃ পুঃ চতুর্থ শতকে বেদাঙ্গজ্যোতিষ রচিত হলেও তাতে আকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলী সম্পর্কে খুব বেশি পর্যবেক্ষণের নমুনা দেখা যায় না। সূর্যকে কেন্দ্র করে সময় সূচিত করার বিদ্যা প্রাচীন ভারতীয়রা আয়ত্ত করে উঠতে পারেনি। তারা বরং চন্দ্রকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছে। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের (আপাত) বার্ষিক আবর্তন পথকে তারা ২৭টি নক্ষত্রের সাহায্যে খুব সুন্দরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। এর মধ্যে যে বারোটি নক্ষত্রের কাছে পূর্ণিমার চাঁদের অবস্থান, তাদের নামকরণের ভিত্তিতেই তারা বছরের ১২ মাসের নাম নির্দিষ্ট করেছিল। চিত্রা > চৈত্র; বিশাখা > বৈশাখ; জ্যেষ্ঠা > জৈষ্ঠ; শ্রবণা > শ্রাবণ; পুষা > পৌষ; মঘা > মাঘ; ইত্যাদি। পরবর্তীকালে গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তিতে সূর্যের পরিক্রমাপথকে অবলম্বন করে বারো রাশি এবং চন্দ্রের ভিত্তিতে বারো মাসকে মেলাতে গিয়ে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। কেননা, চান্দ্র বৎসর প্রায় ৩৫৪ দিনে আর সৌর বৎসর প্রায় ৩৬৫ দিনে সম্পন্ন হয় বলে উভয়ের মধ্যে গড়ে ১১ দিনের একটা তফাত থেকেই যেত। এর ফলে প্রতি তিন বছরে আবার একটা অতিরিক্ত মাস ধরে একে মেলাতে গিয়ে সেই মাসটিকে মলমাস হিসাবে চিহ্নিত করা হত।
প্রাচীন ঐতিহ্যের জোরে আজও হিন্দু ক্যালেন্ডারে সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান সূচি নির্ণীত হয় চান্দ্র তিথির ভিত্তিতে। চাঁদ মঘা নক্ষত্র পেরোলে শুক্লা পঞ্চমীতে সরস্বতী পূজা হবে। চাঁদমামা অশ্বিন নক্ষত্র পেরিয়ে এগোনোর পরে যে শুক্লা সপ্তমী তাতে দুর্গাপূজার বোধন হয়। ইত্যাদি। এর ফলে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরি করা এখনও একটা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সৌর রাশিচক্রের সাথে মাসগুলিকে মিলিয়ে তার মধ্যে তিথি ধরে ধরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা দেখা দেয়। তখন কিছু মাসের (আষাঢ় শ্রাবণ ইত্যাদি) দিনসংখ্যা ৩২ করে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। মেঘনাদ সাহা এক কালে বাংলা ক্যালেন্ডারের সংস্কার বিষয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। [Saha 1952] কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
জ্যোতিষশাস্ত্র কোনও বিজ্ঞান নয় বা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানানুশীলনের সঙ্গে তার কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। আধুনিক বিজ্ঞানের সমাজতাত্ত্বিক পরিভাষায় জ্যোতিষশাস্ত্র হচ্ছে পরিত্যক্ত জ্ঞান (rejected knowledge) — যা এক সময় যথার্থ জ্ঞান ছিল, কিন্তু কালের নিয়মে জ্ঞানের মূল ধারার বিকাশের সাথে তাল মেলাতে না পেরে যা একই জায়গায় থেমে এবং থমকে আছে। অনেকটা বন্ধ ঘড়ির মতো। কিংবা, পথ বদল করা নদীর ছিন্ন অংশের মতো। বাস্তবে, এ হচ্ছে এক ধরনের জ্ঞানের ফসিল। ফসিল থেকেও অনেক কিছু জানা যায়। সেই জন্যই এই ফসিল নিয়েও আমাদের কিছু কথা বলতে হবে।
