পাহাড়ি আত্মার হ্রদ

আইভান আনতোনোভিচ ইয়েফ্রেমভ

 

তর্জমা : লীলা সরকার

 

প্রথমাংশের পর

 

“এই স্থানের সৌন্দর্য”- চোরোসভ বলতে লাগলেন — “অনেক অনেক দিন আগে থেকে লোককে আকর্ষণ করে এসেছে। কিন্তু এর অকল্পনীয় শক্তি, হ্রদের কাছে যারাই এসেছে, তাদের ধ্বংস করেছে। আমি নিজেও হ্রদের এই সর্বনাশা প্রভাব অনুভব করেছি। কিন্তু সে কথা পরে। খুব মজার কথা এই যে, গ্রীষ্মকালে হ্রদটিকে আরও সুন্দর দেখায়, আর সত্যিই ওইসব দিনে ওর ধ্বংসাত্মক শক্তি আরও বেশি করে প্রকাশ পায়। যে মুহূর্তে লোকে পাহাড়ের রক্তিম সারিগুলি দেখতে পায়, সেই মুহূর্তেই তারা এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করতে থাকে। চারিদিকের তুষারাচ্ছন্ন চূড়াগুলি যেন তাদের মাথায় এক দৈত্যাকৃতি বোঝা চাপিয়ে দেয়, তুষারে প্রতিফলিত আলোর কণারা তাদের চোখের সামনে অদম্য নাচ শুরু করে। সেই মুহূর্তে তাদের ইচ্ছা হয় ঐ বৃত্তাকার শঙ্কু আকৃতির পাহাড়ে যেতে, যেখানে ‘পাহাড়ি আত্মার’ নীল-সবুজ অলীক ছায়াগুলি সবুজ-উজ্জ্বল  মেঘের চারপাশে নাচছে। কিন্তু যে-মুহূর্তে কেউ ওখানে পৌঁছয়, সব কিছুই অন্তর্হিত হয়। হঠাৎ শক্তি হারিয়ে অতিকষ্টে নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোনওরকমে পা টানতে টানতে ভগ্নচিত্তে অসুখী লোকগুলো অশুভ স্থানটা ছেড়ে চলে যেতে থাকে, কিন্তু সাধারণত মৃত্যু তাদের পথেই ধরে ফেলে। শুধু একবার কয়েকজন শক্তিশালী শিকারী অবিশ্বাস্য কষ্ট সহ্য করে তাদের তাঁবুতে ফিরে আসতে পেরেছিল; এদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেল, অন্যরা দীর্ঘদিন রোগ ভোগ করল এবং চিরদিনের জন্য আগের শক্তি ও সাহস হারিয়ে ফেলল। সেই সময় থেকেই ‘দিয়েনিদের’-এর দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে এবং লোকে সেখানে যাওয়া বন্ধ করেছে। সেখানে কোনও পশু নেই, পাখি নেই; বামতীরে যেখানে আত্মার সম্মেলন হয়, সেখানকার মাটিতে কিছুই জন্মায় না, এমনকি ঘাসও না ।

ছেলেবেলাতেই আমি এই উপকথা শুনেছি। তাই পাহাড়ি আত্মার অঞ্চলে যাবার ইচ্ছা আমার অনেক দিন আগেই হয়েছিল। কুড়ি বছর আগে আমি সেখানে দুদিন একা কাটিয়েছিলাম। প্রথম দিন আমি বিশেষ কিছু দেখিনি, অনেকক্ষণ ধরে প্রকৃতির স্কেচ করেছি শুধু। আকাশে পরিষ্কার মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল, কখনও আলো কখনও ছায়া নেমে আসছিল। এই আলো কম-বেশি হওয়ার জন্য পাহাড়ি বায়ুমণ্ডলের স্বচ্ছতাকে ঠিকমত আঁকতে পারছিলাম না। আরও একদিন আমি হ্রদের আধ মাইলের মধ্যেকার বনে রাত কাটানো স্থির করলাম। সন্ধ্যার দিকে মুখের মধ্যে গরম ভাব অনুভব করে আমাকে সবসময় থুতু ফেলতে হল, আর একটু বমিবমি ভাব হল। সাধারণত উঁচু বায়ুমণ্ডলের চাপ আমি ভালভাবেই সহ্য করতে পারি, তাই আশ্চর্য হলাম কেন এইবার এই স্বল্প বায়ুমণ্ডলে আমার এই রকম অবস্থা হচ্ছে।

