Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

শব্দের রং

বেবী সাউ

 

–কিরে জল খাবি? চা?
–না।
–একটু ওয়েট করলে তো পারতিস! ভিজলি কেন! ভাইরাল হচ্ছে খুব।

ঘরটাতে একটা আশ্চর্য গন্ধ ছড়িয়ে আছে। মুগ্ধতা আসে না ঠিক। কিন্তু এই মৃদু আলোয় কেমন যেন একটা মায়াবী। এমনিতে বিকেলটা কীরকম একটা মায়া ছড়িয়ে থাকে। মোহনীয় লাগে আমার। কেমন একটা গন্ধ? মাঠের উপর নেমে আসা সবুজ আর ঘন কালোর একটা মিশেল রঙ সমস্ত শূন্যতাটুকুকে ভরাট করার জন্য যেন উঠেপড়ে লাগে। দিগন্তে কালো মোষের মতো মেঘেরা তুলি নিয়ে কী সব আঁকে। আর সূর্য তার অবশিষ্ট, সামান্য আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে নীলাভ সমুদ্রকে। আর এই যে পাখিরা জোট বেঁধে সঙ্ঘের শলাপরামর্শ করতে করতে নামছে গাছে, আর গাছ সমস্ত অভিযোগ মেনে নিয়ে বলছে “বস! বাছারা। আর বকব না কখনও। খাবার দিতে পারিনি বলে এই সংসার ফেলে চলে যাবি? আমার কষ্ট বুঝবি না তোরা কেউ? আমি আশ্রয় হয়েই থাকব শুধু! পিতা নই!”

আমার হয়েছে জ্বালা, সমস্তটুকুই আমার চোখে এসে পড়ে, ধরা দেয়। শূন্যতা নয় ঠিক আবার ভর্তি কিছুও নয়। আর এ সব কথা কারও সঙ্গে আলোচনা করাও যায় না। সবাই মুখ টিপে হাসে। কিন্তু, তা বলে আমি প্রেম দেব না? তোমাকে বলা যেতে পারত কিন্তু অফিস মিটিং সামলে কথা শোনারও তো একটা মুড চাই! কিছু বলতে গেলেই বলবে — “ফাঁকা মাথা শয়তানের আড্ডা”।

বুঝতে পারছি, মায়া মানুষকে বড্ড সংসারী করে তোলে। যেমন এই বিকেলটা, কেমন আমাকে মায়াতে বেঁধে রেখেছে। ঘর থেকে বেরোতেই পারছি না। যেমন গান গাইতে আরম্ভ করলে একটা আজব গন্ধ এসে বসে হারমোনিয়ামের রীডে। তবলার পাউডারের গন্ধ সেখানে ফিকে হয়ে যায়। এটাও একটা গন্ধ। আমি অন্যমন হয়ে ভাবতে বসি চরণ কী আসলে! সবটুকুই সমর্পণ! নাকি আমার মধ্যে তোমাকে মিলিয়ে নেওয়া। অ্যাডজাস্টমেন্ট!

–মায়ার কালার কী? লোপা বলছিল।
–লাল? লাল তো ভালোবাসার।
–তবে যদি ধরি সবুজ?
–হ্যাঁ, বড্ড উজ্জ্বল সে। আরেকটু সফট কিছু! তার সঙ্গে ধর মেলানো গেল সামান্য ধূসর! অফ হোয়াইট কিছু!

লোপা কলম কামড়ে কিছু ভাবছিল। তার চোখে কী লেগেছিল সেদিন? ওটাই কী মায়ার রং!

খুব একা থাকতে ইচ্ছে করছে আজ। আয়নার সামনে খুঁটে দেখতে ইচ্ছে করছে নিজেকে। উপুড় করে ফেলি সমস্ত জল। বুকে জমে থাকা কফ, থুতু, চুমু, রাগ, অভিযোগ, স্পর্শ সব। একা হতে চাই। আরও একা। সম্পূর্ণ।

মহাশূন্য? না।

–একা থাকাটা শূন্যতা? উঁহু।

কে যেন বলল!

এলাচের গন্ধ ভেসে উঠল আবার। অক্টোবর এলেই কেমন একটা জন্মদিনের গন্ধ ভেসে ওঠে। মায়ের গন্ধ। পায়েসের চালের। হাঁটার শব্দ পাচ্ছি। মা এসেছে। জানতাম চা করে আনবেই। এলাচের গন্ধ তবে এই চায়ের কাপ থেকে আসছিল! আর জন্মদিন?

