Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কল্পনায় অবগাহী

সলিল বিশ্বাস

 

স্বপ্ন দেখা মানুষের চিরদিনের অভ্যাস। এ থেকে কেউ তাকে কখনও বিরত করতে পারেনি। চেষ্টা অবশ্যই হয়েছে বিস্তর। আজও সে চেষ্টা যে অব্যাহত, তার প্রমাণ চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে। যখন দেখা গেছে অনেক করেও মানুষের স্বভাব পাল্টাচ্ছে না, তখন ওরা উঠে পড়ে লেগেছে, স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে  পরিণত করতে, অথবা, স্বপ্নে ফাঁকি নিয়ে আসতে, অথবা তাকে বিকৃত করে স্বার্থপর  সুযোগ-সন্ধান আর অমানবিক চাওয়া-পাওয়াকে মনের প্রথম সারিতে এনে সেগুলোকেই মানুষের কাজকর্মের নিয়ন্ত্রক করে তুলতে। এই ‘ওরা’ কারা সে নিয়ে আলোচনা এখানে করব না আমরা। এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের সম্পূর্ণ অজানা নয়।

তবুও স্বপ্ন মানুষ দেখেই চলে। আর সে স্বপ্নে বারে বারে ঘুরে-ফিরে আসে মুক্ত জীবন, ভালোবাসা, আর শোষণহীন দুনিয়ার কথা — স্বার্থপরতার কথা নয়।

চারশো বছরেরও আগে এক পরম ধার্মিক ইংরেজ রাজপুরুষ দেখেছিলেন এক আশ্চর্য স্বপ্ন। ‘সাধারণ আদালতে’ বিচারপতির কাজ করতে করতে, লোকসভার সদস্য, রাজদূত এবং পরে মন্ত্রী হিসেবে অভিজাত শ্রেণিগুলির শোষণ আর অত্যাচারের বিচিত্র রূপের দৈনন্দিন চেহারা, আর অনৈতিক সামাজিক শক্তিগুলির হৃদয়হীনতার নিদর্শন দেখতে দেখতে মর্মাহত তিনি তাঁর ইতিহাসবোধ প্রসূত কল্পনার ডানা মেলে দিয়ে মানসচক্ষে দেখেছিলেন এক আশ্চর্য সমাজের চিত্র যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই, আছে সকলের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার। ১৫১৫ সালে উঠতি ধনতন্ত্রের রমরমার যুগে বসে কী করে যে স্যার থমাস মোর ‘ইউটোপিয়া’র মতো অমন একটা কল্পনার জগতে আদৌ যেতে পেরেছিলেন তা ভাবলেও আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। অবশ্য এ স্বপ্ন তিনিই যে প্রথম দেখেছিলেন তা নয়। লেখকের নাম জানা যায় না, কিন্তু ‘দ্য ল্যান্ড অব ককেয়েন’ নামে রচনাতেও এক ধরনের সাম্যবাদী সমাজের সন্ধান পাওয়া যায়, যদিও সেখানে কল্পনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না, কল্পনা সেখানে অনেকটাই ছেলেমানুষি ইচ্ছাপূরণ। অত্যাচারিত ভূমিদাস আর হস্তশিল্পীদের অমানুষিক কষ্টের জীবনে একটু স্বপ্ন নিয়ে আসার চেষ্টা ছিল সেই রচনায়। কাল্পনিক সেই জগতে কারও কোনও কষ্ট নেই, গাছে গাছে সেখানে খাদ্যের সমারোহ, কাউকে সেখানে পরিশ্রম করতে হয় না, সেখানে কেউ অভিজাত নয়, কেউ নয় দাসত্বের শিকার। সেই স্বপ্নের  মধ্যে দিয়ে দিনগত পাপক্ষয় থেকে একটু রেহাই মিলত মেহনতি মানুষের।

থমাস মোরের ‘ইউটোপিয়া’র কল্পনার জন্মের সূত্রটা আবার বেশ অদ্ভুত। খৃষ্টধর্মের আদিযুগের কিছু সাম্যবাদী ভাবনা, ধর্মীয় ন্যায়পরায়ণতাবোধ, সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি প্রচারিত সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানাবিরোধী বক্তব্য, প্লেটো প্রমুখ দার্শনিকদের কিছু কিছু শিক্ষা, সমকালীন বিজ্ঞানের কিছু আবিষ্কার ও তাদের আর্থসামাজিক প্রভাব, ইত্যাদি অনেক কিছু জড়িয়ে ছিল তার সাথে।

কিন্তু এমন একটা জগত তো আর এমনি তৈরি হয়ে যেতে পারে না, তার জন্যে চাই ইতিহাসের  বিশেষ স্তরে এসে বৈজ্ঞানিক চিন্তা আর তার সামাজিক প্রয়োগ। আবার সে কাজের পূর্বশর্ত হল সামাজিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা আর ভবিষ্যৎ সমাজের চেহারার একটা বৈজ্ঞানিক কল্পনাপ্রসূত রূপরেখা চোখের সামনে আনা। এই রূপরেখার স্পষ্ট চেহারা জন্মেছে অনেক পরে, তবে তার একটা আভাস আমরা পেয়েছি ১৫১৫-তেই। যদিও ‘ইউটোপিয়া’র কল্পনাতে মিশে ছিল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা, মিশে ছিল অনেক সমকালীন আদর্শবাদী ভাবধারার প্রভাবজনিত ভুল পরিকল্পনা, তবুও সেই জগত আমাদের মনকে আজও টানে। বৈজ্ঞানিক কল্পনার প্রয়োগের ফসল এই ভবিষ্যতের কথাচিত্রকে এক ধরনের ‘সায়েন্স ফিকশন’ আমরা বলতে পারি।

সায়েন্স ফিকশন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ‘ইউটোপিয়া’র মতো প্রাচীন একটি বই-এর কথা দিয়ে আরম্ভ করা হচ্ছে কেন, সে কথায় পরে আসছি।

