সলিল বিশ্বাস
খবরের কাগজে পড়ে থাকবেন, অল্প কিছুদিন আগে আমাকে ভিনগ্রহীরা অনুমোদনহীন অতিথি করে নিয়ে গিয়েছিল। অল্প পরেই আবার ফিরিয়েও দিয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর সব ক’টা সরকার মিলে আমাকে আন্তঃনক্ষত্র আতঙ্কবাদী এবং ভিনগ্রহীদের আক্রমণকারী দখলদার বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। খুব সুবিধা করতে না পেরে ওরা আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু নজরদারি বন্ধ করেনি। যে দুজন ভিনগ্রহীর সঙ্গে আমার বেশি আদানপ্রদান হয়েছিল, তাদের সঙ্গে আমার এখনও যোগাযোগ আছে— বস্তুত তারা এখন আমার বেশ বন্ধু। মাঝেমধ্যে ওরা দুজন— ডান বাবু আর বাম বাবু— আমাকে বিচ্ছিরিভাবে ‘মানুষ’ বলে বিদ্রূপ করে। আমার প্রচণ্ড রাগ হয়, কিন্তু আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ওদের যা অভিজ্ঞতা তাতে ওদের খুব দোষ দিতে পারি না। ‘সরকার’ আর ‘মানুষ’ যে এক নয় তা ওদের দুজনকে বুঝিয়ে উঠতে পারিনি। আলাপপরিচয় করে ওদের অনেক কিছু আমি বুঝে নিয়েছি। খেলাধূলা থেকেই ওদের সঙ্গে যোগাযোগ বলে সেদিকটা জানতেই আমি বেশি মন দিয়েছি। ওদের সবচাইতে প্রাণীপ্রিয় খেলা জিভবল-এর খানিকটা পরিচয় আজকে দেব। আগামীতে ‘সৌর সেভেনটিন’ এবং ‘র্নগ সেভেনটিন’ এই দুই দলের মধ্যে একটা জিভবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে আমি খুব আগ্রহী। সেই জন্য আমি ওদের ভাষাও খানিকটা আয়ত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
র্নগ নক্ষত্রের এবং তার আশপাশের ব্যাপার সম্পর্কে আমার কৌতূহল অনেক দিনের। সেই সেবারে ক্ষহক গ্রহের ক্ষ্রক্ষ্র-তে বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করার পর থেকেই। সে কথার বিস্তারিত বিবরণ এখানে দেওয়া যাবে না। তার জন্য আপনাদের পড়ে নিতে হবে আমার সেই সময়ের ডায়েরির পাতা, যে ক’টা পাতার নাম আমি দিয়েছিলাম “র্নগ নক্ষত্রের ক্ষহক গ্রহের ক্ষ্রক্ষ্র”। সে অনেক মজার এবং দুঃখের ঘটনা। তার সঙ্গে আবার মিশে আছে খানিকটা লজ্জা, কারণ ভিনগ্রহীদের কাছে আমাদের গ্রহের লোকজন একেবারে যাচ্ছেতাই একটা প্রাণী হিসেবে বদনাম কিনেছিল। ওই গ্রহ থেকে যে দু’জন ব্যক্তি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং তারপরেও যোগাযোগ রেখে গেছে, তাদের দু’জনেরই আসল নাম আমাকে বলেছিল, কিন্তু সেই উচ্চারণ এতই কঠিন যে আমি সেগুলো মনে রাখতে পারিনি। সে নাম আমি উচ্চারণ করতেই পারিনি— যদিও ওদের সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। তবে মুশকিলটা হল যে সেই কথোপকথন হত কেবলমাত্র আমার মাথায় সুড়সুড়ি দিয়ে বা খোঁচা দিয়ে। পরে ওরা আমার মাথায় একটা স্থায়ী ভাষাবিদ লাগিয়ে দিয়েছিল। তাতে অবশ্য হয়েছিল আরও মুশকিল, কারণ তখন আমি যা খুশি বললেই চলত, ভাষাবিদ সেটাকে অনুবাদ করে দিত। ফলে তেমন করে ওদের ভাষার কথাবার্তা উচ্চারণ করার আমার খুব যে প্রয়োজন হত তা নয়। কিন্তু আমি একটু একগুঁয়ে আছি, ওদের দু’জনকে চেপে ধরে কিছু শব্দ-কথা শিখে নিয়েছিলাম। যদিও আমার উচ্চারণ শুনে দু’জনে হেসেই কুটিপাটি হত। সুবিধের জন্য আমি ওদের দু’জনকে ডান এবং বাম বলে ডাকতাম।
