হিন্দোল ভট্টাচার্য
বইটা সেই কবে থেকে পড়ে আছে টেবিলের উপর। পার্থ বইটিকে খুলেও দেখেনি। এমনটা নয়, পার্থ চেষ্টা করেনি বইটা পড়ার। কিন্তু যতবার পার্থ বইটাকে হাতে নিয়েছে, একটা অস্বস্তি শিরদাঁড়া দিয়ে যেন প্রাচীন সরীসৃপের মতো বেয়ে বেয়ে উঠেছে। ফলে, হাতে নিয়েও পার্থ বাধ্য হয়েছে বইটিকে আবার টেবিলের উপরেই রেখে দিতে। একবার দুবার নয়, অন্তত দশ-বারো বার। প্রায় তিন মাস ধরে। তবে, এমন অভিজ্ঞতা পার্থর আজকের নয়। সেই ছোটবেলা থেকে কীভাবে যে মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে এই ভয়, জানে না সে। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শুরুর ঘটনাটি অমূলক হয়ে যায়। যা পড়ে থাকে, তা হল, তার প্রভাব। বিস্মৃতির অতল গভীরে তলিয়ে যায় সেই ঘটনা, যার প্রভাবে সারাজীবন কিছু কিছু ঘটনা প্রায় তাড়া করতে থাকে। পার্থ যে কবে থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, যে প্রকৃতি কোনও না কোনওভাবে বার্তা পাঠায়, আগে থেকে সতর্ক করে দেয়, বা প্রস্তুত করে দেয় কোনও অনিশ্চিত ঘটনা ঘটার আগে, তা পার্থ আজও মনে করতে পারে না। কিন্তু জীবনে এমনটা যে ঘটে না, তাও নয়। বিশেষ করে সেদিনের পর থেকে পার্থ এই বার্তাবাহকের বিষয়টির প্রতি অন্ধবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল, যেদিন তার বাবার মৃত্যু হয়। দুপুরে লেটার বক্সে একটি অচেনা পোস্টকার্ড এসেছিল সেদিন। ঠিকানা তাদের বাড়ির হলেও, চিঠিটি ছিল অন্য কারুর। তাতে যা লেখা ছিল, সেই বয়ানটিও স্পষ্ট মনে করতে পারে পার্থ। ‘প্রীতিভাজনেষু অমল, এমন হৃদয়বিদারক সংবাদ পাইয়া খুব বিচলিত বোধ করিতেছি। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নাই। আশা করিব, তুমি এই বিপদের ধাক্কা কাটাইয়া উঠিবে। দুঃখ কাহারও সহিত ভাগ করিও না। তাহা তোমার একমাত্র সম্পদ। মনে রাখিও। ইতি — কাকা।’ কোনও ফোন নম্বর নেই। ঠিকানাও নেই। প্রথমে কী করবে পার্থ বুঝতেই পারছিল না। তার পর চিঠিটা নিয়ে কোনও অনির্দিষ্ট ঠিকানার উদ্দেশে বাড়ির কাছেই সেই লাল পোস্টবক্সে ফেলে এসেছিল সে। সেদিন রাতেই বাবা চলে যান।
সেই চিঠিটি আর ফিরে আসেনি। অথচ চিঠিতে ঠিকানা ছিল তাদের বাড়ির। আর ফিরে এল না কেন? তবে কি চিঠিটি একটি বার্তাই ছিল?
–চিন্তা করিস না, পৃথিবীর সমস্ত ঘটনাই আসলে অন্য কোনও না কোনও ঘটনার বার্তাবহ। সব শুনে বলেছিল গৌতম। কিন্তু তাতে পার্থর মনের অন্ধকার কাটেনি, বরং বেড়ে গিয়েছিল।
–তাই যদি হয়, তবে ঘটনাটি আসল নয় বলছিস?