‘সায়েন্স ফিকশন’ কথাটা এসেছে কী করে দেখা যাক। জুল ভের্ন-এর কাহিনীগুলিকে বলা হত  ‘সায়েন্টিফিক ফ্যানটাসি’। অন্যভাবে, কল্পবিজ্ঞান গল্পগুলিকে কখনও বলা হত নিছক ’সায়েন্স স্টোরি’, কখনও  ‘সায়েন্স রোমান্স’, কখনও ‘স্যুডো সায়েন্স’। স্বভাবতই শেষ নামটাতে কেউ বিশেষ খুশি ছিল না। যে কাহিনীকে প্রথমেই ‘স্যুডো’ বা ‘মিথ্যে’ বলে দেওয়া হল সে গল্পের বারোটা বেজেই গেল। ১৯২৬ সালে আমেরিকায় হুগো গার্নসব্যাক কেবলমাত্র সায়েন্স ফিকশন গল্প উপন্যাস ছাপার জন্যে ‘এমেজিং স্টোরিস’ নামে একটি পত্রিকা বার করেন। গার্নসব্যাক একটা অন্য নামের কথা ভেবেছিলেন প্রথমে — ‘সাইয়েন্টিফিক ফিকশন’। কিন্তু এ নাম উচ্চারণ করা অসুবিধে। দু’টো ‘ফিক’ পাশাপাশি থাকলে যা হয়। তখন কথাটা ছোট করে নিয়ে তৈরি হল ‘সায়েন্টিফিকেশন’। এটাও খুব জুতের মনে হল না। শুনতে খুবই বাজে লাগছে। তবু পত্রিকার উপনাম হিসেবে শব্দটি ব্যবহৃত হতে লাগল। ইতিমধ্যে ‘এমেজিং স্টোরিস’ গেল উঠে। ১৯২৯ সালে এবার বেরোল ‘সায়েন্স ওয়ান্ডার স্টোরিস’। তারই প্রথম সংখ্যায় গার্নসব্যাক ‘সায়েন্স ফিকশন’ কথাটা প্রথম ব্যবহার করলেন। সংক্ষেপে তা দাঁড়াল এস.এফ। সেই এই নামের শুরু। প্রসঙ্গত বলে রাখা যায়, ‘সায়েন্স ফিকশন’ সাহিত্যের জগতে শ্রেষ্ঠ রচনার জন্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক পুরস্কারটির নামও ‘হ্যুগো’ — গার্নসব্যাক-এর সম্মানেই রাখা হয়েছে এই নাম।

বাংলায় এই বিষয়ে আলোচনা করার পথে প্রথম সমস্যা শব্দ নিয়ে। অনেক ভাবলেও উপযুক্ত প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ‘কল্পবিজ্ঞান’ শব্দটাই যা অর্থের দিক থেকে কাছাকাছি আসে। ‘বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প’  হয়তো মানুষের চেনা কথা, কিন্তু সত্যিই কি তা যথার্থ প্রতিশব্দ? মনে হয় না! আসলে, শব্দ তো জন্মায় প্রয়োজনে, প্রয়োগকর্মের মধ্যে দিয়ে। একটু একটু করে বাড়তে থাকলেও ‘সায়েন্স ফিকশন’ জিনিসটা আমাদের দেশে এখনও নিতান্তই অচেনা, দৈনন্দিন মনোরঞ্জনের যে সমস্ত তথাকথিত সাহিত্যিক অনুষঙ্গ, তার কোনওটার সঙ্গেই এর কোনও নৈকট্য নেই। এর সঙ্গে আমাদের পরিচয় এখনও বিদেশি ভাষার মাধ্যমেই।  তাই বোধ করি এখনও তার বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে বার করার কাজে উৎসাহ দেখা দেয়নি। তবে আপাতত আলোচনাটা করতে হলে একটা শব্দ চাই। এখানে বাছা হচ্ছে ‘কল্পবিজ্ঞান’। তবে নিরুপায় হয়ে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার ‘লাইসেন্স’ নিচ্ছি। অন্যত্র থেকে শব্দ আত্মস্থ করে না নিতে পারলে আবার ভাষাই এগোয় না। কাজেই একটু-আধটু মিশেল চলতেই পারে। আর একটা কথা। এখানে ‘গল্প’ শব্দটি ব্যবহৃত হবে ‘কাহিনী’র প্রতিশব্দ হিসেবে, উপন্যাস এবং ছোটগল্প উভয় ক্ষেত্রেই।

‘সাহিত্য’ শব্দটা কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর ক্ষেত্রে আবার বেশি ব্যবহার করা হয় না। তার একটা কারণ হল কল্পবিজ্ঞান দেদার লেখা হলেও তার অধিকাংশই সাহিত্য হয়ে ওঠে না, নিছক গল্পই থেকে যায়। কিন্তু এই সব রচনার বেশ কিছু অবশ্যই সাহিত্যমূল্য অর্জন করে এবং গভীর প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে এখনও তেমন গুণসম্পন্ন কোনও কল্পবিজ্ঞান কাহিনী রচিত হয়নি। সুধী পাঠককে এখানে আগাম অনুরোধ করে রাখা হচ্ছে, সাহিত্য কী বস্তু এ প্রশ্ন করবেন না, সে এক মহা হাঙ্গামা রেখে যাবে তা হলে। ও শব্দটার সাধারণভাবে যে অর্থ করা হয়, সেটাকেই মাথায় রাখুন।

এদেশে যে জিনিস বিশেষ নেই তা নিয়ে তাহলে আলোচনা কেন? আজ তো আমরা চাই বা না চাই বিদেশি সংস্কৃতির নানা প্রভাব এসে ঢুকছে আমাদের অন্তঃপুরে। তাকে আটকে রাখব এমন ক্ষমতা নেই আমাদের এই মুহূর্তে। সুতরাং আমাদের জেনে নিতে হবে কোন প্রভাবের চেহারা কী, বুঝে নিতে হবে কোনটা তৎক্ষণাৎ বর্জনীয় আর কোনটা নয়। কল্পবিজ্ঞান আজ নানান চেহারায় ঢুকছে আমাদের মনোজগতে। তাই তার প্রকৃতি, তার ধরন, তার ইতিহাস, তার সম্ভাবনা, সবই আমাদের বুঝে নিতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। আমাদের এই লেখাতে তার একটা ভূমিকা করা হচ্ছে মাত্র। কল্পবিজ্ঞানের প্রকৃতি আর ধরন নিয়ে এখানে যৎসামান্য আলোচনা, ইতিহাস নিয়ে নয়, তাই বিভিন্ন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতাদের নাম ছাড়া তাঁদের লেখা নিয়ে প্রায় কোনও আলোচনাই এখানে থাকছে না। আরও বিশদ পড়াশুনার জন্যে নিচে দেওয়া পুস্তক তালিকা কাজে লাগবে।