চুপচাপ, চায়ের কাপ রেখে মা বেরিয়ে গেল। মা’কে আজ বোধনের প্রতিমার মতো লাগল কি! বিসর্জনের! বুঝতে পারছি না ঠিক। আবার ওই গন্ধটা আসছে। ওষুধের নাকি প্রেসক্রিপশানের! মুগ্ধ হব? মেঘটা কাটছে ধীরে ধীরে। দলমার রেখাগুলো স্পষ্ট, আভাসে দৃশ্যকল্প তৈরি করছে। চক্রাকারে ঘুরছে বনটিয়া, বুনো পায়রার দল। চক্রাকারটাও কী একটা চক্রান্ত? মেঘের মধ্যেই যে শূন্যতার কনসেপ্ট লুকিয়ে, এটা বোঝাতে গিয়ে দেখলাম হোঁচটও আসলে একটা ফিজিক্স। ক্লাসে কেমন যেন সব আবছা ছিল। আজ জট খুলছে একটু একটু। হঠাৎ করে নীলের কম্বিনেশন আর হলুদ কার্ডের কথা ভাবতে গেলেই কেমন যেন একা হয়ে পড়ি। বায়োলজির ম্যাম বলছিলেন বয়ঃসন্ধিতে কিছু চেঞ্জ আসলে ডারউইনের আগেও ছিল! কিন্তু শব্দের শূন্যতার জন্যে আমরা ধারে কাছে পৌঁছাতে পারিনি তার। আর এই শূন্যের কাছেই পৌঁছানোর যে গোল — লক্ষ্য, ওটাই ফিজিক্সের অ্যাপেল। মাথাটা খুব টিপটিপ করছে। চোখ ভর্তি নোনা সমুদ্রের মতো জল। চায়ের কাপটি বিস্বাদের একশেষ।

উফ মাগো! আর পারছি না।

–কেক নিবি একটু? দুপুরে বানিয়েছি। ডিম ছাড়া।
–ইচ্ছে করছে না।
–গোস্বামীবাবু ফোন করেছিলেন। রবিবারেরই অনুষ্ঠান। উনি শনিবার আসবেন বললেন। সন্ধেতে। তোর কোচিং নেই তো?
–না।
–জল নিবি?
–মা…
–কিছু বলবি? তোর সবুজ কুর্তিটা সেলাই করে দিয়েছি। দেখিস ফিটিংসটা। রবিবার কোন শাড়িটা পরবি? হলুদ সবুজ মিশিয়ে পরিস। জানিস তো! বর্ষার রঙ সবুজ। আর হলুদটা গানের সঙ্গে খুব মানাবে।
–মা…
–আমি যখন কলেজে প্রথমবার গান গাইতে স্টেজে…
–পল্লব তোমাকে কিছু বলেছে?

মায়ের শাড়ি অদৃশ্য হয়ে গেল। মা হারিয়ে গেল মায়ায়?

মাকে আমার কখনও কিছু লাগে না। স্থির। কেন্দ্রের মতো? নাকি মায়া নাকি টান; বন্ধু? উঁহু! ঠিক বুঝতে পারি না।

–ইতিহাসের মানে বলো!

মেথড ক্লাসে সুপ্রিয়াদি জিজ্ঞেস করছেন।

–ইতি কথা, ম্যাম…
–ইয়েস! লেকিন তোমরা বলতে পারো পুরনো সেসব গল্পকথা যারা আজও মায়ায় ভরে আছে। যারা ফুরোতে চায় না, অথচ, প্রকটতা ছাড়াই বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পটু। বাচ্চাদের মনে ইন্টারেস্ট জাগানো চাই বুঝলে? ইন্টারেস্ট হলেই সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। আইকিউ লেভেলটাও কাজ করতে আরম্ভ করবে। আন্ডারস্ট্যান্ড?

চুপচাপ থাকতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এত শব্দ কেন? এত কথা কেন? কোথাও বেজে উঠছে হনুমান চালিশা, চণ্ডীমন্ত্র…

মায়ের হাতে লাল পলাটা কোথায় গেল? ভেঙে গেছে নাকি! শূন্য লাগছে কেমন! নাকি! অনেকদিন থেকে নেই?

