চার নম্বর নিউজডেস্ক
স্বপ্ন। তার জন্য সিঁড়ি বলতে পড়াশুনো। যারা ব্যতিক্রমী, জিনিয়াস তাদের জন্য হাজারটা রাস্তা। আর যারা অ্যাভারেজ, তাদের চড়াই উতরাই। পড়াশুনো। ওটা ওদের থাকে। তবে তার জন্য দরকার একটা সংস্থা। কর্তৃপক্ষ। কাঁধে হাত। এগিয়ে যাওয়ার সোপান। কামারাদেরি। মালদা গনি খান চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি কোর্স। ইন্টিগ্রেটেড এবং পাশাপাশি তথাকথিত সুবিধাজনক মডুলার ব্যবস্থা। ভর্তি এবং ৫-৬ বছরের লড়াই। নিট ফল শূন্য হলে কিছু বলার থাকত না। এমন তো ঘটেই থাকে। আসলে নিট ফল রেপ করার হুমকি। হ্যাঁ, আই রিপিট। রেপ করার হুমকি। টেবিলের ওপারে কারা? কেন্দ্রীয় সরকারি দলীয় মাফিয়া, থুড়ি শিক্ষা সংস্থার কর্তৃপক্ষের লেঠেল বাহিনী। ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। ডিন। একটি পদ। সম্মান। যার গলায় শিক্ষার আলো না, ছাত্র ধাক্কা দেওয়ার, হেনস্থা করার থ্রেট। এক ছাত্রীকে বাথরুমে টেনে নিয়ে মারধর। অবশ্য, একটি মেয়েকে মারধরের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু উপরি পাওনা থাকে, সেসব থাক। একটি ঢক্কানিনাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে, মেয়েগুলোকে পড়ালে সেসব অধিকার তো একটু আধটু থেকেই থাকে…। মালদহ গনি খান চৌধুরী কলেজে অনশনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর কর্তৃপক্ষসুলভ পে-ব্যাক। মহাপুরুষদের নামগুলোও জানা থাক। নীলকান্ত বর্মন, ডিন। সৌম্যদীপ চ্যাটার্জী এবং সিরাজ।
অন্যদিকে কলকাতায় অনশনরত আরেক দল। কলকাতা অ্যাকাডেমির সামনে। শান্তিপূর্ণ অবস্থান, দাবি আদায়। চেয়ে খাওয়া, কারওকে বিরক্ত না। স্লোগান না। জাস্ট, দাবি আদায়ের চেষ্টা। প্রতিবাদ। অন্যায়, জঘন্যতম এক অন্যায়ের প্রতিবাদ। সম্ভবত, তাতেই সমস্যা বাঁধল লেঠেলবাহিনীর। তারা ধরেই নিল, কলকাতা বৃত্তকে ঘুম ভাঙালে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ক্রমশ মহীরুহ হবে। তাই, সুদূর মালদায় তাদের বন্ধুদের ধমকাও। শাসাও। মারো। ভয় পেয়ে হাত গুটিয়ে নেবে ওরা। মালদায় আসবে। পিছিয়ে আসবে। কোথা থেকে পিছোবে? লড়াই থেকে। কারা? ওই যারা, ২০১০ থেকে আজ অবধি সার্টিফিকেট কোর্স করলেও সেসব নাকি ভুয়ো বলে রাতারাতি আউটসাইডার হয়ে গেল? ওই যারা ২০১৪ থেকে ২০১৭ অবধি ডিপ্লোমার দিন রঙিন ভেবে এদ্দিন কলেজ চত্বর আর বাড়ি, মোটামুটি এরকমই এক শেডিউল বানিয়েছিল, তারা? আর ওই যারা ২০১৬ ও ২০১৭-র ডিগ্রি পরীক্ষা পাশ করেও জানল আচমকাই তারা অস্তিত্বহীন হয়ে গেল? মডিউলার শিক্ষাব্যবস্থা! গালভরা ধাপ্পাবাজি। কোনওদিন সেভাবে রাজনীতি না করা ছাত্রদের ওপর এক অঘোষিত যুদ্ধে অবতীর্ণ করা, শেষমেশ এক রক্তক্ষয়ী নিদর্শন তৈরি করা এজুকেটেড সরকারি ও বুদ্ধিজিবী মহল। কেন বুদ্ধিজীবী মহলের কথা উঠছে? কারণ, সেভাবে কোনও প্রতিবাদ নেই। ‘সেভাবে’ শব্দটা প্রণিধানযোগ্য। একদমই প্রতিবাদ নেই, এমন নয়। কালই এই বর্বরতার বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট। কিন্তু তাও… ওই ‘সেভাবে’। কারণ, প্রেক্ষিত কলকাতা নয়, ফালতু জেলা শহর। কারণ কোনও মিডিয়া হাইলাইট নেই। কারণ তথাকথিত এলিট কলেজ ক্যাম্পাসের ছায়াতেও নেই মালদা। তাই, কলকাতা ছাত্রসমাজ এখনও সর্বাত্মক পাশে নেই। জিকেসিইআইটি খায় না মাথায় দেয়, কতটা পাশে দাঁড়ানো যাবে বা আদৌ দাঁড়ানোর যোগ্য কিনা এসব ভাবতে ভাবতে অনশনরত ছাত্রছাত্রীদের বয়স ক্রমশ বাড়বে। সেভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে না, কিন্তু একদমই দাঁড়াবে না বিশ্বাস করি না। কিন্তু আপাতত এই মূলত শীতলতার পরিণতি? মারধর। ‘রেপ করতাম, সিসিটিভি না থাকলে’। পৌরুষ।
ছবি : মিতুল দত্তের ফেসবুক ওয়াল থেকে
উপায়? আন্দোলন। পৌরুষের দাঁত উপড়ে নেওয়ার আন্দোলন। ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টকে সমস্বরে গ্রেপ্তারির দাবি জানানোর আন্দোলন। সামগ্রিক মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে বুদ্ধিজীবী সমাজের আন্দোলন। ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার আয়োজন। তাঁদের জীবন নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার এমন বেনজির চিটিংবাজির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, যা রাজ্য সরকার চাইলেও নিতে পারে, এমন লিগাল সিস্টেমের পক্ষে সওয়াল। কলকাতার ছাত্রসমাজের আরও একটু বেশি করে ঘরের বাইরে বেরনো। সাদা ক্যানভাসে নবারুণ, শঙ্খ দিয়েই মালদাকে চিনে নেওয়ার শপথ। যাদবপুর পারে। চেষ্টা করলেই পারে। পারে মেডিকেল, প্রেসিডেন্সি। আরও কয়েকশো কলেজ। পারবে না? আর যারা ভুক্তভুগী? কোর্টে যান। মহামান্য আদালতে ভরসা রাখুন। ২০১০ থেকে ২০১৭ অবধি মডুলার সিস্টেমের স্বীকৃতি একমাত্র কোর্ট দিতে পারবে। প্রমাণ, কাগজপত্র, জোর, দাবি সব ছাত্রদের পক্ষে। শুধু দরকার সমস্বর। এই হার মেনে নেওয়া যায় না। এই হার নৈতিক হার না। এই হার গায়ের জোরে …