Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

জুন পর্ব : দুই

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

 

স্বরবর্ণ

অনেকদূর যেতে যেতে পিছন ফিরলেই দেখবে ছায়া তোমাকে ছাড়েনি। তুমি আবছা হয়ে উঠছ বরং কিছুটা। আলো শুষে নিয়ে সে আজকাল বাকপটু, ক্ষিপ্র ও অচেনা।  তুমি ভয় পাবে। এতবছরের বিশ্বস্ত প্রতিরূপ বদলে যাওয়ার আগে ইশারামাত্র ছিলনা। তুমি প্রত্যাখ্যান খুঁজে পাবে, স্বভাবত, বাদলপোকার মত উচাটন লক্ষ্যভ্রষ্ট ওড়াউড়ি শেষে পড়ে যাওয়া পাবে। তাদের পাখনা পুরোপুরি ডানা হয়ে ওঠার অপেক্ষা শিখতেই চেয়েছিল। তোমার এঁকে দেওয়া কাঠামোর ভিতর হাঁসফাঁস ফুরিয়ে যাচ্ছিল শুধু। তাই ছায়া আপাতত সরিয়ে রেখেছে মায়ামুকুর। এই মুক্তি তোমাকে জাপ্টে ধরেছে এতটাই– ওকে বাদ দিয়ে নিজের শরীর উচ্চারণ করতে পারছ না আর– দ্যাখো!

ব্যঞ্জনবর্ণ

পাখিদের ওড়ার শব্দ মাথার গভীরে তরঙ্গ ছড়িয়ে ছড়িয়ে  একসময় রাতফুলের তীব্রতার দিকে চলে গেল। বৃষ্টি আসার আগে আকাশ ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে আঁশবঁটিতে। ধাঁধিয়ে ওঠা চোখ হাতের মধ্যে নিয়ে ধুয়ে নিচ্ছে নদীজল। এই দান প্রতিদানের খেলায় ঢেউ ও হাওয়া পরস্পর বিনিময় সেরে নেয় ঠান্ডা নুড়ির মসৃণে। তারপর কাঠের উনুন থেকে ধোঁয়া মেখে মেখে ঢেঁকি শাক লালচে বাদামী ভাতে লিখে ফেলে আসমুদ্র খিদের দ্রাঘিমা। আবহাওয়া সংবাদের সতর্কতা মুঠো পাকিয়ে দিগন্তে ছুঁড়ে দিতেই জালের মধ্যে লাফিয়ে উঠছে মাছের সংসার। কত ধানে কত চাল মেপে তোলে ছটফট আঙুল। নৌকোর পেট থেকে দুজোড়া ডানা– একসময় আকাশের থেকে বড়ো হয়ে ওঠে।

 

প্লুতস্বর

আমি তো জানি গাছের ছায়া রঙ বদলায়, পাতা ঝরার সময় আসে যায় আলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে। আর শিকড় গভীর অব্ধি চলাচল লিখতে লিখতে আপাত স্থির, শ্রবণবিন্দুতে গাঢ়। নি:শর্ত বোঝাপড়ার আস্থায় বারবার প্রতিশব্দহীন উচ্চারণ সাজিয়ে ফিরে আসতে থাক। তখন পুনর্জন্মের প্রস্তাবনায় আমি খুঁজে পাই এমন অনেক রূপকথা যা বহুদূরের নক্ষত্রের মত আসলে মৃত্যুর পরও এতটা আলো হয়ে আছে। ইন্টারল্যুডের ভিতর তোমার হাসি ও কান্নার শব্দ ইমনে কল্যাণে। ফাঁকা হয়ে আছে গতিপথ আর তোমার নাম ভেসে ভেসে কতদূর থেকে চলে যাচ্ছে পাখির ডাক পেরিয়ে। সমীকরণে চিরকাল অপটু আমি শুধু হাওয়া থেকে কুড়িয়ে তুলি কমা ও সেমিকোলন!