পরের দিন সকালে ভালো আবহাওয়ার আশায় অসহ্য মাথাব্যথা আর দুর্বলতা নিয়েই হ্রদের দিকে নিজেকে টেনে নিয়ে চললাম। সেখানে পৌঁছেই হ্রদের সৌন্দর্য আমার সব অসুস্থতা ভুলিয়ে দিল। বহুক্ষণ স্কেচ করার পর যখন সন্তুষ্ট হলাম তখন বেশ রোদ উঠেছে। ইজেলের থেকে চোখ সরিয়ে শেষবারের মতো তাকালাম হ্রদের দিকে। ক্লান্তিতে তখন আমার হাত কাঁপছিল, মাঝে মাঝেই মাথা ঝিমঝিম করছিল আর বমি পাচ্ছিল। ঠিক তখনই আমি হ্রদের আত্মাদের দেখতে পেলাম। জলের ওপরের কাচের মতো স্বচ্ছ স্তরে ছোট ছোট মেঘের ছায়া ভেসে উঠল। সূর্যরশ্মি হ্রদের জলে তির্যকভাবে পড়ার পর হঠাৎ মিনিটখানেক সব অন্ধকার হল, তারপরই আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আলো-আঁধারির সেই সীমানায় দেখতে পেলাম অপ্রাকৃত নীল-সবুজ রঙের কয়েকটি সারি। সারিগুলিকে তাকের ওপর শুয়ে থাকা কয়েকটি বিরাট বিরাট মানুষের মূর্তির মত দেখাচ্ছিল। সারিগুলি কখনও একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; আবার তাড়াতাড়ি সরে যাচ্ছে; পরমুহূর্তেই আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে সেই অতিপ্রাকৃত দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সারিগুলির এই নিঃশব্দ চলাফেরা আরও কয়েক মিনিট চলল। তারপর পাহাড়গুলিতে রক্ত-লাল রঙের ঝলক দেখা গেল। আর সব কিছুর উপরে মৃদু সবুজ রঙের দীপ্তিমান মেঘ ভেসে বেড়াতে লাগল।

হঠাৎ অনুভব করলাম আমার শক্তি বেড়ে গেছে, দৃষ্টি তীক্ষ্ম হয়েছে, দূরের পাহাড়গুলি যেন আমার দিকে এগিয়ে আসছে। দ্বিগুণ শক্তিতে ক্ষিপ্রভাবে রঙ ও ব্রাশের সাহায্যে আমি সেই অনৈসর্গিক দৃশ্যকে আঁকার চেষ্টা করতে চাইলাম।

হ্রদের ওপর দিয়ে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস বইল আর নিমেষের মধ্যে মেঘ এবং নীল-সবুজ অলীক মূর্তিগুলি অদৃশ্য হয়ে গেল। শুধু লাল আগুন রঙে পাহাড়গুলি বিষণ্ণভাবে জ্বলতে লাগল। আমার উত্তেজনা কমে গিয়ে অসুস্থতা বেড়ে গেল। অনুভব করলাম প্যালেট-ধরে-থাকা হাতের আঙুলগুলির মধ্য দিয়েই যেন আমার জীবনীশক্তি নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে। এক অশুভ আশঙ্কায় তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিলাম স্কেচের বাক্স। বুকে আর মাথায় যেন বিরাট এক ওজন চেপে বসেছে।

হ্রদের ওপর দিয়ে জোরে বাতাস বইতে লাগল। স্বচ্ছ নীল আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল। পাহাড়ের চূড়াগুলো ঢেকে গেল মেঘে, হ্রদের চারপাশের প্রেরণাদায়ক বিশুদ্ধ সৌন্দর্য বিষণ্ণতায় পরিণত হল। অলীক মূর্তিগুলির লাল প্রতিফলন নিভে গেল ধীরে ধীরে। তুষারের মধ্যে অন্ধকার পাহাড়গুলি জেগে রইল কয়েকটি কালো বিন্দুর মতো।

প্রতিটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে আমার শক্তি নিঃশেষিত হচ্ছিল । ভয় পেয়ে গাইডদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, চুক্তিমত ওদের পথেই কোথাও অপেক্ষা করার কথা। এক স্বপ্নের ঘোরে পথ হেঁটে চলেছিলাম। পাহাড়গুলো চোখের সামনে যেন দুলছিল। প্রচণ্ড বমি করতে করতে প্রায়ই রাস্তায় পড়ে যাচ্ছিলাম, ওঠারও ক্ষমতা ছিল না আমার। কীভাবে যে গাইডদের কাছে পৌঁছেছিলাম জানি না। তা সত্ত্বেও, পিঠে বাঁধা স্কেচবাক্সটা কিন্তু অক্ষত রাখতে পেরেছিলাম।

