কেন এই বিজ্ঞানের সপক্ষে অখিল ভারত কণ্ঠস্বর

শুভাশিস মুখোপাধ্যায়

 



লেখক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, পরিবেশবিদ।

 

 

 

ভারতের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস প্রাচীন। ব্রিটিশ ভারতে এই বিজ্ঞান চর্চার সঙ্গে জাতীয় মুক্তির প্রশ্নটিও জড়িয়ে ছিল। ভারতের ব্রিটিশ অধীনতা যাঁরা মেনে নেননি এবং স্বাধীনতা লাভের জন্য সংগ্রাম করছিলেন, তাঁদের সঙ্গে দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানীদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ব্রিটিশ রাজের আওতার বাইরে থেকে আত্ম-নির্ভর বিজ্ঞানচর্চা কেমনভাবে করা সম্ভব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানীদের একাংশ আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানচর্চার পরিসর খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। এই প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ হিসেবে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশের জন্য যথাযথ বিজ্ঞানচর্চা, যা আধুনিক, যে বিজ্ঞানচর্চা দিয়ে আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের ধী ও মেধার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার করে এ দেশের মানুষের দুখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারব এবং পরাধীন জাতি হিসেবে আমরা বিজ্ঞানের জগতে, জ্ঞানচর্চার বিভিন্ন বিভাগে আমাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারব, এই লক্ষ্যে এই জাতীয়তাদাবী বিজ্ঞানীরা নিজেদের নিয়োজিত করেন। আমাদের সেই সময়ের পরাধীন দেশে বিজ্ঞানের, বিশেষত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বৃদ্ধি ও বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে স্থাপিত হয় ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস। ১৯১৪ সালের জানুয়ারি মাসে, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির চত্বরে দু দিন ব্যাপী এই বিজ্ঞান কংগ্রেসের সূচনা ঘটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে।

ভারতবাসীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হতে থাকে, ততই সমাজ ও জ্ঞানের জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী ধারণার প্রকাশ হিসেবে ভারতীয়দের অবদান রাখা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জাতীয়তাবাদী ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখেন যে সমাজে অন্ধ-বিশ্বাস, অবৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে এক বিরাট বাধার পাঁচিল তুলে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এবং বিজ্ঞানচর্চা দেশের, দশের সাধারণ সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। পরাধীন দেশের বিদেশি শাসকদের কাছে এদেশের মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার গুরুত্ব কম, বিদেশিদের সহায়তায় রচিত তাদের শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষাপ্রণালীতে এদেশের মানুষের সমস্যার কোনও গুরুত্বই নেই! পরম্পরা ও “দেশজ ধারা” নাম নিয়ে যেসব প্রাচীন বিষয় এদেশে দৃঢ়ভাবে গেঁথে ছিল, সামাজিক ক্ষেত্রে তার কিছু কিছু বিষয় রোধে সারা ভারত জুড়েই এগিয়ে আসেন জ্যোতিবা ফুলে, পেরিয়ার, রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের মতো মানুষরা। সমাজে অনেক কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠে, পরম্পরাগতভাবে চলে আসা অনেক ধারণা ধাক্কা খায়, সমাজে যুক্তিবাদী চর্চার আঙিনা উন্মুক্ত হয় অনেকটা। আমাদের দেশে অতীতে বিজ্ঞানচর্চার যে সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল, সেই চর্চার কোন্‌ কোন্‌ বিষয় আজও গ্রহণীয় আর কোন্‌ কোন্‌ অংশই বা বর্জনীয় তা নিয়ে চর্চা শুরু হয় এবং এ দেশের জাতীয়তাবাদী ধারায় উদ্বুদ্ধ বিজ্ঞানীবৃন্দ প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন গ্রহণীয় দিককে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালান। তাঁরা বলেন এদেশে বিজ্ঞানের যথাযথ চর্চা তখনই হতে পারে যদি আমরা বিজ্ঞান-সংস্কৃতির পুনর্নির্মাণ করতে পারি, যেসব প্রাচীন পরম্পরা বিজ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে সেগুলিকে বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলি থেকে এবং পাশাপাশি বৃহত্তর সামাজিক পরিসর থেকে নির্বাসন দিতে পারি।