কল্পবিজ্ঞান একটি রচনাক্রিয়া মাত্র। তাকে তো নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহার হয়েছেও নানাভাবে। ফলে যে সব লেখা তৈরি হয়েছে তার কিছু কিছু যেমন নিতান্তই মূল্যহীন এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর, তেমনই আবার অনেক রচনা অত্যন্ত সুখপাঠ্য, সমাজসচেতন এবং জীবনসম্পৃক্ত। সুতরাং কোনটা পাঠের উপযোগী আর কোনটা নয়, তাও বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। যে গল্পে দেখানো হয়েছে দানবিক, সাম্রাজ্যবাদী, নারীসঙ্গলিপ্সু আর একই সঙ্গে কখনও কখনও নরমাংসখাদক, ভিনগ্রহের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে স্বল্পবাস সন্ত্রস্ত সুন্দরী নায়িকাকে পাশে নিয়ে লড়ে যাচ্ছে বিচিত্র অস্ত্র হাতে সর্বশক্তিমান নায়ক অতিপ্রাকৃত শক্তির সহায়তায়, সে গল্প যে অপাঠ্য তা বোঝাই যায়। এমন গল্পের সংখ্যা খুবই বেশি। এক সময় তো এ ছাড়া কিছু লেখাই হত না। কিন্তু কিছু গল্প আছে যেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে অত্যন্ত আপত্তিকর বিষয়বস্তুকে উত্থাপিত করা হয়েছে। কোনও গল্পে হয়তো দেখানো হয়েছে, বিপদে পড়লেই মানুষের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে এবং সে চেহারা সব সময়েই স্বার্থপর। হয়তো সে গল্পের বাঁধুনি এবং রচনাশৈলী এতই আকর্ষণীয় যে কারচুপিটা ধরাই পড়ে না। আবার এমন বহু গল্প আছে যেখানে মানবিক মূল্যবোধ সসম্মানে উপস্থিত, সেখানে হয়তো ভবিষ্যতের দিশা খুঁজে পাওয়া যায়, প্রকৌশলের ভীতিপ্রদ দিকগুলি চোখের সামনে ফুটে ওঠে, তাদের হাত থেকে নিস্তারের পথেরও সন্ধান দেওয়া থাকে সেখানে। তেমন গল্প চিনে নিতে হয়। আর চিনতে গেলে প্রথমে বুঝে নিতে হয় নিরীক্ষণের মাপকাঠিগুলোকে।

‘কল্পবিজ্ঞান’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হছে তা আগে বলি। এ হল এক ধরনের কাহিনীমালা, গদ্যে অথবা পদ্যে অথবা নাটকে অথবা চলচ্চিত্রে, যার উদ্ভবসূত্র খুঁজে পেতে হলে সমকালীন বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা নয়, যেতে হবে অদূর অথবা সুদূর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রয়োগ, প্রকৌশল, বিশ্বাস, সংস্কার এবং সংস্কৃতির কাছে, কিংবা বর্তমান বা অতীতকে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান দিয়ে পরিমাপ, নিরীক্ষণ, পুনর্বিচার করার চেষ্টার মধ্যে। তাছাড়া, বর্তমান কোনও সমস্যা বা সঙ্কটকে ভবিষ্যতের ছকে ফেলে, ‘দূরত্বের’ সুবিধাজনক  দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে মূল্যায়নও করতে পারে কল্পবিজ্ঞান। ‘বিজ্ঞান’ কথাটা সঙ্কীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে না এখানে। বিজ্ঞান বলতে সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এমন কী দর্শনের কিছু কিছু ভাগও বিবেচনায় আনতে হবে। অর্থাৎ, আজকের বৈজ্ঞানিক ভাব-ভাবনা-তথ্যকে ভিত্তি করে কল্পনাকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে সব রচনায়, বর্তমান জ্ঞানজগতের সীমানা ছাড়িয়ে নতুন সৃষ্টির আনন্দে, তাকেই কল্পবিজ্ঞান বলা চলতে পারে। খানিকটা সেই কারণেই বোধহয় অ্যালভিন টফলার তাঁর ‘ফিউচার শক’ বইতে কল্পবিজ্ঞানকে বলেছেন ‘ভবিষ্যতের সমাজতত্ত্ব’।

এখানে ১৯৫৯ সালে সি পি স্নো প্রদত্ত ‘দ্য টু কালচারস অ্যান্ড দ্য সায়েন্টিফিক রেভোল্যুশন’ নামক ভাষণ এবং সে নিয়ে বিতর্কের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। টি এইচ হাক্সলি, এইচ জি ওয়েলস প্রমুখ বিজ্ঞানশিক্ষকদের কথার প্রতিধ্বনি করে স্নো বলেছিলেন বিজ্ঞানশিক্ষার অভাব সাহিত্য ও শিল্পের ছাত্রদের মধ্যে একপেশে মানসিকতার সৃষ্টি করছে আর তৈরি করে দিচ্ছে দু’ধরনের মানুষ এবং সাহিত্যে বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞানে অজ্ঞ থেকে জীবনে হয়ে থাকছে পঙ্গু। এফ আর লিভিস আবার এই কথার সক্রোধ প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, শেকসপিয়ার না পড়ে বিজ্ঞানের সূত্র পাঠ করে ‘শিক্ষিত’ হতে বলাটা মূর্খামি। স্বভাবতই সত্যকে খুঁজতে হবে এই দুই চরমপন্থার বাইরের তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু স্নো যে কথা বলেছিলেন তা অনেক সাহিত্যের শিক্ষককেই ভাবিয়ে তোলে এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের নৈকট্যের সন্ধানে তাদের দৃষ্টি পড়ে কল্পবিজ্ঞানের দিকে। অবশ্য সাহিত্য সমালোচক এবং বৈজ্ঞানিক উভয়েই নাক সিটকোতেন কল্পবিজ্ঞানের নামে। এই দৃষ্টিভঙ্গির অনেকটাই ছিল উন্নাসিকতা। বস্তুত, কল্পবিজ্ঞানকে প্রকৃত অর্থে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ অথবা বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের সীমারেখা অতিক্রমে সক্ষম একটি সাহিত্য-বিষয়ক পাঠ্যবস্তু হিসেবে দেখা যেতে পারে। সেই কারণেই কল্পবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানশিক্ষা প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তাছাড়া, কল্পনা আর আন্দাজ বাদ দিলে বিজ্ঞান অনেকটাই যে অসহায় হয়ে পড়ে তা তো জানা কথা। ১৮৮২ সালে ম্যাথু আর্নল্ড তাঁর ‘সাহিত্য ও  বিজ্ঞান’-এ লিখেছিলেন — গুছিয়ে পর্যায়ক্রমে তার পাঠাভ্যাস করলে এবং তার উৎস পর্যন্ত পথ খুঁজে যেতে পারলে যে কোনও বিষয়ই বিজ্ঞান হয়ে উঠতে পারে। বিশুদ্ধ মানবতাবাদ তো আসলে বিজ্ঞান। আর্নল্ড-এর এই বক্তব্যতে কিছু অতিকথন থাকলেও আজকের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে  এ কথার অন্তর্নিহিত সত্যকে এড়ানো যায় না। আজ কি বিজ্ঞানমনস্কতা বাদ দিয়ে কোনও পড়াশুনা আর সম্ভব?