দূর থেকেই আমার অবস্থা বুঝতে পেরে গাইডরা শশব্যস্তে আমাকে তাঁবুতে নিয়ে গিয়ে শোয়ালো, মাথার নিচে রাখল জীনের পাশের থলিটা।

‘তুমি কিন্তু এবার শেষ হয়ে যাবে, চোরোস,’ – বয়োঃবৃদ্ধ গাইডটি বলল নিরাসক্ত কণ্ঠস্বরে।

দেখতে পাচ্ছেন অবশ্য আমি মরিনি, কিন্তু সেসময় বহুদিন ধরে খুব অসুস্থ ছিলাম।  আলস্য আর ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে কাজ করার সমস্ত উৎসাহই হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রায় একবছর পর শুরু করলাম ‘দিয়েনিদের’ ছবিটা আঁকতে, আর ঐ ছবিটাই আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল। তাহলেই বুঝতে পারছেন, ‘দিয়েনিদের’ আর তার অধিবাসী পাহাড়ি আত্মার রহস্য জানতে আমাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।”

চোরোসভ চুপ করলেন। জানলার বাইরে ততক্ষণে গোধূলির অন্ধকারে উপত্যকা ডুবে গেছে। শিল্পীর গল্পটিতে খুব আকৃষ্ট হলেও তাঁর পাহাড়ি আত্মার কথা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। খাবার ঘরে গেলাম। খাবার টেবিলের উজ্জ্বল আলো অপ্রাকৃত গল্পের ছায়াকে যেন সরিয়ে দিল। আমি আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমি যদি আর একবার ওখানে যেতে চাই, তাহলে ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’ খুঁজে পাওয়ার পথটা আমাকে একটু বলে দেবেন?”

“ওহো! খুব আকৃষ্ট হয়েছেন হ্রদটার প্রতি, তাই না? – চোরোসভ হাসলেন। “ বেশ তো, যদি ভয় না পান, যান! লিখে নিন।“

সঙ্গে সঙ্গে ছোট ব্যাগ থেকে ডায়েরি আর পেনসিল বার করলাম।

“জায়গাটা হল কাতুন শৈলশ্রেণীর পূর্বদিকের শেষ অংশে চুইস্ক আর কাতুনের তুষারাবৃত পর্বতমালার মধ্যে এক গভীর গিরিখাত। আর্গুত পাহাড়ের মুখ থেকে ডানদিকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে ছোট এক নদী ইউনেভর। আর্গুত এখানে হঠাৎ ঘুরে গেছে, ফলে পাহাড়ের মুখ থেকে চওড়া এক সমতল উপত্যকা বেরিয়েছে। এই নদী আর তার চওড়া উপত্যকা গভীরভাবে কাতুন শৈলশ্রেণীর মাঝ দিয়ে চলে গেছে। আপনাকে এই উপত্যকা দিয়ে যেতে হবে। জায়গাটা শুকনো এবং বিশাল শাখাপ্রশাখার লার্চগাছে ভরা। ওপরে উঠে দেখবেন একটা জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে উপত্যকা ডান দিকে ঘুরে গেছে। সেখানে উপত্যকার গভীরে চওড়া সমতলভূমিতে একটা একটা করে মোট পাঁচটা হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। কোনওটা পরস্পর থেকে এক ভার্স্ট, আবার কোনওটা আধ ভার্স্ট দূরে। সবশেষে পঞ্চম হ্রদ – যেখান থেকে আর কোথাও যাওয়া যাবে না – সেটাই ‘দিয়েনিদের’। ও হ্যাঁ, আর একটা ভালো কথা মনে পড়েছে। আর্গুত থেকে ঘুরবার পথে একটা ছোট জলাভূমি পড়বে। তার বাঁ ধারে শয়তানের দুই শিঙের মতো দুই শাখা মেলে এক বিশাল লার্চ গাছ ছিল। গাছটা যদি এখনও বেঁচে থাকে, তাহলে সেটাই হবে আপনার পথপ্রদর্শক।”

চোরোসভের পথনির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখে নিলাম। পরবর্তীকালে এর গুরুত্ব আমার বোধগম্য হয়েছিল।

পরদিন সকালে চোরোসভের ছবিগুলো আবার ভালো করে দেখলাম। কিন্তু কোনওটাই ‘দিয়েনিদের’-এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। ছবিটা খুব দামি বুঝতে পেরে, আর আমার কাছে অত টাকা না থাকার জন্য, কেনার চেষ্টাও করলাম না। বদলে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের দুটো স্কেচ কিনলাম আর উপহারস্বরূপ পেলাম কলম দিয়ে আঁকা একটা ছোট ড্রইং। ছবিগুলির বিষয় ছিল আমার প্রিয় লার্চগাছ।