মেঘটা পুরো সরে গেল। পাহাড়টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রোদের মৃদু আভাসে নীল দেখাচ্ছে। গন্ধটা ফিরবে নাকি আবার। অথচ, মা কী যেন সব বলে যাচ্ছে। পলাহীন হাত, শাঁখার দুধসাদা রঙ — সব দেখতে পাচ্ছি। মাকে দেখতে পাচ্ছি, মায়ের কথাগুলোকে দেখতে পারছি। শুধু শুনতে পাচ্ছি না। দৃশ্যের জগত থেকে আমি কি তবে সরে যাচ্ছি! শব্দহীন, আলোহীন, গন্ধহীন। এই জয়গোঁসাই,  ভাস্করের জীবনদর্শন ছেড়ে উঠে আসছে ক্রিয়ার গল্প! শূন্যতাই আসল গন্ধ। আবার! উফফফ!

–তুই বেরোবি আবার? তবে ফেরার পথে…

আর শুনতে পাচ্ছি না। শব্দ হারিয়ে গেল! সম্পূর্ণভাবে। আলো হারাল। মধ্যমা থেকে নিষাদ। মাঝখানের রীডগুলো নেই। মাও কি হারাবে এবার। ফ্যানের শব্দের মতো বুঝি এই পৃথিবী ঘোরার শব্দ! দলমার ছায়াচিত্র এখন কী বলছে? নামাবে হাতির পালকে? ছোটখাটো খরগোশদের ছেড়ে দেবে, কচ্ছপের কাছ থেকে কূটনৈতিক চালটুকু শিখে নিতে? যাকগে, গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে না আর। তার বদলে এক প্লেট চাউমিন। লম্বা লম্বা গাজরের টুকরো। ক্যাপসিকাম। লম্বা লম্বা হয়ে ঝুলছে কাঁটা চামচের খাঁজ। আবার ভরাট হল। গন্ধের মাঝে জেগে উঠল চাউমিন। আসছে আবার। ফিরছে। ধীরে ধীরে। খেতে শুরু করি। শূন্যতার কোনও জায়গা নেই তো! কোথায় যায় হাজারো হাজারো ফিল ইন দ্য ব্ল্যাঙ্কস! বমি পাচ্ছে খুব। চাউমিনটা না খেলে হত। তার চেয়ে একটা অ্যালপ্রাজোলাম খেয়ে চুপচাপ বিছানার গন্ধ, চাদরের স্পর্শ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি!

–কিরে! বেরোবি? জানিস, ওই ছেলেটি আবার কিছু বিছানার চাদর নিয়ে এসেছিল। আমি দুটো রেখেছি। ফেরানো যায় না। মা নেই। বেচারা!
–তার মা নেই বলে তোমাকে বিছানার চাদর কিনতেই হবে! আশ্চর্য তুমি মা!
–তোর বাবা বাড়িতে ছিল না তখন। নাহলে তো…। ছেলেটি বড় মায়াবী। না বলা যায় না রে।

এই তো ফিরে এল শব্দ। অক্ষর ছাড়াই। শূন্যতা ছিল না তো! শুধু মায়ার বদলে আরও গাঢ় হল মায়া। এই যে মৃত্যুকাণ্ড মায়ার। সেটাকে ডিঙিয়ে ছেলেটি আমার মায়ের স্নেহের অধিকারে থাবা বসিয়েছে। এটাকেও কী ম্যাম হিংস্রতা বলবেন! কূটচাল। রাজনৈতিক! শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে মায়া জায়গা নিয়েছে! নীল পাহাড়ে একটু একটু কুয়াশা জমতে শুরু করেছে। নীল আর কুয়াশার সফেন মিলেমিশে ধূসর গণ্ডারের মতো প্রকাশ করছে নিজেকে। শূন্য তবে এখানে জীবন্ত! ইচ্ছেমতো খেলছে, সাজছে!

