রিজার্ভড বগি । দ্বিতীয় বর্ষ । মে ২০১৮-এপ্রিল ২০১৯

চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতি মাস পয়লায় ছাড়া মেল ট্রেনের রিজার্ভড বগি বা মলাট ভাবনা। দ্বিতীয় বর্ষ, মে ২০১৮-এপ্রিল ২০১৯। এই বছর আমাদের রিজার্ভড বগি-তে এসেছে বাংলা লিটল ম্যাগাজিন, পরিবেশ, ভালো খবর, ফুটবল ও জীবন, বিশ্ব উদ্বাস্তু সমস্যা, বাংলা শারদসাহিত্য, শিশু, চলচ্চিত্র, সন ২০১৮, মৃণাল সেন, জনস্বাস্থ্য এবং ২০১৯-এর আসন্ন সাধারণ নির্বাচন

সূচি

ভোটের লাইনে ভারত

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, ২০১৯

…কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে ঘৃণা ও হিংসার বিষবৃক্ষ নির্মাণে শাসকদল ও তাহার সাঙ্গপাঙ্গদিগের যে আশ্চর্য দক্ষতা সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে গত কয়েক বৎসরে পল্লবিত ও ফুল্লকুসুমিত হইয়া উঠিয়াছে, তেমনটি আগে কখনও দেখা যায় নাই। তদপেক্ষা উদ্বেগের বিষয়, এই ঘৃণা ও হিংসার ভিত্তিটি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার, এবং প্রকৃতিগতভাবে সাম্প্রদায়িক।… এই হিংসার সংস্কৃতি, এই অপরায়নের ঐতিহ্য, এই সর্বব্যাপী ঘৃণার বাতাবরণ আমাদিগের নয় – কদাচ ছিল না। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের অনন্যতা ও অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য কী, তাহার উত্তরে এই ঘৃণার কথাই সর্বাগ্রে উল্লেখ করিতে হয়।

লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ রাখিয়া আমরা গত কয়েক মাস ধরিয়া বেশ কিছু লেখা নিয়মিত প্রকাশ করিয়া আসিতেছি। তথাচ আমাদিগের মনে হইয়াছে, দেশের এই মুহূর্তের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষিৎটি, হিংসা-ক্লেদ-কালিমা-ক্লিন্নতায় কীর্ণ তাহার বহুস্তর বাস্তবতা-সমেত, সানুপূর্ব নথিবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। সেই মর্মেই এই সংখ্যার মূল ভাবনা, ‘ভোটের লাইনে ভারত’-এর অবতারণা।…


মোদির ফাঁদে পা দেওয়া নয়, বিকল্প ইতিবাচক ভাষ্য গড়ে তুলুন বিরোধীরা -- উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বপ্ন বেচে ক্ষমতায় এসে শুধু ভাঁওতাই দিয়েছেন মোদি -- প্রশান্ত ভট্টাচার্য
চাষির ভাঁড়ে মা ভবানী, দুর্গ গড়ছি মহাকাশে -- অমিত দাশগুপ্ত
কৃষি বিপ্লব -- সফিউল
এরা যত বেশি জানে, তত কম মানে… -- রাজদীপ্ত রায়
ন্যায় যোজনার ন্যায়-অন্যায় -- ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য
ভারতের গণতন্ত্র বনাম নজরদারি -- সুশোভন ধর
অচ্ছে দিনের পাঁচ বছর : কী বলছে পরিসংখ্যান? -- সৌভিক ঘোষাল
ভোট কী যদি জানতে চাস, ভোটের ‘আমরা’টাকে আগে ভালো করে বুঝে নিস -- সোমেন বসু

দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বাদশতম যাত্রা, ১লা এপ্রিল, ২০১৯

 

জনস্বাস্থ্য — অধিকার ও প্রাপ্তি

এত ‘ভালো’-র গভীরে গেলে সমস্যার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়। নবজাতক মৃত্যুর হারে আমাদের যতটা উন্নতি, তার থেকে ঢের বেশি উন্নতি করতে দেখি শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশকে। দেখি, আমাদের দেশের শিশুদের মধ্যে শতকরা ৪৩ ভাগের ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম, যেখানে পাকিস্তান— হ্যাঁ, পাকিস্তানও— আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। দেখি, যক্ষ্মারুগ্ন মানুষের হিসাবে আমাদের দেশ এক নম্বরে।

এইসব দেখা ও শোনার মাঝে রেখে দিতে চাই এই সংখ্যার মূল ভাবনা— জনস্বাস্থ্য — অধিকার ও প্রাপ্তি— এই বিষয়ের কয়েকটা লেখা।

জনস্বাস্থ্য - রিজার্ভড
আমাদের দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্য…. সত্যি না স্বপ্ন -- মানস গুমটা
বাজার-পুঁজি-মুনাফা, নব্যউদারপন্থী স্বাস্থ্যনীতি বনাম সবার জন্যে স্বাস্থ্য -- বিষাণ বসু
স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ ও আমরা -- কৌশিক দত্ত
সরকারি স্বাস্থ্য বিমা কোনও সমাধান নয় -- পুণ্যব্রত গুণ
ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের বাজার -- রেজাউল করীম
নীচু তলা থেকে দেখা জনস্বাস্থ্য : যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ -- ছন্দা চক্রবর্তী