–ঘটনা, তো ঘটনাটিই। কিন্তু সেটা আবার সংকেত-ও বটে। সংকেত এবং ঘটনা এক নয়। যেমন যে ঘটনাটি ঘটল, তার সংকেত হয় তো অন্য কোনও ঘটনা।
–ব্যাপারটা হল, তাহলে বোঝা যাচ্ছে না, ঘটনা বা সংকেত কোনও কিছুই বাস্তব কিনা!
–বাস্তব মানে কী জানি না!
গৌতম এরকম। একটা কমেন্ট করে দিয়ে উদাস হয়ে বসে থাকে। এই যে বলল, বাস্তব মানে কী জানি না, এই কথাটার আদতে কোনও প্রমাণ নেই। যেমন, ধরা যাক, সকালে বারান্দার কার্নিসে একটা কাক এসে তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখেই যাচ্ছিল সকাল থেকে সেদিন। কেন দেখে যাচ্ছিল তা বোঝার ক্ষমতা পার্থর ছিল না। কিন্তু তার মনে হল এই দেখে যাওয়াটা স্বাভাবিক নয়। হয়ত বেরোনো ঠিক হবে না। অফিসে ফোন করে বলেই দিল, আমি বেশ অসুস্থ। যেতে পারব না। লক্ষ রেখেছিল পার্থ। কাকটা তখনও বারান্দার কার্নিসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছিল। না বেরোলেও আটকাতে পারেনি বিপদ। ছাদের সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে গেল। ভেঙে তিন মাস শয্যাশায়ী।
গৌতমকে এসব বলে দেখেছে পার্থ। গৌতম সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে। কিন্তু সে শুধু এটা বিশ্বাস করে না, কোনও কিছু অশুভ ঘটনা ঘটার আগেই এমন কিছু কিছু অভিজ্ঞতা হয়। বরং গৌতম বলে, সারাদিন এমন অনেক কিছু বার্তাই আসে। ঘটনাগুলি অশুভ হয় না বলে পার্থ সে সব মনে রাখতে পারে না।
কিন্তু এই বইটি অন্যরকম কিছু ইঙ্গিত করছে।
কারণ বইটি এসেছে তিন মাস হল। কুরিয়রের প্যাকেটটা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পার্থর মনে হচ্ছিল ভিতরে এমন কিছু লেখা থাকতে পারে, যা আসলে অশুভকে ডেকে আনবে।
কিন্তু কিছুই হয়নি।
এর মানে কি এটাই যে ঘটনাটি না ঘটলে, তার কাছ থেকে কোনও সংকেত আসাই সম্ভব নয়? না কি এমন কিছু, যে, সব ঘটনাই আগে থেকে লিখিত আছে, আর তার সংকেত কোনও কোনও ঘটনা, তাও আগে থেকে লেখা। না কি, এমন কিছু যে সমস্ত কিছুই আসলে দুর্ঘটনা মাত্র। কার্যকারণ সম্পর্ক বলতে আসলে কিছুই নেই।
পার্থ আসলে অপেক্ষা করছিল। ঘটনা ঘটার। বইটি যে এসেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্ভবত বইটি যে বার্তাটা দিতে চাইছে, তা খোলা হয়নি বলেই, আসল ঘটনাটি ঘটেনি। হয়ত এমন কিছু ঘটনা, যা পার্থর জীবনেই কিছু প্রশ্নচিহ্ন এনে দিতে পারে! আবার এমন ঘটনাও হতে পারে, যা সম্পূর্ণ পালটে দিতে পারে পার্থর জীবন। আবার ঘটনাটি হয়ত ঘটেই গেছে। পার্থ বুঝতেই পারছে না।
এমন একটা ঘটনা, যা ঘটে গেলেও, আসলে, মনে হয় না, যে সেটি ঘটে গেছে।
তবে, এই তিন মাস ভালো করে রাতে ঘুম আসছে না পার্থর।
রাতে, আলো নিভিয়ে দিলেই মনে হয় ঘরের ভিতরে রয়েছে আরও একটি ঘর। বিছানায় শুয়েও পার্থর চোখ ঘুরে যায় টেবিলের দিকে। চোখ বন্ধ করলেও মনে হয় টেবিলের দিক থেকে কারও নিঃশ্বাস শোনা যাচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়লেও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয়, এই কেউ তার দিকে তাকিয়েছিল অন্ধকারে।
মনে হয়, ঘরের ভিতরে আরও একজন রয়েছে।
তবে কি সত্যিই কেউ এসেছে বইটার সঙ্গে?
