দেবব্রত শ্যামরায়
হ্যাঁ বলুন.. হ্যাঁ আমিই… ঠিক লোকের কাছেই এসেছেন আপনি৷ তা কে পাঠিয়েছে আপনাকে? ও আচ্ছা, খবরের কাগজে নাম পড়েই… হ্যাঁ গত ক’দিনে আমার নাম-টাম এত বেশিরকম ছড়িয়ে গেছে যে একটু মুশকিলেই পড়েছি, বুঝলেন! অবশ্য এই নাম-টাম কোনওদিনই চাইনি, ওসব নিমিত্তমাত্র, ভারতমাতার এক প্রকৃত সুসন্তান হিসেবে নিজের কাজটুকুই করে যেতে চেয়েছি মাত্র। আর যে জন্য আপনি এসেছেন, আপনার মতো কাগজওয়ালারা দিনে দশবার করে ফোন করছেন, সেই কাজটাও, ভারতবর্ষে প্রথম হিন্দু কোর্টের সংস্থাপন, ঠিক তেমনই একটা কাজ। অনেকদিন ধরেই এটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ওই… করছি-করব করে আর করা হয়ে উঠছিল না। কিন্তু এ বছর জুলাই মাসে মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড যখন দেশের সব জেলায় শরিয়া কোর্ট স্থাপন করার কথা ঘোষণা করল, মাথায় রক্ত উঠে গেল আমাদের। শালাদের স্বভাবটাই এমন, যে থালায় খায় সেই থালাতেই ফুটো করে। আমরা সংরক্ষক মণ্ডল তখনই বসে সিদ্ধান্ত নিলাম যে হিন্দু কোর্টও হবে। এই দেশে যদি সব্বার জন্য এক আইন না হয়, তাহলে সবার নিজের নিজের মতো আইন থাকবে। মুসলিমরা যদি বহিরাগত হয়ে এসেও এত তোল্লাই পায়, বেহেনচোঁ আমরা হিন্দু মায়ের একশো কোটি হিন্দু সন্তান, আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব নাকি? মামাবাড়ি? এটা তো আমাদের বাড়ি! সব আমাদের কথামতোই চলবে। সাতচল্লিশে যদি অমন মিনমিন না করে বুক ফুলিয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে দেওয়া হত, বেজন্মাদের আজ এত গরম থাকত না! ও হ্যাঁ, আমার সব কথা ছাপবেন না কিন্তু, বুঝতেই পারছেন, আর খিস্তিখাস্তাগুলো একটু এডিট করে দেবেন, আমরা যারা মহাসভা করি, শাখা করি, আমরা কাউকে গালাগাল দেওয়া পছন্দ করি না, জানেন তো। কী বললেন, যারা হাজার বছরের ওপরে এই দেশে আছে তাদের বহিরাগত বলি কী করে? আচ্ছ বেশ, থাকুক না, কে না করেছে? কিন্তু থাকতে হলে নিয়ম মেনে সভ্য ভদ্র হয়ে তো থাকতে হবে, নাকি! ছোট ভাই একই বাড়িতে থাকবে আর বড় ভাইয়ের কথা শুনে চলবে না, সেটা কীরকম কথা! আমরা বাড়িতে দাদা-বাবাদের পায়ের বুড়ো আঙুলের দিকে তাকিয়ে কথা বলি, জানেন? আর বেশি পেঁয়াজি করতে চেষ্টা করলে বড়ভাই ছোটভাইকে দু’টো থাপ্পড়ও মারতে পারবে না নাকি?
যাই হোক, আমাকে আলতু ফালতু বকাবেন না, কাজের কথায় থাকুন, কী জানতে চান বলুন। হিন্দু কোর্ট নিয়ে জানতে চান তো? হ্যাঁ, এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৫ ই অগাস্ট, আমরা অর্থাৎ হিন্দু মহাসভা উত্তরপ্রদেশের মীরাটে দেশের প্রথম হিন্দু কোর্ট প্রতিষ্ঠা করলাম। এটা দেশের হিন্দু ভাইবোনদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এবার থেকে এই হিন্দু কোর্টেই হিন্দু ভাইবোনেরা নিজের পরিবারগত, জমিজমা ও সম্পত্তিসংক্রান্ত এমনকি বিবাহজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য আসতে পারবেন। হিন্দু আইন অনুসারেই তার শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে৷ না, না, দেশের চালু বিচারব্যবস্থার সঙ্গে হিন্দু কোর্টের কোনও বিরোধ নেই৷ বরং আমাদের এই ব্যবস্থা সরকারি আদালত ব্যবস্থার উপর চাপ কমিয়ে দেবে। একটা কোর্টে কী করে চাপ কমবে? ওয়েট এন্ড ওয়াচ, খুব শিগগিরই আমাদের সারা দেশে গোটা পনেরো কোর্ট শুরু করার পরিকল্পনা আছে।
কী বলছেন? দেশে সংবিধান-অতিরিক্ত এমন ব্যবস্থা থাকতে পারে কিনা? যান, যান, মুসলিম ল বোর্ডকে প্রথমে এইসব কথা বলুন গিয়ে। বলেছেন? হ্যাঁ কী বলেছে ওরা… ওগুলো কোর্ট নয়? কাউন্সেলিং সেন্টার? ওখানে শরিয়ত অনুযায়ী সমস্যা মেটানোর জন্য দুই পক্ষকে উপদেশ দেওয়া হয়, মানা না মানা অভিযোগকারীর নিজের ওপর? আপনাকে এইসব চুদুরবুদুর বলল আর আপনি তাই শুনে চলে এলেন? মসজিদ থেকে মোল্লারা যে সকাল বিকেল ফতোয়া দেয়, তাকে সংবিধানবিরুদ্ধ বলেন না কেন আপনারা? বলেন? কোথায় বলেছেন, দেখতে পাইনি তো? কোন কাগজ আপনাদের? বাংলা কাগজ? ও, বঙ্গাল থেকে এসেছেন? আপনারা হিন্দুর দুঃখকষ্ট আর কবে বুঝবেন, মশাই! বাঙালিরা আবার হিন্দু হলটা কবে থেকে? সবক’টা গাছ-আঁতেল, গরুখোর নতুবা বামৈস্লামিক! কী বলছেন? বিবেকানন্দ? হ্যাঁ ঠিক, তবে বিবেকানন্দ, শ্যামাপ্রসাদ আর তথাগত রায় ছাড়া আর ক’টা হিন্দু আছে বাঙালিদের মধ্যে? আর হ্যাঁ, দিলীপ ভাই দেখছি ইদানিং ভালো কাজ করছে-টরছে। অন্য বাঙালিদের মতো হিন্দুত্বের নামগন্ধহীন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া মিইয়ে পড়া হিন্দু নয়, বর্তমান ভারতে হিন্দু হতে গেলে এখন বাঘের বাচ্চা হতে হবে, বুঝলেন?
যা বলছি, শুনে যান, লিখবেন। শুধু আমার নামটা উল্লেখ করবেন না, তাহলেই চলবে। দেখেছেন, বলেছিলাম না, আমি নামের কাঙাল নই। কে বলছে সেটা বড় কথা নয়, বরং হিন্দু ভাইবোনদের মধ্যে এই কথাগুলোর বেশি বেশি করে প্রচার ও প্রসার হওয়া দরকার। হিন্দু কোর্ট হয়েছে, হচ্ছে, আরও হবে। শুধু কোর্ট নয়, আমাদের নিজস্ব জেল থাকবে, শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। জায়গা চিহ্নিত করে ফেলেছি। খুব শিগগির, আগামী ১৫ই নভেম্বর আলিগড়, মথুরা, হাথরাশ, কানপুর, ফিরোজাবাদ, আর শিকোকাবাদ শহরে ‘হিন্দু কোর্ট’ চালু করে দেব আমরা। কী বললেন, ১৫ই নভেম্বরের বিশেষ কোনও তাৎপর্য আছে কিনা? তবে শুনে রাখুন, তাৎপর্য আছে। ১৫ই নভেম্বর হিন্দু মহাসভার এক মহান সদস্য, ভারতমাতার এক বীর সন্তান নাথুরাম গডসেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। আমরা সেই দিনটাকে বড় বেদনার সঙ্গে স্মরণ করি। আমাদের মহাসভার এক কার্যকর্তা, পূজা শাকুন পাণ্ডে, যে সে লোক নয়, অঙ্কে স্কলার… গতকাল কী বলেছেন জানেন? পূজা বলেছেন, গডসে না থাকলে, পূজা থাকলে, সেদিন পূজাই গান্ধীকে মারতেন। এই ভারতে যদি আবার কোনও গান্ধী জন্মায়, তাহলে শত শত নাথুরামেরও জন্ম হবে। কী তেজ দেখেছেন! কী স্পষ্ট বক্তা! ভারতের ঘরে ঘরে যেন পূজার মতো মেয়ে জন্মায়, গৌরী লঙ্কেশের মতো কলঙ্ক যেন না জন্মায়। শুধু দেখে যান আস্তে আস্তে কী হয়! আপনারা পত্রকারেরা শুধু আমাদের পাশে থাকুন। কেন্দ্রে আর বাইশটা রাজ্যে আমাদের দল পাওয়ারে। আরও দশ পনেরো বিশ বছর থাকবে। তার মধ্যে যা করার ঠিক করে নেব আমরা। নরেন্দ্রভাই আইনের আওতায় থেকে ইচ্ছে থাকলেও যা করতে পারবেন না, আমরা রামশিষ্যরা তা করে দেখাব। সারা দেশে গরুখোররা ইতিমধ্যে ভয়ে কাঁপছে৷ অনুপ্রবেশকারীদের ঝাড় দিয়ে বাংলাদেশে আর পাকিস্তানে পাঠাব। এন আর সি কেমন লাল সুতো নীল সুতো বের করে দিয়েছে দেখছেন তো? এরপর থেকে সুতোর শুধু একটাই রঙ থাকবে। পবিত্র গেরুয়া! দরকারে সংবিধান সংশোধন করাব আমরা। ইতিহাসের সব ভুল শোধরানোর সময় এসে গেছে। নিশ্চিন্ত থাকুন বন্ধু, আনন্দ করুন, হিন্দু রাষ্ট্র এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! দাঁড়ান, দাঁড়ান, উঠবেন না! চা খেয়ে তারপর যান। কালো গোমাতার খাঁটি দুধের চা! বাড়ির পেছনে এরকম চল্লিশটি মাতা আছেন আমার…!
অনুষঙ্গ :