–কিছু বলবি বলছিলি! বল। আজকের মেথড ক্লাস হয়েছে?
–হ্যাঁ মা।
–ক্যান্টিন গেছিলি? কাল একবার আমার সঙ্গে মার্কেটে যেতে পারবি? পলাটা বেড়ে গ্যাছে।

মা অত শব্দ পায় কোথা থেকে! অনর্গল বলে যেতে থাকে। লম্বা লম্বা সংসারের লাইন। মনখারাপ। অভিযোগ। শব্দের পর শব্দ এসে যেন, মাকে ছুঁয়ে চলে যায়। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। শব্দের শূন্যতা আমাকে বিলীন করে আরও। কোনও কথা নেই যুক্তি নেই, অভিযোগ নেই। আমিই কী তবে শূন্য! কিচ্ছু নেই আমার?

–কিরে যাবি? পলাটা আনতে হবে।

শব্দ ফিরছে তবে? ওই নিরাকার ব্রহ্ম থেকে ফিরছে? আমি তবে প্রকাশে আছি। সমস্ত শব্দ আমার কানের শূন্যতাকে ভরাট করছে। দৃশ্যমানের কাছে নত হই আরেকবার। সত্যি তো সকালে মায়ের পলাটা আমাকে ভাবিয়েছে। লাল সাদার কম্বিনেশন। লাল না ঠিক, মেরুন। মায়ের ফর্সা হাতে দারুণ লাগে। আচ্ছা পলাটার সঙ্গেই কি যুক্ত হচ্ছে বাবার নাম? বেঁচে থাকা? বাবার সঙ্গ? পলার শূন্যতা এসেছে বলেই মায়ের মনে দানা বাঁধছে শূন্যের ভয়! নাকি এই তিনজনের মাঝে আবার যদি কেউ ভরাট দিতে আসে তার ভয়!

–আচ্ছা, কাল তবে আমি অ্যাক্টিভিটি ক্লাস না করে চলে আসব। তারপর বেরোব। আমারও কিছু প্রজেক্ট ফাইল কিনতে হবে! ভালো হল মা। তুমি কতদিন ভালোবেসে আমাকে কিছু কিনে দাওনি।

মা মৃদু হাসলেন।

শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে প্রয়োজন কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। এম যদি পারফেক্ট হত কিউ কি তবে সরে যেত দূরে! রবীন্দ্রনাথ গাইছে মা। এই বিকেল সমস্ত শূন্যতা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। ভালো লাগছে। যখন শেষের গান ওঠে তখন শুরুর কথা শুরু হয়ে পড়ে আপনা থেকেই। গন্ধটা কই আর এল না তো! কিন্তু ফেরার কথা গাঢ় হচ্ছে একশো পার্সেন্ট। শূন্য হওয়া চলবে না। মুক্তির বিছানো গানে ভরে উঠবে কলেজ ক্যাম্পাস। সিলেকশন। শূন্যতা ভরাবে কে আবার! ক্যান্টিনে ঝাঁঝালো হচ্ছিল সিঙাড়া ভাজার গন্ধ। মোগলাই, ইডিলি ধোসা পেরিয়ে আমরা তখন হাঁটছিলাম। মাঠের জলের মধ্যে কাদা, জুতো ছাড়িয়ে জিনসে লেগে যাচ্ছিল। আবার ফিরছে গন্ধটা ধীরে ধীরে! এখন কেন ভয় করছে? মা কোথায় গেল?

–মা…
–বেরোবি না? সবুজ দেখে আয়। ঘরে বসে থাকিস না, বাবু। বিকেল বড্ড মনখারাপ ডেকে আনে।
–তোমার একা লাগে না মা?

চলে গেল। তবে কী শব্দ মায়ের কাছেও শূন্য হয়ে ওঠে কখনও সখনও! নাকি আমি ভুল? শব্দটাই বের করতে পারিনি! নাকি মা কথাটা শোনেনি!

মা তবে কী শূন্যতা চাইছে? বাবা বেরিয়েছে। আমিও থাকি না বিকেলে, হয় গানের ক্লাস নাহলে বান্ধবীদের সঙ্গে হইচই। মা তখন শূন্যতা নিয়ে কী করে? রবীন্দ্রনাথ? স্মৃতিচিহ্ন? নাকি ওটাই মায়ের ভরাট হবার সময়। আজ ওই ভরাটের জায়গায় আমি শূন্যতা হয়ে আছি কি! মা চাইছে আমি বেরোই। আমি ভাবছি পৃথিবীর সমস্ত ফাঁকা জায়গায় পেতে দিই আমার অস্তিত্ব। বেদনার হোক কিম্বা সুখের। শূন্যতা কখনও একা থাকতে পারে না। কখনও ভরাটের জায়গা দখল করতে পারে না। না।