বিদায়বেলায় চোরোসভ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “দেখতে পাচ্ছি দিয়েনিদের ছবিটা আপনার খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু এটা আপনাকে এখন উপহার দিতে পারব না। শুধু……” — তিনি একটু চুপ করে থাকলেন, ‘”আমার মারা যাওয়ার পর এটা যাতে আপনি পান সেই ব্যবস্থা করব। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এটা আমার পক্ষে অপরিত্যাজ্য। না না, দুঃখ করবেন না, আপনি শীঘ্রই এটা পেয়ে যাবেন।” নিজস্ব আবেগহীন ঢঙে শিল্পী যোগ করলেন।

চোরোসভের দীর্ঘ জীবন কামনা করে তাঁর সঙ্গে শীঘ্রই দেখা হবে — এই শুভেচ্ছা জানিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলাম। জানতাম না, দুর্ভাগ্যবশত, এই আমাদের শেষ সাক্ষাৎ।

আলতাইতে আবার ফিরে যেতে আমার অনেক সময় লাগল। চার বছর কেটে গেল অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য গবেষণায়। পঞ্চম বছরে সাময়িকভাবে কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল কঠিন বাতের জন্য, যা তাইগার অধিবাসীদের সাধারণ অসুখ, ছমাসের জন্য বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে। দুর্বল হার্টের জন্যও সাবধান হতে হয়েছিল।

বাধ্যতামূলকভাবে কর্মহীনতার আলসেমি আর একঘেয়েমি কাটাতে দক্ষিণের স্বাস্থ্যনিবাস থেকে আমার প্রিয় লেনিনগ্রাদে গেলাম। সেন্ট্রাল বোর্ডের প্রস্তাব অনুসারে সেন্ট্রাল এশিয়ার সেফিদকান-এ পারদের খনির কাজে নেমে পড়লাম। আশা করেছিলাম,  রৌদ্রালোকিত শুষ্ক তুর্কিস্তানে আমার রোগ সেরে যাবে, তারপর আমার চিরকালের আকর্ষণ উত্তরের নিরানন্দ বনভূমিতে ফিরতে পারব। সাইবেরিয়ার প্রতি এই একান্ত ভালোবাসার জন্য এখানে যে তীব্র বিক্ষোভ আমার মনে এসেছিল, তাকে দমন করতে পারলাম।

উষ্ণ বসন্তকালের এক সন্ধ্যায় যখন বাড়িতে মাইক্রোস্কোপের কাছে বসেছিলাম, আমার কাছে একটা পার্সেল এল। এই পার্সেল পেয়ে যতটা আনন্দিত হলাম, দুঃখিত হলাম তার চেয়ে অনেক বেশি। চকচকে সিডার কাঠের একটা বাক্সে ‘দিয়েনিদের’-এর স্কেচটি রক্ষিত ছিল। এর মানে শিল্পী চোরোসভ আর বেঁচে নেই। ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’ স্কেচটির দিকে তাকাতেই  আগের কথা সব স্পষ্ট মনে পড়ল।

দূর ‘দিয়েনিদের’-এর অদেখা সৌন্দর্য আমার মনকে এক উৎকণ্ঠিত বিষাদে ভরে দিল। কাজের মাধ্যমে এই বিষণ্ণতাকে দূর করবার জন্য মাইক্রোস্কোপের লেন্সের নিচে সেফিদকান-এর খনির নতুন একখণ্ড আকরিক রাখলাম। অভ্যস্ত হাতে ক্রিমালিয়রের স্ক্রুটা নিচু করলাম, মাইক্রোমিটারের ফোকাস ঠিক করলাম এবং মার্কারি আকরিক কীভাবে ক্রিস্টালে পরিণত হয় সেই বিষয়ে স্টাডিতে মন দিলাম। ‘স্লিফ’ — শিলার পালিশ করা রেকর্ড –- লাল মার্কারি সালফাইড। স্লিফ থেকে প্রতিফলিত ফুলের সূক্ষ্ম রেখাগুলো বিদ্যুতের আলোতে ঢাকা পড়ে গেল। তির্যক আলোর জন্য মাইক্রোস্কোপটাকে এদিক ওদিক সরিয়ে নিয়ে দিনের আলোর বাতিটা জ্বালালাম– একটা চমৎকার আবিষ্কার — মাইক্রোস্কোপের সংকীর্ণ জগতে সূর্যের প্রতিকল্প!