ভারতে আজ অবধি যে জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা হয়, তার ভিত্তি হচ্ছে আলেক্সান্দারের আক্রমণের পরে আগত গ্রিক বা আলেক্সান্দ্রীয় জ্যোতিষশাস্ত্র। এই ব্যাপারে আমাদের আলোকপাত করে গেছেন স্বয়ং বরাহমিহির নিজে। তিনি আনুমানিক ৫০৫ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চসিদ্ধান্তিকা শীর্ষক যে গ্রন্থটি রচনা করেন, তাতে পাঁচটি উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্যোতিষবিদ্যার কথা উল্লেখ করেন। যথা:
ক) পৈতামহ সিদ্ধান্ত < বেদাঙ্গজ্যোতিষ;
খ) বাশিষ্ট সিদ্ধান্ত < পৈতামহ;
গ) পৌলিশ সিদ্ধান্ত < পল বা পওলুশ;
ঘ) রোমক সিদ্ধান্ত < রোম;
ঙ) সূর্য্যসিদ্ধান্ত (প্রাপ্ত)।
এই নামগুলি থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে অন্তত দুটি সিদ্ধান্ত (গ ও ঘ) বিদেশি উৎস থেকে আগত। এছাড়া, হাতের রেখা দেখে ভাগ্য গণনার যে জ্যোতিষীয় পদ্ধতি আমাদের দেশে প্রচলিত, তারও প্রামাণ্য গ্রন্থের নাম “হস্ত সামুদ্রিক শাস্ত্র”। হাত দেখার মধ্যে সমুদ্র কোত্থেকে এল? সমুদ্রপার থেকে এই বিদ্যার আগমনের স্পষ্ট স্বীকৃতি এখানে লক্ষণীয়।
উজ্জয়িনীর জ্যোতির্বিদ আর্যভাট, যিনি “আর্যভাটীয়” (৪৯৯) নামক গ্রন্থে তাঁর যাবতীয় পর্যবেক্ষণ লিখে রেখে গিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্র নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞানেরই চর্চা করেছিলেন। তাঁর অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুর্ণন, অর্থাৎ, আহ্নিক গতি এবং তার সাহায্যে দিন ও রাত্রির পর্যাবৃত্তের ব্যাখ্যা। এছাড়া আর্যভাট একটি বৃত্ত এঁকে তাতে বিভিন্ন মাপের জ্যা-এর উপর কেন্দ্র থেকে লম্ব টেনে ০০ থেকে শুরু করে ৯০০ পর্যন্ত ৩০৪৫΄ অন্তর বিভিন্ন কোণের জন্য সাইন অনুপাতের একটি সারণি তৈরি করেছিলেন। অনেকে অনুমান করেন, অষ্টম শতাব্দে আরবি পণ্ডিত আল-খোয়ারিজমি ভারত থেকে এই সারণিটি ইউরোপে নিয়ে যান এবং এর থেকেই পরবর্তীকালে ত্রিকোণমিতির জন্ম হয়।
আর্যভাটের সমকালে, চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দে, ভারতে আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন গণিতে শূন্যের কল্পনা। ইতিমধ্যেই এক থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যাগুলির সাঙ্কেতিক চিহ্ন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কেননা, ইন্দোচিনের ৬০৪ সালে প্রাপ্ত একটি প্রস্তর ফলকেও এই সংখ্যালিপিগুলির অস্তিত্ব দেখা গেছে। তবে, শূন্যের (আধুনিক) সাঙ্কেতিক চিহ্ন (০) সর্বজনীনভাবে গৃহীত হতে হতে বোধহয় নবম শতাব্দ লেগে যায়। শূন্য ব্যবহারের সঙ্গে ভারতীয় স্থান মান পাতন পদ্ধতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর ফলে যে কোনও বড় আকারের সংখ্যা লেখার উপায় অনেক সহজ হয়ে যায় এবং পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে কাজ করতেও বিরাট সুবিধা হয়।