দ্বিতীয় বর্ষ, একাদশতম যাত্রা, ১লা মার্চ, ২০১৯

 

শেষ মোহিকান

মৃণাল সেন

…এতসব সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ঠিক করা গেল – মৃণাল সেনই হোন এই সংখ্যার মূল ভাবনা। বলাই বাহুল্য, উদ্দেশ্য ব্যক্তিপূজা নয়। উদ্দেশ্য – বিভিন্ন অধিকারীর দৃষ্টিতে তাঁর কাজকর্মের হদিশ করার একটা সৎ চেষ্টা করা। এই কাজ করে উঠতে গিয়ে যা পারলাম, তা হল দুই বাংলার বাইরের জগতের কিছু স্বনামধন্য মানুষের চোখে তাঁর কাজকর্মের তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা। আর যা পারলাম না, তা হল কেরালা ও কর্ণাটক এই দুই প্রদেশের – বাংলার বাইরে মৃণালের খ্যাতি যে চত্বরে সবথেকে বেশি – সেখান থেকে কোনও লেখা জোগাড় করতে। ফলে, আশঙ্কা সত্যি করে কাজটা অসম্পূর্ণই থেকে গেল।…

রিজার্ভড বগি - শেষ মোহিকান
মৃণালের কথা ভেবে… -- শ্যাম বেনেগাল, আনন্দ পটবর্ধন, ইয়োর্গে ইগলেসিয়াস
আমৃত্যু প্রতিবাদী-থাকতে-চাওয়া এক চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন -- তানভীর মোকাম্মেল
ঘটনাচক্রে ফিল্মমেকার -- জেমস কোয়ান্ট
মৃণাল সেন সম্বন্ধে দু’টি বা তিনটি কথা যা আমি জানি -- সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
আমার চেনা মৃণাল সেন -- সোমা চ্যাটার্জি
পদাতিক -- সৌমিত্র দস্তিদার
দক্ষিণ আমেরিকার বন্ধুদের সঙ্গে মৃণাল সেন -- ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী
স্মৃতিতে মৃণাল সেন -- রাইসুল ইসলাম আসাদ

দ্বিতীয় বর্ষ, দশম যাত্রা, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

 

পিছু-হাঁটার এক বছর

ফিরে দেখা ২০১৮

আরও একটা বছর কাটল। আমাদের পত্রিকার সময়রেখায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আমরা একটা বছরশেষের মুখোমুখি। প্রতিবারের ন্যায় এইবারও আমরা খুবই প্রত্যাশিতভাবে এই কাণ্ডটা করতে চলেছি। অর্থাৎ, ফিরে-দেখা, দু’হাজার আঠেরোর সালতামামি।…

রিজার্ভড বগি - জানুয়ারি ২০১৯
আরএসএস-বিজেপির সাভারকরবাদ : সেকুলার আদর্শের সঙ্কট -- আশীষ লাহিড়ী
“ন্যুনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে মোদি সরকার ডাহা মিথ্যা বলেছে” -- পড়গুম্মি সাইনাথ
পরিবেশ শোষণ ও বিশ্বায়ন -- শুভাশিস মুখোপাধ্যায়
উর্জিতের পদত্যাগ : ঋণনীতিতে আমূল বদলের ঈঙ্গিত -- বিশ্বরূপ কোনার
লিঙ্গ-রাজনীতি ও বর্তমান সরকার : একটি পর্যালোচনা -- শতাব্দী দাশ

দ্বিতীয় বর্ষ, নবম যাত্রা, ১লা জানুয়ারি, ২০১৯

 

চলচ্চিত্রচঞ্চরী

ভারতীয় সিনেমার স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ

…ইত্যাকার লীলাসমাপনান্তে জনগণ মৃতদেহটি স্কন্ধে তুলিয়া লইল। নন্দনবনের কিফ্‌-প্রাঙ্গণে বহু টেংরি চর্বণ করিয়া ও মদ্যপানপূর্বক তাঁহাদের মনে পড়িল, আরে! মড়াটা কার তা তো দেখা হয় নাই! মড়া লৈয়া মহা গোল উঠিলে ফেজটুপি-পরিহিত এক পুরোহিত আসিয়া নিদান দিলেন, মড়াটি লৈয়া আইস আমরা বার্তোলুচ্চি-পিজ্জা-গুচ্চি ইত্যাদি খেলি। খেলুড়েবাবুটি এবং তারও পিতাঠাকুর মুচকি হাসিলেন। এদিকে রাত হৈয়াছিল ওদিকে দুনিয়া টলিতেছিল বলিয়া টলির ভায়েরা মড়া পুড়াইয়া গোল চুকাইয়া দিল। হীরালাল ভাবিলেন, যাক! অতঃপর ভবের খেলা সাঙ্গ হৈল!