আমার মনের দৃষ্টিতে ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’-কে এখনও দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি মাইক্রোস্কোপে নীলাভ রঙের বদলে রক্তাভ প্রতিফলন দেখে প্রথমে আশ্চর্য হলাম, যেমন শিল্পীর ছবিতে দেখে হয়েছিলাম। মুহূর্ত পরে বুঝলাম, আমি ছবির দিকে তাকিয়ে নেই, বরং মার্কারী-আকরিকের মধ্যে প্রতিবিম্ব দেখছি। মাইক্রোস্কোপের ছোট টেবিলটা ঘুরিয়ে দেওয়াতে রক্তাভ প্রতিফলন নিভে গিয়ে অথবা আরও পিঙ্গল লালে পরিবর্তিত হয়ে দীপ্তি দিতে লাগল। তখনও আকরিকের উপরিভাগের বেশিরভাগ অংশই ঠান্ডা ইস্পাতের মতো হয়েছিল। অশুভ লক্ষণের পূর্বাভাসে উত্তেজিত হয়ে (এই অশুভ লক্ষণকে আমি প্রত্যাশা করিনি) দিনের আলোর উৎপাদকযন্ত্রটির মুখকে ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’ স্কেচটির দিকে ঘুরিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে শৈলশ্রেণীতে শঙ্কু-আকৃতি পাহাড়ের পাদদেশে ফুলের প্রতিফলন দেখলাম, যেমন মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখেছি।

আমি তাড়াতাড়ি ফুলের টেবিলটা তৈরি করলাম। সেখানে দেখা গেল যে এর একটা সূত্র আছে। ……  সূত্র কেন বলছি? কারণ বিভিন্ন ধাতু ও তার আকরিক বিষয়ে গবেষণার বিজ্ঞানের জন্যই এই মিনেরাগ্রাফিয়া — প্রায় সাতশো ফুলের অর্থপূর্ণ অতি সূক্ষ্ম রেখা দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ফুলের টেবিল। প্রত্যেকটি রেখার নিজস্ব নাম আছে। এই রকম রেখা দিয়েই একটা ধাতুর সূত্র স্থির হয়। দেখা গেল যে, পাহাড়ি আত্মার বসতির চিত্রাঙ্কনে চোরোসভ যে লাল রং দেখিয়েছেন তা এই টেবিল অনুসারে বিভিন্ন সময়ে আলো জ্বালানো এবং আলোর angle of incidence-এর সঙ্গে মিলে যায়। বিজ্ঞানে একে বলা হয় আলোর ইচ্ছার interference।

‘দিয়েনিদের’ হ্রদের রহস্য আমার কাছে সহসা স্পষ্ট হয়ে গেল। আমি শুধু হতবুদ্ধি হলাম এই ভেবে – কেন আমি এই অনুমান আগে করলাম না আলতাইয়ের পাহাড়গুলিতে?

তক্ষুনি ফোনে ট্যাক্সি ডেকে রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে পৌঁছলাম। বড় বড় জানলা দিয়ে ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছিল।  আমার পরিচিত কেমিস্ট ও মেটালার্জিস্ট তখনও উপস্থিত ছিলেন।

‘আরে সাইবেরিয়ান বৈজ্ঞানিক!’ — তিনি আমাকে অভ্যর্থনা করলেন, ‘কী ব্যাপার? আবার কোনও কঠিন বিশ্লেষণ?’

‘না, দিমিত্রি মিখাইলোভিচ, আপনাকে পারদের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এসেছি।‘

‘ওঃ, পারদ? — এই ধাতু এত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে এর বিষয়ে একটা মোটা বই লেখা যায়। পারদের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটির জন্য পারদ অসম্ভব volatile। বলুন কী জানতে চান।’

‘একটা প্রশ্ন। পারদের গ্যাস নিজে আলো দেয়, না দেয় না? যদি দেয়, তা কী রঙের হয়?’

‘নিজে আলো দেয় না, কিন্তু মাঝে মাঝে গভীর ঘনত্বতে পৃথিবীতে এসে নীল-সবুজ রেখা দেয়। আর বৈদ্যুতিক ভাবে বিকীরণ হয়ে বায়ুতে সবুজ-সাদা আলো দেয়।’

‘আঃ!  সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল! অনেক, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!’

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার ডাক্তারের বাড়ি পৌঁছলাম। আমার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে ভীত-ত্রস্ত হয়ে সৌম্য বৃদ্ধ নিজে গাড়িবারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।

‘কী ঘটেছে? আবার বুকে ব্যথা?’