প্রথমেই বলেছি, স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বভাব। সেই জন্যেই সে এগোতে পারে, স্বপ্ন তার জীবনযুদ্ধে বড় হাতিয়ার। কল্পবিজ্ঞান মানুষের স্বপ্নেরই অন্যতম প্রকাশ। যত দিন গেছে, সভ্যতা যত এগিয়েছে, বিজ্ঞান যত উন্নত হয়েছে, প্রযুক্তিবিদ্যা যত বিকশিত হয়েছে, মানুষের জীবনে জটিলতা বেড়েছে তত। স্বপ্নও হয়েছে আরও বহুমুখী। সরল সাদাসিধে চাওয়া-পাওয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে স্বপ্ন পাড়ি দিয়েছে দিক থেকে দিগন্তে। কল্পবিজ্ঞানের নানান প্রকাশ ঘটেছে তাই বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন নিয়ে। কখনও কখনও সে স্বপ্ন আবার পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।

কল্পবিজ্ঞানের স্বপ্নের একটা তালিকা দিয়েছেন বিখ্যাত বিজ্ঞান-লেখক, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক আইজ্যাক আসিমভ তাঁর ‘আসিমভ অন সায়েন্স ফিকশন’ গ্রন্থে। সেটাই এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে সংক্ষিপ্তাকারে একটু অন্যভাবে সাজিয়ে নিয়ে।

পৃথিবীর ঠিক বাইরে মহাকাশে ও গ্রহান্তরে যাত্রা এবং সৌরজগতকে জয় করা কল্পবিজ্ঞানের একটি অতি পরিচিত স্বপ্ন। বেশিরভাগ মানুষই কল্পবিজ্ঞান বলতে মহাকাশ যাত্রা এবং ভ্রমণ বোঝেন।

অন্য গ্রহে পৌঁছলেই তো হবে না, সে গ্রহকে মানুষের বাসযোগ্য করে নিতে হবে। তাই ‘টেরাফরমিং’ বা গ্রহান্তরে পার্থিব বায়ুমণ্ডল তৈরি করে নেওয়া আরেকটি স্বপ্ন।

মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপনের স্বপ্নও দেখে কল্পবিজ্ঞান। পৃথিবীতে স্থানাভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, আণবিক বিস্ফোরণের ধ্বংসলীলা, পরিবেশ আর বাস্তুতন্ত্রের হত্যা, ইত্যাদির কারণে মানুষকে চলে যেতে হতে পারে অন্য গ্রহে আশ্রয়ের সন্ধানে। তাই উপনিবেশ। এই সম্ভাবনা আজ আর সুদূর নয়। সোজা কথায়, আগ্রাসী পুঁজি আজ পৃথিবীকে ধর্ষণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।

শুধু সৌরজগতে বিচরণ করে ক্ষান্ত হবে না মানুষ। স্বপ্ন জাগে অন্য নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে পাড়ি দেবার।

নিকটতম নক্ষত্রের দূরত্ব যেখানে বহু আলোকবর্ষ, সেখানে নক্ষত্রলোকে পাড়ি দিতে হলে প্রথমে দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। আলোর গতি থেকেও দ্রুততর কোনও পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে অন্য নক্ষত্রের সাথে — এ আরেকটি স্বপ্ন।

নক্ষত্রলোকে পাড়ি দিতে পারলে শীঘ্রই গড়ে উঠবে নক্ষত্ররাজ্য, যার সম্রাট হবে মানুষ। স্বপ্নের সেই সাম্রাজ্যেও কল্পবিজ্ঞানের অবাধ বিচরণ।

সময়-ভ্রমণ আর একটি স্বপ্ন। অতীতে ফিরে যেতে বা ভবিষ্যতে পাড়ি দিতে চান কল্পবিজ্ঞানের লেখক। ফিরে ফিরে দেখা করা যাবে পূর্বপুরুষদের সাথে, পালটে দেওয়া যাবে বর্তমানকে, অতীত কোনও ঘটনাকে অন্যভাবে ঘটিয়ে সময়স্রোতে এগিয়ে গিয়ে চিনে নেওয়া যাবে উত্তরপুরুষকে, দেখে নেওয়া যাবে তার অগ্রগতি।

স্বপ্নকে এবার পৃথিবীতে ফেরানো যাক। সেখানেও স্বপ্ন কোনও অংশেই কম দুঃসাহসী নয় অবশ্যই। কল্পবিজ্ঞান চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগান্তর এনে সহজেই মানুষকে অমরত্ব দেয়। আবার চিন্তিতও হয়। অমরত্বের সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে কল্পবিজ্ঞান মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে। মানুষের শরীরের অভ্যন্তরেও যাত্রা করে বিচিত্র জলযান তৈরি করে।

স্বপ্নে কল্পবিজ্ঞান বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণে আনে, মানুষকে করে তোলে অসীম শক্তিধর, দুনিয়াকে করে তুলতে পারে শস্যশ্যামলা, দূর করতে পারে সব দূষণ।

কল্পবিজ্ঞান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে গড়তে পারে নতুন মানুষ, নতুন প্রাণী, ফিরিয়ে আনতে পারে বিলুপ্ত প্রাণ, ‘ক্লোনিং’ করে বানাতে পারে যে কোনও প্রাণীর হুবহু প্রতিলিপি, বানাতে পারে সঙ্কর প্রাণী জড়ের সাথে জীবিতকে জুড়ে, যে কোনও জিনিসকে স্থানান্তরে নিয়ে যেতে পারে চোখের পলকে, দূরের মানুষের সাথে মনে মনে কথা বলতে পারে ‘টেলিপ্যাথি’ দিয়ে, তৈরি করতে পারে শক্তির অসীম উৎস, আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর চেহারা পালটে দিতে পারে, তৈরি করতে পারে বিশ্বস্ত যন্ত্রমানব।

