Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তিনটি কবিতা

প্রসূন মজুমদার


প্রার্থিত


নৈঃশব্দ্য অভ্যাসে আজ পুনর্বার ব্যর্থ ও পরাস্ত হইলাম।
অতঃপর দাঁড়াদীর্ণ মূর্ছা ও পতন।
অজ্ঞানতা অমৃততুল্য।  এই জ্ঞানে স্তব্ধতায় আছি।
কাঁচি ও ক্ষুরের স্পর্শ গোক্ষুরের – তুল্য তবু  ভ্রমে
দেখিতেছি জন্মপূর্ব কালভৈরবের গূঢ় দুন্দুভি – নিনাদ।
প্রলয়ের সম্ভবনা? যম? যক্ষ?  ঝক্কিহীন ঘুম?
কেহ ইত্যাকার স্বপ্নে গাহিতেছে মালয়ী পান্তুম।
উদাত্ত সঙ্গমমাত্র স্বপ্ন আর বাস্তবের ঘোরে
দেখিতেছি কালচক্র দুর্নিবার, গুহ্যদ্বারে ঘোরে।
বাঁচাও হে মহাশব্দ, ওঁ ধ্বনি, অজরা,অক্ষরা
স্তব্ধতার মূর্তিকল্পে  জ্ঞানহীনে ভোলাও নখরা।

 

প্রেতজন্ম

জ্যোৎস্নার ঢেউ ভেঙে আমি তাকে এগোতে দেখলাম।
ছায়ার ভিতরে। মৃদু, হিম উপচ্ছায়া।
সামান্যত ঝুঁকে,কিছু ম্লান মুখে। বিম্বিত ধূসর।
কেঁখে কেঁখে নিয়েছিল চেতনার সর।
সেই থেকে অপেক্ষায় আছি।
বিস্তীর্ণ শ্মশান জুড়ে শহরের সব কানামাছি
শুষে নেয় পচনের ঘাম।
ঘুমের ভেতরে, ক্বাথে,ঢাক বাজে চড়াম চড়াম
মারের ভেতরে মারী আড়াআড়ি কুণ্ডলী পাকালো।
শ্মশানে, ভাগাড়ে, একা খুঁজি সেই সরে যাওয়া আলো
রহস্য-ছায়ার সেই সরে সরে যাওয়া।
নিজের প্রেতের পাশে ঝুঁকে আসে শব্দহীন শবগন্ধী হাওয়া।

 

ডাকিনী-সংকেত

সভ্যতার থুতু যেন অতিমাত্রা-ক্ষার। সারাগায়ে অসহন ফোস্কার দাগ। ক্ষত থেকে পোড়া স্নায়ু কুরে কুরে মগজে বসাই। অসভ্যতার গায়ে ঠেস দিয়ে বসি। স্পর্শের বিষ থেকে বিকট ডাকিনী, ধোঁয়ার হাসির মতো গোল্লাপাক খেতে খেতে জাগে। নিভাঁজ তাকায়।হাসে। শ্মশান-অগ্নির থেকে পোড়াকাঠ তুলে নিয়ে আঙরায় ঠোঁট পুরে হাসে। এত অগ্নি! এত জ্বালা! এত তীক্ষ্ণ সুখ! বর্বরতা, প্রিয় ধর্ম, আরণ্য স্বভাব! কঠোর মসীর নিচে ডুবে যেতে এতটা আরাম! সমস্ত শরীর জুড়ে ঘাম। সফল সঙ্গম শেষে যেন তীব্র ঘোর। নেমে যেতে যেতে শুধু মনে হয় ভোঁর ঘোরে শরীরের প্রতিটি গুহায়। বন্যতার অন্ধকার নিয়ে গেলে সম্ভ্রান্ত আগুনে দহনের ক্ষত থেকে পারিজাত – ঘ্রাণ ঝরে মৃদু।

ডাকিনী- বিকেল এসে এই দেহে, একার নাভিতে জলপদ্ম জাগিয়েছে যদি,
আমার সমগ্র দৃষ্টি, অসভ্য-বর্বর দৃষ্টি, ডাইনের হাসি থেকে জানুসন্ধি -হাঙর অবধি।