খালিদা খানুম
টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের পর মেট্রো রেলটা গুড় গুড় করে পাতাল থেকে বের হলে, সুতপা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। টালিগঞ্জের বর্তমান নাম এখন মহানায়ক উত্তমকুমার। অনেককেই বলতে শুনেছে, একটা উত্তমকুমার দিন তো। সুতপার হাসি পেয়ে যায়।
টালিগঞ্জের স্টেশনে বড় বড় পুরনো কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া গাছ। এগুলো ছাড়িয়ে মেট্রো ধীরে ধীরে সেতুর উপর উঠতে শুরু করে। নারকেল গাছের মাথার উপর দিয়ে, কৃষ্ণচূড়ার ফুলের পাশ দিয়ে, উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির ব্যালকনির সামনে দিয়ে মেট্রো একটা একটা স্টেশন পার হয়। অনেকটা আকাশ দেখা যায়। যত দূর চোখ যায় ফ্ল্যাটের পরে ফ্ল্যাট। কত মানুষ থাকে এই সব ফ্ল্যাটে। মাটি না সই, আকাশের কাছাকাছি সাজিয়ে নেয় ছোট গৃহকোণ, সযত্নে লালিত হয় স্বপ্ন। সুতপার খুব ভালো লাগে এই মেট্রোর সেতুর উপর দিয়ে চলা। আগরপাড়া থেকে বাদুড়ঝোলা হয়ে শিয়ালদহ তারপর ঊর্ধ্বশ্বাসে সেন্ট্রাল মেট্রো। ঘামের গন্ধ, ঠেলাঠেলি, অসহিষ্ণু বাক্য সবকিছুর পরে মেট্রো রেল থেকে আকাশ দেখাটা সুতপাকে চার্জ করে দেয়।
একটা বেসরকারি হাসপাতালে রিসেপশনিস্টর কাজ করে সুতপা। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী। অনেক সময় রোগীকে চেনা যায় না, সঙ্গে যারা আসে তাদের দেখে মনে হয় না এরা কোনও রোগীর আত্মীয়র সাথে এসেছে। নাম লিখিয়ে কফি খায়, স্যান্ডউইচ খায়, মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কেউ কেউ রিসেপশনিস্টদের বুকের দিকে তাকাতে ভোলে না!
কী বিচিত্র মানুষের অসুখ। এই অসুখ কি কোনও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে সারে?
হসপিটালের অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে সুতপার। যখন সুতপার মায়ের অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়। হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সরকারি হসপিটাল। সুস্থ মানুষের মুখে হাসি বন্ধ হয়ে যাবে। চারিদিকে যন্ত্রণার গন্ধ। চারিদিকে বিষণ্ণতা। অপরিচ্ছন্নতা যন্ত্রণা মিলেমিশে গিয়েছে।
নির্দিষ্ট পোষাক পরে কম্পিউটার অন করল সুতপা। ঠিক এগারোটা। কম্পিউটারে এন্ট্রি করা হয় প্রতিটি রোগীর ডিটেইলস। দক্ষ হতে টাইপ করে চলেছে সুতপা। হঠাৎ করে আটকে গেল চোখ — অমিতা মুখার্জি, স্বামী সুখেন মুখার্জি, বয়স পঁয়ত্রিশ, মুর্শিদাবাদ।
অমিতা?
–অমিতা কে আছেন?
একটা মোটামুটি লম্বা, মাঝারি গড়ন লোক এল — বলুন, আমি উনার বাড়ির লোক।
সুতপা বুঝতে পারল না অমিতার কথা কীভাবে জিজ্ঞেস করবে। রেজিস্ট্রেশন স্লিপটা দিয়ে বলল — আপনি থার্ড ফ্লোরে চলে যান। ডক্টর শান্তনু ঘোষ ওখানেই বসবেন। রুম নং চার।
–ম্যাডাম ধন্যবাদ। বলল লোকটি।
এই কি সুখেন মুখার্জি? অমিতার স্বামী? কিন্তু এই অমিতা কি তার সেই পুরনো স্কুলের অমিতা? কীভাবে জিজ্ঞেস করবে?