–এমন ভাবার কোনও কারণ নেই মিস্টার রায়। আপনি অহেতুক একটা ট্রমার মধ্যে দিন রাত কাটাচ্ছেন। ফলে ঘুমে ডিসটার্ব হচ্ছে। আপনি একটা কাজ করুন। বইটা প্যাকেট শুদ্ধ কাউকে দিয়ে দিন। বা যদি না পারেন, তবে বইটা আবার কাউকে পাঠিয়ে দিন। কুরিয়রে। বা তাও যদি না পারেন, তবে নির্জনে কোথাও রেখে আসুন।
–কিন্তু, তাতে যদি বিপদ বাড়ে?
–বিপদ? কীসের বিপদ? প্যাকেটের ভিতরে কিছু লেখা আছে কিনা, এই হল আপনার সন্দেহ। আপনার ভয় হল, প্যাকেট খুললে কোনও মেসেজ আসবে, আর তাতে আপনার জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বইটা বাড়িতে রাখলেও আপনার সমস্যা। তো, বইটা দূর করে দিন। খুলতেও হবে না প্যাকেট।
–বইটা যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়?
–আপনার ভালো থাকা নিয়ে কথা। তবে আমি বলব, এতে আপনার অসুখ বাড়বে। আপনি বরং ফেস করুন। দেখবেন যখন কিছুই হচ্ছে না, তখন আপনার এই ট্রমা কেটে গেছে।
এ কী তবে মনের ভুল? অসুখ? ড. চৌধুরীর কাছে বইটা শুধুই একটা বই। আর তার সঙ্গে জড়িত আর সব কিছুই অসুখ, ভ্রম, মিথ্যে।
–তোর মনের ভিতরে আসলে সংকেতটি রয়েছে, কোনও ঘটনার ভিতরে নেই। বলেছিল গৌতম।
তাহলে তো কোনও না কোনও বিপদের সঙ্কেত পেয়েই গেছে পার্থ। আর তা থেকে বেরোনোর উপায়ও জানা নেই। আর তার অর্থ আরও সাঙ্ঘাতিক। বিপদ এসে গেছে। বিপদ হয়ত ঘটেও গেছে। কিন্তু পার্থ তা বুঝতেও পারেনি।
বাড়ি ফিরেও গুম হয়ে বসেছিল পার্থ।
একা ফ্ল্যাটে থাকার এই এক অসুবিধে। সামান্য একটা শব্দকেও মারাত্মক লাগে। হাওয়া এসে যখন পর্দায় এসে ঝাপট মারে, তখন মনে হয় কে যেন পাগলের মতো দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। সুদূর উত্তরের মফস্বল থেকে এই কলকাতায় যাতায়াত করে চাকরি করা বেশ কঠিন বলেই, কলকাতার দক্ষিণের প্রান্তে এই ফ্ল্যাট। একটি বেড রুম, রান্নাঘর, ডাইনিং স্পেস, টয়লেট এবং বারান্দা। একজন মানুষের পক্ষে যত ছোট ফ্ল্যাট থাকলে ভালো, তত ছোটই বলা যায়।
–তোমরা সবাই ঠিক আছ — আচ্ছা — না এমনি ফোন করলাম — হ্যাঁ আমি তো ঠিক আছি — মা? আচ্ছা রাজু? — না এখন কথা বলব না — আরে হ্যাঁ ঠিক আছে — শনিবার যাচ্ছি — কাল ফোনে বলে দিও কী কী নিয়ে যেতে হবে — ওকে…’
কথা শেষ হলেই নীরবতা এসে ঘিরে ধরে। বাড়িতেও তো সকলেই ঠিকঠাক আছে। এই এক মাস হল প্রোমোশন হল। মাইনেপত্র মন্দ হয় না। কিন্তু মনের ভিতরটা কেন হু হু করছে কে জানে! কবিতার ভূত? সে তো ছেড়ে দিয়েছে কবেই! প্রায় দশ বছর হল। শেষ কবিতা কতদিন আগে লেখা! এই সময় কেমন এক অস্বস্তি শুরু হয় মনের মধ্যে। নাহ! অস্বস্তি কেন হবে! সে যে বেঁচে আছে এটাই তো অনেক। বাড়িতে বউ আছে, একটা পাঁচ বছরের ছেলে। মা। একটা ফ্যামিলি। একটা প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে সে! ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স কম করে তিরিশ লাখ। আরও বেশ কিছুটা জমাতে হবে। এখন পাখির চোখ রাজুর পড়াশুনো। ভবিষ্যৎ! কে কার ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়! এও কি একধরনের পুতুলখেলা?