শূন্য কীভাবে উদ্ভাবিত হল, তা একটা গভীর অনুসন্ধানের বিষয়। এখনও কেউ কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। আমার একান্ত নিজস্ব অনুমান, এখানে ক্লার্ক কথিত যুক্তিবাদপৃক্ত বস্তুবাদী চিন্তার এক অনন্য প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। খুব সম্ভবত, শূন্যের ধারণার উৎপত্তির পেছনে রয়েছে রাতের আকাশের সঙ্গে দিনের আকাশের তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ। কেননা, রাতের আকাশে দেখা তারাগুলো দিনের আলোয় মিলিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে পরিমাণগতভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলতে হয়েছিল, যে আকাশটা শূন্য বা খালি হয়ে গেল! এই জন্যই হয়তো আকাশের আর এক নাম শূন্য। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত অর্থে আমরা যেরকম বুঝি বা বলে থাকি, শূন্য মানে “কিছুই নয়” (nothing), “কিছুই নেই” (there is nothing) — এরকমটা নয়। শূন্য মানে হল নির্দিষ্ট বস্তুর অনুপস্থিতি (absence of something)। দিনের বেলায় আকাশে সমস্ত তারার অনুপস্থিতিকে দেখেই তাকে শূন্যতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর পরবর্তীকালে, দিগন্তরেখার সঙ্গে মিলিয়ে শূন্যের লিপি অঙ্কিত হয়েছে গোলাকার রূপে।
ভারতীয় সংখ্যা লিখন ও স্থান মান পাতন পদ্ধতি শূন্য সহ/ছাড়া সিরিয়াতে যায় ৬৬২-এ, বাগদাদে নিয়ে যান আচার্য কণক ৭৭৩-এ। আল-খোয়ারিজমি সিন্ধহিন্দ (সিদ্ধান্ত) গ্রন্থ অনুবাদ করে নিয়ে যান ইউরোপে (৮২৫)। লাতিনে অনুদিত হয় Algoritmi de numeroIndorum নামে। তারপর থেকেই ওখানে ধীরে ধীরে বীজগণিতের দ্রুততর বিকাশ শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই শূন্যের ধারণা এবং এই স্থান মান পাতন পদ্ধতি প্রাচীন ভারতের এক বিশাল মাপের অবদান হিসাবে সর্বত্রই কমবেশি স্বীকৃত।
রসায়ন ও ধাতুবিদ্যা
অন্যান্য দেশের মতোই প্রাচীন ভারতেও চিত্রশিল্পের পাশাপাশি পোশাক ও পাকা বাড়িঘরে রং লাগানোর প্রয়োজন থেকেই এক সময় রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছিল। এখানে আমরা যে সময়সীমার কথা বলছি, সেই কালে রসায়নবিদ্যার কতটা অগ্রগতি হয়েছিল, জানা যায় না। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রসায়ন চর্চার যে ইতিহাস লিখেছেন, তা মূলত মধ্যযুগের ভারতের। প্রাচীন ভারতের কথা তাতে তিনি খুব বেশি আলোচনা করেননি।
আমরা এখানে একটা বিশেষ অর্জন নিয়ে কথা বলতে চাই, যার মধ্যে প্রাচীন ভারতে ধাতুবিদ্যার চর্চা কতটা এগিয়েছিল সেই বিষয়ে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। আমরা জানি, দিল্লি, সুলতানগঞ্জ ও অন্যান্য স্থানে ৫ম শতাব্দে নির্মিত যে লৌহস্তম্ভগুলি রয়েছে, তাতে আজও খুব বেশি মরচে পড়েনি। এই স্তম্ভগুলির উপরে প্রচুর গবেষণা করে দেখা গেছে, আকরিক থেকে লোহার ঢালাইয়ের সময় তার মধ্যে কিছু পরিমাণে যে খাদ মিশে থাকে, যার মধ্যে কিছুটা ফসফরাস ঘটিত যৌগও উপস্থিত থাকত, তারই বিশেষ ভৌত রাসায়নিক ধর্মের কারণে এই লৌহস্তম্ভগুলোতে মরচে পড়েনি। বরং বলা ভালো, সামান্য মরচে পড়ার পর তা নিজেই স্তম্ভের গায়ের লোহার উপাদানের সঙ্গে জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে তার অতিরিক্ত জারণের পথ বন্ধ করে দেয়। রসায়ন শাস্ত্রের এই সমস্ত তাত্ত্বিক জ্ঞান না থাকলেও সেই কালে ধাতুকর্মীরা যে অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্ঞানের সাহায্যে এই অসাধ্য সাধন করেছিল, তার জন্যও তাদের অনেক সাধুবাদ প্রাপ্য। [মুখোপাধ্যায় ২০১৫ক]
এই চর্চা কেন?
