বৃষ্টির কাছে নিচু হয়ে আছি

বৃষ্টির কাছে নিচু হয়ে আছি | সুদেষ্ণা ঘোষ

সুদেষ্ণা ঘোষ

 

রাস্তা দিয়ে ঠিক এসময় রোজ একটা মোটরবাইক তিরবেগে চলে যায়।
কেঁপে ওঠে জামার বোতাম, প্রজাপতি ক্লিপ আর ঘুমের চোখের মণি
কেঁপে ওঠে স্বপ্নের রাজপথ
যেখানে রোজ সন্ধেয় একে অন্যকে পেরিয়ে যায় আলাদা-আলাদা মৌন মিছিল।
তাদের কারও-কারও হাতে স্মৃতি হারানোর ওষুধ, কারও হাতে দম দেওয়া পুরনো ঘড়ি।
দূরের শহরে রাংতায় জড়ানো বিকেলে হেসে ওঠো তুমি, হাসতেই থাকো
তারপর দু’হাতে মুখ ঢেকে থাকো অনেকক্ষণ।

 

গানের কথা ভাবো? না আমাদের যৌথ অভিমান?
আমি অবাক হয়ে শুয়ে থাকি প্রাচীন ভারী পাথুরে বালিশ আঁকড়ে।
আর ব্ল্যাকবোর্ড থেকে ঝরে যায় তীব্র চকের গুঁড়ো।
মেঘ ক্রমশ নিচু হয়ে ছুঁয়ে ফেলতে চায় সামনের বাড়ির ছাদ
কিছু মনে পড়ে না কতক্ষণ।
তারপর মনে পড়ে তুমি ছিলে আর আকাশি রংয়ে ভরে ছিল ঘরের দেওয়াল।

 

যখনই গান ভেসে আসে দূরের মাইকে
ভাবি আর কতদিন এভাবে চলবে?
আর কতদিন স্কুলবাড়ির জানলা ঝড় এলেই এভাবে আছড়ে পড়বে?
আর কতদিন গাছেরা ঢেকে রাখবে মৃত ইতিহাসের গল্প?
আর কতদিন গান শুধু গান সেলাই করে যাবে আমাদের এই রাত আর সেই রাতের ফাটল।
কতদিন ধরে শুধু সরু গলি আর পুরনো সাইনবোর্ড খুঁজে তুমি এগিয়ে যাবে
হাত বাড়াবে দুমড়ে যাওয়া স্বপ্নের দিকে?

 

স্বপ্নকে দু’আধখানা করে একটা মোটরবাইক চলে যায় তারস্বরে
তারপর অনেকটা স্তব্ধতা…
সেইখানে নেমে আমি গনগনে বিক্ষোভের কথা ভাবি কখনও।
কখনও-সখনও ভাবি একদিন গাছে ঘেরা নিরিবিলি গোলাপি বাড়িতে ফেরার কথাও
আমার আঙুল কামড়ে ধরে ছোটবেলার আংটি।
বিদ্রুপে ফেটে পড়ে সুগন্ধের হাত ধরে তরতরিয়ে বড় হয়ে ওঠা কাচঘেরা কফিশপ।
একটা ল্যাম্পপোস্টের গায়ে বিশাল মই রেখে কারা আকাশের দিকে উঠে যেতে চায় রোজ বিকেলে!

 

তবু গান ভেসে আসে দূরের মাইক থেকে
ভেসে আসে ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া জামা।
ভেসে আসে বুড়ো রিকশাওলা, ঘোর সূর্যাস্তে একা বাড়ি ফেরা
ভেসে আসে রংচঙে খেলনার ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ আটকে যাওয়া।
একটা মনাস্ট্রির অন্ধকার ভালবেসে তুমি ফেরোনি কখনও, সেকথা বাড়ির লোক কখনও কি বিশ্বাস করবে?
বিশ্বাস করবে আমাদের মাঝখানে আজও ব্রিজ হয়ে রয়েছে একটা ঘোর লাল চিৎকার?
যে দিনগুলো চিরকাল লুকিয়ে থাকতে চেয়েছে সিপিয়া টোনের আদরে,

ভেসে বেড়াতে চায় গান বা তুলোর মতো।

বৃষ্টি নামলে শুধু সব ঢেকে যায়।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. পলকা,ভারহীন অথচ নিমগ্নতার প্রশান্তি ছেয়ে আছে কবিতাগুলির শরীর।

Leave a Reply to Hindol Cancel reply