–শরীর খারাপ লাগছে বাবু? বেরোবি? রেনকোট নিয়ে যাবি। রোজ ভিজছিস।

মা কি টের পেয়েছে আমার মনের শূন্যতা? তাই বারবার বেরোনোর কথা বলছে! আমি কিছু বলতে চাইলে অনেকটা সময় দেয় মা। মনখারাপ হলে আমি শব্দহীন হয়ে পড়ি। ভাষা শূন্য। শব্দ শূন্য। দৃশ্য শূন্য। কিছু ভরাট আসবে ভাবতে ভাবতে আরও জমাট তখন ফিজিক্সের গল্প। ম্যামের চাউনি। মাকে  বলতে হবে সব। ওই ক্যাম্পাসের কথা। কলেজের কথা। নির্বাচিত না হওয়ার কথা। কিন্তু শব্দ বসে আছে দূরের দলমার রঙে, আকাশী নীল তার রং।

রোদ উঠছে একটু একটু। ব্যালকনির মানিপ্ল্যান্টের পাতায় আশ্চর্য এক ফটোগ্রাফির সৃষ্টি হচ্ছে। মা রাস্তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। বিকেলের রোদে মায়ের ফর্সা গাল দুটি ঈষৎ লালে ভরে আছে। টগবগ করে জ্বলছে লাল টিপ। পথ দেখছে মা। একা একা। রাস্তাটাও নতুন না! কতদিন আগের ছেড়ে আসা লাল মোরামের। একটা পঞ্চদশী ফর্সা মেয়ে চু-কিৎ কিৎ খেলছে। বন্ধুদের সঙ্গে কাঁচা তেঁতুল ভাগ করে খাচ্ছে। আর একটু একটু করে চিনে নিচ্ছে পৃথিবীর আপেল বন এবং প্রতিক্রিয়ার গল্পটিকে। আর তখনই হঠাৎ করে এসে দাঁড়াল কালো মার্সিডিজ। হঠাৎ করে বেজে ওঠল সানাই, উলুধ্বনি। ভরাট হতে চেয়ে শূন্য হল দৃশ্য। তাহলে, লাল মোরামের পথটা কি তবে এতদিন শূন্য ছিল? চাইছিল আসুক কেউ!

একটা সরু ফড়িং টাইপের পোকা মায়ের চুলে বসেছে। বাটারফ্লাই ক্লিপের মতো লাগছে। হালকা হলুদ শাড়িতে মা কি রোজ বিকেলে এত সুন্দর হয়ে ওঠে? গুনগুন শব্দে গান ভাসছে। ওই ছেড়ে আসা মায়ের কুমারীবেলা, নববধূবেশ আবার ফিরে এসেছে। এখানে আমি নেই। বাবা নেই।  মা আমাকে, আমাদের শূন্য করে দিয়েছে। এখানেও কোথাও যেন নেই-এর শূন্যতা। শূন্য আর শূন্য। মা এখানে ভরাট। মা এখানে সর্বস্ব। কার্যকারণ। সমান প্রতিক্রিয়া।

আর আমি একটু একটু হারাচ্ছি, এই ছুঁলাম বেগুনী, নীল তারপর আকাশী। এবার সবুজ হলুদ। অন্ধকার। ভয়। মায়ের লাল পলা। উফ! সাদা সমস্তটাই মিশে সাদা। ট্রেন পথ হারিয়ে ফেলেছে। ফ্লাইটে ফেরার কথা বাবার। কুয়াশা। দলমা নেই। এই স্কোয়ার ফুট নেই। ক্যাম্পাস সিলেকশন নেই। মাস্টার্সের টপার লিস্টে আমার নাম নেই। শুধু সাদা রং আছে। ভরাট সাদা রং।

–মা! মাগো —
–জল খাবি বাবু? ঘুমাবি একটু? একটু রেস্ট নে। সব ঠিক হয়ে যাবে। ঘুমো। আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

গন্ধ ভেসে উঠছে আবার। শব্দের। এবার আর হারাচ্ছে না। স্থির হয়ে স্নেহের হাত বোলাচ্ছে কপালে। চোখে…..