ভাবতে ভাবতেই লোকটা তার চোখের সামনে থেকে চলে গেছে। আরও অনেকগুলো ফর্ম পড়ে আছে, তবুও উঠে দাঁড়ায় সে, লোকটিকে ফলো করতে। ভিড়ের থেকে একটু দূরে একটা চেয়ারে বসে আছে অমিতা। তারই বাল্যবন্ধু অমিতা।
অমিতা, সুতপা, নুপুর এই তিনজন ছিল প্রাণের বন্ধু। ছেলেবেলার সেই দিনগুলো ছিল বেহিসাবি রঙিন। তখন মফস্বল শহরে কেরিয়ার সম্পর্কে অত সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। জীবন বলতে স্কুল টিউশন, ফুচকা খাওয়া, বন্ধুদের সাথে ঘোরা, মায়ের কাছে বায়না করা, নতুন কারা প্রেম করছে বা কার প্রেম ভেঙে গেল তার খবর রাখা।
অমিতা ছিল সবচেয়ে সুন্দরী। ছিপছিপে গড়ন ফর্সা। তার পিছনে অনেক ছেলে পড়ে থাকত। হয়তো ছেলেরা বেশি পছন্দ করত বলেই, সে কাউকেই পাত্তা দিত না। বলত, ধুর! এগুলো ভালো লাগে না আমার। বিয়ে করার ইচ্ছা নেই কোনও। আর তোরা কী যে বলিস শুধু প্রেম প্রেম!
অমিতা আজ মাথায় মোটা সিঁদুর। পৃথুলা। সোনাবাঁধানো শাঁখা পলা। জামদানি শাড়ি, গায়ের রং আরও খুলেছে। বোঝা যায় সুখে আছে। সুতপা মনে মনে ভাবল। স্বামীর সাথে ধীরে ধীরে যাচ্ছে লিফটের দিকে। সুতপা যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতেই, জোর পায়ে হেঁটে গেল, বলল অমিতা না?
আচমকা পিছু ডাকাতে থমকে গেল দুজনেই, পিছন ফিরে দেখল অমিতা। পাঁচ সেকেন্ডের নীরবতা, সুতপা? ধীরে ধীরে বলল অমিতা।
জড়িয়ে ধরতে গিয়েও নিজেকে আটকে নিল সুতপা। বলল, কেমন আছিস? এখানে কেন? মানে কী হয়েছে? কোথায় আছিস এখন?
–তুই ভালো আছিস? তোর খবর বল? তুই এখানে কাজ করিস?
–হ্যাঁ, বলে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল সুতপা। অমিতার গলায় সোনার চেন। নাকে হীরের নাকছাবি। নিজেকে একটু ছোট বোধ করল। ফোন নাম্বার দিয়ে বলল ফোন করিস। এখন কাউন্টার খোলা আছে। বেশি কথা বলা যাবে না। অবশ্যই ফোন করবি কিন্তু। এই বলেই দৌড়ে গিয়ে বসল কাউন্টারে।
শহীদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশন থেকে মেট্রোতে উঠল সুতপা, প্রতিদিনই যায়। যখনই মেট্রো কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া গাছের মাথার উপর দিয়ে চলতে শুরু করে মন ভালো হয়ে যায়। আজ কিন্তু বাইরের দিকে মন নেই, টুকরো টাকরা ছবি ভেসে আসছে। উচ্চমাধ্যমিকের পর সবাই প্রতিজ্ঞা করেছিল কেউ ছেড়ে যাবে না, কানেকশন রাখবে। নুপুর মেডিকেলে পেয়ে যায়। অমিতার বিয়ে হয়ে যায় দুবছর পরে। সুতপা ছিল তার বিয়েতে কিন্তু নুপুর আসতে পারেনি। তারপর আর যোগাযোগ নেই কারও সাথে।
ট্রেনে যেতে যেতে সুতপা ভাবছিল, অমিতা কি ফোন করবে? এতদিন পরে কি সেই উষ্ণতা আছে তার মধ্যে?