অনেকেই মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ, যুক্তিবাদী শিবির, বামপন্থী দল বা মার্ক্সবাদী মহল জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে প্রাচীন ভারতের কী কী অবদান ছিল, তার কোনও খোঁজখবর রাখেন না। ফলত, তাঁরা প্রায়শই “কী ছিল জানা দরকার” গোছের যুক্তি মন্তব্য বা টিপ্পনী করে থাকেন। তাঁরা আসলে জানেনই না, দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানমনস্ক পণ্ডিতেরাই প্রাচীন ভারতের জ্ঞান সম্পদ উদ্ধার করে চলেছেন সেই ইংরেজ আমল থেকেই। হাতে লেখা পুঁথি উদ্ধার, আসল নকল যাচাই, সম্পাদনা ও মুদ্রণ, সংস্করণ — ইত্যাদি কাজ তাঁরাই অত্যন্ত ধৈর্য ও শ্রদ্ধার সাথে সম্পন্ন করে চলেছেন। নিচে আমি এরকম সামান্য কিছু বইপত্রের উল্লেখ করছি, যাতে বোঝা যায়, এই কাজটি কত কাল আগে থেকে কীভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে।
- P. K. Acharya (1935), “University Life in Ancient India”, Science and Culture, December 1935.
- A. S. Altekar (1934), Education in Ancient India; Benaras.
- E. R. Bevan (1922), “India in Early Greek and latin Literature”, The Cambridge History of India, Vol. I.
- W. Brennard (1896), Hindu Astronomy; Straker& Sons, London.
- W. E. Clark (1930), The Arbhatiya of Aryabhata; Chicago.
- W. E. Clark (1937), “Science”; in G. T. Garrat (ed. 1937), The Legacy of India; Oxford University Press, London.
- B. Datta (1932), The Science of Sulba—a Study in Early Himdu Mathematics; Calcutta University.
- B. Datta & A. N. Singha (1935), History of Hindu Mathematics, Vols. I-II; Lahore.
- Ekendra Nath Ghosh (1932), “Studies in Rig-Vedic Deities — Astronomical and Meteorological”, Journal of the Asiatic Society of Bengal.
- A. R. Rudolf Hoernle (1907), Studies in the Medicine of Ancient India, Parts I-II; Oxford University Press.
- G. R. Hunter (1934), The Script of Harappa and Mohenjodaro and its connection with other scripts; London.
- G. R. Kaye (1915), Indian Mathematics; Calcutta and Simla.
- A. B. Keith (1921), Indian Logic and Atomism — an Exposition of the NyayaVaiceshika Systems; Oxford.
- M. S. Krishnan (1955), Iron ores of India; Indian Association for the Cultivation of Science, Calcutta.
- R. C. Majumdar (1950), “Scientific Achievements of Ancient Hindus: Chronological and sociological background”, Paper Read at Symposium on History of Science in South Asia, New Delhi.
- Radha Kumud Mookerji (1951), Ancient Indian Education; MacMillan.
- Girindra Nath Mukhopadhyay (1913), The Surgical Instruments of the Hindus, Vols. I-III; Calcutta University.
- Girindra Nath Mukhopadhyay (1913), History of Indian Medicine, Vols. I-III; Calcutta.
- Panchanan Neogi (1918), Copper in Ancient India; Indian Association for the Cultivation of Science, Calcutta.
- Stuart Piggot (1950), Prehistoric India; Penguin.
- M. S. Randhawa (1946), “Role of Domesticated Animals in Indian History”, Science and Culture, Vol. 12 No. 1.
- P. C. Ray (1902-09), History of Hindu Chemistry, Vols. I-II; Calcutta.
- Benoy Kumar Sarkar (1918), Hindu Achievements in Exact Sciences; London.
- Brajendra Nath Seal (1915), The Positive Sciences of the Ancient Hindus; Longman, Green and Co., London.
- K. S. Shukla (1950), “Chronology of Hindu Achievements in Astronomy”, Paper Read at Symposium on History of Science in South Asia, New Delhi.
- Bhagvat Sinhjee (1896), A Short History of Aryan Medical Science; MacMillan.
- D. E. Smith and L. C. Karpinsky (1911), The Hindu Arabic Numerals; Boston and London. H. R. Zimmer (1948), Hindu Medicine; Baltimore.
- V. A. Smith (1897), “The Iron Pillar of Delhi”, Journal of Royal Asiatic Society, London.
- G. Thibaut (1875), “On the Sulvasutras”, Journal of Asiatic Society of Bengal, Vol. 44.
- Daniel Uranovic (n. d.), “Indian Prelude to European Mathematics”, Osiris, Vol. I.