এ স্বপ্নের তালিকার শেষ নেই।

কল্পবিজ্ঞান দুঃস্বপ্ন কম দেখে না। দেখে আণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে পৃথিবী, প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে মানবজাতি। দেখে প্রকৌশল মানুষকে দাসে পরিণত করে ফেলেছে, দেখে বিরাট যান্ত্রিক শহরে অসহায় মানুষ পুতুলে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে, দেখে চরম একনায়কতন্ত্র সমস্ত স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে দুনিয়া থেকে, দেখে বৈজ্ঞানিকের উন্মাদ বিজ্ঞানপ্রীতি সমস্ত মানবিকতাবোধ বিসর্জন দিয়েছে, দেখে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরি করেছে ভয়ানক দানব।

আগেই বলা হয়েছে, এই প্রবন্ধের পরিসর ছোট। কাজেই এখানে আমরা শুধু এক জাতীয় কল্পকাহিনীর কথাই আলোচনা করব। সে আলোচনাতেও বেশ কিছু নিরুপায় ফাঁক থেকে যাবে। হাজারোরকম কল্পবিজ্ঞান আছে, তাদের অনেকগুলোই গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সব একবারে বলতে গেলে গোটা একটা বই লিখেও কুলিয়ে ওঠা যাবে না।

আবার ফেরা যাক ইউটোপিয়ায়। সেখানে স্বপ্ন ছিল সুস্থ, মুক্ত, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, শোষণহীন জীবনের। পরবর্তীকালে ক্রমশ সেই স্বপ্ন বদল হয়ে গেছে দুঃস্বপ্নে, আনন্দের বদলে দেখা দিয়েছে বিভীষিকা। কী করে হল সেটা লক্ষ করলে কল্পবিজ্ঞানের খারাপ-ভালো মূল্যায়ণের অনেক মাপকাঠির মধ্যে একটা খুঁজে পাওয়া যাবে।

এরকম দুঃস্বপ্ন তৈরির চেষ্টা হয়েছে সে যুগেও। সম্ভবত ১৬০০ খৃষ্টাব্দে হল নামে একজন বিশপ ল্যাতিন ভাষায় লেখেন ‘মুনডুস অলতের এত আইডেম’। অস্ট্রেলিয়ার পথে আবিষ্কার হয়েছে ‘বাড়াবাড়ি’র দেশ — সেখানে রাজ্যগুলির একটি শাসন করে পেটুকেরা, একটি মাতালরা, একটি মূর্খরা, আর একটি, মেয়েরা। সবচেয়ে বড় রাজ্যটি চালায় চোর বদমাশরা। তৎকালীন সামাজিক অবস্থাকে ব্যঙ্গ করা এই বই-এর উদ্দেশ্য হলেও আসলে বিদ্রূপ করা হয়েছে ‘দ্য ল্যান্ড অব ককেয়েন’কেই। সমসাময়িক আর একটি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন সম্বলিত বই হল স্যামুয়েল গট-এর ‘নোভা সলিমা’। এই বইগুলো দিয়েই ব্যঙ্গাত্মক ইউটোপিয়ার শুরু। এই ধরনের বইকেই সমালোচনার ভাষায় বলা হয় ‘ডিসটোপিয়া’ —  ইউটোপিয়ার বিপরীতার্থক শব্দ এটি। যদিও অনেক পরে লেখা তবু আর একটি এ রকম বই হল মার্গারেট ক্যাভেন্ডিশ রচিত ‘দ্য ব্লেজিং ওয়ার্ল্ড’।

ভবিষ্যতের সুন্দর জগতের বর্ণনা আরও আছে মিলটনের মহাকাব্য ‘প্যারাডাইস লস্ট’-এ স্বর্গের কথায়, ফ্রান্সিস বেকনের ‘নিউ আটলান্টিস’-এ, স্যামুয়েল হার্টলিব-এর ‘মাকারিয়া’ আর জেমস হ্যারিংটনের ‘ওশেনিয়া’তে। মিলটন বাদে এগুলি সবই অবশ্য তৎকালীন রাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত বই। এদের তেমনভাবে কল্পবিজ্ঞান বলা যাবে না।

১৮৪৯ সালে আবির্ভাব ঘটল কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর। কিন্তু পুরনো ধাঁচের ইউটোপিয়া লেখা বন্ধ হল না। মনে রাখতে হবে, এই সময় মানুষ সাম্যবাদী বিশ্বাস নিয়ে সংগঠিত হতে শুরু করেছে এবং সাহিত্যের উপরে সেই লড়াইগুলি বিশেষ প্রভাব ফেলছে তখন।

লর্ড লিটন এর ‘দ্য কামিং রেস’, স্যামুয়েল বাটলার-এর ‘এয়ারহর্ন’ ইত্যাদি বইতে এক ধরনের আদর্শ ভবিষ্যতের কথা আছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এসে আমরা পাচ্ছি এডওয়ার্ড বেলামি-র ‘লুকিং ব্যাকওয়ার্ড’। এখানেও এক ধরনের সাম্যবাদের কথা বলা আছে, যদিও তার উদ্ভব নাকি হবে একচেটিয়া পুঁজির বিকাশের ফলে।

এর পরে উল্লেখযোগ্য বই হল উইলিয়াম মরিস রচিত ‘নিউজ ফ্রম নোহোয়ার’।  বইটি অনেকাংশে বেলামি-র বক্তব্যের বিরোধিতা করে লেখা। মরিসই প্রথম সমাজতন্ত্রে সরাসরি বিশ্বাসী লেখক যিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সাম্যবাদী সমাজের কথা নিয়ে এলেন তাঁর রচনায়। তিনি সমাজ পরিবর্তনে বিপ্লবের কথাই বলেছেন সোজা ভাষায় এবং তাঁর বাস্তববাদী কল্পনাপ্রসূত সাম্যবাদী সমাজে ভালোমন্দ দুই-ই আছে, এক ধাক্কায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে না।

ঠিক এই সময়েই আবার অনেক ‘ডিসটোপিয়া’-ও লেখা হচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল সাম্যবাদী ভাবনাচিন্তার বিরোধিতা করা। যে চারটি বই এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য তা হল পার্সি গ্রেগ-এর ‘আক্রস দ্য জোডিয়াক’ (এই বইয়ে প্রথম একটি ভাষা কল্পনা করা হয় যা ভিন গ্রহের — এক্ষেত্রে মঙ্গল গ্রহ — বাসিন্দারা বলে থাকে। আজকাল অবশ্য ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখাই তৈরি হয়েছে যাকে বলে ‘এক্সোলিঙ্গুইস্টিকস’), ইগনাটিউস ডনেলির ‘সিজারস কলাম’, অস্ট্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ থিওডোর হেরজকা-র ‘ফ্রিল্যান্ড, এ স্যোশাল অ্যান্টিসিপেশন’ এবং ইউজিন  রিখটার এর ‘পিকচারস অফ দ্য সোশ্যালিস্টিক ফিউচার’।

