Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

চিত্রনাট্য…. অতিরিক্ত সংলাপ

মৃণাল চক্রবর্তী 

 

১০ জুলাই, বেলা একটা

আমাকে মনে আছে, শ্রী? হঠাৎ একদিন তোমার কথা মনে পড়ল। ফেসবুকে ছবি দিয়েছিল শাশ্বতী। স্কুলের সরস্বতী পুজোর ছবি। আর সেখানে ঘুম-না-হওয়া বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে তুমি খুব ছোট মেয়ে, শাড়ি সামলাচ্ছ। তোমার এই নম্বর পেলাম রাজার কাছে।

আর একটা ছবি দেখলাম তারও কদিন আগে। তুমি তখন কলেজে পড়ো। তিন বন্ধুর সঙ্গে আইস্ক্রিম খাচ্ছ। হাসছ খুব। পাশের একটা ছেলের গা-ঘেঁষে হাসছ। যে ছবি তুলছে তার ছবি নেই। তবে আমি খোঁজ শুরু করলাম এই সেদিন। স্কুলের ছবিটা দেখে।

এভাবেই যোগাযোগ করলাম। তুমি ইচ্ছে করলে যোগাযোগ না-ও করতে পারো।

স্কুলের ছবিটায় বিভিন্ন বয়েসি ছেলেমেয়ে আছে। তুমি তখন ক্লাস টু বা থ্রি। অনেক বড় দাদা-দিদিদের মধ্যেও তোমার এক মুখ বিরক্তি দেখে তোমায় চিনতে পারলাম। মনে পড়ল, তুমি শ্রী। এর মানে এই নয় যে আমি তোমাকে শুধু বিরক্ত মুখেই দেখেছি। ইন ফ্যাক্ট, সব সময় মুখে একটা আলগা প্রশান্তি লেগে থাকত তোমার। তাতেই মুখটা হাসি-হাসি লাগত। কাজেই এই মুখ দেখে, আগে দেখা অন্য মুখটার সঙ্গে মিলিয়ে, কেন তোমার কথা আমার মনে পড়ল আমি জানি না।

তুমি যদি আমাকে খুঁজতে চাও, তাহলে এখান থেকে শুরু করো। একটা ক্লু দিচ্ছি : তুমিও আমাকে চিনতে। পছন্দও করতে মনে হয়।

আমাকে মনে আছে?

১২ জুলাই, রাত আটটা, রোমান হরফে লেখা

–স্যরি, অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে মেল দেখা হয়নি। তুমি কে? না, আমি চিনতে পারছি না। পরে কথা হবে। টিসি।

১২ জুলাই, রাত আটটা দশ

–এভাবে রোমান হরফে বাংলা লিখলে আমার বুঝতে অসুবিধা হয়। তাছাড়া তোমার লেখায় একটা ব্যস্ততার ছাপ আছে। যেন একটা কাজ করতে করতে উঠে এলে একটু দূরে রাখা ফোন ধরতে। কত বয়েস হবে তোমার এখন? ৩৫? ব্যস্ত হওয়ারই কথা। আমার এখানে কোনও ব্যস্ততা নেই। দিন যাক। অবসর হলে এই মেলবাক্সেই দেখা হবে।

১৭ জুলাই, রাত আটটা পাঁচ, রোমান হরফে লেখা

–সত্যিই তাই। খুব ব্যস্ত। আজ দেখার সময় হল। না, বাংলায় লেখা খুব শক্ত। আমি আগে দেখেছি ট্রাই করে।

উইল ক্যাচ আপ। টিসি।

১৭  জুলাই, রাত আটটা ছয়

–টিসি।

১৭ জুলাই, রাত আটটা চল্লিশ

হাসির ইমোটিকন

১৭ জুলাই, রাত আটটা একচল্লিশ

–ইমোটিকন আমার খুব ভালো লাগে। অনেকগুলো কথা না লিখে একটা ইমোটিকন পাঠানো যায়। এখন ওরা অনেক বেড়ে গেছে। তবে আরও দরকার। অনেক ইমোশনাল শেডস বাকি আছে যেগুলো একসঙ্গে পাঠানো গেলে ভালো হত। কথা কমত। টেক কেয়ার।

১৮ জুলাই, বেলা তিনটে, রোমান হরফে লেখা

–তুমি টেক কেয়ার বললে! (জোরালো হাসির ইমোটিকন)

কথা কমলে কি ভালো হত?

