চার নম্বর নিউজডেস্ক
রেপমার্ডারচুরিডাকাতিরাহাজানিহানাহানিঘুষ। খবর কাগজ খুললে, টিভি খুললে, ফেসবুক খুললে সারাক্ষণ সারাক্ষণ সারাক্ষণ একই খবর একই খবর একই খবর। ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না। এ যেন এক নিত্য আখ্যান। এ যেন এক রুটিন। এ যেন এক বিরক্তির পর বিরক্তি এসে জমে জমে পাহাড় হয়ে গেছে মনে। সেই ভালো না লাগার পাহাড়ে উঠেই আমরা রোজ দেখি আমাদের পৃথিবীকে। মজাটা দেখুন, এই যে ভালো না লাগার পাহাড়… এতে উঠে পৃথিবীকে দেখতে হলে আপনাকে মাথা নীচু করেই দেখতে হবে। দেখতেও তো হয় তাই। মাথা নীচু করে দেখতে হয়। মাথা নীচু করাটাই আজকাল রেওয়াজ হয়ে গেছে আমাদের। লজ্জায় মাথা নীচু করে দেখতে দেখতে হয়তো একদিন বেঁকে যাবে আমাদের মেরুদণ্ডটাও। সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারা একটা সমাজের প্রতীক হয়ে যাবে আমাদের শরীরও। এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ সেই ভালো না লাগা পাহাড়ে হাওয়া বইয়ে দেয় একটা দুটো শব্দ। তেমনই দুটো শব্দের নাম সেনেগাল এবং জাপান। জাপানের নাম মোটামুটি সবাই জানি। সেনেগাল তত পরিচিত নয়। পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ সেনেগাল। তা হঠাৎ এই দুটো দেশের নাম করলাম কেন? কারণ, এই দুই দেশের জনগণ একটা কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সেটা দেখে তাবড় বিশ্বের তাবড় তাবড় মানুষের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেছে। এই দুই দেশের যে সব মানুষ রাশিয়ার ফুটবল বিশ্বকাপে খেলা দেখতে গেছেন, তাঁরা খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিজেদের উদ্যোগে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করে দিয়েছেন। চিপসের প্যাকেট, কোল্ডড্রিংক্স খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত কাগজের গ্লাস, কাগজের ব্যানার, বিয়ারের বোতলের ছিপি… এই সব কিছু বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে তুলে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশের নানান সংবাদ-মাধ্যমে। এই খবর ব্যাপক হারে দ্রুত শেয়ার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভাইরাল হয়ে গেছে সেই খবর। কিন্তু কেন? এটা কি খুব মহৎ কিছু কাজ? নিজেরা কোনও জায়গায় নোংরা ফেললে সেটা পরিষ্কার করে দেওয়াটা তো আমাদেরই কর্তব্য। কিন্তু আমরা করি কি? কলকাতা ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবের মাঠে, সল্টলেক স্টেডিয়াম, ইডেন গার্ডেন্সে যারা খেলা দেখতে যান তাঁরা জানেন, খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্টেডিয়ামের অবস্থা কীরকম নরক হয়ে থাকে! চারদিকে পানের পিক, লজেন্সের প্যাকেট, বাদামের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, মদের ভাঙা বোতল, কাগজের টুকরো আরও কত কী ছড়িয়ে থাকে যত্রতত্র। আন্ডার সেভেন্টিন বিশ্বকাপের আগে সল্টলেক স্টেডিয়ামের রিনোভেশন করা হয়েছিল। গ্যালারিতে বাকেট সিট, নতুন ঝাঁ চকচকে বাথরুম। কিন্তু খেলার পরে সেই সব প্লাস্টিকের চেয়ারে দাঁড়িয়ে উদভ্রান্তের মতো নাচ, বাথরুমের টাইলসে পানের পিকের দাগ সব মিলিয়ে কহতব্য নয়। এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই উত্তর পাবেন, “এসব তো এখানে হবেই। ভারত তো গরীব দেশ।” জাপানের কথা ছেড়ে দিন, ডিসিপ্লিনে ওরা বিশ্বের সেরা জাতি। শুনুন সেনেগালের কথা। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে দারিদ্রের হার কত জানেন? ৪৬.৭ শতাংশ। অর্থাৎ একটি দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে অবস্থান করেন। সেনেগাল-এর অর্থনীতি নির্ভর করে আছে তাঁদের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ট্যুরিজমের উপর। সেই দেশের কিছু মানুষ সারা বিশ্বের কাছে নজির সৃষ্টি করল। না কোনও মহান কাজ করে নয়। নিজের কর্তব্যকে পালন করেছেন তাঁরা। আমরা কি এভাবে ভেবেছি কখনও? হয় অন্যদের করা খারাপ কাজ দেখে মাথা নীচু করে ঘৃণায় মাথা নেড়েছি, নয়তো কারও ভালো কাজ দেখে অবাক হয়েছি, বাহবা দিয়েছি। আমরা ভেবে দেখি না, কিছু কিছু সহজ অথচ ভালো কাজ করে আমরাও ‘ভালো খবর’-এর নিদর্শন তুলে ধরতে পারি বিশ্বের কাছে।