একটু অতি-সরলীকৃত হয়ে গেলেও বলা যায়, এই ‘ডিসটোপিয়া’গুলো লেখা হয়েছিল সাম্যবাদী চেতনাকে ব্যাহত করার জন্য। যে কোনও রচনার সাথেই অনেক জটিল সামাজিক টানাপোড়েন সম্পৃক্ত থাকে। বিশদ আলোচনা হলে সে সমস্ত কথা ধরা পড়ে। তবে এই সব ‘ডিসটোপিয়া’ রচনার পিছনে যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিরোধিতা কাজ করেছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যারা কল্পিত ভবিষ্যতের চিত্র এঁকেছেন তাঁদের মধ্যে এইচ জি ওয়েলস-এর নাম সবার আগে মনে পড়ে। তাঁর ‘দ্য টাইম মেশিন’, ‘এ মর্ডান ইউটোপিয়া’, ‘দ্য নিউ ম্যাকিয়াভেলি’, ‘এ ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রী’ ‘মেন লাইক গডস’, ‘থিংস টু কাম’ প্রভৃতি বই-এ আঁকা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের চিত্রগুলিতে মানুষে মানুষে  সমতা নয়, বিপুল অসাম্যের ছবিই ফুটে উঠেছে। তিনি যে ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছেন সেখানে কঠিন শ্রম-বিভাজনের মাধ্যমে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে মানুষ উঁচুতলা থেকে দয়া করে দেওয়া এক ধরনের সাম্য জীবনে পায় এবং সে সমাজে শ্রমজীবী মানুষের চেহারা প্রায় জান্তব। সে ভবিষ্যতে গণতন্ত্রেরও প্রায় কোনও স্থান নেই। অবশ্য এখানে বলে নেওয়া ভালো, ওয়েলস-এর মতো লেখককে এভাবে এক অনুচ্ছেদে মূল্যায়ণ করা যায় না। তাঁর লেখায় আরও অনেক কিছু আছে যা সাহিত্যের বিচারে খুবই মূল্যবান।

এর পরে যে সমস্ত ‘ডিসটোপিয়া’ লেখা হতে লাগল সেগুলো অত্যন্ত দক্ষ হাতে রচিত। বিশেষ উল্লেখযোগ্য দুটি নাম হল আলদুস হাকস্লির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এবং জর্জ অরওয়েল-এর ‘নাইন্টিন এইট্টিফোর’। দুটি বই-ই প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়েছে পশ্চিম দেশে। আমাদের দেশেও একটু ওয়াকিবহাল লোক মাত্রই বই দুটির নাম অন্তত জানেন। দুটি বই-ই তথাকথিত ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সমর্থন এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ও মূলত সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে। ‘নাইন্টিন এইটিফোর’-এ  শ্রমজীবী মানুষের প্রতি বিচিত্র ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্যের সুর ফুটে উঠেছে। আবার এ-ও সেখানে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত কড়া শাসন, অর্থাৎ রেজিমেন্টেশন মানুষকে গবাদি পশুতে পরিণত করে। কিন্তু দুটি বই-ই অত্যন্ত সুলিখিত এবং অতীব সুখপাঠ্য। অতিরিক্ত একনায়কতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, তা সে যে শ্রেণিরই হোক না কেন, যে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে তা এই বই দুটি আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরে। একদিকে বই দুটি যেমন মনে বিতৃষ্ণা আনে, অন্যদিকে তেমনি সাবধানও করে দেয়।

আরেকটি ‘ডিসটোপিয়া’ হল রে ব্র্যাডবেরি লিখিত ‘ফারেনহাইট ফোরফিফটি ওয়ান’। এই বই কল্পিত ভবিষ্যতে যে কোনও পুস্তক পাঠ শুধু যে নিষেধ হয়েছে তা নয়, বই দেখলেই তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এহেন সমাজে একদল বিদ্রোহী কেমন করে লড়াই করেছে তা নিয়েই গল্প। ‘ফারেনহাইট ফোরফিফটি ওয়ান’ অবশ্য সেই অর্থে সাম্যবাদ বিরোধী রচনা নয়, ব্র্যাডবেরির লেখায় এক কোমল, শান্ত মানবতাবাদ আছে যা সহজেই মন টানে।

আমাদের সমসাময়িক যুগে কল্পবিজ্ঞান রচিত হয়েছে থরে থরে। তার মধ্যে সম্ভাব্য ভবিষ্যত নিয়ে রচনা আছে অগুনতি। তবে সাম্যবাদী ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে কল্পবিজ্ঞান রচনা হয়েছে প্রধানত সোভিয়েত রাশিয়াতেই।

ভবিষ্যত নিয়ে কাল্পনিক রচনার ধারা ওদেশে বহুদিনের। সেই ষোড়শ শতাব্দীতে ইভান পেরেসভেতভ লেখেন ‘লেজেন্ড অব সুলতান মাহোমত’। এই বইটি স্বয়ং স্তালিনের পছন্দ ছিল। অ্যালেকজান্দার রাদিসচভ তাঁর ‘জার্নি ফ্রম সেন্ট পিটাসবার্গ টু মস্কো’ গ্রন্থের এক অংশে ভূমিদাসদের অধিকার প্রসঙ্গে লেখেন গণতান্ত্রিক এক ভবিষ্যতের কথা। থাদিউস বুলগারিনের ‘আনট্রু আনইভেন্টস’ ১৮২০-র দশকে প্রকাশিত হয়। প্রিন্স ভ্লাদিমির ওদোয়ভস্কি-র  ‘ইয়ার ফরটি থ্রি থার্টি এইট’ ১৮৪০ দশকে লেখা হলেও ছাপা হয় সোভিয়েত আমলে। স্বভাবতই, বিপ্লব নয়, অভিজাত শ্রেণির মানসিক পরিবর্তনের ফলেই সুন্দর ভবিষ্যৎ আসবে ভেবেছিলেন ওদোয়ভস্কি।