১৮ জুলাই, বেলা তিনটে বেজে এক মিনিট এগারো সেকেন্ড

–জিরিয়াস ময়েত আমেইমেলা। অপসিলাত খ্রফট।

১৮ জুলাই , বেলা তিনটে বেজে এক মিনিট পনেরো সেকেন্ড, রোমান হরফে লেখা

–ওএমজি

হাসির ইমোটিকন

১৯ জুলাই, রাত আটটা

হাসির ইমোটিকন

১৯ জুলাই, আটটা বেজে তিরিশ সেকেন্ড, রোমান হরফে লেখা

–হাই

১৯ জুলাই, আটটা বেজে একতিরিশ সেকেন্ড

–খবর কী?

১৯ জুলাই, আটটা বেজে পঁয়ত্রিশ সেকেন্ড

–ভালো। তোমার খবর কী?
–বাংলায় লিখছ। বাঃ।
–হ্যাঁ ,একটু অসুবিধে হচ্ছে……। আচ্ছা, চিতোকার লিখব কেমন করে যেন? চিতোকার হয়ে যাচ্ছে।
–চিৎকার?
–হ্যাঁ হ্যাঁ অটা, খণ্ডত্ত
–খণ্ড ত।
–ওই হল।
–সি আই টি কে আর। লিখলেই ওরা জুড়ে যাবে।-– খন্ডত্ত হবে।

হাসির ইমোটিকন। সঙ্গে হিহি।

–তুমি এখন একটা খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে আমাকে লেখা পাঠাচ্ছ।
–একদম না। চেয়ারে বসে। স্যরি মিঃ স্লুথ।
–মেয়েরা সাধারণত চেয়ারে বসে লেখে না। বা বসলেও বাবু হয়ে বসে।
–আমি বাবু হয়েই বসে আছি।
–মেয়েরা বাড়িতে বাবু হয়ে বসে না। তুমি বসে আছ মানে কোনও চাপে আছ। বার বার উঠতে হচ্ছে। ঠিক?

অন্য দিকে টাইপিং চলছে। দেরি হচ্ছে।

–শ্রী, তুমি কী পরে আছ বলবে? আমার মনে হয় পাজামা টাইপের কিছু আর ওপর টি-শার্ট। আবার এমনও হতে পারে তুমি এমন একটা বাড়িতে আছ, যেখানে বয়স্ক মানুষেরা আছেন। সে-বাড়ির মেয়ে হলে তুমি শর্টস আর স্লিভলেস গেঞ্জি, বা স্প্যাঘেটী পরেও থাকতে পারো। কিন্তু বৌ হলে নির্ঘাত সালোয়ার-কামিজ। তুমি কী পরে আছ শ্রী?

অন্য দিকে টাইপিং চলছে। দেরি হচ্ছে।

–তোমার নেটওয়ার্ক খুব ঢিলে বা তুমি বারবার লিখছ আর এডিট করছ, শ্রী। চললাম। কাজ আছে।

দেরি হচ্ছে, খুব দেরি হচ্ছে। অনেকক্ষণ বাদে লেখা এল।

–তোমার আবার কী কাজ?

এদিকে উত্তর নেই। বহু যুগ ধরে যেন উত্তর নেই। তাই ওদিকের আঙুল আবার ধীরে ধীরে লিখে চলল।

–প্রথমত বাংলায় লেখাটা খুব রপ্ত হয়নি। তারপর তুমি হঠাৎ একটা চূড়ান্ত পার্সোনাল প্রশ্ন করে বসলে… তখন মনে হল পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করাটা পার্সোনাল… পরে ভাবলাম কেন? আমি লেগিন্স পরে থাকি আর টি-শার্ট। এখনও তাই।

এদিক এখনও চুপ করে আছে। একটু থেমে ওদিক লিখতে লাগল।

–একদম চুপ। কী কাজ তোমার?

