পুজো স্পেশ্যাল ১৪২৫
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠান দিয়ে মহালয়ার শুরু, তারপর বেলা আর একটু গড়াতেই গঙ্গার ঘাটে-ঘাটে তর্পণের মধ্যে দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটল। আমরা পৌঁছলাম দেবীপক্ষে, নাকি দেবীপক্ষই পৌঁছল আমাদের কাছে? একেবারে ছেলেবেলা থেকেই, এই দিনটি থেকে রোদের রং পালটে যেত। মনের মধ্যে বেশ ক’মাস ধরে বাজতে থাকা ‘পুজো আসছে’-র বোল এই দিনটি থেকেই বেবাক বদলে গিয়ে হয়ে যেত ‘পুজো এসে গেল’। আজকের সকাল, যেন সেই ছেলেবেলার ভোরটিকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে অন্য চেহারায়।
মনে আছে, সেই ‘পুজো এসে গেল’-র হাত ধরেই কত কী যে ম্যাজিক ঘটতে শুরু করত ভিতর-বাহিরে। মস্ত কালি-মোছা রবার দিয়ে কেউ যেন একটানে সাফ করে দিলে মেঘের কালি, আর একগাল হেসে বেরিয়ে পড়ল রোদ। সেই রোদে পিঠ দিয়ে জানলার শার্সিতে বসে দুগ্গা টুনটুনি কেবলই বলতে থাকলে পুজো এসে গেল। টুনটুনিকে দেখে পুকুরঘাটে গা মাজতে আসা মায়েঝিয়েরাও নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করে দিলে, পুজো এসে গেল।
সুবচনীর খোঁড়া হাঁস পিঠের পালক শুকোতে-শুকোতে বলতে থাকল, পুজো এসে গেল… পাঠশালায় পড়তে-পড়তে কিশোর নালক আপনমনে বলতে থাকল, পুজো এসে গেল…
পুজো এসে গেলে আর কী-কী ঘটত ঠিক? গায়ে-গায়ে সুতির নতুন জামা উঠত, হাতে-হাতে নতুন কোটা আনন্দনাড়ু উঠত, নদীর পাড়ে কাশফুল উঠত, পাশের গাঁয়ের হাটতলায় দুগ্গা ঠাকুর উঠত। আর, মণ্ডপে ঠাকুর ওঠার সঙ্গে-সঙ্গেই, শহর থেকে সকলের জন্য জামাকাপড় নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে যেতেন দাদা-কাকারা। তাঁদের সঙ্গেই, একঝাঁক জোনাকির মতো এসে হাজির হত শারদপত্রিকার একরাশ নতুন গল্পও।
সেই ছেলেবেলা দূরে সরে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পুজোর গল্পগুলোও দূরে সরে গিয়েছে কবেই। কিংবা, হয়তো, দূরে সরে যায়নি ঠিক… একটু অন্য চেহারায় এখনও তারা আমাদের চারপাশেই ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। কেমন সেই অন্য চেহারার গল্পেরা? তারা কি আমাদেরই মতো ভুরু-কোঁচকানো নাগরিক হয়ে উঠেছে? আমাদেরই মতো চশমা-পরা অন্যরকম? কেমন হয়, যদি চেষ্টাচরিত্র করে তাদেরই কয়েকটিকে এক জায়গায় জড়ো করা যায় পুজোর জন্য অপেক্ষার দিনগুলিতে?
এইসব ভাবতে-ভাবতেই মনে এল, কেমন হয়, যদি একটু নতুন ধরনের গল্প খুঁজতে চাই? কাদের কাছে তা খুঁজে পাওয়া যাবে? কোথায় যাই, কার কাছে চাই, ভাবতে-ভাবতে মনে পড়ল এই সময়ের কবিদের কথা। যাঁদের আমরা মূলত কবি বলেই জেনেছি, যাঁদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় মূলত তাঁদের কবিতার মধ্যে দিয়েই – তাঁরা যখন কবিতা লেখার কলমে গল্প লেখার কালি ভরে নেন, কেমন দাঁড়ায় সেই গল্পের চেহারা? কবিদের লেখা গল্প কি আসলে তাঁদের কবিতারই সম্প্রসারণ? নাকি কবিতায় যা বলা যায় না, বলা যায়নি – তা বলতেই তাঁদের গল্পের কাঠামোর আশ্রয় খোঁজা?
কবিদের কলমে লেখা এমনই একগুচ্ছ অন্য স্বাদের গল্প নিয়ে চারনম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে পুজোর ছুটির স্পেশ্যাল ট্রেন ছাড়ার সময় হল। আগামী ক’দিন রোজ সকালে-সন্ধেয় দু’টি করে গল্প নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হব আমরা। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজস্র শারদপত্রিকায় যাঁদের কবিতা পড়ছেন, আসুন, চারনম্বর প্ল্যাটফর্মে তাঁদেরই কারও-কারও লেখা গল্পের সঙ্গে পরিচয় করে নেওয়া যাক।
পুজোর দিনগুলিতে ভাল থাকুন। কবিদের লেখা গল্পের সঙ্গে থাকুন…
সূচি:
পাঁচটি অণুপ্রেমের গল্প : যশোধরা রায়চৌধুরী
সান্টা ক্লজ : অগ্নি রায়
ফ্রান্সে আমি : আন্তন
পূর্বাভাস : হিন্দোল ভট্টাচার্য
সন্ন্যাসী লোকটা : জগন্নাথদেব মণ্ডল
টকিং মালতী : তৃষ্ণা বসাক
তোরঙ্গ : সুমন গুণ
খুল যা সিম্সিম্ : অনিন্দিতা গুপ্ত রায়
ভবা : কৌশিক বাজারী
মিসড কল : বুবুন চট্টোপাধ্যায়
গোপাল ও বিষণ্ণ মাঠ : দেবব্রত কর বিশ্বাস
দেবীপক্ষে লেখা অন্ধকার : চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
শব্দের রং : বেবী সাউ
নিরঞ্জন : শাশ্বতী সান্যাল
বইবাজার : রিমি মুৎসুদ্দি
তিতলি : সৈয়দ কওসর জামাল