নিকোলাই চেরনিশেভস্কি আবার একদম আলাদা। ১৯০৫ সালেরও পরে প্রকাশিত ১৮৬২ সালে জেলখানায় বসে লেখা ‘হোয়াট ইজ টু বি ডান?’ সে সময় যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছিল। চেরনিশেভস্কি ছিলেন জারতন্ত্র ও পুঁজিবাদের বিরোধী এবং বস্তুবাদী। তাঁর কল্পিত ভবিষ্যতের ধারণা লেনিন এবং দিমিত্রভ দুজনকেই প্রভাবিত করেছিল।

রাশিয়ার মহাকাশবিজ্ঞানের জনক কনস্তানতিন সিওলকোভস্কির রচিত ‘অন দ্য মুন’, ’ড্রিমস অব আর্থ অ্যান্ড স্কাই’, ‘আউটসাইড দ্য আর্থ’ প্রভৃতি রাশিয়ায় কল্পবিজ্ঞানকে উন্নত করে তোলে। তারই পাশে আরেকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন আলেকজান্দার বগদানভ-ম্যালিনোভোস্কি যিনি ১৯০৮ এবং ১৯১৩ সালে যথাক্রমে লেখেন ‘দ্য রেড স্টার’ এবং ‘ইনজিনিয়ার মেন্নি’। এই বলশেভিক নেতার সাম্যবাদী দুই রচনা রাশিয়ার কল্পবিজ্ঞানের ধারায় বড় সংযোজন।

আরও অনেকের মধ্যে কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ও আলেক্সি টলস্টয়ের নাম করা যেতে পারে। মায়াকোভস্কির স্মরণীয় রচনা হল ‘দ্য রেডবাগ’ (১৯২৮), এবং ‘দ্য বাথ’ (১৯২৯)। টলস্টয়ের দুটি বিখ্যাত রচনা হল ‘আয়েলিতা’ (১৯২২), ‘ইনজিনিয়ার গ্যারিনস ডেথ রে’ (১৯২৬-৩৮)। আরেকজন বিখ্যাত লেখক হলেন আলেকজান্দার বেলায়েভ যার সবচাইতে বিখ্যাত উপন্যাস হল ‘দ্য অ্যাম্ফিবিয়ান ম্যান’।

আধুনিক ইউটোপিয় ধারার সব চাইতে সফল এবং নামী লেখক হলেন — আমার মতে — ইভান ইয়েফ্রেমভ। তাঁর উপন্যাস ‘অ্যান্ড্রোমিডা’ এক অসামান্য সাম্যবাদী পৃথিবীর ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে। তাঁর সৃষ্ট মানবতাবাদী, শ্রেণিহীন, রাষ্ট্রহীন, প্রাচুর্যে ভরা যৌথ পৃথিবীতে মুক্ত সৃষ্টিশীল মানুষ নক্ষত্রলোক বিজয়ের পথে পা বাড়িয়েছে। যে এক আশ্চর্য জগতের ছবি। টমাস মোর এর ‘ইউটোপিয়া’র পরে ইয়েফ্রেমভ-এর ‘অ্যান্ড্রোমিডা’ বোধকরি ভবিষ্যতে সাম্যবাদী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কথাচিত্র।

ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কল্পবিজ্ঞান জগতে একটি বিখ্যাত নাম হল আর্থার সি ক্লার্ক। তাঁর রচিত উপন্যাসগুলি হল ‘টু থাউজান্ড ওয়ান আ স্পেস ওডিসি’, ‘টু থাউজান্ড টেন আ স্পেস ওডিসি’, ‘এ ফল অফ মুনডাস্ট’, ‘ডলফিন আইল্যান্ড’, ‘আর্থলাইট’, ‘রাদেভু উইদ রামা’ ইত্য্যাদি। প্রত্যেকটির প্রেক্ষাপট প্রায় এক। ক্লার্ক-এর পৃথিবী আর বিভিন্ন দেশে বিভক্ত নয়, দেশগুলি আন্তর্জাতিক সরকারের এক একটি অংশ মাত্র, পৃথিবীতে দারিদ্র নেই বললেই চলে, সকলে মুক্ত হয়ে আত্মিক উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। কী করে এমন একটি পৃথিবী জন্মাবে সে কথা অবশ্য ক্লার্ক কোথাও বলেননি। এ দুনিয়া অবশ্য শ্রেণিহীন নয়।

অন্যান্য অনেক কল্পবিজ্ঞান কাহিনীকারই ভবিষ্যতে পৃথিবী একটি যৌথ দুনিয়ায় পরিণত হবে একথা বলেন। এও সকলেই মানেন যে যৌথ দুনিয়ার পত্তন না হলে মানবজাতি কখনও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পারবে না। তবে সকলের দৃষ্টিভঙ্গি ক্লার্কেরই মতো। অবশ্য এঁদের কেউই ক্লার্কের মতো বৈজ্ঞানিক যুক্তি সাজাতে পারবেন না, অথবা কল্পনাকে অতটা মনোগ্রাহী করে তুলতে পারেন না। ক্লার্কের কল্পিত জগত খুবই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে সব সময়েই। বস্তুত, বর্তমান বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ব্যবসা পদ্ধতি এবং পৃথিবীব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্লার্কের অনেক উপন্যাসের বাতাবরণের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিভিন্ন লেখায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত ক্লার্কের বহু ভবিষ্যৎবাণী পরে সত্যে পরিণত হয়েছে।

এতক্ষণের আলোচনা থেকে আশা করি খানিকটা বোঝা গেছে কল্পবিজ্ঞান ইউটোপিয় ধারার বিভিন্ন রচনার মূল্যায়ণের মান সম্পর্কে বর্তমান লেখকের মতামত কী। তবে এখানে আবারও একটা সাবধানবাণী উচ্চারণের প্রয়োজন আছে। এই লেখকের মত তাঁর নিজস্ব তা সে যত বস্তুনিষ্ঠ এবং শিক্ষিত মতই হোক না কেন। সেই মতকে কিন্তু পাঠককে নিজের মতো করে বিচার করে নিতে হবে। নইলে আবার সেই চাপিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটাই এসে পড়বে। পাঠককে নিজেই ঠিক করে নিতে হবে তিনি কী পড়বেন বা পড়বেন না। বই পড়া নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কিন্তু ফ্যাসিবাদের দিকেই অন্যতম পদক্ষেপ। সে যে কী ভয়ানক হতে পারে, তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে।