–তুই যে কবিতা লিখতিস সেও তো একধরনের কাটাকুটি খেলা।
–ভালো বলেছিস গৌতম। কাটাকুটি।
–তবে আর এত ভাবছিস কেন? সবাই কিছু না কিছু করে ব্যস্ত থাকে। তুইও তেমন।
আগে কত বই আসত তার কাছে। এই যতদিন সে নিয়মিত লিখত! বাংলা ভাষায় লেখার মজা হচ্ছে, যতদিন খেলছ, ততদিন আছ। তা সে বাজে খেললেও, খেলতে হবে। মরার পর কেউ মনে রাখবে না। কিন্তু লিখে যেতে হবে, যদি কবি বা লেখক হতে চাও। নিয়মিত। অভ্যেস করে।
বাথরুমে টানা কল থেকে জল পড়ার শব্দের মতো।
কিন্তু তুমি যদি না লেখো, তাহলে তুমি তিন চার বছরের মধ্যেই বিস্মৃত হবে।
তাই আর বই আসত না।
সেদিন বহুদিন পর একটা বই আসতে দেখে মন চনমনে হয়ে উঠেছিল পার্থর। তাহলে মনে রেখেছে কেউ কেউ। কিন্তু কে?
শোবার ঘরের বিছানার উল্টোদিকেই টেবিল। টেবিলের উপর কুরিয়রের প্যাকেট। ভিতরে বই।
বুক ধুকপুক করছে পার্থর। প্যাকেটটা খোলা আদৌ ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না এখনও পার্থ। এমন নয় তো, অন্যান্য সব বিষয়ের মতো এই ঘটনাটাও আসলে একটি দিবাস্বপ্ন?
পেনসিল কাটা ছুরিটা নিয়ে পার্থ বইটার কাছে এগিয়ে গেল। পা টিপে টিপে। যেন বইটাও না শুনতে পায় পার্থ আসছে।
ছুরিটা দিয়ে প্যাকেটটা কাটার ঠিক আগের মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠল।
প্রথমে চমকের ধাক্কাটা নিতেই পারেনি পার্থ। বুক তখন ঢিপঢিপ করছে। তারপর কোনওক্রমে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল একজন সৌম্যদর্শন ভদ্রলোক।
–নমস্কার আপনি কি পার্থবাবু?
–হ্যাঁ।
–আমি প্রণব রায়। আপনার পাশের বাড়িটাতেই থাকি। এ টেন।
–বলুন।
–(একটু ইতস্তত করে) আপনার নাম জানলাম আজই। নিচে লেটারবক্সে। পার্থ রায়।
–হ্যাঁ।
–আসলে একটা মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আমার নামে মানে পি রায়ের নামে একটা কুরিয়র পাঠিয়েছে আমার এক বন্ধু। তো, ভুল করে এ টেনের জায়গায় এ নাইন লিখেছে। আর নামের ইনিশিয়াল এক থাকায় আপনাদের বাড়ির নিচে গার্ড নিয়েও নিয়েছে। আমি জানতাম না। আমার বন্ধু বহুদিন পর ফোন করে বলছে সে একটা বই পাঠিয়েছে। বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বই। বললাম আমি তো পাইনি। তখন ঠিকানা বলায় আর নিচে খোঁজ করায় শুনলাম আর বুঝতেও পারলাম।
–ওহ! ইশ!
