দুটি কবিতা
মৃত্যুবাসর
(১)
স্বপ্নের ভেতর বেশ খানিক অপেক্ষা করতেই দরজা খুলে যায়। একটা ছটফটে মেয়ে হাতে এঁটোকাঁটা সমেত চুমু খেয়ে গেল। এসব দাগ ধোয়া যায় না। ঝুরঝুরে বাড়িঘর, যেন এক একাশি বছরের পুরোন ফোয়ারার সমস্ত জল শেষ হয়ে গেছে। খুব নীচু হয়ে একটা জং ধরা শান্ত মানুষ আবছা আলোয় চশমা খুঁজছে। বালিশের নীচে, তুলোর ভেতর থেকে বার করে আনতে চাইছে কিছু হালকা বাতাস। এতদিন পর মনে হচ্ছে মৃত্যুর সাথে তার বাক্যালাপ ফুরিয়ে এসেছে।
(২)
সাইকেলে প্যাডেল করতে করতে একটা পার্কে পৌঁছে যায় সন্তু। আজ ক্রিসমাস, কারা যেন আকাশে বেলুন উড়িয়ে দিয়েছে, হরেকরকম! প্রত্যেকটা বেলুনের শ্বাসযন্ত্র দুর্বল হতে হতে একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। আর মাঠ থেকে সেগুলো টুকিয়ে এনে সে একটার পর একটা আঙুরের থোক বানাবে।
সন্তু অপেক্ষা করছে; পরবর্তী মৃত্যুর।
(৩)
একটা আধাসেলাই জামা রেখে লোকটা মরে গেলো। সন্ধে থেকে পাড়াপড়শি ভীড় করে আছে বাড়ির সামনে। একটা গোটা জীবন সেলাই করতে করতে শেষমেশ এতগুলো ফলস পড়ে যাবে খেয়ালই করেনি। সূচের ভেতর সুতো ভরতে ভরতে কাকে যে বুকের বাতাস ধার দিয়েছিল কে জানে! লোকটার তো সব গেল, অথচ জামায় যে বুকের কাছে পকেট ছিল না, সেটা কেউ খেয়ালই করল না।
বিজ্ঞাপন
প্রতি রাতে একবার করে আত্মহত্যা করি।শহরের সমস্ত হোর্ডিং জুড়ে কে যেনো টাঙিয়ে রেখেছে এক বিষাদগ্রস্ত নারীর মুখ…। প্রেমিকার সাথে হেঁটে যেতে যেতে মেয়েটিকে আরও বিষণ্ণ বোধ হয়। প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কীভাবে যেন মিল পাই মেয়েটির চোখ,ঠোঁট,বুক…ওকে জিজ্ঞাসা করি, এ কি তোমারই ছবি? মৃদু হেসে ও আমায় বাস ধরতে বলে,বাসের ভিতরে উঠে দেখি সেই বিষণ্ণ হোর্ডিং নিয়ে দুটি ছেলে চলেছে বিধাননগরের দিকে… বাসচালক এসব দেখে একটু বিষণ্ণ হয়ে পড়েন…মাঝরাস্তায় নেমে যাই… এবার হোর্ডিং লাগাতে আমাকে তিনতলা বাড়ির ছাদে উঠতে হবে। বেল টিপতেই যে মেয়েটি বেরিয়ে এলো,আজ তার চোখে মুখে কোনো বিষণ্ণতার ছাপ নেই।ওর হাত ধরে ওপরে উঠে যাই,সারা শহর জুড়ে ওকে টাঙিয়ে রাখব অলঙ্কৃত এক বিজ্ঞাপনের জন্য।