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। প্রাচীন ভারতে আমরা যে সমস্ত জ্ঞানবিন্দুর সন্ধান পাচ্ছি, তা আজ আর পর্যাপ্ত জ্ঞান নয়, মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার তাকে আত্মস্থ করে এবং ছাড়িয়ে আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এগুলো আজ ঐতিহাসিক অর্থে, কী ছিল অর্থে, জানার বিষয়, কাজে লাগবে বলে জানার বিষয় নয়। প্রাচীন জ্ঞানের সেই স্তর দিয়ে আজ আমাদের কোনও কাজের প্রয়োজনই মিটবে না। কিন্তু আমাদের বর্তমান জ্ঞানসম্ভার কোথা থেকে শুরু হয়েছিল, সেই অর্থে এগুলো খুবই ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হবে।
উপসংহার
এবারে একটা ভিন্নতর প্রশ্ন। প্রাচীন ভারতের অতীত ইতিহাসের এত সমস্ত গৌরবময় অধ্যায় থাকা সত্ত্বেও এগুলোর উল্লেখ বা চর্চা না করে বিজেপি সঙ্ঘ পরিবারের একদল লোক কেন বারবার নানারকম অসত্য অবাস্তব দাবি পেশ করে থাকে? বৈদিক বিমান, মহাভারতে স্টেমসেল গবেষণা, প্লাস্টিক সার্জারি, ইত্যাদি? শূল্বসূত্র থেকে সোজা পিথাগোরাসের উপপাদ্য? আর্যভাটের কোণানুপাতের সারণি থেকে সিধে ক্যালকুলাস? এ কি নিছক অজ্ঞানতা? জ্ঞানী লোকেদের মতিভ্রম? না, অন্য কিছু?
না। কোনওটাই নয়। আমার স্থির বিশ্বাস, বুঝেশুনেই এরা সত্যকে অস্বীকার করে যাচ্ছে, আর অসত্যকে তুলে আনছে।
কিন্তু কেন?
যাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সাথে আন্তরিকভাবে যুক্ত, তাঁরা জানেন, সেখানে যে কোনও ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলেই প্রথমে একজন গবেষককে দেখে নিতে হয়, সেই বিশেষ জায়গায় কী কী কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। যে অবধি কাজ হয়েছে, তিনি তার পর থেকে শুরু করবেন। আগেকার জানাকে অবলম্বন করেই তিনি সামনের দিকে এগোবেন। নতুন কিছু জানবেন ও জানাবেন। জ্ঞানের জগতে এইভাবেই সংযোজন ও সম্প্রসারণ হতে থাকে। ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে এইখানেই তার একটা মস্ত তফাত। ধর্ম বিশ্বাসে একবার আদি ধর্ম প্রবর্তক গুরুজিরা যা বলে গেলেন, তাই শেষ কথা ও সর্বোচ্চ জ্ঞান! তা থেকে শুধু নেওয়া যাবে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভাব সম্প্রসারণ করা যাবে। টীকা টিপ্পনী যোগ করা যাবে। কিন্তু তাতে আর জ্ঞানের নতুন কোনও বিন্দু সংযোজন করা যাবে না। এই কারণে ধর্মগ্রন্থ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা চলে না। শুধু অন্ধভাবে ভক্তি ভরে মেনে চলতে হয়।
বিজ্ঞানের জগতে চোখ বুজে মেনে চলার প্রশ্নই নেই। যাকে ভিত্তি করে আমি পা বাড়াব, তাতে যদি ভুল থাকে, গলদ থাকে, ফাঁক থাকে, আর সেটা যদি আমি জেনে না নিই, তাহলে আমি যা করব, তাতেও ভুল থেকে যাবে। তাই নিশ্চিত হতে হবে। আবার যে কাজ হয়ে গেছে, তাই নিয়ে পড়ে থাকার মানে হয় না। তাই কদ্দুর কী কাজ হয়ে গেছে তাও জেনে নিতে হয়। এই সব কারণেই বিজ্ঞানের জগতে খুব সচেতনভাবেই অতীতের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করা নতুন গবেষণা ও অনুসন্ধানের একটা অন্যতম প্রধান শর্ত। আর ঠিক এই কারণেই বিজ্ঞান চর্চার সাথে বিজ্ঞানের ইতিহাস চর্চা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। তার মধ্য দিয়েই তাদের যুক্তিবোধ ও ইতিহাস চেতনা এক সঙ্গে বিকশিত হতে থাকে।