কিছুক্ষণ এলোমেলো টাইপিং চলল। কিন্তু কোনও লেখা এল না।

রাত ১ টা

–সত্যিই কাজ ছিল। আমার এক দিদি আমার সঙ্গে থাকে। রাতে তাকে কিছু কাজে সাহায্য করতে হয়। আজ কাজের লোক আসেনি তাই।
–এত এক্সপ্লেন করতে হবে না। একটা পার্সোনাল প্রশ্ন করছি। খুব জানতে ইচ্ছে করছে। তুমি কি একা থাকো?
–না। দিদি আর আমি।
–আর?
–আর কিছু নেই বলার মতো। এর বেশি কিছু বলার ইচ্ছে থাকলে তো তোমার গলফ গ্রিনের ফ্ল্যাটেই চলে যেতাম। টুবি বাই থারটি-সিক্স।

অনেক পরে উত্তর এল।

–আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না, তুমি কে?
–এত সুন্দর দেখতে তুমি আর এত… ঠিক শব্দটা ভেবে পাচ্ছি না। তো এই সবটা মিলিয়ে তুমি প্রচুর অ্যাটেনশন পেয়েছ। দু-একটা সম্পর্ক নিশ্চই পাকতে গিয়েও পাকেনি। তার মধ্যে একটা-দুটো হয়ত জ্বালিয়ে মেরেছে। আবার দূর থেকে নীরব চোখের নম্বরও পেয়েছ। এদের মধ্যেই আমি আছি।
–নীরব চোখ-টোখ জানি না… তবে বাকিদের মধ্যে কে? সবায়ের সঙ্গেই কনট্যাক্ট আছে। শুধু নয়ন………।
–আমি নয়ন নই।
–তাহলে?
–আগে বলেছি, এমন কেউ যাকে তুমি চিনতে, যার সঙ্গে কথাও বলেছ অনেকবার।
–শেষ কবে কথা বলেছি? এক বছরের মধ্যে?
–(হাসির একটা ইমোটিকন) সেটা বলা যাবে না। তাহলে খেলাটা নষ্ট হবে।
–তুমি আমার সঙ্গে খেলছ?
–দুজনেই খেলছি। একদম ইনোসেন্ট খেলা। এমন নয় তোমার রিজেক্টেড প্রেমিক বদলা নিতে চাইছে। তু হ্যায় মেরি কিরণ।
–(হাসি) তুমি পাগলও আছ। একদিন চলেই এসো না।
–(হাসি) আমার অসুবিধে হবে। তোমার ব্যালকনির ঠিক গায়েই ছাতিম গাছ। তার পোলেনে আমার অ্যালার্জি হয়।
–আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার লোকেশন জানো। আর চমক দিতে হবে না।
–(হাসি) আমি একটু বোকা বনে গেলাম। তোমাকে কম ইন্টেলিজেন্ট ভেবেছিলাম।
–তুমি একটু আগে বললে আমাদের ছাতিম ফুলে তোমার অ্যালার্জি হয়। তার মানে তুমি এ-বাড়িতে এসেছ।
–না-ও হতে পারে। স্ক্রোল আপ।

একটু পরে।

–ঠিক। দুটো মানেই হতে পারে।
–তোমার এত বুদ্ধি কাজে লাগাওনি শ্রী, সব নষ্ট করেছ।

অনেক সময় কেটে যায়। অন্যমনস্ক আঙুল নাড়াচাড়া করে। থেমে যায়। কিন্তু ঘুম আসে না।