সেই পুরনোবেলার মতো তিনজনে মিলে সারা দুপুর আড্ডা দিতে ইচ্ছে করছে। ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। পরনিন্দা করতে ইচ্ছা করছে। সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করছে। জামাকাপড় ভাগ করে পরতে ইচ্ছা করছে। জামাকাপড়ের কথা মনে পড়তেই হাসি পেয়ে গেল। পৃথুলা অমিতার কোনও মাপ তার সাথে যাবে না।
অমিতা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বসে আছে। দুটো মাত্র ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার। নেট সার্চ করে অমিতা দেখেছে, একটা ঘুমের ওষুধ আর একটা হজমের। তাহলে কি তার কোন রোগ নেই? তবে যে সারাক্ষণ মাথা ঘোরে, খাবারে রুচি হয় না। খাবার গিলতে গেলে বমি চলে আসে। সিঁড়ি ওঠানামা করতে কষ্ট হয়। সারাদিন অস্থির লাগে!
চুপ করে অমিতা বসে আছে দেখে, তার স্বামী বলল — কী ব্যাপার, বসে আছ? আবার শরীর খারাপ লাগে নাকি?
–না তেমন না, দুর্বল লাগছে একটু।
–তুমি চিন্তা কোরো না, টেস্টগুলো করাই, দেখো তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
–জানো, ডাক্তার মনে হয় আমার অসুখ ধরতেই পারেনি। না হলে কেবল ঘুম আর হজমের ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এত বড় হসপিটালে এলাম, কিন্তু রোগ ধরতে পারল না।
–এখন কি টেস্ট ছাড়া কিছু বোঝা যায় নাকি? শোনো, তোমার যে বান্ধবীর সাথে তোমার দেখা হল, তার সাথে দেখো না কথা বলে যদি ও কিছু হেল্প করতে পারে। হসপিটালে বসে থাকাটা খুব ক্লান্তির, যদি তাড়াতাড়ি ম্যানেজ করতে পারে। তোমাকে ফোন নম্বর দিয়েছে না?
সুখেনের কথাতে অমিতার মনে পড়ল, সুতপা শুধু ফোন নম্বর দেয়নি, বারবার বলেছিল ফোন করতে। আগের মতো ছটফটে আছে এখনও। বোঝা যায় না ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে গেছে। এখনও ছিমছাম, পরিপাটি। সুন্দর লাগছে। রিসেপশনিস্ট হলেও নিজের একটা জগত তৈরি করেছে।
–আজ থাক, কাল সকালে করব। হয়ত ব্যস্ত হবে এত রাতে। আমার একটু শরীরটা খারাপ লাগছে। ভালো লাগছে না।
শুয়ে পড়ল অমিতা। ফোন আসছে। কথা বলছে সুখেন। আত্মীয় স্বজন সবাই ফোন করে জানতে চাইছে খবর। সঙ্গে পরামর্শ।
–কেন যে এখানে দেখাচ্ছ! বাইরে গেলে তখন কলকাতা কেন? সোজা ভেলোর বা ব্যাঙ্গালোর গেলেই পারতে। ডাক্তার কী বলল? টেস্ট দিয়েছে? ফালতু পয়সা খরচ। কলকাতাতে আবার ট্রিটমেন্ট হয় নাকি?