ইতোমধ্যে কয়জন টেঁটিয়া একজোট হৈয়া সিনেমা-সিনেমা করতঃ একটি ইশতেহার প্রকাশ করিয়া ফেলিল। তাহাতে স্বাক্ষর দিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়চণ্ডী মুখোপাধ্যায়সত্যব্রত ঘোষকৌশিক মজুমদার এবং নাসিরুদ্দিন শাহ।…

এই ইশতেহার প্রকাশ হৈল দেখিয়া সুধী পাঠিকা বিচলিত হৈবেন না। ‘এরাই তো ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রেকেচে’ বলিয়া দলে দলে নবতরঙ্গ-পরবর্তী অ্যাড-তোরঙ্গ জঁরের ছবি দেখুন।


চলচ্চিত্রের সামাজিকতা ও সমাজের চলচ্চিত্র -- সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
"সিনেমা আসলে অ্যাসপিরেশনেরই ছবি" -- নাসিরুদ্দিন শাহ
ভারতীয় সিনেমায় নবতরঙ্গ : জন্ম ও মৃত্যু -- চণ্ডী মুখোপাধ্যায়
এবং পিপলি লাইভ -- সত্যব্রত ঘোষ
বাংলা ছায়াছবির নির্বাক নায়িকারা -- কৌশিক মজুমদার

দ্বিতীয় বর্ষ, অষ্টম যাত্রা, ১লা ডিসেম্বর, ২০১৮

 

অল্পবয়স, কল্পবয়স

…২০১১-র জনগণনা রিপোর্ট আমাদের জানায়, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু, অর্থাৎ ১৮ বছরের কমবয়সি। তাদের একটা বিরাট অংশ বড় হয়ে উঠছে সমাজ ও রাষ্ট্রের চূড়ান্ততম অবহেলা ও উপেক্ষাকে সঙ্গী করে। গত শতকের ছয়ের দশকে কোঠারি কমিশন তার ঐতিহাসিক ভাষ্যে জানিয়েছিল, ভবিষ্যতের ভারত গড়ে উঠছে দেশের অসংখ্য ক্লাসরুমে। তার পর অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও, সরকারি তথ্যই বলছে, এখনও দেশের সব শিশুকে ইস্কুলে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। শিশুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির নিরিখে আমরা রীতিমত লজ্জাজনক অবস্থানে – সারা পৃথিবী যখন মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল পার হয়ে সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের দিকে যাত্রা শুরু করেছে, আমাদের অঙ্গনওয়াড়িগুলি তখনও ছ’বছরের কমবয়সি শিশুদের মাত্র অর্ধেকের জন্য পুষ্টিকর খাবারের বন্দোবস্ত করে উঠতে পেরেছে। শিশুসুরক্ষার হালও তথৈবচ – ২০১৬-র জাতীয় অপরাধপঞ্জী অনুসারে সারা দেশে নথিভুক্ত যৌন অপরাধের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত হয়েছে শিশু ও কিশোররা। অথচ আমাদের সাহিত্যে কোথায় সেই আক্রান্ত শৈশবের মুখচ্ছবি?

নভেম্বর যেহেতু শিশুদের মাস – ১৪ তারিখ জাতীয় শিশুদিবস, ১৯ তারিখ আন্তর্জাতিক টীকাকরণ দিবস, ২০ তারিখ বিশ্ব শিশুদিবস – তাই আরও বেশি করে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল এইসব প্রশ্ন। সেইসব ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের নভেম্বর সংখ্যাটিতে আমরা বিশেষ নজর দেওয়ার চেষ্টা করব উপেক্ষিত শিশুদের বিষয়ে। সেই ভাবনারই ফলশ্রুতি এবারের রিজার্ভড বগি, যেখানে লিখেছেন তাপস দাসকৌশিক দত্তশতাব্দী দাশধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি ও অভীক ভট্টাচার্য। কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতার অনুপ্রেরণায়, এবারের মূল বিষয়-ভাবনার নাম আমরা রেখেছি, ‘অল্পবয়স, কল্পবয়স’। নাম ভাবতে বসে আমাদের একবার সংশয় হয়েছিল, কল্পবয়স কথাটি সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না। সত্যিই কি বাস্তবে কোথাও দেখতে পাচ্ছি সেই কল্পবয়সের ছবি? বরং চোখে কি পড়ছে না উলটো এক স্বর্গছেঁড়া সামগ্রিকতাই, যেখানে কল্পনার শৈশব থেকে তাদের আরও বেশি করে ছিন্ন করে আনারই চেষ্টা চলেছে সর্বস্তরে? তবুও ভেবেচিন্তে কল্পবয়স শব্দটিকে রাখতেই চাইল মন। প্রখর রৌদ্রদাহের দিনেই তো আরও বেশি অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক শোনায় তৃষ্ণার্ত চাতকের ডাক।


সে অন্নে যে বিষ দেয়... -- তাপস কুমার দাস
টয়লেট : একটি অসমাপ্ত প্রেমকথা -- অভীক ভট্টাচার্য
লিঙ্গবৈষম্যের দুর্লঙ্ঘ্য গোলকধাঁধা ও শিশু -- শতাব্দী দাশ
তুমি দলিত বাচ্চা, তোমার মিড ডে মিল নেই -- ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জি
তোমার আমার আগামী -- কৌশিক দত্ত

দ্বিতীয় বর্ষ, সপ্তম যাত্রা, ১লা নভেম্বর, ২০১৮

 