এই বিষয়টি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে ভাবায়। তিনি দেখেন এদেশের বিজ্ঞানীদের বিদেশের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি, সর্বাধুনিক জ্ঞান-সমন্বিত বই বা গবেষণাপত্রের পত্র-পত্রিকার জন্য। বিজ্ঞানের নানা ধারার জ্ঞানের অধিকারী হয়ে তাঁদের অনেকেই চাইছিলেন আমাদের দেশের মানুষের সামনে যে সব জ্বলন্ত সমস্যা রয়েছে, বৌদ্ধিক বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সেই সব সমস্যার সমাধানে, জাতীয়তাবাদের টানে আত্মনিয়োগ করতে। কিন্তু বাধা আসছিল বিদেশি শাসকের বিজ্ঞান-নীতি, বিজ্ঞান-শিক্ষা ও প্রশাসনিক নানা দিক থেকে। ব্রিটিশ শাসনের সময়কালেই জাতীয় পরিকল্পনার রূপায়ণে জাতীয়তাবাদী শক্তির একটি ধারার পক্ষ থেকে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে আহ্বান জানানো হয় এবং তিনি ভবিষ্যতের স্বাধীন ভারতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষণা, শিক্ষা ও প্রশাসন কেমনভাবে সাজালে তা একই সঙ্গে বৌদ্ধিক জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কাজে কার্যকর হবে তার এক রূপায়ণ-যোগ্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা হাজির করেন।

বিজ্ঞানচর্চার এই বিশেষ দিশাকে কীভাবে ইংরাজ রাজত্বের মধ্যেও রূপায়িত করা যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ১৯২৯-এ ভারতে একটি বিজ্ঞান আকাদেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন এবং এলাহাবাদে এই আকাদেমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাটি আজও সক্রিয়।

১৯৪৭-এর পর স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষের ধারণা হয়েছিল যে, যে সব দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানীরা পরাধীন ভারতে অনেক বিরূপ অবস্থায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি চর্চা করেছিলেন এবং স্বাধীন দেশের জন্য একটি যথাযথ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতির রূপরেখা বানিয়েছিলেন, দেশ ও জাতি গঠনের সেই প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের মতামত গুরুত্ব পাবে। কিন্তু আমাদের দেশের এবং দেশের নাগরিকদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। বিদেশি শাসকদের যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতি এদেশে ১৯৪৭ সালের আগে চালু ছিল, তার কোনও বড় মাপের পরিবর্তন ঘটল না। দেশের সামনে উদ্যত সব গভীর সমস্যার সমাধানের জন্য সেই পরাধীন আমলের মতই বিদেশি প্রযুক্তি, বিদেশি ধারণা, বিদেশি সংস্থা এবং বিদেশি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরাই সমধিক গুরুত্ব পেলেন। এ দেশের বিশেষজ্ঞ দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানীদের ঠিক আগের জমানার মতোই পেছনের সারিতে স্থান হল। পাশাপাশি দুচারজন সেই সব বিজ্ঞানী সরকারের কাছে পাত্তা পেলেন, যারা সরকারের পক্ষে ধামা ধরে চলতে রাজি ছিলেন, এবং উদীয়মান ভারতীয় শিল্পপতিদের স্বার্থ রক্ষার স্কিমগুলিকে সমর্থন বা কার্যকর করতে উৎসাহী ছিলেন।

যত দিন গেছে, এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধিকার আমরা দেশের কর্তাদের ইচ্ছায় বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছি। যে বিজ্ঞানীরা আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের বর্জনীয় ও গ্রহণীয় বিষয়গুলি চিহ্নিত করে বিজ্ঞানচর্চার ধারাকে সমৃদ্ধ করতে চাইছিলেন, তাঁদের অবস্থা দিনে দিনে খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণার জগতে আমাদের দেশে বর্তমানে রাজত্ব করছে এক বিষময় আমলাতন্ত্র, যা ১৯৪৭-এর পূর্ববর্তী সময় থেকে ক্রমশ দৃঢ় থেকে আরও দৃঢ় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এই আমলাতন্ত্রের ফাঁসে বিজ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানীরাও যেন ফাঁসির দড়ির চাপ অনুভব করছেন। কৃষিক্ষেত্রে বিদেশি কম্পানির প্রযুক্তির চেয়ে উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবক বিজ্ঞানী বিনোদ শা-কে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞান-গবেষণাগারে আমলাতন্ত্র গলা টিপে ধরেছে, তাঁর গবেষণাখাতে অর্থ-বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে, তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশে বাধা দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের মতো মুক্তচিন্তার একটি বিদ্যাচর্চার বিষয়ের সঙ্গে এই আমলাতন্ত্রের বিরোধে ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চাকেন্দ্রগুলির দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্রকে সুস্পষ্টভাবে দায়ী করে বিজ্ঞানী বিনোদ শা ১৯৭০-এর দশকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। তারপর থেকে এই মৃত্যুর মিছিলের দৈর্ঘ্য ক্রমবর্ধমান। এ রাজ্যে আমরা গবেষক-চিকিৎসক টেস্ট টিউব বেবির সার্থক পথিকৃৎ ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পরিণতির কথাও জানি।

