গত কয়েকদিন ধরেই খবর পাচ্ছিলাম, ভাল নেই নবনীতাদি। হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বহুদিন ধরেই, তার পাশাপাশি শরীরে বাসা বেঁধেছিল দুরারোগ্য কর্কটরোগ। কিন্তু শারীরিক সমস্যাকে বরাবরই তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি, তাই তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধদের মতো আমরাও ভরসা করে ছিলাম, কেটে যাবে মেঘ, নিশ্চয়ই সেরে উঠবেন তিনি। অক্টোবরের শেষের দিকে শরীর যখন বেশ খারাপ, তখনও ভেবেছিলাম, নিশ্চয়ই কোনও একটা মিরাকল ঘটবে… ক’দিন পরই দেখব হয়তো আবার ছুটছেন কোথাও বক্তৃতা দিতে, কিংবা বেড়াতে। বরাবরই তো তেমনটাই দেখে এসেছি আমরা। এমনকী এই সেদিনও মারণব্যাধিকে নিয়ে রসিকতা আর ইয়ার্কিতে ভরা ওঁর লেখাটা পড়ে মনে হয়েছে, এবার নিশ্চয়ই ল্যাজ গুটিয়ে পালাবে মৃত্যু… এত হ্যাটা হওয়ার পরে আর এ পথ মাড়াবার সাহস হবে না তার। কিন্তু, তার পাশাপাশিই কানে আসছিল একেবারে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে ওঁর দুই মেয়ের উদ্বেগ প্রকাশ… মায়ের শরীরটা সত্যিই খারাপ… খুব খারাপ…
প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়, এমন ধারণার অথচ একেবারে বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে, ডঙ্কা বাজিয়ে চলে গেলেন নবনীতাদি। অফুরান জীবনীশক্তি দিয়ে অসুখের বিরুদ্ধে যে বাঁধ বেঁধে রেখেছিলেন সারাজীবন, মৃত্যুতেও তা অটুট রয়ে গেল। নিকটজন হারানোর বেদনার মধ্যেও দেখলাম, জীবন কীভাবে মৃত্যুর বিরুদ্ধে জিতে গিয়ে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ে। যাঁরা বলছেন, নিভে গেল ভালোবাসা বাড়ির বারান্দার আলো… তাঁরা, তাই, ঠিক বলছেন না। বেদনায় কালো হয়ে আসা আকাশের নীচে চোখের জল মুছে সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছেন, সে বারান্দার আলো তাঁর মুখের সবটুকু হাসি ধরে রেখে আরও ঝলমলে হয়ে উঠছে…
বড় সাহিত্যিক ছিলেন না কি তার চেয়েও বড় চিন্তক; অধ্যাপকের এষণা নাকি বালকের বিস্ময়াবিষ্ট ভ্রামণিক মন, কোনটি ছিল তাঁর প্রধানতর সম্পদ– সেসব বিশ্লেষণের সময় রইল ভবিষ্যতে। আপাতত স্মৃতি-উদযাপনের সময়। স্মৃতি, যা বিয়োগব্যথায় মলিন হয়েও তাঁর প্রাণের ঐশ্বর্যে আলোময়।
চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের বিশেষ বুলেটিনে রইল সেই স্মৃতিরই উদযাপন। সংক্ষিপ্ত, অথচ মর্ম ভেঙে উঠে আসা লেখাগুলি খুব গোছানো নয়… হয়তো বা আবেগের ঝড়ে ঈষৎ এলোমেলো… কিন্তু লেখাগুলির তাৎক্ষণিকতাই তাদের সম্পদ বিবেচনায় আমরা একেবারে যেমন চেহারায় পেয়েছি তেমন চেহারাতেই প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে লেখাগুলি তৈরি করে দিয়েছেন অঞ্জলি দাশ, সৌমিত্র দস্তিদার, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, মৃণাল চক্রবর্তী, যশোধরা রায়চৌধুরী ও কণিষ্ক ভট্টাচার্য।…
সূচি:
আমি কেন কথা রাখব? — অঞ্জলি দাশ
আমার তো একটা ছবিও নেই নবনীতাদির সঙ্গে… — সৌমিত্র দস্তিদার
আজ, চতুর্থী — চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
ছেলেমেয়েগুলো যেন থাকে দুধেভাতে… — মৃণাল চক্রবর্তী
মেধার করাত — যশোধরা রায়চৌধুরী
রেশমি সুতোর পাকে পাকে — কণিষ্ক ভট্টাচার্য