এসেছে শরৎ, লেখার পরত

বাংলা শারদসাহিত্যের এখন-তখন

…এমন বিচিত্র শারদসাহিত্যবাজারের মধ্যখানটিতে বসিয়া, ভো পাঠক, চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের সম্পাদকমণ্ডলী শুরুতে মনস্থ করিয়াছিলেন কি সমকালীন শারদসাহিত্যের ধুদ্ধুড়ি নাড়িয়া একেবারে বারোটা বাজাইয়া ছাড়িয়া দিবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সমর সেনেদের দিন গিয়াছে। সম্পাদকমণ্ডলীর ডম্ফাই আর বাহ্বাস্ফোটই সার — খুঁজিয়া-পাতিয়া এমন লেখক এ ধরাধামে পাওয়া গেল না যিনি বুকে হাত দিয়া বলিতে পারেন বাংলাসাহিত্য নামে যাহা হইতেছে তাহা বিলকুল অপাঠ্য — খাজা ও ভুষিমাল। অতঃপর সম্পাদকমণ্ডলী, ঘাট হইয়াছে মানিয়া, আপনাপন সাঞ্চো পাঞ্জা অবতাররূপ পরিত্যাগ-পূর্বক ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে উমেশ বোনার্জির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনল কাংগ্রেসের ন্যায় সুগৃহীসুলভ একটি নরমপন্থী ও মেনিমুখো অবস্থান নিলেন। কণ্ঠস্বর যথোচিত মিনমিনে করিয়া কহিলেন, কালিকার শারদসাহিত্য কেমন ছিল বনাম আজিকার শারদসাহিত্য কেমন হইতেছে, আমরা কেবল তাহারই চিত্রটি ধরিতে চাই। অহো! এইপ্রকারে সম্পাদকদিগের কালাপাহাড়ি অস্তমিত হইয়া আসিল, পরিবর্তে একটি কাছা ও পৈতাধারী নাদান রূপ ক্রমে শোভা পাইতে লাগিল। নিজেদের যথাবিধি স্যানিটাইজ্‌ করিয়া তাঁহারা সুভদ্র হইলেন। বাংলার শারদসাহিত্য, এ-যাত্রা বাঁচিয়া গেল।

অধুনা বাংলা শারদসাহিত্যের হালহকিকৎ লইয়া আমাদিগের এই সংখ্যার রিজার্ভড বগি-তে লিখিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়যশোধরা রায়চৌধুরীপ্রতিভা সরকারদেবতোষ দাশসর্বজিৎ সরকারসুবীর সরকার ও সৌমিত দেব

লেখার প্রায় শেষে আসিয়া মনে পড়িল সুপ্রাচীন সেই গ্রিক প্রবাদটি। মেগা বিবলিওন মেগা কাকোন। বাংলায় তাহার অর্থ দাঁড়ায়, বইয়ের কলেবর যত স্ফীত, তাহা সাহিত্যের তত বড় জঞ্জাল। সে প্রবাদ বাংলা শারদসাহিত্যের ক্ষেত্রে কতদূর প্রযোজ্য, আদৌ প্রযোজ্য কি না, মহামতি পাঠক তাহা নিজগুণে বিচার করিবেন।…


লেখকের রজোনিবৃত্তি : শারদসাহিত্য -- সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
পুজোর ছুটির গন্ধ আর নিউজপ্রিন্টের গন্ধ মিলেমিশে যেত -- যশোধরা রায়চৌধুরী
আজকের শারদসাহিত্য : স্থিতাবস্থার কাব্য -- সর্বজিৎ সরকার
শারদসংখ্যা : সেকাল-একাল -- প্রতিভা সরকার
অপেক্ষা নিবিড় অক্ষরশ্রমিকের -- দেবতোষ দাশ
লিটিল ম্যাগেই প্রচুর ভালো ও সৎ লেখা পড়েছি -- সুবীর সরকার
ছড়ায়/গল্পে শারদবইয়ের ইতিহাস -- সৌমিত দেব

দ্বিতীয় বর্ষ, ষষ্ঠ যাত্রা, ১লা অক্টোবর, ২০১৮

 

যে জন আছে মাঝখানে

সাত কোটি উদ্বাস্তুর হয়ে কয়েকটি কথা…

…এর মাত্র মাসদুয়েক আগেই, ২০ জুন, আমরা পেরিয়ে এসেছি আরও একটি দিন, ‘ওয়র্ল্ড ডে ফর দ্য রেফিউজিস’। তখন অবশ্য উদ্বাস্তু সমস্যা ও শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে এখানে ওখানে খানিক কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ফিডবাহিত আমাদের মিডিয়াতেও এ নিয়ে কিছু লেখাপত্র চোখে পড়েছিল। কিন্তু, ওই পর্যন্তই। তার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই, সেই আন্তর্জাতিক সংবাদের ফিড মারফতই আমাদের নজরে আসে, সিরিয়ার শরণার্থী-বোঝাই নৌকো যাতে কোনওমতেই গ্রিসের মাটিতে ভিড়তে না পারে, তার জন্য বিশেষ উপকূলরক্ষী বাহিনি মোতায়েন করেছে সে দেশের সরকার। আমাদের এখানেও দেখি মায়ানমার থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফের মায়ানমারে ঠেলে পাঠাবার জন্য ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় কেন্দ্রীয় সরকার। তার কয়েকদিন যেতে না-যেতেই অসমে নাগরিক পঞ্জীকরণের দ্বিতীয় দফার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, দেখা যায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার এপার-ওপার জুড়ে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন সেই তালিকা থেকে। এইভাবেই, একদিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্যালেন্ডারে সারা পৃথিবীকে একটিই দেশ হিসেবে দেখতে চাওয়ার অঙ্গীকার, ও অন্যদিকে দিনের পর দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলির হাতেই শরণার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য খবরের মধ্যে ঠোকাঠুকি খেতে-খেতে গড়ে উঠতে থাকে বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সমস্যার পরস্পরবিরোধী বহুস্তর এক ভাষ্য।…

…উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সমস্যা-বিষয়ক এমনই নানা তথ্য ও ভাবনা থেকে গড়ে উঠেছে চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের দ্বিতীয় বর্ষ পঞ্চম যাত্রার মূল বিষয়ভাবনার অভিমুখ। এর মধ্যে দিয়ে আমরা একদিকে যেমন তত্ত্বগতভাবে বুঝতে চেয়েছি সমস্যার স্তরগুলিকে, তেমনই ধরতে চেয়েছি সেইসব অসংখ্য মানুষের মুখের রেখাও, ভিটেমাটি হারিয়ে যাঁরা হয় নিজভূমে পরবাসী, অথবা পরভূমে অনভিপ্রেত। ঘরেও নেই পারেও নেই – অতীত ও ভবিষ্যৎ দুইই হারিয়ে আক্ষরিক অর্থেই আত্মপরিচয় ও অপরিচয়ের মাঝখানে থাকা এই বিপুল জনগোষ্ঠীই আমাদের এবারের সংখ্যার কেন্দ্রীয় চরিত্র। আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সমস্যার বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে লিখেছেন ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্যসুশোভন ধর, মধুময় পালসৌমিত্র দস্তিদারমোহাম্মদ ইরফান ও মৃণাল চক্রবর্তী

  • উদ্বাস্তু - সৌমিত্র
    দেশভাগ ও ‘সীমান্ত আখ্যান’ : এক চলচ্চিত্র নির্মাতার জবানবন্দি -- সৌমিত্র দস্তিদার

দেশভাগ ও 'সীমান্ত আখ্যান' : এক চলচ্চিত্রনির্মাতার জবানবন্দি -- সৌমিত্র দস্তিদার
উদ্বাস্তু সমস্যার মূলে কী? -- মোহাম্মদ ইরফান
উদ্বাস্তু নই, দেশভিখারি -- মধুময় পাল
রেফিউজি লাইন : ২ -- মৃণাল চক্রবর্তী
বিশ্বায়নের দিনগুলিতে কূপমণ্ডূকতা : বিজৃম্ভনজনিত উদ্বাস্তু বিষয়ক ভাবনাসমষ্টি -- ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য
কোথায় পালাবে? ধু ধু করে মরুভূমি... -- সুশোভন ধর

দ্বিতীয় বর্ষ, পঞ্চম যাত্রা, ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৮

সকার ইন দা টাইম অফ কলেরা

…হ্যাঁ, পালটে দেবে। ফুটবল তো জীবন পালটেই দেয়। কীভাবে, নিজেদের জীবন দিয়ে তার সাক্ষী এখনকার ফ্রান্সের অভিবাসী-বংশোদ্ভূত এমবাপে-পোগবা-উমতিতিরা, বা তাঁদের আগের প্রজন্মের অঁরি-থুরাম-জিদানেরা। সাক্ষী ডাচ ফুটবলের গুলিট-রাইকার্ড, জার্মানির ওজিল-বোয়াটেং, ক্রোয়েশিয়ার মদরিচ-পেরিসিচরা। বেলজিয়ামের লুকাকু বিশ্বকাপ চলাকালীনই যখন এক সাক্ষাৎকারে জানান, “গোল করলে আমি বেলজিয়ামের নাগরিক, আর গোল করতে না-পারলে আমি ঘানাইয়ান…” তখন বোঝা যায়, বিপক্ষের জাল লক্ষ্য করে তাঁর এক-একটা শটের পেছনে কতটা বঞ্চনার অভিমান পুঞ্জীভূত জমে থাকে। সেই বঞ্চনার ইতিহাসকেই পুঁজি করে বড় হয়ে ওঠেন লাতিন আমেরিকা বা পূর্ব ইউরোপের দরিদ্রতম ভূখণ্ড থেকে খেলতে আসা রিভাল্ডো-রোনাল্ডো-রোনাল্ডিনহো বা মদরিচ-রাকিতিচ-পেরিসিচরা। সাদা-চামড়ার হাতে মার খাওয়ার শতাব্দীলালিত রক্তক্ষরণ বুকে নিয়ে খেলতে আসে সেনেগাল, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া। রক্তের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা বঞ্চনার ইতিহাসের চাকা মাঠে নেমে ঘুরিয়ে দেওয়ার জেদ থেকেই উঠে আসে ফুটবল — সে আমাদের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের চিরাচরিত দ্বৈরথেই হোক, বা ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার নব্বই মিনিটের ফকল্যান্ড যুদ্ধে।…

