Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মাটির মানুষ

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

একটা লোক। মাটি। চারপাশের অর্ধশিক্ষিত ভারতবর্ষ। সোনালি ঝলমলে ইতিহাসে। এই দুইয়ের মাঝে একটা সিদ্ধান্ত। ভালোবাসা। দেশ। যুগান্ত। হরিনাথের কথা বলছি। চিনলেন না তো? এঁরা থাকেন ওধারে। মাঝে পর্দা। প্রচারমুখী কর্পোরেট ভারত। শাইনিং। আর এর বিপরীতে হরিনাথ। ডক্টর হরিনাথ কাশিগণেশন। তামিলনাডু সীমান্তের রোদে পোড়া গ্রাম পেন্নাগরমের মানুষ। ঘটনাবহুল এক মানুষ। ছোটবেলায় বাবা চলে যাওয়া। মা একা। স্নেহ, মমতার সঙ্গে জেদ। মায়ের কাছ থেকে সবকিছুই পাওয়া। আর জেদ মানে চ্যালেঞ্জ। হরিনাথ পড়াশুনো বেছে নিলেন। সাধনা। অধ্যাবসায়। মাস্টার্স করে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে যুক্ত হলেন ১৯৯৩ সালে। সেখানেই সীমান্ত অঞ্চলের সেনাদের স্বাস্থ্য তাঁর বিষয় হয়ে উঠল। এই তো চেয়েছিলেন হরিনাথ। স্বাভাবিক কনক্রিটের চেয়ে আলাদা কোনও ঘর। হরিনাথের অনুসন্ধান জারি থাকল। আর সেখানেই ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালাম আজাদের সঙ্গে পরিচয়। প্রজ্ঞা। বোধ। জীবনদর্শন। হরিনাথ মুগ্ধ হলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার্লসটনে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনাতে একটি ওষুধ তৈরির কাজে যোগ দিলেন। অর্থ, প্রতিপত্তি, সম্মান। অথচ হরিনাথের অন্ধকার কাটল না। কোথাও ভুল হচ্ছে। ভুল হচ্ছে বড়সড়। অথচ, ভুলটা ধরা যাচ্ছে না। মা ভারতবর্ষে একা। আরথ্রাইটিস, স্পন্ডেলাইটিস, বয়স। ডাক্তারের পেনকিলার এবং উপসর্গ। শুরু হল হজমের সমস্যা। ওদিকে হরিনাথ ওষুধের কাজে যুক্ত হয়েও নিরুপায়। হঠাৎই ম্যাজিক। এক জায়গায় মরিঙ্গা অর্থাৎ সজনে পাতার রসের উপকারিতা নিয়ে তথ্য পেলেন। মাকে সেদ্ধ সজনে বেটে খেতে বললেন। কাজ হল রাতারাতি। এতটাই, মুগ্ধতা, মা সজনে গাছের মন্দির বানাবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জৈব সার। জৈব চাষ। লন্ডনে দুবছর পড়াশুনো করলেন হরিনাথ। আর তারপর ২০০৫। ভারতবর্ষ। মার্কিন মুলুকের লোভ থেকে বেরিয়ে গ্রামের রোদে পোড়া মাটিতে জৈব চাষের জোয়ার। মানুষকে বোঝানো। সজনে, আমলা, কারি পাতা লাগালেন। ভেষজ ভারতবর্ষকে চিনলেন। চেনালেন বাকিদের। পড়লেন প্রাচীন তামিল ‘সিদ্ধ’ চিকিৎসাশাস্ত্র। গোটা তামিলনাডু ঘুরে বিরল দেশীয় ধানের প্রজাতির বীজ এনে নিজের জমিতে লাগালেন। কিচিলি সাম্বা, মাপিলাই সাম্বা, ভাসানাই সিরাঙ্গা সাম্বা, করঙ্গ কারুভাই — তামিল নামের স্থানীয় এইসব দেশীয় ধানের জোয়ার আনলেন তাঁর নিজস্ব আলোর মাটিতে। রাসায়নিক? কীটনাশক? হরিনাথ শুনলেই ফুঁসে ওঠেন। জানেন এদের কাজ। বিষের মতো ছড়াবে। সবুজ বিপ্লব নামেই। মাটি, জল, আকাশ, মানুষ কেউ বাদ যাবে না। একমাত্র ওষুধ জৈব পদ্ধতি। মাটির চাষ। হরিনাথের তৈরি মরিঙ্গা বুলেট সজনেজাত একধরনের ভেষজ। ডায়াবেটিস, আরথ্রাইটিস, অ্যানিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ — হরিনাথ জানেন মরিঙ্গা বুলেট তার মান রাখবে। ট্রিগার টিপতেই ছুটবে শরীরে। অসুখ ভ্যানিশ। হরিনাথের মা ভাল আছেন। ভাল আছেন আরও অজস্র মানুষ যারা হরিনাথের কথায় ভরসা করেছেন। বছর চল্লিশের ডক্টর হরিনাথ কাশিগণেশন এভাবেই আলো দিন। প্রতিপত্তি, যশ, আলোঝলমল সাগরপাড় ছেড়ে তাঁর মাটির ভারত, অন্ধকার ভারতবর্ষের দিকে ফিরে আসার আলোর গল্প এভাবেই স্বপ্ন দেখাক আরও অনেক স্বপ্নসন্ধানীকে। ভালো কিছু হয়। এখনও, এগ্রহে ভালো কিছু হয়…