সুতরাং, যারা চাইবে মানুষের মধ্যে যুক্তিবোধকে হত্যা করতে, ইতিহাস চেতনাকে ধ্বংস করতে, তাদের পক্ষে প্রাচীন ভারতে জ্ঞানবিজ্ঞানের সত্যকারের অগ্রগতির খবর প্রসারিত করা সম্ভব নয় শুধু নয়, অসুবিধাজনকও বটে! তাদের চাই মিথ্যা গর্বের ফানুস। উগ্র জাত্যাভিমান! আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ! বিজ্ঞানের ইতিহাসকে উড়িয়ে দিয়ে ইউরোপ আমেরিকার আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলিকে দু তিন হাজার বছর আগে ভারতের মাটিতে ঘটিয়ে দেওয়া। স্বভাবতই যাঁরা প্রকৃত বিজ্ঞানের চর্চা করেন, বিজ্ঞানের ইতিহাসের খবর রাখেন, তাঁদের পক্ষে সেই সব গুল্প বিশ্বাস করা, মেনে নেওয়া, প্রচার করা সম্ভব নয়। তাঁরা এর বিরোধিতা এবং সমালোচনা করবেনই। আর ঠিক তখনই একটা গণ-আওয়াজ তুলে দেওয়া যাবে — এই দেখ, বলেছিলাম না, ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তিবাদী মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট লোকজন দেশের ঐতিহ্য মানে না, মানতে চায় না, দেশের অতীত নিয়ে তাদের কোনও গর্ববোধ নেই, ইত্যাদি!
এই দিক থেকে একটা বিপদ ঘনিয়ে তোলা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। বিশেষ করে বিভিন্ন দফায় বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতায় আসীন হতে শুরু করার পর থেকে। বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিকে দীর্ঘদিন ধরেই এদেশে অবহেলা করা হয়েছে। কংগ্রেসের আমল থেকেই। তাদের শিক্ষানীতির মাধ্যমেও। জহরলাল নেহরুর বৈজ্ঞানিক মানস (scientific temper) সৃষ্টির শ্লোগানকে খানিকটা তামাশা করেই, তাঁরই দলের নেতামন্ত্রীরা অবৈজ্ঞানিক চিন্তার প্রচার প্রসার করে গেছেন নিশ্চিন্ত এক আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে। তার ফলে সারা দেশের আমজনতার তো বটেই, এমনকি শিক্ষিতদের এক বৃহত্তর অংশের মধ্যেও পৌরাণিক গল্পগুজবকে সত্য ঘটনা বলে বিশ্বাস করা, “ব্যাদে সব আছে” বলে মনে করা, প্রাচীন মুনিঋষিরা ত্রিকালে জ্ঞাতব্য সমস্ত কিছুই জানতেন বলে ভাবতে পারা, ইত্যাদি — স্বাভাবিক ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছিল। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার এটা জানত। তারা এই পরিস্থিতির ভালোরকম ফায়দা তুলতে চেয়েছে গত কয়েক বছরে।
তারা জানে, সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি প্রকৃত ইতিহাসের চর্চা হয়, প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ঘটনাভিত্তিক আলোচনা হয়, তখন তারা অনেক ভুল ভ্রান্তি অন্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তারা অনেক জিনিস যুক্তি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ তুলনা করতে শিখবে। তাদের তখন আর যা হোক কিছু বুঝিয়ে দেওয়া যাবে না।
অথচ বোঝাতে তো হচ্ছে! এক বিরাট সংখ্যক সাধারণ মানুষ এগুলোর দ্বারা প্রভাবিতও হচ্ছে। গো-ভজনা, মুসলমান বিদ্বেষ, কাশ্মীর নিয়ে গা-গরম দেশপ্রেম, পাকিস্তান বিরোধী জিগির, ইত্যাদি তো আছেই। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, সেই মনমোহনের আমল থেকেই ভারতীয় পুঁজিবাদ খুব দ্রুত অর্থনীতি রাজনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে যতটুকু সীমিত গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল, সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার প্রভাবে যে সামান্য একটা জনমুখী অর্থব্যবস্থার ঠাটবাট তৈরি করা হয়েছিল, ১৯৯১-উত্তর “উদার”-নীতির আমলে সেই সমস্ত ভেঙে দিয়ে ভারতীয় পুঁজিবাদ তার দাঁত-নখ বের করে ফেলেছে। আর কংগ্রেসি রাজনীতিতে যে ঢিলেঢালা ভাব ছিল, বিজেপি তা কাটিয়ে উঠে দ্রুত