বইমেলা ডেইলি প্যাসেঞ্জার
বইমেলা বলতে এখন শুধু স্মৃতির গম্বুজ, বলছিলেন মধ্যবয়সি মানুষটি। বইমেলা বলতেই শুধু পুরনো বন্ধুদের মুখ, যাদের অনেকেই এখন আর নেই, বা থাকলেও মেলামুখী নন তত আর। অভ্যেসবশত তিনি যান এখনও, প্রতিবছরই, কিন্তু কেন যান নিজেই অনেকসময় তার উত্তর খুঁজে পান না। কেন পান না? বয়স গিয়েছে চলে? তাঁরই আর এক বন্ধু, মেলা শুরুর দু’দিন আগে দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে বসার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে যান, গত সাড়ে তিন দশকে এই প্রথমবার তিনি মেলায় যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছেন না আর তেমন। তাই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমন উলটোবাগে পালিয়ে চলা? কেবল নিজের মুদ্রাদোষে?
এর একেবারে বিপ্রতীপ ছবিও চোখে পড়ে, সোশ্যাল মিডিয়াতেই। কত অসংখ্য তরুণ ভাষাকর্মী কবি ও গল্পকার, কিংবা হয়তো ততদূর তরুণ নন কিন্তু এখনও বিখ্যাত হওয়ার সময় যায়নি যাঁদের – প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নিজের প্রকাশিতব্য বা সদ্যপ্রকাশিত বইটি বা বইগুলির প্রচ্ছদ সাজিয়ে দিচ্ছেন নিজের (এমনকী অন্যদেরও) দেয়ালে… কত দূরদূরান্ত থেকে লেখক-শিল্পীরা প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছেন মেলার মাঠেরও আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় – তাঁদের কলধ্বনিতে মেলা শুরুর আগেই মেলা শুরু হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে-ইনস্টাগ্রামে। কে কখন কোন স্টলে থাকবেন, ইনবক্সে-মেসেঞ্জারে-হোয়াট্স্যাপে জানাচ্ছেন বন্ধুদের – এই উচ্চকিত উৎসাহের মধ্যেও নিশ্চয়ই আন্তরিক সত্য রয়েছে কোনও। আর এমনই সব পরস্পরস্পর্ধী সত্যের ধুলোর আড়ালে হ্যালোজেনের আলোর মায়ার ওপারে কোথাও যেন জেগে উঠছে শিশির-শুকিয়ে আসা শেষশীতের পরাবাস্তবও – ময়দান থেকে পার্ক স্ট্রিট থেকে মিলনমেলা থেকে সল্টলেক – বইমেলার এই পরিবর্তনশীল ভৌগোলিকতা যেন বা তার চরিত্রবদলেরও প্রতীক হয়ে থাকছে অলক্ষ্যে।
কেউ বলছেন, বইমেলায় তো প্রকাশক ও পুস্তকবিক্রেতাদেরই জন্মগত অধিকার, কিন্তু তাঁদের পাশাপাশি টিআরপি-প্রত্যাশী টিভি-চ্যানেলের অ্যাঙ্কর-অ্যাঙ্করিণীরাও বুম হাতে যেভাবে বাজারদখলে নেমে পড়েছেন তা কদাচ মেনে নেওয়া যায় না। কেউ আবার বলছেন, গত বেশ কয়েকবছর ধরে যেভাবে পরিকল্পনামাফিক লিট্ল ম্যাগাজিনগুলিকে কোণঠাসা করে ফেলার চক্রান্ত চলছিল আজকের বইমেলার এই সর্বগ্রাসী বাণিজ্যিকীকরণ তারই স্বাভাবিক ও স্বতোৎসারিত ফল – কর্পোরেটের মেডুসা তার সহস্র ফণা মেলে সাহিত্য-সংস্কৃতির শেষকৃত্য করতে নেমেছে। কিন্তু এরই মধ্যে, এখনও যখন বাদুড়িয়া থেকে পাথরপ্রতিমা থেকে করিমপুর থেকে বালুরঘাট থেকে একফর্মার কাগজ ঘাড়ে করে মেলার মাঠে পৌঁছচ্ছেন ধুলিমলিন অখ্যাতনামা তরুণেরা, তাঁদের চোখেমুখে জ্বলতে থাকা জোটবাঁধা উদ্দীপনার ঝাড়লণ্ঠন তো বিস্তৃততর এক অন্য গেরিলা যুদ্ধের কথাই বলছে। আত্মপরিচয়ের গভীর সঙ্কট পার হয়ে অন্ধকারের অন্য কোনও গভীর উৎস থেকে যে আলো ক্রমে আসছে, আহা, কোথা থেকে আসছে অনির্বচনীয় সেই আলো?
… মেলার মাঠের বহুস্তর সত্যকে ছুঁয়ে-ছেনে আলোর সেই উৎসে পৌঁছতেই চারনম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে চালু হল বইমেলা ডেলি প্যাসেঞ্জার। এ এমন এক দৈনিক বিভাগ যেখানে মেলার মাঠের প্রতিদিনের খবর ও খবরপারের ম্যাজিক-বাস্তবতাকে নিজেদের অভিজ্ঞতায় ধরে ফেলতে হাজির থাকছেন একঝাঁক তরুণ তুর্কি – গড়ে উঠছে নতুন ধরনের এক স্বপ্ননির্মাণ। মেলার মাঠের পেরেক-ঠোকা প্রথম দিন থেকে ঘণ্টাধ্বনিময় শেষ রাত্রির প্রতিটি মুহূর্ত তাদের যাবতীয় নিজস্ব অন্তর্ঘাত ও উন্মোচন-সমেত অসহায় ধরা পড়ে যাচ্ছে তাঁদের জাদুকলমে।
আসুন, তবে তাঁদের সঙ্গে আপনাদের দেখা হোক। যে ছেলেটি শান্ত আর যে মেয়েটি আছাড়িপিছাড়ি, তাদের দেখা হোক সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। বইমেলা ডেলি প্যাসেঞ্জারে চড়ে আপনিও সামিল হোন তাঁদের উড়ানে। জোট বাঁধুন। তৈরি হন।
প্রতিদিন নতুন উড়ান, গ্রাউন্ড-জিরো থেকে, সরাসরি, কেবলমাত্র চারনম্বর প্ল্যাটফর্মে…
বইমেলা ডেইলি প্যাসেঞ্জার ২০১৯
সম্বিত বসু, যশোধরা রায়চৌধুরী, সুরজিৎ সেন, কৌশিক লাহিড়ী, সৌমিত দেব, শুভ্রদীপ চৌধুরী, চিরশ্রী দাশগুপ্ত, রিমি মুৎসুদ্দি, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী দাশ, স্বর্ণেন্দু সরকার, বেবী সাউ, মধুময় পাল
বইমেলা ডেইলি প্যাসেঞ্জার ২০১৮
শোভন ভট্টাচার্য, প্রিয়ক মিত্র, দেবব্রত শ্যামরায়, সৌমিত দেব, সোহম দাস, দেবব্রত কর বিশ্বাস, কস্তূরী সেন, যশোধরা রায়চৌধুরী, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য, বিপুল দাস, বল্লরী সেন, সুস্নাত চৌধুরী, স্বর্ণেন্দু সরকার, কৌশিক বাজারী, অলোকপর্ণা, মধুরিমা দত্ত, উর্বা চৌধুরী, অন্তরা সেনগুপ্ত ও মিঠুন চক্রবর্তী, সোমেন বসু, অভীক ভট্টাচার্য