ওসিপ ম্যান্ডেলস্তেমের কবিতা

ওসিপ ম্যান্ডেলস্তেমের কবিতা | শতানীক রায়

শতানীক রায়

 

ওসিপ ম্যান্ডেলস্তেম (জানুয়ারি ১৫, ১৮৯১-ডিসেম্বর ২৭, ১৯৩৮) রাশিয়ার ওয়ারসোও শহরে জন্মেছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্ট রাশিয়ান কবি এবং প্রাবন্ধিক। তিনি অ্যাকমিস্ট স্কুল অব রাশিয়ান পোয়েট্রি-র একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিশিষ্ট মতে তিনি বিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। কবিতায় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের জন্য তৎকালীন স্তালিন সরকারের দ্বারা অত্যাচারিত এবং শোষিত হয়েছিলেন। শেষজীবন ভোরোনেজে নির্বাসনে কেটেছিল। আজীবন পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রী নাদিয়া ম্যান্ডেলস্তেমকে। সাইবেরিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতার বই হল: ‘স্টোন’, ‘ত্রিস্তিয়া’, ‘ভোরোনেজ নোটবুকস্‌’ ও অন্যান্য। উল্লেখযোগ্য গদ্যের বই: ‘নইজ অব টাইম’, ‘জার্নি টু আর্মেনিয়া’ ও অন্যান্য। এখানে অনূদিত কবিতাগুলো ওঁর ‘ত্রিস্তিয়া’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

ত্রিস্তিয়া

[ Tristia]

এটা ভীষণভাবে আমার এবং খুবই পরিচিত।  তাহলে আমি
কী করব এই ঈশ্বর প্রদত্ত মাংস ও রক্ত দিয়ে?

বেঁচে থাকা আর নিশ্বাসের জন্য এই আনন্দধারা খুব শান্ত,
এগুলোর জন্য আমার কৃতজ্ঞতা তবে কে গ্রহণ করবে?

এই অসীমের পাত্রে কেউ লক্ষ করলে দেখতে পাবে
আমার শ্বাসপ্রশ্বাসের অবশিষ্টাংশ আর আমার উষ্ণতা।

অতএব এটা যে-ছাঁচ বহন করে সেটা আমারই
যা আমার কাছেও ইদানীং অজানা।

ধুয়ে মুছে যেতে দাও, সারাদিনের টানাপোড়েনকে—
এই সুন্দর ছাঁচটাকে আর পেরোনো হবে না।

 

নীরবতা

[Silentum]

সে খুব একটা শান্ত হয়ে জন্মায়নি
সে উভয়ই, সঙ্গীত এবং শব্দ,
যা পৃথিবীর বেঁচে থাকাকে সংযুক্ত করে,
অভঙ্গুর আর স্থায়ী।

এই সমুদ্র শান্তভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়, জড়ানো,
কিন্তু তীব্রতার সঙ্গে জ্বলজ্বল করে দিনের সূর্যালোকে।
স্প্রের ফেনা থেকে উদ্ভুত এই লাইলাক ফুল
একটি ধূসর নীল রঙের ফুলদানিতে আছে।

ও, আমার ঠোঁটজোড়া যদি কোনওদিন
আমার কাঙ্ক্ষিত আদিম মৌনতা ধারণ করতে পারে—
যেটা অমলিন স্ফটিকের গানের মতো,
যার পবিত্রতা— জন্ম থেকে বাহিত।

ফেনা হয়ে থেকে যাও, ও, আফ্রোদিতি,
আর, সঙ্গীত থেকে কোনো শব্দকে বিচ্ছিন্ন হতে দিও না,
হৃদয়কে লজ্জিত হতে দাও হৃদয়ের জন্য,
সঙ্গে ঘনভাবে জুড়ে যাওয়া জীবনের সূচনাগুলো!