সমস্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে শাসক দলীয় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে ফেলতে চাইছে। প্ল্যানিং কমিশন ভেঙে দেওয়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাথায় দালাল বসানো, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সঙ্ঘের লোকজনকে নিযুক্ত করা, বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা, পার্লামেন্টের বাইরে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া — এসব এখন এক সাধারণ ঘটনায় পর্যবসিত।
গোপাল গান্ধী ২০১৪ সালে (তখনও মনো আমল) সিবিআইয়ের প্রতিষ্ঠাদিবসের ভাষণে অভিযোগ করেছিলেন, একটা কর্পোরেট পরিবার (রিলায়েন্স গ্রুপ) দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদের সিংহভাগের মালিক ও নিয়ন্ত্রক হয়ে বসেছে। দিল্লির সরকার তাদের কথায় ওঠবোস করে চলেছে। সেই অভিযোগ আরও সাংঘাতিকভাবে এখন মূর্তরূপ ধারণ করেছে। তবে হ্যাঁ, একটা নয়, একাধিক কর্পোরেট গ্রুপ। আম্বানির পাশাপাশি আদানি, বেদান্ত, এশার, মাল্য, রামদেব, ইত্যাদিরাও এই সার্বিক লুটের খেলায় এখন অংশীদার। এই লুটের অংশ হিসাবেই সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তারা ফেরত দিচ্ছে না, সেই অবস্থাতেই আবার ঋণ নিচ্ছে এবং মোদীর বদান্যতায় পেয়েও যাচ্ছে। ছত্তিসগড়ে অ্যালুমিনা সহ বিবিধ খনিজ আকরিক উৎসের উপর বিনি পয়সায় দখল নেওয়ার জন্য আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে পাহাড় জঙ্গলের যথেচ্ছভাবে ইজারা বণ্টন চলছে। কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার একর জমি পতঞ্জলিকে বিনা পয়সায় দান করা হচ্ছে তার ব্যবসাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য। এইভাবেই বড় নোট বাতিলের হিংস্র আগ্রাসনে দেড় শতাধিক নাগরিককে হত্যা করে এক ধাক্কায় কয়েক লক্ষ কোটি টাকা মানুষের পকেট থেকে জবরদস্তি কেটে এনে ব্যাঙ্কের শূন্যস্থান পূরণের ব্যবস্থা হয়েছে। বিজয় মাল্যর পর নীরব মোদী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে পাহাড়-প্রমাণ অঙ্কের টাকা লোপাট করে বিদেশে নিশ্চিন্তে পালিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, বর্তমান বিজেপি সরকার কাদের স্বার্থে এবং কাদের জন্য শাসন চালাচ্ছে! সুপ্রিম কোর্টের বাধা সত্ত্বেও জোর করে সর্বত্র আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করে জনসাধারণের ব্যক্তিগত তথ্য ভারত সরকার হয়ে আমেরিকান সরকারের মহাফেজখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি একটা বিল আনা হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক দেউলিয়া অবস্থায় পতিত হলে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত অর্থ থেকে টাকা কেটে তাকে রক্ষা করা হবে। এ এক বিপ্র-অভিস্রবণ প্রক্রিয়া (reverse osmosis), যেখানে বিপুল পুঁজির মালিক আম্বানি-আদানি-বেদান্তদের অনাদায়ী ঋণের বোঝার ভার কার্যত বইতে হবে নিঃস্বপ্রায় আমজনতাকে।
