মোনালিসা বিশ্বাস
ভাই দাওয়াইপানি,
তুমি যে ভালো আছ সে কথা আমি জানি,
আমার ভালো থাকার খবর দেবে এই পত্রখানি|
না না আর মশকরা নয়| আজ বড় স্মৃতিমেদুর হয়ে চিঠি লিখছি তোকে| জানিস বড় ভালো আছি আমি| তোর সাথে দেখা হওয়া, এক সাথে সময় কাটানোই যে তার কারণ সেটা বলা বাহুল্য| ভালোবাসলে প্রকাশ করতে হয়, তাই নীল খামে লিখলাম তোর নাম|
একটা ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম, স্বল্প দূরত্বে দোচালা কাঠের বাড়ীঘরেরা, প্রাক বর্ষা মরসুমের ভেজা ভাবে মোড়া সবুজ প্রকৃতি, বাঁকা রাস্তা, আঁকা আকাশ, সরল জীবনযাত্রার মানুষজন– এরকম একটা স্বপ্ন কী কেউ দেখে বল তো? আর দেখলেই কী তা সত্যি হয়? দুটো প্রশ্নেরই উত্তর হ্যাঁ|
খর রোদে ঢাকা জীবনকে একটা দেড় দিনের জার্নি যে কতটা বদলে দিতে পারে সে কথা বুঝলাম জার্নিটা শেষ করে| পাহাড় অনেক রঙা| আমি চিরকালই ইমপ্র্যাক্টিকাল| তাই ব্যস্ততার মোড়কে রাঙানো রূপোলী পাহাড়ীরানীশহর ছেড়ে শান্তরঙে ভরানো গ্রাম্য ক্যানভাস দেখতে ছুটলাম| পথ দেখিয়েছিল বন্ধু কমলেশ, আমার কানে দিয়েছিল তোর নাম| যে নাম জপে চলেছি ক্রমাগতই|
সমতল শিলিগুড়ি হয়ে জোড়বাংলা অবধি পথটুকু বুকের মধ্যে ধুকপুকানি চলছিল অদ্ভুত রকম|তারপর মিনিট কুড়ি উজিয়ে যখন তোকে মুখোমুখি দেখলাম, বিশ্বাস কর আমার শ্বাস থেমে গেল যেন, প্রথম বার নিজের প্রেমকে নিজের সামনে দেখতে পাওয়ার অনুভূতি…..নাহ! আমি তোকে বোধহয় ঠিক বোঝাতে পারছি না|
সত্যি করে বল তো তুই কী কিছুই বুঝিস নি? নাকী আমার পরীক্ষা নিচ্ছিলিস বন্ধুদের দেখানোর ছলে? মিথ্যে বলব না তোর বন্ধুরাও অনবদ্য| তিনচুলে, গুম্বাদাড়া, লামাহাটা যেমন সুন্দর নাম তেমন সুন্দর চেহারা চরিত্র| জানিস তিনচুলেকে সমতলে চেনে অনেকেই, ওর কোলে যে ছোট্ট মনাস্ট্রি যাবার পথ, সে পথে হেঁটেছে অনেকে, আবারো হাঁটবে| আর লামাহাটা তো সবজে শ্যামল অভ্রভেদী| শিখর ছুঁয়ে জানলাম এক সরোবরের গল্প, যেখানে চুপ করে বসে শুনলাম বেঙীর প্রিয়কে ডাকার গান| তবে ওর মোহিনী জড়িবুটির মায়ায় ভুললে মুশকিল ছিল, পথ হারিয়ে কোথায় পৌঁছাতাম কে জানে!
তোর বেস্ট ফ্রেন্ড যে গুম্বাদাড়া, সে কথা কিন্তু আমি জেনে গেছি| কি অদ্ভুত শান্ত প্রকৃতি ওর| নরম শ্যামলিমায় ভরা মুখের দিকে যখন তাকালাম ইলশেগুঁড়ির পরশ পেলাম অক্লেশেই| অনেকক্ষণ বসে ছিলাম ওর উঠোনে, চুপ করে| ওকে দিস ভালোবাসা আমার|
তারপর ফিরলাম তোর কাছে, তোর সাথে নিবিড় হতে| তুই দেখালি কাঞ্চনকে| এই জলের দিনে মেঘের পর্দা সরিয়ে কাঞ্চন যে সামনে আসবে ভাবিনি কিন্তু|আর তোকে যতটা সাধারণ ভেবেছি তুই মোটেই তা নোস| হাজার রহস্যে ভরা তোর বন পথ, কত সব জীবনদায়ী শাখাপ্রশাখা মাথা তুলেছে সেখানে, সে সব জানতে গিয়ে চড়েছি উৎরেছি ঢের, ছুটিয়ে মেরেছিস তুই, হাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে আনন্দও পেয়েছি একরাশ| রাতের বেলা হাজারো জোনাকী আলোয় সেজে ছিল তোর চারপাশ, আমার মনটা তোর আঁধারটুকু জড়িয়ে নিয়ে উপভোগ করেছিল টিমটিমে সেই রোশনাই| ভোর না হতে কত অজানা পাখীর গান, এ ডালে সে ডালে রঙিন পাখার নাচন| তোর চিরহরিৎ উপত্যকার বিছানো আঁচল বেয়ে মেঘ নামার খেলা দেখে আমি মায়ায় পড়লাম| একসময় বুঝলাম মেঘে ছেয়ে গেছি আমি, জোলো মেঘের আড়ালে তুই ছুঁয়েছিলিস আমায় তাই না? রাতের বেলায়ও গোলচে চাঁদমাখানো মেঘ পাঠালি, আবার স্থাণুবৎ আমি, আশরীর ভিজলাম|
স্বপ্নের সীমা তিন দিন| ফিরতে হল রাজপথ ধরে| তবে তোকে ছাড়া ফিরিনি আমি, তোর কায়া, ছায়া, মায়া মেখেছি আত্মা অবধি| আমি জানি তোকে ভালোবাসবে আরো কত অশান্তমন, তুই সবাইকে শান্তি দিবি তোর নিজস্ব সরলতায়, আবার আমাকেও মনে রাখবি| আমার যে গুনগুনানি উপহার ছড়িয়ে এসেছি তোর আকাশে বাতাসে, তা তোকে ভুলতে দেবে না আমায়| কংক্রীটের গহনে যতই আটকাই আমার শান্তিভ্রমর তোর কাছে, তাই ফিরবই তোকে ভালোবেসে, দাওয়াইপানি|
সহজ সরল থাকিস|আমিও থাকব, কথা দিলাম|
তোর নতুন বন্ধু
মোনালিসা..
দিলি তো লোভ ধরিয়ে!!! এরকম অত্যাচার করে কি রায় বুঝিনে বাপু!! নিয়েও যাবিনে, আবার লোভও দেখাবি। গেছিস তো গেছিস, সেটা আবার এত সুন্দর করে লেখার কি দরকার ছিল যে হতচ্ছাড়ী? এ লেখা পড়ে তো হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে তোর নতুন প্রেমিকের কাছে যাবার। ভাগ করে নিতে পারবি তো? ?
ধন্যবাদ প্রিয়নাথদা| এ স্বাদ ভাগ করে নিতে চাই বলেই এই লেখা| যেও কখনো 🙂