 

একটি চাপা কান্না
দু-টি আঁখি কোটর দৃঢ়ভাবে খোলা,
ফুলগুলো গজিয়ে ওঠে ফুলদানিতে
আর বাতাসে তার দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়

ঘর তিন মিটার অবধি ভরে ওঠে
স্বপ্নহীনতায়— তার সুগন্ধি ওষুধে!
এই লিলিপুটের বিভ্রম
ঘুম কেড়ে নিতে পারে।

অল্প মদ এক টুকরো কেক—
একটু সূর্যালোকিত মে মাস বরং—
আর একদম রোগাটে আঙুলগুলো বরফ শাদা,
শেষ অবধি বেঁচে থাকে, সটান জেগে ওঠে।

 

কীভাবে এই ঘোমটা আর চকচকে গাউনগুলো
আমাকে লজ্জায় আরও খাটো করে!

একটি বিখ্যাত বিপর্যয়
আসছে ট্রোজেনকে ধ্বংস করতে,
এই রাজকীয় সিঁড়িগুলো
লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠবে।

….
….

এবং একটি কালো সূর্যের উদয় হবে
মায়ের আকাঙ্ক্ষাকে আলোকিত করার জন্য।

যদি শুধুই দ্বেষ আমার ভেতর গড়ে উঠেছিল—
কিন্তু দেখো, সত্য নিজের পাখা মেলে আমাকে ফেলে গেল।

ফেড্রা ওই কালো শিখা জ্বলছে
দিন পর দিন,
একটি শিখা একটি মৃত্যুর জন্য, কবরের আশায়
দিনের পর দিন।
হিপ্পোলিটাস, তোমার মায়ের থেকে সাবধান:
ফেড্রা হল রাত যে তোমাকে দেখে চলেছে
দিনের পর দিন।

আমি সূর্যকে কবলে এনেছি আমার কালো ভালোবাসা দিয়ে।
শুদ্ধ মৃত্যু ঠোঁট দুটোর কাছে ঠান্ডা।

আমরা ভীত। রানি
আর আমরা ভয় পাই দুঃখ প্রকাশ করতে।
থিসাস তাড়িত করেছে,
সেই রাত ওকে পরাস্ত করেছে,
আর আমরা শোকগাথা গাইতে গাইতে
মৃতের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছি
কালো সূর্যকে শান্ত করতে
যা রুষ্ট এবং ঘুমোতে নারাজ।

 

[ম্যারিনা সোয়েতায়েভা-কে]

একটি স্লেজগাড়িতে খড় দিয়ে আবৃত।
আমাদেরই বিছানো মাদুর বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের আবৃত করছে।
আমরা বিস্তৃত মস্কো দিয়ে ঘুরে আসছি
স্প্যারো পর্বতমালা থেকে আমাদের জানা কোনও ছোট গির্জায়।

উগলিচে বাচ্চারা খেলেছে নাকেলবোনস্‌।
রুটি বানানোর গন্ধ।
আমাকে আলগা মাথায় রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে গেছে।
গির্জার ভজনালয়ে তিনটে মোমবাতি জ্বলছে।

তিনটে বাতি নয় কিন্তু তিনটে সাক্ষাৎ,
ঈশ্বরের কৃপাধন্য ছিল একটি।
চতুর্থ আর কখনও হবে না। রোম অনেক দূর।
আর ও কখনও সেটা ভালোবাসেনি।

স্লেজগাড়িটি এগিয়ে গেল এবড়োখেবড়ো কালো রাস্তা দিয়ে।
মানুষ হাঁটার জন্য ফিরে আসছিল।
রোগা রুশ চাষি আর বৃদ্ধ নারীদের ছাড়িয়ে
দরজার সামনে অস্থিরভাবে।

কিছুটা দূরে পাখিদের রাত জেগে উঠল।
বহনকারী হাতগুলো অসার হয়ে এসেছিল।
তারা সারেভিচকে আনছিল। শরীরটা হিমশীতল হয়ে উঠল।
আর তারা খড়ে আগুন ধরাল।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. ত্রিস্তিয়ার কিছু কবিতা আমি পড়েছি। অনুবাদ ভাল হয়েছে। যেগুলো পড়িনি তার অনুবাদগুলো পড়ে ওনার লেখার মতই লাগলো। কাজেই ভাল কাজ।

Leave a Reply to Rupaj Cancel reply