…এই ছবিটি স্পষ্ট হয়ে আসার পর আর সন্দেহ থাকে না যে, এটিই হতে চলেছে আমাদের দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যার মূল বিষয়-ভাবনা। আজকের হিংসাদীর্ণ পৃথিবীর মাথার ওপর দিয়ে স্নিচের সেই সোনালি উড়ালের রূপকল্পটির সঙ্গে কোন ম্যাজিকে যেন জুড়ে যায় মার্কেজের কলেরার দিনগুলিতে প্রেমের প্রেক্ষাপট… আমরা টের পাই, রাউলিং-কথিত সেই জাদু-স্নিচের মতোই আমাদের হাতের প্রায় নাগালে ভেসে বেড়াচ্ছে রিজার্ভড বগি তথা মূল বিষয়-ভাবনার বহুকাঙ্ক্ষিত সেই নামটি — ‘সকার ইন দ্য টাইম অব কলেরা’। এবারের রিজার্ভড বগিতে লিখেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যসৌমিত দেবআকাশসোহম দাস ও সোমেন বসু। একই সঙ্গে, ‘এই সময় ইন্ডিয়াটাইম্‌স’-এর ব্লগে প্রকাশিত’ ওই সংবাদপত্রের ক্রীড়া-সম্পাদক রূপায়ণ ভট্টাচার্যর একটি লেখা তাঁর অনুমতিক্রমে আমরা পুনঃপ্রকাশ করেছি।


কাকা -- রূপায়ণ ভট্টাচার্য
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না -- অনির্বাণ ভট্টাচার্য
বাঁচামরার যাপনসঙ্গী -- আকাশ
দ্দে গড়িয়ে... গোওওওল -- সৌমিত দেব
ইট'স নট আ লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট -- সোহম দাস
যদি মোহনবাগান হোস, কোনও ইস্টবেঙ্গলিকে কখনও রিফিউজি বলে গাল দিস না -- সোমেন বসু

দ্বিতীয় বর্ষ, চতুর্থ যাত্রা, ১লা আগস্ট ২০১৮

 

এসো, সুসংবাদ এসো…

…কিন্তু এর বাইরেও কি খবর থাকে না কোনও? এমন কোনও খবর, কাগজ ঠোঙা হয়ে যাওয়ার পরেও যা আমাদের সঙ্গে-সঙ্গে চলতে থাকে, চলতেই থাকে? এমন কোনও খবর, যা হয়তো আমাদের নতুন তথ্য জানায় না তেমন, কিন্তু পরোক্ষে গভীরতর কোনও আবিষ্কারের মুখোমুখি নিয়ে দাঁড় করায়? দেশের প্রত্যন্ত কোনও প্রান্তে কোনও হতদরিদ্র স্কুলশিক্ষককে যখন শুনি গ্রামের স্কুলবাড়ি গড়ে তোলার জন্য নিজের যথাসর্বস্ব দান করে দিতে, কিংবা কোনও সহায়সম্বলহীন মহিলা যখন শুনি একার হাতে গাছের চারা লাগিয়ে চলেছেন হাইওয়ের ধারে মাইলের পর মাইল কেবল পথিককে একটু ছায়া দেবেন পাখিদের একটু ফল খাওয়ার সুযোগ করে দেবেন বলে, কিংবা একজন একা মানুষ গাঁইতি হাতে সারাজীবন ধরে একটা পাহাড় ভেঙে চলেছেন যাতে গ্রামের লোকদের রাজ্য ঘুরে শহরে যেতে না-হয়– মনে না-হয়ে পারে না যে, এইই হল সেই খবর, যা আমাকে মানুষ হিসেবে আরও একটু এগিয়ে দিল কোথাও– এইই সেই খবর, যা আমাকে হয়তো আবারও একটু বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মাঠে ঠেলে দিল।

এইসব ভাবতে-ভাবতেই আমরা স্থির করি, এমনই নানা ভালো খবর একসুতোয় গেঁথেই তৈরি হবে আমাদের দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যার মূল ভাবনা, যাকে– এতদিনে আপনারা নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন– আমরা ডাকি ‘রিজার্ভড বগি’ নামে। মূল বিষয়-ভাবনার নাম কী হবে, ভাবতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসে ‘ভালো খবর’ শব্দবন্ধটি… তার টানে মনে পড়ে যায় ‘সন্দেশ’, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আসলে ‘সুসংবাদ’… আর সুসংবাদের প্রায় হাত ধরেই আমাদের সামনে এসে হাজির হয় ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা থেকে প্রায় অমরত্বে উত্তীর্ণ ‘এসো, সুসংবাদ এসো’ বাক্যবন্ধটি… আমরা যে আশ্চর্য বাঙ্ময় ও যথার্থ একটি নাম পেয়ে গিয়েছি আমাদের ভালো খবরের বিভাগের জন্য, তা নিয়ে আর কোনও সংশয়ই থাকে না মনে।…

রিজার্ভড বগি - জুলাই ২০১৮
মোলাই কথিত সুসমাচার
আপন হতে বাহির হয়ে
যা কিছু শোভন
রাজ্য ক্ষুধারই, কিন্তু সবই গদ্যময় নয়
এক অন্য ‘আরোগ্য’র গল্প
ট্রাকের হেডলাইটে মুক্তির আলো
হরাপ্পার গুহা খুঁড়ে ইতিহাসের মাণিক খুঁজছে সতেরো বছরের আলিবাবা
অথ সুপারহিরো কথা
মানুষ কাঁদায়… মানুষই হাসায়…
আকাশ ছোঁয়ার গল্প
জোগো বনিতো…
দিল গার্ডেন গার্ডেন হো গয়া
বিশ্বকাপের ভালো খবর

দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় যাত্রা, ১লা জুলাই ২০১৮

 

পীড়িত ধরণীর বেদনাভার

রুদ্ধ প্রাণ… বিরুদ্ধ পরিবেশ…

…আরণ্যকের মুসম্মত কুন্তা বা নকছেদি ভকতরা, কিংবা তিস্তাপারের বাঘারু বর্মণরা ইতিহাসের অন্ধকারে হারিয়ে গেলেও সেখানকার মাটিতে তাদের পায়ের অনশ্বর ছাপ রয়ে যায় – শতাব্দীর ও-পার থেকে বয়ে আসা বিস্মৃতির সুদীর্ঘ বাতাস তাদের হুতাশ বহন করে ফেরে। সেই হুতাশ তারপর একদিন কীভাবে বনে-বনে দাবানলের হুতাশন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, আজকের নিয়মগিরি তার প্রমাণ। কিন্তু তার পরেও কথা থাকে। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের মুখ হয়ে যখন এককাপড়ে অনশনে বসেন মেধা পাটকর, অরণ্যনিধনের প্রতিবাদে বৃক্ষলগ্ন হয়ে যখন চিপকো আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভাষ্য রচনা করেন মেধারই দূরতম সম্পর্কের বোনেরা, নদীবাঁধের জন্য ভিটে হারানো বুধনি মাঝি যখন বহু বছর পরে আবার তার আপনার ঘরে ফিরতে চায়, বহুজাতিকের ল্যাবরেটরিতে তৈরি উচ্চফলনশীল বীজের চোখরাঙানির বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে অতি সামান্য পুঁজি সম্বল করে দেশি ধানবীজ সংরক্ষণ করে যখন বিকল্প চাষের স্বপ্ন দেখতে থাকেন কেউ-কেউ – আমরা টের পাই, যেন বা একমুঠো লড়াইয়েরই বীজ ঘুম ভেঙে জেগে উঠছে মানুষের প্রত্যয়ের মাটিতে। তারপর, একদিন জ্যোৎস্নার রাত্তিরে আমাদের বহুশতাব্দীর কৌমলালিত স্বপ্নেরা সেই ধানের বুকে দুধ হয়ে নেমে আসতে থাকে…

চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের এই দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় যাত্রা আসলে আমাদের আদিগন্ত মাঠ-ঘাট-নদী-নালা-জলা-জঙ্গল বাঁচানোর লড়াইয়ের অসংখ্য কাহিনির কয়েকটিকে একত্র দেখতে চাওয়ারই ইচ্ছে থেকে; যার নামকরণ করতে গিয়ে অনিবার্যত ফিরতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাছে। তাঁর ‘স্ফুলিঙ্গ’ কাব্যগ্রন্থ থেকেই আমরা পেয়েছি ‘পীড়িত ধরণীর বেদনাভার’, যে অনির্বচনীয় রূপকল্পটিই আমাদের এই সংখ্যার মূল বিষয়-ভাবনার নামান্তর হয়ে উঠেছে। এই বেদনাভারের কাহিনি ও তাকে অতিক্রম করে জীবনে ফেরার মহাকাব্যের কথক হিসেবে আমরা পেয়েছি সদ্যপ্রয়াত পরিবেশবিদ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষকে, সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিরলস লিখে চলা বর্ষীয়ান সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রকে, সুন্দরবনের ক্ষয়িষ্ণু বনভূমি সংরক্ষণে দুই বাংলা জুড়ে গবেষণা ও জনমত গঠনের কাজে যুক্ত জয়ন্ত বসুকে এবং পূর্ব কলকাতার জলাভূমিরক্ষা আন্দোলনের নিষ্ঠ কর্মী কাজল সেনগুপ্তকে। পরিবেশনিধনের ফলশ্রুতিতে হারিয়ে যাওয়া বিপন্ন মানুষের মুখ ও তাদের লড়াইয়ের অনুল্লেখিত কাহিনি নিয়ে লিখেছেন সোমেন বসু ও দেবব্রত শ্যামরায়

 

রিজার্ভড বগি - জুন ২০১৮
স্বাধীন ভারতের নদীবাঁধ বনাম বুধনি মাঝির গল্প -- দেবব্রত শ্যামরায়
এক ব্যর্থ পরিবেশবিদের কবুলিয়তনামা -- ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
এক ব্যর্থ পরিবেশবিদের কবুলিয়তনামা -- শুভাশিস মৈত্র
বিপন্ন দুই বাংলার বাদাবন -- জয়ন্ত বসু
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি : একটা ইস্তাহার -- কাজল সেনগুপ্ত
যে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে ওঠে বসে… -- সোমেন বসু

দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় যাত্রা, ১লা জুন ২০১৮

 

বহুল দেবতা, বহু স্বর…

বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের সপ্তসিন্ধু, দশদিক…

চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম পরিচয়ে ওয়েব-পত্রিকা হলেও, যেহেতু চারিত্র্যে তা লিটল ম্যাগাজিনেরই সমগোত্রীয়, তাই বর্ষপূর্তি সংখ্যার মূল বিষয়-ভাবনার কেন্দ্রে থাকবে লিটল ম্যাগাজিনই – এমন একটি ভাবনা আমাদের দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। কিন্তু সংখ্যার পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমেই তৈরি হল যে সঙ্কট – লিটল ম্যাগাজিনের কোন দিকটিকে আমরা ধরতে চাইব। তার অনিয়মিতির ঔদ্ধত্য? তার ক্ষণস্থায়িত্বের গৌরব? তার প্রথাবিরোধী পথচলার স্পর্ধা? তার প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হিরণ্যমুখ? নাকি, একইসঙ্গে তার অজস্র তরুণ লেখক ও তাঁদের লেখনীকে ধারণ করার সপ্রাণ প্রসারতা? ভাবতে বসে টের পাওয়া গেল, আসলে কোনও একটি নয়, বরং এর সবক’টি মিলেমিশেই ছোট পত্রিকার সামগ্রিক পরিচয়। আর, এর বাইরে, তার আরও এক প্রধান পরিচয় তার সংখ্যাবাহুল্য ও বহুমাত্রিকতা। অসংখ্য একফর্মা-দু’ফর্মা-তিনফর্মা-চারফর্মার কৃশকায় কাগজ – এপার ও ওপার বাংলা থেকে, অসম থেকে, ত্রিপুরা থেকে, দিল্লি-মুম্বাই থেকে, এমনকী দূর বিদেশ থেকেও নিয়মিত এবং অনিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে, কোনওটি কয়েকদিন বা কয়েকমাস চলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কোনওটি বা তুলনায় বেশি আয়ুস্মান – কিন্তু প্রতিটিই একক তাদের নিজস্ব চরিত্রবৈশিষ্ট্যে, গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভূমিকায়। অনেক ভেবে তাই স্থির করা গেল, একইসঙ্গে চেষ্টা করা হবে তার এই বিশালত্ব ও বিষয়বৈচিত্রকে ধরার, এবং একটি বিশেষ কালপরিসরে কাগজগুলি কীভাবে তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছে তা-ও খুঁজে দেখার। সেই ভাবনারই ফসল এই সংখ্যার রিজার্ভড বগি…

বাংলা লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে বহুবছর ধরে অক্লান্ত গবেষণা করে চলেছেন যে মানুষটি, সেই সন্দীপ দত্তকে তাঁর অসুস্থতার মধ্যেও রাজি করানো গিয়েছে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য, সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সুস্নাত চৌধুরী। এছাড়া এই বিভাগে লিখেছেন মলয় রায়চৌধুরীসুমন গুণসর্বজিৎ সরকার ও বল্লরী সেন। দুই বাংলার প্রধান ওয়েব-পত্রিকাগুলিকে নিয়ে লিখেছেন দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম। এরই পাশাপাশি, ত্রিপুরা, উত্তরবঙ্গ ও রাঢ় বাংলা থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনগুলির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সদানন্দ সিংহসুবীর সরকার ও উজ্জ্বল মাজী। এমন দাবি করি না যে, বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের সামগ্রিক চিত্রটি আমরা ধরতে পারলাম এই নিবন্ধগুচ্ছের মধ্যে, কিন্তু সামগ্রিকতার একটি আভাস অন্তত রইল অবশ্যই, সেটুকুই আমাদের তৃপ্তি।

রিজার্ভড বগি - মে ২০১৮
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার অর্থ একটা জাগরণ : সন্দীপ দত্ত -- সুস্নাত চৌধুরী
“শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কবিতা রচনার প্রথম শর্ত” -- মলয় রায়চৌধুরী
ত্রিপুরার বাংলা লিটিল ম্যাগ -- সদানন্দ সিংহ
বহুস্বরই একমাত্র রাস্তা -- সর্বজিৎ সরকার
প্রতিষ্ঠান ও বিরোধী আন্তর্জাল -- সুমন গুণ
উত্তরের নির্বাচিত লিটিল ম্যাগ : আমাদের অর্জন ও অহংকার -- সুবীর সরকার
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার পত্রপত্রিকা -- উজ্জ্বল মাজী
‘আমাকে কবিতা ছোঁয় আমাকে পাথর করে রাখে’ : হালের কবিতা -- বল্লরী সেন
ওয়েব পত্রিকা : নতুন দিগন্ত, নতুন আশা -- দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

দ্বিতীয় বর্ষ, প্রথম যাত্রা, ২রা মে ২০১৮

Terms and Conditions Privacy Policy Contact Us Cancellation and refund Shipping and delivery
%d bloggers like this: