এই ধর্ষণভূমি…

ধর্ষণ বা গণধর্ষণের বেশ কিছু ঘটনা পরপর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ধর্ষিতাকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলার ঘটনাও। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ধর্ষণের মরশুম শুরু হল নাকি?

তাঁদের জানাই, ধর্ষণের মরশুম আসলে বছরভর চলে। পরিসংখ্যান তাই বলে। কিন্তু একটি নির্মম ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হয়ে পড়লে বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদমাধ্যম আরও অনেক ধর্ষণের কাহিনি কভার করার তৎপরতা দেখায়।

কুখ্যাত উন্নাও-এর কথাই ধরা যাক। পুরো দেশ বাদ দেওয়া যাক, এমনকি পুরো উত্তরপ্রদেশও বাদ থাক। উত্তরপ্রদেশের একটি মাত্র জেলা উন্নাও। সেখনে ১১ মাসে ৮৬ টি ধর্ষণ ঘটেছে। ধর্ষণের চেষ্টার রিপোর্ট লেখাতে গেলে পুলিস বলছে, চেষ্টার জন্য এফআইআর নেবে না, ধর্ষণ হলে তবে যেন আসা হয়৷ যৌন হেনস্থায় যে তেমন জেলার মেয়েরা অধিকাংশই থানায় যাবেন না, সে তো জানা কথাই৷ তাও নথিভুক্ত সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের কেস প্রায় দুইশত, ওই ১১ মাসেই, ওই উন্নাওতেই৷

প্রিয় পাঠক, এবার ভাবুন, সারা উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাটা কত। তারপর ভাবুন, সারা দেশে সংখ্যাটা কত হতে পারে। এইবার হিসেব করে বলুন, অত এনকাউন্টারের গুলি আছে তো? ফাঁসির জন্য অত গজ দড়ি?

গত ৭ তারিখের লোকাল ট্রেনের ‘ধর্ষণকাল‘ নিবন্ধে ঘোষণা করা হয়, ধর্ষণ নামক এক জটিল বাস্তবতার সব স্তর যেহেতু একটি নিবন্ধের মধ্যেই ধরে ফেলা সম্ভব নয়, তাই শীঘ্র সেই উদ্দেশ্যে এক স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে।

শুধু ধর্ষকের শাস্তি– এনকাউন্টার বা ফাঁসি– নিয়ে বিতর্ক উস্কে দেয়নি এই বিশেষ সংখ্যা। অপরাধ, অপরাধী ও নির্যাতিত সকলকেই মর্মমূলে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছে৷ খতিয়ে দেখেছে সরকারের ভূমিকা। ডুব দিয়েছে ধর্ষকের মনস্তত্বে। বিশ্লেষণ করেছে, কীভাবে ধর্ষণের বীজ নিহিত আছে সাধের সংস্কৃতিতে।

এই বিশেষ সংখ্যায় ভারত-সরকারকে খোলা চিঠি লিখেছেন দোলন গাঙ্গুলি। ধর্ষক-মনের একটা লেখচিত্র এঁকেছেন কৌশিক দত্ত। সমগ্র পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ধর্ষণের উৎসবিন্দুগুলিকে চিহ্নিত করেছেন শতাব্দী দাশ। ধর্ষণ ও নারীর শুচিতা নিয়ে লিখেছেন স্রোতা দত্ত আচার্য। নারী পণ্যায়ণ নিয়ে লিখেছেন অম্লানকুসুম চক্রবর্তী। মৃত্যুদণ্ডের অসারতা দেখিয়েছেন সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। এনকাউন্টারের ভোজবাজি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন সত্যব্রত ঘোষ। রেস্টরেটিভ জাস্টিসের খসড়া এঁকেছেন দেবারতি সরকার।

প্রিয় পাঠক, এ সংখ্যার লক্ষ্য আপনাকে অস্বস্তিতে রাখা, রূপকথাসম পরিণতিতে আশ্বস্ত হতে বাধা দেওয়া, আলোচনা ও পুনরালোচনায় বাধ্য করা।

পড়তে থাকুন। অস্বস্তিতে থাকুন।

 

সূচি:

ধর্ষণ হল নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন — দোলন গঙ্গোপাধ্যায়

অন্ধকারের ইতিবৃত্ত— ধর্ষকের মনোজগৎ — কৌশিক দত্ত

সশক্ত পুলিশ আর মজবুত আইন চাই, মৃত্যুদণ্ড নয় — সত্যব্রত ঘোষ 

ধর্ষণের সংস্কৃতি আর ন্যায়ের গাল-গল্প — শতাব্দী দাশ

ডিউ প্রসেসের পরে — দেবারতি সরকার

পিতৃতন্ত্র ও যৌন শুচিতা — স্রোতা দত্ত আচার্য

‘পণ্য’ নারী, এনকাউন্টার আর কিছু উটকো প্রশ্ন — অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

ধর্ষণ: ফাঁসি নয়, চাই নিরাপত্তার সমানাধিকার — সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়

Terms and Conditions Privacy Policy Contact Us Cancellation and refund Shipping and delivery
%d bloggers like this: