তন্ময় ভাদুড়ি
গত বছরের উত্তাল আন্দোলনের ঠিক এক বছর হচ্ছে। এবং দার্জিলিঙে আজ আবার পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছে। এবারের উপলক্ষ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুই ফেরার নেতা বিমল গুরুং এবং রোশন গিরির নাম দার্জিলিঙের ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া। দার্জিলিঙের নির্বাচন অফিস থেকে কয়েক মাস আগে এই দুজন সহ প্রায় একশোজনের নামে একটি নোটিস জারি করা হয়, এবং তাদের অফিসে তলব করা হয়। স্বভাবতই এরা সেই ডাকে সাড়া দেননি। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কিছুদিন পর পর ভোটার তালিকা সংশোধন তাদের রুটিন কাজ। যদি কেউ মারা যান, বা ছ’ মাসের বেশি সময় ফেরার থাকেন তবে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হয়।
গত বছর জুন মাসে যখন দার্জিলিং, কালিম্পং এবং ডুয়ার্সের জেলাগুলি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল, বিমল এবং রোশন তখন থেকেই ফেরার। তাদের নামে রাজ্য সরকারের দায়ের করা ইউএপিএ ধারার কিছু মামলা সহ খুন, দাঙ্গা লাগানোরও বেশ কিছু মামলা ঝুলছে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এখনও অব্দি কোনও বিবৃতি দেয়নি। সূত্রের খবর, এই দুই হেভিওয়েট নেতার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে ঝুলে থাকা জিটিএ (গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)-র নির্বাচন এবার তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা হবে। যদি সেটাই হয়, তবে এই মুহূর্তে জেতার জন্য মোর্চার সরকারপন্থী নেতা বিনয় তামাং এবং গোর্খা নেতা অনীত থাপারই পাল্লা ভারি। পাহাড়ের মানুষ বিশ্বাস করছেন যে এটা গোর্খা নেতাদের হেনস্থা করার এবং দার্জিলিঙে গোর্খাদের প্রান্তিক করে দেওয়ার জন্য সরকারের একটি চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনও বলছেন যে এটি দার্জিলিঙে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ।
একজন গুরুং-পন্থী মোর্চা নেতা বললেন, “এটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার একটি প্রচেষ্টা। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।” মোর্চা সমর্থকরা হোয়াটস-অ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ ব্যাপকভাবে ফরওয়ার্ড করছেন। তাদের দাবি, এটি বিমল গুরুঙের বার্তা। বার্তাটিতে গোর্খাদের তাদের অধিকার আদায়ের জন্য পুনরায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাহাড়ের সর্বত্র চোখে পড়ছে একটি পোস্টার। “জনতা” স্বাক্ষরিত এই পোস্টারটিতে ভোটার তালিকা থেকে বিমল এবং রোশনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জবাব চাওয়া হয়েছে।
দার্জিলিঙের জজে’স বাজার এলাকায় “জনতা” স্বাক্ষরিত পোস্টার। ভোটার তালিকা থেকে বিমল এবং রোশনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জবাব চাওয়া হয়েছে।
দার্জিলিং গান্ধী রোড
দার্জিলিঙের জনবহুল চকবাজার এলাকা। এটিই ছিল গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল।
দার্জিলিং রেলস্টেশন। সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধিদল দার্জিলিঙের ঐতিহ্যবাহী ন্যারো গেজ টয় ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের করুণ অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে। গত বছর ১০৪ দিন ব্যাপী ধর্মঘটের সময় এই কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার সাথে দুটি স্টেশন সহ আরও অনেক জিনিসপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“গত বছরের আন্দোলনে আমরা সমস্ত কিছু হারিয়েছি। তারপরে আমাদের সম্পূর্ণ শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। আমরা পাহাড়ে আর বন্ধ্ চাই না। বরং আমাদের প্রতিবাদের অন্য কোনও রাস্তা ভাবতে হবে।” জজে’স বাজার মার্কেটের এক সবজিবিক্রেতা অবিনাশ বললেন।
গত বছরের ১০৪ দিনের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী উন্নয়নমূলক কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছিলেন। তাদের বেশিরভাগই গোর্খা যুবতী।
দার্জিলিঙের জনবহুল গান্ধী রোড মার্কেট
পাহাড়ে প্রচুর অভিবাসী শ্রমিক রয়েছেন। আগের বছরের বিক্ষোভের পর তারা বাংলা-ভুটান সীমান্তে জয়গাঁওতে কাজের জন্য চলে যান। তাদের মধ্যে কিছু কিছু আবার দার্জিলিঙে ফিরে এসেছেন এখন।
গত বছরের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে বাচ্চারা। বন্ধের সময় প্রতিটি স্কুলই বন্ধ ছিল। এখন যদিও সব স্বাভাবিক, তবুও কিছু অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের আবার যাতে এই দুর্ভোগ না পোয়াতে হয় সেজন্য শিলিগুড়ি ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিয়ে গেছেন।