এদেশে যাঁরা সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ করেছিলেন, তাঁদের অনেক সামাজিক অসন্মান ও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল, কিন্তু পিছিয়ে-পড়া চিন্তার মানুষরা, যাঁরা এই সমাজ-সংস্কারকদের কাজের তীব্র সমালোচক ছিলেন, তাঁরা এই সব মানুষদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পথ নেননি। কিন্তু আজকে, ১৯৪৭-উত্তর ভারতবর্ষে চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আজকের সমাজে যাঁরা যুক্তিবাদ, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা প্রচার করেন এবং প্রাচীন ভারতের বর্জনীয় পরম্পরার সীমাবদ্ধতা এবং সেই সব চিন্তার বিজ্ঞান-বিরোধী দিক নিয়ে সরব হন, তাঁরা মধ্যযুগীয় ইনকুইজিসানের আদলে নিহত হন, কিন্তু তবুও তাঁরা বৈজ্ঞানিক পরম্পরা মেনে বলে ওঠেন, “ইপার সি মুভে”। এই ভারতে আমরা সেই মধ্যযুগীয় কায়দায় নিহত হতে দেখেছি দাভলকার-কে, পানসারে-কে, কালবুর্গি-কে। আরও অনেক মানুষের নামে মৃত্যু পরোয়ানা জাহির করেছে এই বিজ্ঞান-বিরোধী শক্তি।

আমরা ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে এ দেশে সিভি রামন, কেএস কৃষ্ণণ, আন্না মানি, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, বিশ্বেশ্বরাইয়া, বীরবল সাহানি প্রমুখ মানুষরা যে বিজ্ঞানচর্চার পরম্পরা নির্মাণ করে গেছেন, ভারতের প্রাচীন বিজ্ঞানচর্চার গ্রহণীয় দিকগুলিকে আরও বিবর্ধিত করেছেন, তাঁদের সেই কাজের পেছনে যে বিজ্ঞান-সংস্কৃতি কাজ করেছে, তাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে তাঁদেরকে পূজাবেদির বিগ্রহে পর্যবসিত করা হচ্ছে। যে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অধ্যাপক রামন তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের গোচরে আনার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি দেশীয় গবেষণাপত্রিকা, দেশীয় গবেষণার সেই ধারাকে পুষ্ট করার জন্য ১৯৪৭-এর পর থেকে কোনও জাতীয় সরকারই সুষ্ঠু ও যথাযথ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি।

ব্রিটিশ প্রশাসক মেকলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করার সময় বলেছিলেন যে এই শিক্ষার মাধ্যমে তাঁরা “কালো সাহেব”, অর্থাৎ তাঁরা যদিও আদতে এদেশেরই মানুষ, কিন্তু চিন্তা-চর্চায় আদব-কায়দায় তাঁরা হবেন মনে প্রাণে বিদেশি ব্রিটিশ চরিত্রের! এমন সব “শিক্ষিত” ব্যক্তিই “উৎপাদন” করবেন! সঙ্গতভাবেই দেশের মানুষ মনে করে ছিলেন যে ১৯৪৭-এর পর দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এই দোআঁশলা নাগরিক নির্মাণ প্রক্রিয়ার অবসান ঘটবে, কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক তার বিপরীতটাই। আমরা বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থা নকল করেছি আর দেশীয় শিক্ষার নামে ফিরিয়ে আনছি আমাদের পরম্পরার বর্জনীয় বিষয়গুলিকেই। চরক-শুশ্রুতের মতো এমন বৈজ্ঞানিক চিকিৎসাতন্ত্র আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে চিকিৎসাতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে আমাদের দেশে চালু হয়েছে “আয়ুষ”, যা একটি প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসাতন্ত্র বলে আমাদের দেশের ঐতিহ্যে কখনই স্বীকৃত ছিল না। যে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এই শহরে মধুসূদন গুপ্তের মতো মানুষরা এদেশের মানুষদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা শিক্ষার বাধা দূর করেছিলেন, তার বিপরীত পথে হেঁটে আজকে আমাদের দেশে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার রাস্তা প্রশস্ত করার আয়োজন সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।