‘না, না, বুক ঠিক আছে। আমি বেশিক্ষণ থাকব না। অনুগ্রহ করে বলুন পারদের বিষবাষ্পের সংক্রমণ হলে কী কী  উপসর্গ দেখা যায়?’

‘সাধারণ পারদ হলে মুখে থুতু ওঠে আর বমি হয়। কিন্তু পারদের বাষ্পের ক্ষেত্রে …… আমাকে একটু দেখতে হবে …… একটু দাঁড়ান।’

‘না, আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। দয়া করে তাড়াতাড়ি দেখুন, প্রিয় পাভেল নিকোলায়েভিচ্!’

পড়ার ঘরে গিয়ে মিনিট খানেকের মধ্যেই তিনি খোলা একটা বই হাতে বেরিয়ে এলেন। ‘এই দেখুন, পারদের বাষ্প! এর প্রভাবে রক্তচাপ নেমে আসা, প্রচন্ড উত্তেজনা, শ্বাসকষ্ট ……. এমন কি হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু।’

‘দারুণ, খুব চমৎকার!’ বলে উঠলাম।

‘কী চমৎকার? এইরকম ভাবে মৃত্যু?’

বৃদ্ধ ডাক্তারের হতবুদ্ধি ভাবে আনন্দ পেয়ে বাচ্চাছেলের মত হাসতে হাসতে নীচে দৌড়ে গেলাম। যাক্, আমি যা ভাবছিলাম তার অবশ্যই একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।

বাড়ি ফিরে আমার বোর্ডের প্রধানকে ফোন করে জানালাম যে গবেষণার স্বার্থে আমাদের এখনই আলতাইতে যেতে হবে। তাঁকে এও অনুরোধ করলাম আমার সঙ্গে যেন গবেষণারত ক্রাসুলিনকে, যে পদার্থবিদ্যায় দক্ষ ও মেধাবী, পাঠানো হয়। আমার এই অসুস্থ অবস্থায় তাকে আমার খুবই প্রয়োজন।

মে মাসের মধ্যভাগে হ্রদ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌঁছনো অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। চুইস্ক হাই রোডে অবস্থিত ইনিয়া গ্রাম থেকে ক্রাসুলিন ও দুজন অভিজ্ঞ তাইগাবাসী শ্রমিককে নিয়ে রওনা হলাম। যাত্রাপথ সম্বন্ধে শান্ত শিল্পীর সমস্ত নির্দেশ মনে করে, চোরোসভের কথামতো অভিযানের পুরোনো ছিন্ন ভ্রমণপঞ্জী যা লিখেছিলাম, জামার পকেটে রাখলাম।

সন্ধ্যাবেলায় আমাদের ছোট দল সেই লার্চগাছের বিপরীতে উপত্যকার মুখে শুকনো চড়াতে তাঁবু খাটাল। উদ্বিগ্নচিত্তে ভাবতে লাগলাম, আগামীকাল আমার ধারণার সাফল্য নির্ধারিত হবে — কল্পনার সঙ্গে আমার যুক্তির পথ ঠিক, নাকি আলতাইয়ান শিল্পীর গল্পের আত্মার চেয়ে আরও অবিশ্বাস্য কিছু চিন্তা করেছি। ক্রাসুলিনও বোধহয় আমার মত উত্তেজিত বোধ করছিল। সে একটা গোল টিলার ওপর, যেখানে আমি চিন্তিতভাবে লার্চগাছের বক্র অংশটিকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম, আমার পাশে এসে বসল।

‘ভ্লাদিমির ইভগিয়েনিভিচ’ — কোমলভাবে সে বলল, ‘পাহাড়ে পৌঁছে আমাদের অভিযানের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলবেন, কথা দিয়েছিলেন।’

‘আশা করি, আগামী কালের মধ্যেই পারদের এক বিশাল সঞ্চিত স্থান আমরা দেখতে পাবো ক্রাসুলিন। আগামীকাল প্রমাণ হবে, আমি ঠিক ভেবেছি না ভুল। তোমরা জানো যে, পারদকে এর নিজস্ব পলিস্তরে বিক্ষিপ্তভাবে অল্পঘনত্বে পাওয়া যায়। প্রচুর পারদসহ বিরাট পলি(deposit) পৃথিবীতে পাওয়া যায় শুধুমাত্র একটা স্থানে। সেটা হল…’

‘স্পেনের আলমাদেনা’-তে’ – ক্রাসুলিন চটপটভাবে উত্তর দিল।

‘হ্যাঁ, অনেক শতাব্দী ধরেই আলমাদেনা অর্ধেক পৃথিবীকে পারদ সরবরাহ করে আসছে। একবার সেখানে বিশুদ্ধ পারদের একটা ছোট হ্রদ দেখা যায়। এরকমই কিছু একটা এখানে পেয়ে যাব বলে আশা করছি। এখানে সমস্ত পাহাড়গুলো যে লাল পারদে পূর্ণ, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। শুধু যদি …’

‘ভ্লাদিমির  ইভগিয়েনিভিচ, যদি আমরা পারদের এরকম একটা উৎস আবিষ্কার করতে পারি, তবে পারদের অর্থনীতিতে এক বিরাট বিপ্লব হবে!’

‘অবশ্যই, প্রিয় ক্রাসুলিন। প্রযুক্তিগত বা চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ধাতু। কিন্তু এখন ঘুমাও, ঘুমাও! আগামীকাল ভোরের আগেই আমাদের উঠতে হবে। আর খুব সাবধানে কালকের দিনটা কাটাতে হবে। আমি তোমাদের সকলকে বিষাক্ত করতে আর নিজেও বিষাক্ত হতে চাই না। পারদের বাষ্প কোনও রসিকতার বিষয় নয়। একশো বছর ধরে পারদের বাষ্পের ধ্বংসাত্মক গুণের জন্যই পারদের সঞ্চিত এই পলি আবিষ্কৃত হয়নি। কাল আমরা ‘দিয়েনিদের’-এর পাহাড়ি আত্মাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। তারপরে দেখা যাবে…’

গোলাপি রঙের ঘন কুয়াশা পাহাড়গুলোকে ঢেকে দিল। উপত্যকায় অন্ধকার নেমে এল। শুধু তুষারাচ্ছাদিত পর্বতের শৃঙ্গগুলি কোনও এক অদৃশ্য সূর্যকিরণে অনেকক্ষণ ধরে আলোকিত হয়ে রইল। ধীরে ধীরে সেখানেও আলো নিভে গেল। নেমে এল ছাইরঙের এক পর্দা। আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছিল। আরও খানিকক্ষণ আগুনের পাশে বসে ধূমপান করতে লাগলাম। অবশেষে উত্তেজনা দমন করে শুয়ে পড়লাম।

পরের দিনের সমস্ত ঘটনা টুকরো টুকরো ভাবে এখনও আমার মনে গেঁথে আছে।

তৃতীয় ও চতুর্থ হ্রদের মধ্যবর্তী উপত্যকার মধ্যভাগ বৃক্ষশূন্য কিন্তু শেওলায় ঢাকা যেন ঠিক একটা সবুজ কার্পেট। ধারে ধারে বড় বড় সিডার গাছ উঠেছে। এক দিক থেকে লার্চ গাছের শাখা আরেক দিকে সিডার গাছের শক্ত শাখাগুলো ‘পাহাড়ী আত্মার হ্রদ’-এর দিকে প্রসারিত হয়েছে। গাছগুলোর উঁচু সারি যেন বিষণ্ণ পতাকার মতো দেখাচ্ছিল।

চতুর্থ হ্রদটি ছোট ও গোলাকার। ঘোলাটে-জলকণার-কুয়াশায় ঢাকা নীল-ধূসর জল থেকে ধারালো পাথরের সারি দেখা গেল। এদের অতিক্রম করার সময় আমরা সিডার গাছের ঘন লতাগুল্মের মধ্যে পড়ে গেলাম। ইস্পাতের মতো উত্তপ্ত শৈলশ্রেণীর শঙ্কু আকৃতির পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছনো সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু সমস্ত কষ্টের মুহূর্তে অবসান হল যখন ভূতত্ত্বসংক্রান্ত হাতুড়ির সাহায্যে পাহাড়ের ধার থেকে লাল মার্কারি সালফাইডের প্রথম কঠিন অংশ  উপড়ে ফেলা হল। দূরে শৈলশ্রেণী  সিঁড়ির মতো নেমে একটা গর্ত পর্যন্ত পৌঁছেছে। গর্তের উপর হাল্কা ধোঁয়া ভাসছে। গর্তটা ঘোলা জলে ভর্তি। ক্রাসুলিনকে পারদখণ্ডটা পর্যবেক্ষণ করতে পাঠালাম আর নিজে শ্রমিকদের নিয়ে ঘন মেঘের ভিতর দিয়ে পাহাড়ের নীচের দিকে গেলাম।

একজন শ্রমিক হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল, ‘ওখানে ওটা কী স্যার?’