সব শেষে সাম্প্রতিক একটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনী নিয়ে দু’একটা কথা বলা প্রয়োজন, যদিও কাহিনীটি ইউটোপিয় ধারার মধ্যে পড়ে না। মূল বইটি মাইকেল ক্রাইটন-এর লেখা, নাম ‘জুরাসিক পার্ক’। বইটি আমরা অনেকেই পড়তাম না, যদি না স্টিভেন স্পিলবার্গ সাহেব তাঁর প্রচণ্ড উত্তেজনাপূর্ণ চলচ্চিত্রটি তৈরি করতেন। গল্পটা আমরা সকলেই এখন জানি।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই কাহিনীটির প্রতিক্রিয়া মানুষের, বিশেষ করে শিশুদের উপরে কতটা স্বাস্থ্যকর হয়েছে বা হচ্ছে।

এ প্রশ্নের উত্তরের বিভিন্ন দিক আছে।

পশ্চিমী দেশগুলির একটা চেষ্টা সবসময়েই আছে, প্রযুক্তি এবং প্রকৌশলের মন্ত্রে আমাদের মতো দেশের মানুষকে মুগ্ধ করে রেখে বোঝানো যে তারা অনেক বেশি উচ্চতর পর্যায়ের জীব এবং আমরা নিম্নকোটির লোক। প্রযুক্তি তাদের করে রেখেছে অজেয়। এ কথার স্ববিরোধ বারেবারেই আমাদের সামনে প্রকট হয়, নিকট অতীতের ইতিহাসই তার সাক্ষী। ‘জুরাসিক পার্ক’ কাহিনীতে প্রযুক্তির শক্তি আমাদের যে ঘাবড়ে দিতে চেষ্টা করে না তা নয়। কিন্তু সেই চেষ্টা আবার বিফলও হয় যখন কাহিনীটিতে দেখা যায় প্রযুক্তি নিজের অন্তর্লীন দুর্বলতার ফলেই ব্যর্থ হচ্ছে নিজের কাজে। মানবিক স্পর্শের অভাব যন্ত্রকে শেষ পর্যন্ত বিকল করে দিচ্ছে। সুতরাং, শেষ বিচারে প্রযুক্তিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রযুক্তি ব্যর্থতার মধ্যে আবার অন্য একটা দিকও লুকিয়ে আছে। আজকের গোটা দুনিয়ার বিচিত্র বিজ্ঞান-বিরোধী হাওয়া উঠেছে এবং প্রশ্রয় পাচ্ছে অন্ধ বিশ্বাস আর ভ্রান্ত ধারণা। এই হাওয়ায় আবার মদত দিচ্ছে কিছু বিজ্ঞানে ‘পণ্ডিত’ ব্যক্তি। ‘জুরাসিক পার্ক’-এ প্রযুক্তির ব্যর্থতাকে তারা বিজ্ঞানের সার্বিক ব্যর্থতা বলেই ধরে নিতেই চাইবে। এদেশেও বিজ্ঞানবিরোধী শক্তিগুলি অন্ধ বিশ্বাসকে স্থায়ী করার চেষ্টায় সরাসরি বলছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মানি না। অজস্র কেচ্ছার ঘটনা স্মরণীয়। সেদিক থেকে দেখলে ‘জুরাসিক পার্ক’-এ প্রযুক্তির ব্যর্থতা প্রতিপক্ষকে হাতিয়ার জোগায়। তবে বিজ্ঞান যে সর্বশক্তিমান নয় সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ছবিটা ভালোই করে।

কাহিনীটির দুটি স্পষ্টত ভালো দিক আছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে কল্পবিজ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করতে পারে। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে ছবিটি দেখার পর অনেকের মধ্যেই প্রাচীন পৃথিবী সম্পর্কে, ডাইনোসরের যুগ সম্পর্কে জানার ইচ্ছে বেড়েছে এবং অনেক ভুল ধারণা কেটেছে। সফল ব্যবসাই চলচ্চিত্রটির মূল উদ্দেশ্য, শিক্ষাদান নয়, তবু ঘটনাক্রমে খানিকটা শিক্ষালাভ হয়ে যায় বইকী।

ছবিটিতে, বিশেষ করে ক্রাইটন-এর মূল বইটিতে, দেখানো হয়েছে একটি হৃদয়হীন বহুজাতিক সংস্থা ও তার ততোধিক হৃদয়হীন মালিককে, যারা মূলত মুনাফার লোভে জেনেটিক ইনজিনিয়ারিং-এর চরম বিপদের দিকটাকে অগ্রাহ্য করছে এবং তাদের হঠকারিতার ফলে দক্ষিণ আমেরিকার একটা বিরাট অঞ্চলে স্থায়ী বিভীষিকা নেমে আসছে। চলচ্চিত্রে স্পিলবার্গ দেখাননি কিন্তু বইটিতে আছে, ডাইনোসরের একটি প্রজাতিকে দ্বীপে আটকে রাখা যায়নি এবং মূল ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে তারা এক মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানের এই বেপরোয়া অপব্যবহারকে এই কাহিনীতে আক্রমণ করা হয়েছে।

মনে রাখা দরকার, সব প্রশ্নেরই দুটো দিক থাকে। কল্পবিজ্ঞানও তেমনি ভালো-মন্দ দুয়েরই সংমিশ্রণ। তার কিছুটা আমরা গ্রহণ করব, কিছুটা বাদ দেব। তাই কল্পবিজ্ঞান জিনিসটা কী তা জেনে নেওয়া জরুরি। এই লেখাকে সেই জেনে নেওয়ার প্রথম ধাপ মনে করাই ভালো।

কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু বই-এর নাম :

  1. সুভিন ডার্কো, ‘মেটামরফোসিস অব সায়েন্স ফিকশন’
  2. গ্যারি কে উলফ, ‘দ্য ন্যোন অ্যান্ড দ্য আনন্যোন’
  3. প্যাট্রিক প্যারিন্ডার, ‘সায়েন্স ফিকশন, ইটস ক্রিটিসিজম অ্যান্ড টিচিং’
  4. কিংসলি এমিস, ‘নিউ ম্যাপস অব হেল’
  5. আইজাক আসিমভ, ‘আইজাক আসিমভ অন সায়েন্স ফিকশন’
  6. এ এল মরটন, ‘দ্য ইংলিশ ইউটোপিয়া’
  7. ব্রায়ান অ্যাল্ডিস ও ডেভিড হারগ্রোভ, ‘ট্রিলিয়ন ইয়ার স্প্রি’
  8. ‘দ্য কেম্ব্রিজ কমপ্যানিয়ন টু সায়েন্স ফিকশন’
  9. ‘এ কমপ্যানিয়ন টু সায়েন্স ফিকশন’
  10. ‘দ্য গ্রীনউড এনসাইক্লোপিডিয়া অব সায়েন্স ফিকশন’