Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সঙ্ঘীদের চোখে নারী : একটি রিপোর্ট

শৈবাল দাশগুপ্ত

 

ভারত মাতা কি জয়!

সঙ্ঘীদের মতো এই স্লোগানটির বহুল ব্যবহার আর কেউই করে না। কিন্তু যদি মেয়েদের সম্মান করার — আচ্ছা সম্মান ছেড়ে দিন, মেয়েদের মানুষ মনে করবার প্রশ্নটি যদি ভাবা হয়, তখনই সঙ্ঘীদের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা একেবারে নগ্ন হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে এক মহিলা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এবং জানান তিনি ভারতীয় জনতা মহিলা মোর্চা, দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ চ্যাপটারের সেক্রেটারি ছিলেন। সেই সময়টায় যেহেতু আমি বাংলায় জন্মাষ্টমীতে আরএসএসের দাঙ্গা বাধানোর পরিকল্পনা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম, ফলে তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলা হয়নি। এই মাত্র কিছুদিন আগেই তার মেসেজগুলি খুললাম।

আমার বিশ্বাস রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিষয়ে আমার রাজনৈতিক অবস্থান কী, তা গোটা সঙ্ঘ পরিবার জানে। তাই বুঝতে পারছিলাম না, তিনি এগুলি আমাকে জানালেন কেন। কারণ, আমি সবচেয়ে বেশি যা করতে পারি, তা হল তার বক্তব্য কিছু নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করার ব্যবস্থা। দোষীদের শাস্তি দেওয়া আমার হাতে নেই, আর বিষয়টি যখন যৌন হেনস্থার, আমরা ভালো করেই জানি এ ব্যাপারে সঙ্ঘের সেরকম কোনও ঢাকঢাক গুড়গুড়ও নেই। মনে করুন দক্ষিণ ২৪ পরগণা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ দাস ববির ঘটনা। (একটা কথা বলি, নামটা Abhijit Das Bobby নয়, আসলে Avijit Das Bobby। কিন্তু কী জানেন, কখনও নামের বানানটা অল্প পালটে নিলে আদালতকে এড়িয়ে থাকা যায়, চাইকি ভোটেও লড়া যায়।) বা ধরুন, হাওড়ার প্রাক্তন বিজেপি প্রেসিডেন্ট দেবাঞ্জল চ্যাটার্জীর কথা, যে মহিলাদের ‘mai bahut piyasi hu, mere piyas bujhaogi?’ বলে মেসেজ করত। কিছুই বলার নেই, কারণ বিজেপি-সঙ্ঘে এসবই দস্তুর। একটাই কথা বলা যায়, ভুল হিন্দিটা শুধরে নিন মশাই। ওটা pyasi নয়, pyasa হবে!

তা তার থেকে যেটা জানতে পারলাম : “একজন মহিলাকে একটা যৌন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা এবং তারপর তাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া — এ যেন বড়ই সহজ বিষয়। আমি এই সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাই। এখন আমি তো কোনও রাজনৈতিক নেতা বা বড় উকিল নই, যে এদের জেলের ঘানি টানাব! তাই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এই ধরনের জন্তুদের লালসার শিকার যারা হচ্ছে, তাদের প্রতি আমি আমার সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়াতে চাই, আর চাই তাদের কথাগুলি যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।” (তার পাঠানো মেসেজ থেকে)

তার কথা অনুযায়ী, জেলা বিজেপি সম্পাদকের মহিলাদের শরীরের যে কোনও জায়গায় হাত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এবং এইসব নোংরা বিকৃতকাম ভণ্ডরা যাতে তাদের নোংরামো আরও ভালো করে চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য বিজেপি পার্টির থেকেই পার্টি অফিসের মধ্যে একটি বার খোলার অনুমতি দিয়েছে। সেখানে মহিলা নেত্রীদের জোর করে আনা হয় নেতাদের দর্শকাম চরিতার্থ করার জন্য। তিনি আরও দাবি করলেন যে, মহিলা মোর্চার এই ঘটনাগুলিকে সমর্থন করেন এবং নেতাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলেন! কারণ, নেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারলে পার্টিতে দ্রুত অগ্রগতি ঘটবে!

তার থেকে এই ঘটনাগুলি জানার পর নিজের উদ্যোগে আরও খানিক তদন্ত করলাম মুর্শিদাবাদ জেলাতেই বিজেপির ভেতর আমার নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে। তাতে যা বেরোল, তাতে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। মহিলাদের যৌন সামগ্রী হিসেবে দেখার ব্যাপারে সঙ্ঘীরা প্রায় অন্ধ। এবং শুধু যে মহিলা তাই নয়, তাদের মধ্যে পিডোফিলিয়ারও বেশ ভালোই প্রকোপ রয়েছে। বিজেপির মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি ৪৩ বছর বয়সী গৌরী শঙ্কর ঘোষের কয়েকটা চিঠি হাতে এল, এক স্কুলছাত্রীকে লেখা, যে এই চিঠিটি লেখার সময়ে নাবালিকা ছিল। আমার বিশ্বাস, তার চিঠিতে যা লেখা হয়েছে সেটা যে পস্কো আইনের আওতায় চলে আসে সেটা গৌরীবাবু জানতেন না।

আর একটা কল রেকর্ডিং-ও পেলাম। তাতে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির কান্দির এক কর্মাধ্যক্ষ দাবি করছে যে তার নাকি ‘নিচু জাত’-এর মহিলাদের ধর্ষণ করার অধিকার আছে। ভাবতে কীরকম পাগল পাগল লাগে না যে, সমস্ত পারভার্টরা একটাই পার্টিতে কীভাবে জড়ো হতে পারে?! এই ছোট্ট লেখাটার মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি, একজন বয়স্ক মহিলা থেকে একটি নাবালিকা পর্যন্ত সর্বত্র এরা থাবা বাড়িয়েছে। এখন এটুকুই আশা করার যে, বিজেপির পার্টি অফিসগুলিতে ভারত মাতার যে ছবিগুলি ঝোলে অন্তত সেগুলি যেন রক্ষা পাক!

ভারত মাতা সুরক্‌ষিত রহে!!