কিন্তু এই সব চূড়ান্ত জনস্বার্থ হত্যাকারী পদক্ষেপগুলোকে লোকচক্ষুর থেকে প্রথমে আড়াল করে রাখতে হবে এবং তারপর সাধারণ মানুষকে অন্য দিকে মাতিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা খানিকটা বোঝার পরও এর দিকে যথেষ্ট মনঃসংযোগ না করে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও মনন-বিভাজন, গোরক্ষার হুজুগ, লাভ জেহাদ রোখা, পাকিস্তান বিরোধী জিগির, ইত্যাদির নামে যত্রতত্র হামলা চালিয়ে সঙ্ঘ পরিবার তাদের নানারকম সংগঠনের মাধ্যমে সারা দেশে এক উগ্র ধর্মান্ধ হিংস্রতার জন্ম দিয়ে চলেছে। দেশীয় ঐতিহ্যের নাম করে প্রাচীন কালজীর্ণ জাতপাতের ঘৃণা বিদ্বেষকে নতুন করে চাগিয়ে তুলে বিভিন্ন প্রান্তে দলিতদের উপর বর্বর আক্রমণ ও অবমাননার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মতোই ভারতেও একের পর এক নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে, এম কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশ প্রমুখকে হত্যা করে এরা যুক্তিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রতিবাদী মুখগুলোকে ভয় দেখিয়ে বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করছে।
যাঁরা এই সব দুর্যোগ দেখে একে রুখবার কথা ভাবছেন, তাঁদের উপায়ের কথাও ভাবতে হবে। অযুক্তি কুযুক্তি অন্ধতা অজ্ঞতা এবং হিংসার জবাব দিতে হবে যুক্তি তথ্য সত্য জ্ঞানের প্রবলতর চর্চার মাধ্যমেই। শেষ পর্যন্ত তার শক্তি অনেক বেশি। ইতিহাসে এই শক্তিই শেষ অবধি টিকে যায় এবং বিজয় লাভ করে। ব্রুনোর হত্যাকারী, গ্যালিলেওর নির্যাতনকারীদের নাম মানুষ বহু কাল আগেই ভুলে গেছে; ব্রুনো গ্যালিলেওরা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন! বাইবেলের বিদ্যা এখন শিশুদের হাস্যরসের অফুরান জোগানদার। আর তাঁদের নিরলস অকুণ্ঠ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত জ্ঞানভাণ্ডার মানব জাতির যৌথ সম্পদ হয়ে রয়ে উঠেছে। আমাদেরও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রাম মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জীবন-জীবিকার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ভারতের প্রাচীন কালের প্রকৃত অর্জনগুলিকে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যে আজগুবি বৈজ্ঞানিক দাবিপত্রের কোনও প্রয়োজনই সেখানে থাকবে না! তারপরেও যারা ঋগ্বেদে বিমান চালাবে, পুরাণে জেনেটিক্স আপলোড করবে, গান্ধারীর ক্লোনিং করে শতপুত্র বানাবে, সাধারণ মানুষ শুধু তাদের ভুলটা ধরে ফেলবে না, এই সব বিভ্রান্তি প্রচারের নিগূঢ় উদ্দেশ্যও ধরে ফেলবে!
তথ্যসূত্র
- অশোক মুখোপাধ্যায় (২০১৫ক), “দিল্লির লৌহস্তম্ভ: ক্ষয় নিরোধ রহস্য”; একুশ শতকের যুক্তিবাদী, বইমেলা সংখ্যা ২০১৫।
- অশোক মুখোপাধ্যায় (২০১৫ক), “প্রাচীন ভারতে “আধুনিক”(?) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খাসখবর”; অনীক, শারদ সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৫।
- সমরেন্দ্র নাথ সেন (১৯৯৪), বিজ্ঞানের ইতিহাস (দুই খণ্ডের অখণ্ড সংস্করণ); শৈব্যা প্রকাশ বিভাগ, কলকাতা।
- Marc Bloch (1984), The Historian’s Craft; Manchester University Press, Manchester.
- Walter Eugene Clark (1937), “Science”; in G. T. Garrat (ed. 1937), The Legacy of India; Oxford University Press, London; pp. 339-40.
- F. R. Hoernle (1907), Studies in the Medicine of Ancient India; London.
- Damodar Dharmananda Kosambi (1975), An Introduction to the Study of Indian History; Popular Prakashan, Mumbai.
- Meghnad Saha (1952), “The Reform of Indian Calendar”, Science and Culture, Vol. 18 No. 2.Also published as a pamphlet.
- Kohei Saito (2016), “Marx on Ecology: New insights from his Notebooks”; Analytical Monthly Review, Vol. 13 No. 11 (February 2016).
- R. E. M. Wheeler (1968), The Indus Civilization; Cambridge University Press.