যাকগে সে কথা। আপাতত আমরা এখন যে বিবরণ দেব বলে বসেছি সেটাই বলি।
এই খেলাটার কথা ওই দুই জমজ ভাই-বেরাদর আমাকে প্রথম বলেছিল ক্ষ্রক্ষ্র (যাঁরা আমার ডায়েরি দেখেননি, তাঁদের বলি, ক্ষ্রক্ষ্র হল র্নগ-জগতে চালু এক ধরনের গাড়ির রেস) চলার সময়। তখন কেবলমাত্র নামটা উল্লেখ করেই ছেড়ে দিয়েছিল। অনেক পরে যখন ডান-বাম আমার কাছে মাঝে মাঝে আসত, তখন এই ব্যাপারটার কথা ওরা একটু ডিটেইলে বলেছিল।
র্নগ-জগতের সতেরোটি গ্রহের পঞ্চদশ গ্রহটিতে যে খেলাটি নিয়ে খুব হইচই হয় সেটার নাম হল ‘জিভবল’। এই গ্রহটিতে যে প্রাণীরা বাস করে তাদের প্রত্যেকের জিভগুলো খুব লম্বা। খেলাটা ফুটবল জাতীয়, কিন্তু পায়ের বদলে জিভ দিয়ে ঘনক নিয়ে খেলা হয়। ‘বল’ কথাটা আমি সুবিধার্থে ঢুকিয়েছি। খেলাটাতে অংশ নেয় একই সঙ্গে তিনটে দল। একেকটা দলে সতেরো জন করে খেলোয়াড়। এই যে র্নগ নক্ষত্রের আন্তঃগ্রহ জিভবল প্রতিযোগিতা, তার সবকিছুই হয় গুনতিতে সতেরো সংখ্যায়। সতেরোটি দল প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সতেরোটি করে গেম খেলবে। এই সমস্ত ক’টি দলের মধ্যে যে দল সতেরোবার সকলের বিরুদ্ধে জিতবে সে হবে প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ। ওদের কথা শুনে আমি অবশ্য খেলাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। ডান এবং বাম এই খেলা প্রচুরবার দেখেছে। তাদের মতে, এই খেলার নাকি অনেক সূক্ষ্ম দিক আছে। হবে হয়তো। আমি ফুটবল খেলার নিয়মই বুঝি না, ক্রিকেট খেলার আগামাথা আমার মাথায় আসে না, কাজেই জিভবল যে আমি বুঝব না, তাতে আর আশ্চর্য কি। সুতরাং এ খেলার বিবরণের গল্প আমার না বলাই ভালো।
ডান-বাম যুগল যে ভাবে বলেছিল, তেমন করেই বলছি। তবে ওদের এক কথা দু’বার করে বলার বদঅভ্যেস বাদ দিয়ে বলছি।
তখন আমরা দুজনেই খুব ছোট এবং খেলা দেখতে যাব শুনে খুবই উত্তেজিত। যেতে হবে সেই ‘ন্রক্ত’ গ্রহাণুতে। পরিবারের নতুন কেনা ‘ন্রল্র-ক্ষ্রুপ্ল’ (তোমরা বলতে ‘ব্যক্তিগত-গ্রহাণু-অতিক্রমণ-সহায়ক’) প্রথম চড়ব সেইদিন। ওখানে আজকে এই, তোমরা যাকে বলো, সিজনের, প্রথম খেলা। খেলবে এই গ্রহের সব চাইতে পছন্দের দলের সঙ্গে বাইরে থেকে আসা ষোলোটি দলের সবচেয়ে শক্তিশালী দুইটি দল। বুঝতেই পারো, ডান বলেছিল, আমাদের মধ্যে কী পরিমাণ উত্তেজনা কাজ করছিল। বাম বলেছিল, আমরা ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। ডান আবার বলেছিল, অবশ্য তুমি তো এসবের কিছুই বুঝবে না। বাম বলেছিল, হয়তো বলবে যে সতেরোবার কেন জিততেই হবে।