এই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি চলতে থাকে, চলতেই থাকে।
মাথার উপর হাত দিয়ে শুয়ে শুয়ে অমিতা ভাবে — তার কি এমন অসুখ হল যে ডাক্তার রোগ ধরতে পারছে না! ভেলোর গেলেই ভালো হত হয়তো। সব আত্মীয়রা বলেছিল। সুখেন যেতে চাইছিল, কিন্ত বুবুনের পরীক্ষা সামনে, মায়ের কাছে রেখে এসেছে তিন চার দিনের জন্য, কিন্তু পনেরো কুড়ি দিন তাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। বুবুনের পরীক্ষা হয়ে গেলে না হয় ভেলোর যাবে। এখানে মনে হয় না সারবে। তবু টেস্টগুলো করাতে হবে। মনে পড়ল সুতপা ফোন করতে বলেছিল। খুব ইচ্ছা করছে সুতপার সাথে কথা বলতে।
–ওগো, শোনো… কটা বাজে? সুতপাকে কি ফোন করব?
–এত হেজিটেশন কেন? পুরনো বান্ধবী তোমার। একটু কথা বলো, ভালো লাগবে। মোবাইল ফোন এগিয়ে দিতে দিতে বলল সুখেন।
একদিকের ওভেনে প্রেশার কুকারে ভাত আর আলুসেদ্ধ, অন্য ওভেনে মাছ ভাজা চলছে। মাছ উল্টাতে উল্টাতে গলা তুলল সুতপা, ‘বাবু দুধের গ্লাসটা শেষ কর তাড়াতাড়ি। পড়তে বসতে হবে।’
সুতপার স্বামী অঞ্জন মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ। অনেক দেরি করে ফেরে। সুট বুট পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় ডাক্তারের জন্য। টার্গেট, গোল-এর চক্করে চক্কর কাটতে থাকে সারা বছর। অঞ্জনই বলে কয়ে রিসেপশনিস্টর কাজটা করে দেয়। হসপিটাল রান্নাঘর বাচ্চা সামলে সুতপা আর পেরে উঠে না। তবু একটু বেশি আয়। বাবুর পড়াশুনোতে খরচ আছে। সবকিছু ভেবে কাজটা করে যায়। রাস্তা হসপিটাল বাড়ি, অভ্যস্ত চক্রে আবর্তিত হতে হতে বুঝতে পারে না সে ক্লান্ত বোধ করে কিনা! কবে যে অসুস্থ হয়েছিল, মনে পড়ে না। শাশুড়ি থাকাতে বাচ্চাকে নিয়ে টেনশন হয় না।
মুর্শিদাবাদ থেকে এতদূরে বিয়ের সম্বন্ধ তৈরি হয়েছিল এক আত্মীয় মারফত। তখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ার।
সৌমেনের সঙ্গে তখন তার রিলেশন চলছে। সৌমেন হ্যান্ডসাম। ভালো গিটার বাজাত। সুতপার দিকে চেয়ে গান করত — কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি….
–আমি কি এতই কালো? অভিমান করে বলত সুতপা।
–পাগলি, তুই আমাকে পাগল করেছিস।
সৌমেনের মতো হ্যান্ডসাম ছেলের প্রোপোজ পেয়ে হ্যাঁ বলতে দেরি করেনি সুতপা। তুমুল প্রেম চলে বছর খানেক। নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হত। গঙ্গার ধারে বসে থাকতে দেখে নিয়েছিল ছোটকাকা। বাড়িতে তুমুল অশান্তি। মেয়ে প্রেম করছে! গঙ্গার ধারে বসে অসভ্যতা করছে! তিন মাসের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় অঞ্জনের সাথে। বিয়ের আগে ওই তিন মাস প্রত্যহ নিজের মৃত্যু কামনা করেছিল সুতপা। মৃত্যু হয়নি, বৌ হয়ে চলে এসেছিল অনেক দূরে আগরপাড়ার ছোট্ট একটা বাড়িতে। এক বছর পর স্বামীর ইচ্ছাতে ডিসট্যান্সে ডিগ্রি কোর্স করে। স্পোকেন ইংলিশ। তারপর এই রিসেপশনিস্টের কাজ। অঞ্জন কর্মঠ মানুষ। সংসারটা গুছিয়ে তুলতে খুব চেষ্টা করে। সৌমেনের কথা এখন ভুলেই গেছে সুতপা। সৌমেন এখন শুধুই একটা নাম।
রান্না শেষ করে ছেলেকে পড়াতে বসাবে, তখন ফোন এল।
–হ্যালো।
–কে সুতপা? অমিতা বলছি রে। ব্যস্ত নাকি?