আমাদের দেশে এই একবিংশ শতকে ডারউইন প্রবর্তিত বিবর্তনবাদকে খারিজ করে প্রজাতির উদ্ভব সম্পর্কে পৌরাণিক কাহিনি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কয়েকটি রাজ্যের সরকারি বইতে। বিদ্যালয়স্তর থেকে পাঠ্যপুস্তক মারফৎ অবৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চায় রাশ টানার চেষ্টা আমাদের চোখে না পড়েই পারে না। উচ্চশিক্ষা স্তরে গবেষণার সুযোগের সংকোচন, আর্থিক সাহায্য হ্রাস, গবেষক-শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া, অন্য দিকে গবেষকদের অর্জিত বৃত্তির টাকা অযৌক্তিকভাবে আটকে রাখা, এম টেক পড়ুয়াদের বৃত্তির ব্যবস্থা তুলে দেওয়া— এক কথায় উচ্চ শিক্ষায় সার্বিক মাৎস্যন্যায়ের জন্ম দিয়েছে। আর এই শূন্যতা “পূরণ”-এর জন্য আসছে প্রাচীন ভারতের পুরাণের কাহিনিতে বর্ণিত কল্পনা-প্রসূত বিভিন্ন বিষয়কে প্রাচীন ভারতের “বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার”-এর অলংকার পরিয়ে তাকে বিজ্ঞানের মোড়কে জনসমক্ষে পেশ করার প্রবণতা। সমাজে বিজ্ঞান-মনস্কতা পেছনের দিকে যাত্রা করলে অবিজ্ঞান ও অজ্ঞানতা-প্রসূত ভিত্তিহীন সংস্কার জনমানসে চেপে বসে।

প্রাচীন লোকগাথাকে ঐতিহাসিক মর্যাদা দিয়ে অবিজ্ঞানের যে প্রচার ও প্রসার সাম্প্রতিক কালে শুরু হয়েছে, তা দেখে আমরা, বিজ্ঞান গবেষক ও বিজ্ঞান কর্মীরা শঙ্কিত। বর্জনীয় প্রাচীন পরম্পরার জয়গান এবং তার বিপরীতে প্রকৃত বিজ্ঞান গবেষণার সুযোগের সংকোচন এবং মুক্তচিন্তা, অন্যভাবে ভাবা মানুষদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চা কেন্দ্রগুলির বিরূপ মনোভাব এবং বিজ্ঞান-বিরোধী শক্তিগুলির আস্ফালন এবং হত্যা ও হুমকি— এ সবের বিরুদ্ধেই বিজ্ঞানীদের কণ্ঠস্বরকে সংহত করার জন্যকিছু বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান সংগঠন (সেস্টাস, নেহাই, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তবাদী সমিতি, পরিপ্রশ্ন পত্রিকা গোষ্ঠী) এবং কয়েকজন পেশাদার বিজ্ঞানী (ডঃ শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, ডঃ গুরুপ্রসাদ কর, ডঃ পার্থ চক্রবর্তী, প্রমুখ) শ্রদ্ধেয় সমর বাগচীর সভাপতিত্বে খুবই ক্ষুদ্র আকারে একটি প্রতিবাদসভায় মিলিত হন। সেই সভার সাফল্যই আমাদের উদ্বুদ্ধ করে আরও বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থাকে এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যুক্ত করে আর একটু বৃহদাকারে সর্বভারতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানকর্মীদের একটা সমাবেশ করার অভিমুখে। তার ভিত্তিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।

এই উদ্যোগে বিজ্ঞান-মনস্ক সকলকে সামিল হওয়ার আহ্বান রইল।

 

বিজ্ঞানের সপক্ষে অখিল ভারত কণ্ঠস্বর
৫-৭এপ্রিল ২০২০
৫ এপ্রিল: উদ্বোধন — ৮বি বাস স্ট্যান্ডের পাশে
যাদবপুর। বিকাল ৪টা।
৭ এপ্রিল: অন্দর অধিবেশনত্রিগুণা সেন অডিটরিয়াম, যাবি ক্যাম্পাস
যাদবপুর। ১১-৪টা

 

হে হে বাচ্চু, আমায় চিনলিনে রে–
এনেছি যে সাথে করে দালালির পণ,
রাষ্ট্রের সম্পদ তাই করি বিপণন!
লোকে ভাবে পাকিখেকো তেজি চৌকিদার,
দেশ বেচে ফাঁক করে দিতেছি দেদার!!

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...