সারা র্নগ জগতে সব বাড়ির হাইপারলেজার ঘরগুলিতে তখন বিপুল ভিড়। সতেরোটি গ্রহের যত জিভবল বোদ্ধা আছে, তারা সবাই ভিড় জমিয়েছে। অন্য নক্ষত্র থেকেও এসেছে। এখানে এলে একটা বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, যা হাইপারলেজার দিতে পারে না। এই যে এত লোক, তাদের কেউ কিন্তু কোনও একটি বিশেষ দলকে সমর্থন করছে না। যে-ই প্রতিযোগিতায় প্রথম ঘোষিত হবে তাকেই সবাই সমর্থন করবে। নিজের দল বলে কোনও ব্যাপার নেই। যে তিনটি দল সবচাইতে বেশি নম্বর পেয়ে প্রথম তিনজনের স্থান পাবে, তারা র্নগ জগতের শ্রেষ্ঠতম জিভবল দল বলে পরিগণিত হবে, এবং সারা বছর তাদের র্নগ জগতের সব কটি গ্রহে ঘুরে ঘুরে নাচ-গান দেখাতে হবে। এই সময় তাদের সবাইকে যথেষ্ট খাতির করা হবে গায়ক এবং নর্তক হিসেবে, কিন্তু আগামী সতেরো বছর তারা কেউ আর কোনও জিভবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না।
মাঠের (‘মাঠ’ মানে যেখানে খেলাটা হবে। জায়গাটার সঙ্গে অবশ্য ‘মাঠ’-এর কোনও মিল নেই।) আকৃতিটা ত্রিকৌণিক। আর সেই ত্রিকোণের ভিতরে আবার আছে একটার ভিতরে আর একটা করে সতেরোটা ত্রিকোণ। একেবারে মাঝখানের ত্রিকোণটির ভিতরে নিজের নিজের নির্ধারিত ধারে দাঁড়িয়ে পড়বে তিন দলের সতেরো জন করে খেলোয়াড়। ঠিক মাঝখানে বসানো থাকবে একটি কিউবক্টাহেড্রন কিউব যার আটটি চারভুজ তল এবং ছয়টি ত্রিভুজ তলের সঙ্গে র্নগিয়ান জ্যামিতির সাম্প্রতিকতম সূত্র প্রয়োগ করে আরও তিনটি তল যোগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে এই মহাজ্যামিতিক ঘনকটির তলগুলি নানান রঙের আলোতে জ্বলতে-নিভতে থাকবে। সেই জ্বলা-নেভার গতি ক্রমশ বাড়তে থাকবে এবং এক সময় হঠাৎ করে সব কটা আলো নিভে যাবে। নিভে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত খেলোয়াড়রা ওই ত্রিকোণ মাঠের সর্বাপেক্ষা বাইরের সীমাতে চলে যাবে। এইবার ঘনকটির গায়ের আলো আবার জ্বলে উঠবে, আর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত খেলোয়াড়রা মাঠের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে, পূর্ব-নির্দিষ্ট কোনও একটি দলের একজন খেলোয়াড় ছুটে চলে আসবে কিউবটির কাছে এবং জিভ বার করে কিউবটিকে তাতে তুলে নেবে। কেবল তুলে নিলেই হবে না। কিউবটির ভার্টেক্সের যেকোনও একটিকে জিভের উপরে লাগিয়ে রেখে সন্তর্পণে ব্যালেন্স করে নিয়ে তাকে মাঠের বহিঃসীমানার দিকে ছুটে যেতে হবে। এই প্রাণীদের জিহ্বা যেহেতু তাদের হাত-পায়ের তুলনায় বেঢপ, এই ব্যালেন্স রেখে ছোটা খুব কঠিন কাজ।
কেন্দ্র থেকে প্রথম দুটি ত্রিভুজ পার হয়েই তাকে লাফ দিতে হবে এবং একবার মাত্র মাটি ছুঁয়ে তাকে সীমানায় পৌঁছে সীমানা-নির্দেশক বেড়াটি স্পর্শ করতে হবে। যদি সে স্পর্শ করতে পেরে যায়, একবারের বেশি মাটি না ছুঁয়ে, তাহলে সে তার দলের জন্য সতেরো পয়েন্ট জিতল। যদি সে তা না পারে তাহলে সে ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে যাবে।
তবে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। যেই মুহূর্তে কেন্দ্র থেকে ঘনকটি জিভে তুলে নিয়ে খেলোয়াড় দৌড়াতে বা লাফাতে শুরু করল, মাঠে উপস্থিত সমস্ত খেলোয়াড়, এমনকি তার নিজের দলের খেলোয়াড়রাও, তাকে বাধা দিতে শুরু করবে। কেউ হাত বা পা ব্যবহার করতে পারবে না। কেবলমাত্র জিভ দিয়ে তারা কিউব-বাহক খেলোয়াড়টিকে আটকানোর চেষ্টা করতে পারবে। যেইমাত্র ওই খেলোয়াড়টি সীমানা ছুঁয়ে দেবে, বাকি খেলোয়াড়রা সবাই একযোগে হাততালি দেবে এবং সীমানার কাছে যে যার জায়গায় ফিরে যাবে। ঘনকটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় মাঠের মাঝখানে ফেরত চলে যাবে। আলোগুলির জ্বলা-নেভা আবার চালু হবে। আবার একইভাবে ওই একজন খেলোয়াড় ছাড়া বাকিদের মধ্যে থেকে অন্য একজন খেলোয়াড় ঘনকটিকে ‘জিভাবার’ জন্য ছুটবে। প্রথমবার খেলা যেভাবে হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এটা চলবে প্রথম দলের সতেরো জন খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের সুযোগ ফুরিয়ে যাওয়া অব্দি। তারপরে দ্বিতীয় দল খেলবে। তারপরে তৃতীয় দল। যে দল সবচেয়ে বেশি বার ‘ঘনক-জিভায়িত’ (র্নগ-ওয়ালাদের খেলার স্ল্যাং এটা) হয়ে সীমানা ছুঁতে পারবে সেই দলের প্রাপ্ত পয়েন্টকে সতেরো দিয়ে গুণ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে তার থেকে তিন বাদ দিয়ে নির্ধারণ করা হবে সেই দিনের খেলায় কোন দল সবচাইতে বেশি পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারল।
এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু নিয়ম আছে। যেমন, খেলোয়াড়রা যখন দৌড়বে তখন প্রত্যেকেরই জিভ নিশ্চয় কোনও না কোনও সময় মুখ থেকে বাইরে বেরোবে, কিন্তু সেই সময় কারও জিভ থেকে একটা ফোটাও লালা মাটিতে পড়তে পারবে না। তাছাড়া, খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের মুখ ঢাকা থাকবে কোনও না কোনও রকমের মুখোশে। সেই মুখোশ যদি কারও খুলে যায়, তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে হবে। তার উপরে, যদি তাকে এর পরেও আবার খেলায় যোগ দিতে হয়, তাহলে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে তার মুখের চেহারাটা পাল্টে নিতে হবে। ফলে কোনও একজন খেলোয়াড়কে কেউ চিনবে না, এবং, তার ‘স্টার’ হয়ে ওঠার কোনও সুযোগ থাকবে না। এখানেই শেষ নয়। কেউ যদি হাত বা পা দিয়ে ঘনকটাকে ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে তাকে পরের তিনটে খেলার সময় সমস্ত খেলোয়ারদের জল খাওয়াবার দায়িত্ব নিতে হবে। আরও কিছু ছোটখাটো নিয়ম আছে। খেলা চলাকালীন কেউ আকাশের দিকে তাকাতে পারবে না। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। মাঠে কেউ কোনও রকম নাচ দেখাতে পারবে না। যদি কাউকে কোনও রকম ইশারা করতে হয় তাহলে একমাত্র কড়ে আঙুল ব্যবহার চলবে। এখানে বলে রাখি যে এই গ্রহের সমস্ত প্রাণীর ডান হাতে একটা করে বেশি কড়ে আঙুল আছে।