–ওহো বল। না রে। ভাবতেই পারিনি তুই ফোন করবি। ডাক্তার দেখানো হল? কী সমস্যা হচ্ছে?
–সমস্যা তো অনেক রে, অনেক টেস্ট দিয়েছে, ওষুধ কিছুই দেয়নি প্রায়, ডক্টর শান্তুনু ভালো রে?
–মেডিসিনে ওনার কাছে তো সবচেয়ে ভিড় বেশি হয়। আমি তো কোনওদিন দেখাইনি। তাই ঠিক বলতে পারব না।
–হ্যাঁ রে তোর তো অনেক ডাক্তারের জানাশোনা, বলতে পারবি কোনও ভালো ডাক্তারের খোঁজ।
সুতপার এবার বিরক্ত লাগে। এ কেমন? যেন ডাক্তারের খোঁজ জানতে ফোন করছে! প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা করে, বলে, কোথায় উঠেছিস? হোটেল?
–না আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে রাজারহাটে, ওখানেই।
–ও, সঙ্গে কে? স্বামী?
–হ্যাঁ, তুই কোথায় থাকিস?
–আগরপাড়া আমার শ্বশুরবাড়ি।
–বাচ্চা?
–একটা ছেলে। তোর?
–আমারও তাই।
নীরবতা দু প্রান্তেই। যাদের কথা একদিন শেষ হত না তারা আজ কোনও কথা খুঁজে পাচ্ছে না। মাত্র দু মিনিট চল্লিশ সেকেন্ডে সব কথা ফুরিয়ে গেছে। একবার মনে হল সুতপার আগরপাড়ার বাড়িতে অমিতা আর তার বরকে ডাকে, কিন্তু ঘরে নিন্মমধ্যবিত্ততার ছাপ দেখাতে ইচ্ছা হল না।
নীরবতা ভাঙল সুতপা — নুপুরের কোনও খবর জানিস?
–না রে। মেডিকেল পেয়ে যাবার পর এক দুবার ফোন করেছিল, আর না।
–ও, তো তোরা আছিস এখন কলকাতাতেই?
–হ্যাঁ, টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট দেখবে ডাক্তার। হসপিটালে থাকবি কাল?
–থাকব, তুই আসবি?
–হ্যাঁ, শোন না তুই কি একটু ম্যানেজ করতে পারবি, যাতে টেস্টগুলো তাড়াতাড়ি হয়?
সুতপা বুঝতে পারে না, এই সেই অমিতা তার বাল্যবন্ধু। মনের ভিতর কিছু একটা ভাঙে। শুধু বলে — ছেলেকে খাওয়াতে হবে রে। এখন রাখছি, কাল দেখছি কি হয়!
ফোনটা কেটে দেবার পর, মোবাইল হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে অমিতা। এই কী তার পুরনো বাল্যবন্ধু? তার টেস্টে সাহায্য চাইতেই পুরো এড়িয়ে গেল। এতটাই বদলে গেছে। সুতপা ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল, প্রাণবন্ত, পরোপকারী। কাল কি আসলেই দেখা করবে সুতপা, না কাজের চাপ বলে এড়িয়ে যাবে! পুরনো সুতপাকে পেতে খুব ইচ্ছে করে, ভীষণভাবে।
সুতপা বুঝতে পারে না কী অসুখে ভুগেছে অমিতা? আসলেই কি অসুস্থ? কিছুর তো অভাব নেই, পরিপূর্ণ সংসার, কেয়ারিং বর, একটু স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের জন্য রোজকার দৌড়ানো নেই। তবে সুখ নেই কেন?
সুতপার সামনে জেগে ওঠে পুরনো সুন্দরী অমিতা, যে অসুস্থ নয়।