–আপনার কাছে নিশ্চয় বইটা আছে?
–না আসলে, বুঝতে তো পারিনি। আর বইটই খুব একটা পড়িও না। পুরনো কাগজপত্রের সঙ্গে বইটা তো বেচে দিলাম।
–কী করেছেন! জানেন, যে বইটা পাঠিয়েছিল তার দাম প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আসলে বাইরের পাবলিকেশনের বই কিনা!
–আমি অত্যন্ত দুঃখিত প্রণববাবু। কিন্তু আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। বুঝতে পারলে বইটা নষ্ট করতাম না।
–না না কী আর বলব, আমার ভাগ্য! আচ্ছা! আসি তবে!
দরজাটা বন্ধ করে পার্থ ঘরে ফিরে এল। কী এক উত্তেজনা তাকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছে। হাতড়াতে হাতড়াতে সে আবার পেনসিল কাটার ছুরিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল। তবে এবার আর তার হাত কাঁপছে না। এক অদ্ভুত প্রতিহিংসা তাকে পেয়ে বসেছে বলা যায়। পেনসিল কাটার ছুরিটাকে মনে হচ্ছে একমাত্র অস্ত্র। সে পাগলের মতো ছুরিটা নিয়ে প্যাকেটটা কাটতে লাগল। তিন মাস… তিন মাস… তাকে গিলে খেয়েছে এই বইটা। পোশাক ছিঁড়ে ফেলার মতো উত্তেজনায়, হিংস্র পার্থ প্যাকেটটা ছিঁড়ে বইটা নিজের হাতে নিল। কী অপূর্ব প্রচ্ছদ! হিস্ট্রি অফ… নাহ! কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না পার্থর। পাগলের মতো বইটাকে মাটির উপরে ফেলল পার্থ। তিন মাস ধরে রোজ এই মৃত্যুর মানে হয় না। কীসের সংকেত! কেন সংকেত! কেন তার অস্তিত্বকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এই বই? কেন?
ছুরিটা নিয়ে আদিম হত্যাকারীর মতো সে বসিয়ে দিল বইটির বুকে।
গোঁ গোঁ করে একটা আওয়াজ বেরোচ্ছে নিজের গলা থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারছে পার্থ। কিন্তু এই বই ভয়ঙ্কর। যে কোনও সময় এই বইয়ের পাতাগুলো জুড়ে যেতে পারে। প্রচ্ছদ জুড়ে যেতে পারে। এই বইকে বাঁচতে দেওয়া সম্ভব নয়। মেঝে থেকে উঠে ডাইনিং স্পেসে চলে গেল পার্থ। ফল কাটার ছুরিটা কোথায় গেল?
বাসনপত্র এলোমেলো করে ফল কাটার ছুরিটা হাতে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল পার্থ। একবার ছুরি বসালে হবে না। এক দুই তিন চার…
রক্ত কোথায়? রক্ত পড়ছে না কেন? বইটা মরছে না কেন? ছুরিটা ভিজে যাচ্ছে না কেন রক্তে?
ঠিক কোন জায়গায় ছুরিটা বসালে বইটা আর জীবিত হয়ে উঠবে না এটা পার্থর অজানা। সে শুধু একটা কথাই জানে, বইটা তার জন্য আসেনি। সে আর ভয় পাচ্ছে না।
শুধু সে বুঝতে পারেনি, বইটাও একটা সঙ্কেত নিয়ে এসেছিল।