জিভবল খেলায় কোন ‘ক্তল্টু’, মানে যাকে তোমরা ‘রেফারি’ বলো, লাগে না। লাগে না, কারণ এই গ্রহের কেউ কোনওরকমভাবে খেলার নিয়ম লঙ্ঘন করার কথা ভাবতেই পারে না। খেলায় কেউ কোনও রকমের ‘ক্লৃং’ মানে ফাউল করবে, তার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আর একটা মজার ব্যাপার হল, এই খেলার মাঠের চারপাশে কোনও রকম দর্শক আসন নেই, যদিও র্নগ-জগতের এই খেলাটি এই জগতে শুধু নয়, নিকটবর্তী সব নক্ষত্রমণ্ডলীতে ভীষণ রকম ‘ঢ্রিক্লং’, মানে প্রাণীপ্রিয়। ফলে খেলা দেখতে চাইবার প্রার্থীর কোনও অভাব নেই। এনিয়ে প্রথমদিকে নানানরকম সমস্যা হত বলে (সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল কোথায় মহাকাশযানগুলোকে পার্ক করা হবে— তখনও আন্তঃনক্ষত্র শাটল চালু হয়নি) সবাই একমত হয়ে খেলা দেখার অন্য একটা ব্যবস্থা বানিয়ে ফেলে। যে যার গৃহে (বাড়ি বললাম না কারণ আমাদের এই এলাকায় অনেকেই গুহা অথবা গাছের ডালে থাকেন) বসেই খেলা দেখতে পারেন ত্রিমাত্রিক লেজার চিত্র প্রক্ষেপণের মাধ্যমে।
স্থানীয়দের জন্য তার চাইতেও বড় সুবিধে করে দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত দর্শক এই খেলার সূক্ষ্মতর দিকগুলো সম্পর্কে আগ্রহী, তারা নিজেরাও ত্রিমাত্রিক লেজার প্রতিকৃতি হয়ে মাঠের মধ্যে ঢুকে খেলোয়ারদের আশেপাশে একই গতিতে দৌড়ে বা দাঁড়িয়ে থেকেও খেলা উপভোগ করতে পারেন। স্বভাবত, এদের কাউকেই খেলোয়াড়রা দেখতে পায় না, অথবা তাদের কারও সঙ্গে খেলোয়াড়দের ধাক্কা লেগে যায় না। প্রত্যেকটা প্রতিকৃতিই অদৃশ্য এবং পুরোপুরি স্বচ্ছ। খুব মজা লাগে যখন শ’তিনেক মাইল উপর থেকে খেলার মাঠের দিকে তাকানো যায়। তখন সেখানে একজন খেলোয়াড়কেও আলাদা করে দেখতে পাওয়া যায় না, শুধু দেখতে পাওয়া যায় হাজার হাজার দর্শক কীভাবে মাঠের মধ্যে দৌড়োদৌড়ি করে বেড়াচ্ছেন। দূর থেকে বিশেষ চশমা পরে দেখলে সবাইকে দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্যই কোনও দর্শকের মধ্যেই কোনওরকম বেচাল সহ্য করা হয় না।
এই ছবি হয়ে মাঠে ঢোকা নিয়ে বৃহত্তর মহাকাশে একটা ‘ত্রৃক্ল’ বা ‘স্ক্যান্ডাল’ রটে আছে বহুযুগ ধরে। দুষ্ট প্রাণীরা বলে জিভবল সিজন শুরু হলে আশপাশের সব ক’টা নক্ষত্র থেকে র্নগ জগতে এসে সব জিভবল-প্রেমী ভিড় করে। তার ফলে টুরিস্ট ব্যবসা ভালোই জমে। মাঠে লেজার চিত্র প্রক্ষেপণ ব্যবসাও ফুলেফেঁপে ওঠে। সেই ধান্দাতেই এই প্রকৌশলটিকে আরও উন্নত হয়ে উঠতে দিচ্ছে না র্নগ কেন্দ্রীয় সভা। র্নগীয় পাবলিক অবশ্য এই গুজবের ঘোর বিরোধিতা করে।
খেলা শুরু হতে চলেছে। যদিও আজ প্রথম খেলা, অনেকটাই সৌজন্যমূলক, তবুও উত্তেজনার শেষ নেই। শোনা যাচ্ছে, আজ দুইপক্ষেই বেশ কিছু নতুন জিভ দেখা যাবে। কিউব জ্বলতে নিভতে শুরু করেছে, সারা মাঠে ল্লল্লল্লল্ল নীরবতা … …
এই অব্দি কথা আসছিল ভালোভাবেই। কিন্তু কোনও মহাজাগতিক কারণে হঠাৎ ঠিক এই সময় কাল-স্থান-মাত্রা স্রোতধারায় একটা গোলযোগের ফলে মহাশূন্যিক কেঁচো-ফুটো এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ডান-বাম তথ্য-প্রেষণ আমার কাছে এসে পৌঁছতে পারে না। তাই আপাতত আপনাদের কাছে বাকিটা বলতে পারছি না এখন। প্রেষণ আবার চালু হলেই বাকিটা বলছি।
আগামী সংখ্যায় সমাপ্য