রাত তিনটে

–সব নষ্ট হয়ে গেছে? নতুন করে আর শুরু করা যাবে না?
–সেটাও অনিশ্চিত। কার সঙ্গে শুরু করবে? সেখানেও তো বুদ্ধি নষ্ট হতে পারে?
–তুমি জেগে। আমি ভাবলাম, কাল সকালে উঠে দেখবে।
–এখানে কোনও শব্দ নেই বলে রাতে আমার ঘুম আসে না। এক সময় এটাই ভালো লাগত।
–তুমি কোথায় থাকো?
–কিছুতেই বলব না। (হাসি) তুমি কি আমায় বলেছিলে তুমি কোথায় থাকো? আমি খুঁজে বের করেছি।
–কিন্তু… মানে তুমি তো আমাকে লক্ষ করতে…. তাই তুমি খুঁজেছ…
–এর পর তুমিও আমায় খুঁজবে।
–একদম না।
–এখন তুমি চিন্তায় আছ। ডিভোর্স কেসটায় বারবার জট পাকিয়ে যাচ্ছে। ছ-বছরের একটা মেয়ে আছে তোমার। এখন আমাকে খুঁজে পেলে অসুবিধে বেশি হত।
–তুমি সব জানো?
–আমি বরাবর তোমার খবর রেখে গেছি। একটা সময় আমি শুধু তোমার কথা ভাবতাম। দীর্ঘ সময়। তোমার যখন রাজীবের সঙ্গে অ্যাফেয়ার চলছিল, আমি তোমাদের উলটো দিকের টেবিলে বসে কফি খেতাম। কিন্তু তুমি সুবেশকে বিয়ে করলে।

চুপচাপ সব। আঙুল ঘুমে ক্লান্ত। মোবাইলের চার্জ চলে যায় একসময়। মেয়েটা কেঁদে ওঠে। স্বপ্ন দেখছে। বাজে স্বপ্ন। ঘুমের খাদের নিচে সে-কান্না পৌঁছয় অনেক দেরিতে। তখন হুড়মুড়িয়ে উঠে বসতে হয়। মেয়েটাকে জল খাওয়াতে হয়। আলো নেভাতে হয়। ফোন চার্জে দেওয়া হয় না। আবার ঘুমের গর্তে পড়ে গিয়ে শুয়ে থাকা।

ওদিকে একটা মোবাইল জ্বলছে। আর নিভছে।

সকাল সাতটা

–আমি কেউ না মনে করতে পারো। তোমাদের স্কুল ক্যান্টিনের ম্যানেজার বা মাঝে মাঝে যে ছেলেটা তোমাদের গাড়ি চালাতে আসত সেন্টার থেকে। এদের মধ্যে যে কেউ আমি। বা তোমাদের আঁকা শেখানোর তখন তরুণ মাস্টার। তোমার চেয়ে অনেক বড় জিওগ্রাফি স্যার। উলটো দিকের বাড়ির বারান্দায় স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা পরে দূরে তাকিয়ে থাকা রঞ্জুদা। পরে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে একা একা সিরিয়াসলি ঘুরে বেড়ানো মানুষটা। অথবা তোমার ক্লাসে শেষের দিকে বসা চুপচাপ গবা একটা ছেলে। আমি একটা সম্ভাবনা, শ্রী।

আটটা দশ

–তোমার লেখা পড়লাম। আজ অফিস যেতে পারিনি। বাচ্চাটাকেও স্কুলে পাঠাতে পারিনি। ঘেঁটে আছি খুব। — সম্ভাবনা লিখলে, তাই না?

নটা

–হতে পারে তুমি এদের মধ্যেই কেউ। জানি না। রাজীবের সঙ্গে আমার অ্যাফেয়ার চলার কথাটা ভুল। বরং ও চেষ্টা করেছিল সুবেশের সঙ্গে আমার অ্যাফেয়ার ঘটানোর। সেটাই তো হল। আমার তো সুবেশকে দারুণ লাগত। এত ভালো কথা বলত। দুর্দান্ত ডিবেট করত। বাংলা-ইংরেজিতে মজার লিমেরিক লিখত। অ্যাফেয়ার ভালো ছিল কিন্তু সুবেশই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করতে চাইল। আমি আর একটু সময় চেয়েছিলাম। এবার আমিই তাড়াহুড়ো করে ডিভোর্স চাইলাম। সুবেশ এবার আর একটু সময় চেয়েছিল। বাচ্চার কাস্টডি চেয়েছিল। আমি দিতে রাজি হইনি কারণ আমার তখনকার ছ-বছরের বাচ্চাটা গোটা জীবনে ছ-বারও বাবার সঙ্গে সন্ধে কাটায়নি। কখনও সুবেশ বাড়িতে আগে ফিরলে বই থেকে চোখ তুলে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থেকেছে। প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। সুবেশ চলে গেলে আবার পড়তে শুরু করেছে। আমার বাবা আমাকে এমন ঘিরে থাকত জাপটাজাপটি করে, মারামারি করে, যে আমার সুবেশকে খুব নিষ্ঠুর মানুষ মনে হতে লাগল। মেয়ের প্রতি নিষ্ঠুর। ওকে বললাম। ওদের দিন দিন বেড়ে চলা টাকা, প্রোমোশন, টার্গেট মেয়েটার বোঝার কথা নয়। হুঁহুঁ করে শুনল। কিন্তু জীবন রয়ে গেল এক রকম।