তাকিয়ে দেখি —  অনুজ্জ্বল কিন্তু অমঙ্গলসূচকভাবে সেই পারদের হ্রদ কিরণ দিচ্ছে — আমার কল্পনার অনুভব! হ্রদের উপরিভাগকে মনে হল কনভেক্স আকৃতির। উত্তেজনা দমন করতে না পেরে স্থিতিস্থাপক হ্রদের উপর ঝুঁকে পড়ে পিচ্ছিল ও দৃঢ় ঘন পারদে হাত ডুবিয়ে চিন্তা করলাম — ঘন ধাতুর কী অসীম গুণে ভরা এই বিশাল হ্রদ! এই পারদহ্রদই মাতৃভূমিকে আমার বিনম্র উপহার।

দশ মিনিট ধরে ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’-এর ধারে দাঁড়িয়ে রইলাম। হ্রদের জলে আর বরফাচ্ছাদিত শৈলশ্রেণীর ঢালু অংশে বিষণ্ণতার বিবর্ণ রঙ দেখা যাচ্ছিল। আমি সেখানে পাহাড়ি আত্মার মন্দির চিনতে পারলাম। এই মন্দিরের ছবি কয়েক বছর আগে চোরোসভের স্টুডিওতে আমাকে আশ্চর্য করেছিল।’

আমার ডাকে দৌড়ে এসে ক্রাসুলিন নীরব প্রশংসায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াল। যাই হোক, আনন্দকে একটু থামিয়ে রেখে অবশ্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করবার জন্য আমাদের নিজেদের শক্তিকে আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হল। ইতিমধ্যে মাথা ভারী হয়ে উঠেছে, মুখের ভিতর জ্বালা করছে — এই সমস্তই পারদের বিষাক্ত সংক্রমণ আরম্ভের অশুভ চিহ্ন। আমি আমার ক্যামেরা দিয়ে ডান ও বাঁ দিকে ফটো তুলতে লাগলাম। আর একজন শ্রমিক হ্রদ থেকে পারদ তুলে ফ্লাস্কগুলি ভর্তি করতে শুরু করল। ক্রাসুলিন ও অপর শ্রমিকটি দ্রুত পারদপূর্ণ পাহাড়ের অন্যান্য অংশের এবং হ্রদটির আয়তন মাপল। বিদ্যুৎগতিতে কাজ চলল। তারপর অবসাদ ও আতঙ্কের মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে আমরা ধীর মন্থর গতিতে ফিরতে লাগলাম। যখন আমরা হ্রদের বাঁ দিকের তীর ধরে অতিকষ্টে হাঁটছিলাম, মেঘ সরে গেল আর চোখের সামনে হিরের পলকাটা একটি শৃঙ্গ উদ্ভাসিত হল। দূরের গিরিখাতের প্রবেশমুখ দিয়ে তির্যক সূর্যরশ্মি স্থানটিকে কিরণ দিচ্ছিল। ‘দিয়েনিদের’ উজ্জ্বল আলোতে প্লাবিত হয়েছিল। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম, যে স্থান কিছুক্ষণ আগেই ছেড়ে এসেছি সেখানে নীল-সবুজ অলৌকিক দৃশ্যাবলি ঝকমক করে উঠছে। সুখের কথা, তারা আস্তে আস্তে আগের মত সমান হয়ে গেল। আর আমরা তাড়াতাড়ি আমাদের ঘোড়ার কাছে চলে এলাম।

‘বন্ধুরা, চলুন সকলে।’ আমার ঘোড়াকে ঘুরিয়ে নিয়ে চিৎকার করে বললাম।

সেই দিনই উপত্যকা দিয়ে দ্বিতীয় হ্রদ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। আসন্ন গোধূলি বেলায় গাছের শাখাগুলি আমাদের দিকে প্রসারিত হয়ে যেন ভয় দেখালো, যে আমাদের ধরে রাখবে।

রাত্রিতে খুব একটা সুস্থবোধ করলাম না। কিন্তু মোটের উপর সব কিছু ভালোভাবে শেষ হল।

সামান্য একটু বলতে বাকি আছে। ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদ’ সোভিয়েত ইউনিয়নকে এত পরিমাণ পারদ দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে যে আমাদের বিভিন্ন প্রকার শিল্পের সমস্ত দাবি পূরণ হচ্ছে।

সেইসঙ্গে আমি ‘পাহাড়ি আত্মার হ্রদের’ নির্ভীক অনুসন্ধিৎসু শিল্পীর দেওয়া সেই সঠিক পথনির্দেশ চিরকাল মনে রাখব।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

Leave a Reply to A Das Cancel reply