হয়ত এসবও তোমার জানা। তবু লিখতে ইচ্ছে করল।

ঘুম পাচ্ছে। ঘুম পাচ্ছে।

১১টা

–এখন একটু মাথা হালকা। তোমার কোনও পাত্তা নেই।

ডিভোর্স হতে পারছে না সুবেশ ডেট দিচ্ছে না বলে। ইচ্ছে করে কোর্টে আসছে না। ফ্যাকড়াটা মিটে গেলে ভালো হত। জীবনটা একটু গুছিয়ে নিতাম। আর একটু সময় দিতে পারতাম মেয়েটাকে।

তুমি কোত্থেকে এসে আবার কোথায় চলে গেলে? কথাগুলো পড়েছ দেখছি। উত্তর দেবে না?

এখন আমি বাংলা তরতর করে লিখতে পারি, জানো?

ওদিকে কোথাও শুকনো পাতার ওপর কেউ হেঁটে যায় জঙ্গলের দিকে। ইতস্তত দাঁড়িয়ে পড়ে। একটা সিগারেট ধরায় দেশলাই কাঠি দিয়ে। সেটা ছুঁড়ে দেয় সামনের ঝোপে। ফট করে কী যেন ফেটে যায়। দেশলাই কাঠি ঝোপের গায়ে লেগে থাকে।

২টো

–আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আর যোগাযোগ করবে না। ঠিক আছে। কিছুদিনের বন্ধুত্বের কথা নিশ্চই আমারও মনে থাকবে। শুভেচ্ছা।

রাত ১ টা

–আমি তোমার প্রবলেমটা বুঝতে পারিনি এত দিন। সুবেশ যে ধরনের চাকরি করত তাতে ওর কাছে, ওদের মধ্যে কারও কারও কাছে, এটাই জীবন। প্রেসেন্টেবল বৌ, ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে। বছরে দুবার বিদেশ যাবে বরের অনবদ্য প্যাকেজে, ধুমা লাক্সারিতে থাকবে, বাচ্চাদের পুরোটা দেখবে এটাই তো নিয়ম। মানে এটাও একটা নিয়ম। আমি তিরিশ পেরোনো অনেক মেয়েকে এ-জীবন চায়নি বলে রিগ্রেট করতে দেখেছি। তাহলে সমস্যাটা কোথায় বোঝার জন্য একটু সময় চেয়েছিলাম।

তাছাড়া সুবেশের মতো মানুষের কাছে, ওদের জীবনের কাছে, ডিভোর্স একটা সামাজিক চাপও। বৌ চলে গেছে মানে তুমি কেলানে। আঙুল চোষো।

এই সব চাপ সামলানোর চেষ্টা করছিল, সুবেশ, মানে আমি।

আমি এখন সবটা বুঝে গেছি। কলকাতার বাইরে এসে এই কাজটা ভালো হল। এবার আমি ফিরে গিয়ে আবার শুরু করতে পারব। মনে পড়েছে, আগামী মাসের দু-তারিখে একটা ডেট পড়েছে। আমি পৌঁছে যাব।

এই খেলাটা করতে হল। আশা করছি এতে আমাদের দুজনেরই ভালো হবে। তাও, আগাম মাফ চাইছি। শুভেচ্ছা!