সলিল বিশ্বাস
প্রথম পর্বের পর
তথ্য-প্রেষণ চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে ডান এবং বাম শুরু করে দিল তাদের ঘ্যানঘ্যানানি। আর বোলো না। মহাশূন্যের এই কেঁচো-ফুটো এক মহা জ্বালাতনের জিনিস। কখন যে বন্ধ হয়ে যাবে আবার কখন যে খুলবে তার উপরে এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও রকম নিয়ন্ত্রণ আনতে পারিনি। অনেকে বলে পারবও না কোনওদিন। আমরা অবশ্য এত নৈরাশ্যবাদী নই, বলল ডান। আমরা নিরাশ হতে রাজি নই, বলল বাম। একদিন ঠিক আমরা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারব, বলল ডান। ঠিক পারব, বলল বাম। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন ঘটনাটা কী হয়েছিল সেটা বলো না! আরে, ধৈর্য ধরো, ডান মন্তব্য করল। এত অধৈর্য কেন, বলল বাম। ঠিক আছে, এবারে বলো কী বলবে গল্পটা! গল্প কেন হতে যাবে একেবারে সত্যি ঘটনা। ডান বাম একসঙ্গে প্রায় চেঁচিয়ে বলল।
খেলা শুরু হতে চলেছে। যদিও আজ প্রথম খেলা, অনেকটাই সৌজন্যমূলক, তবুও উত্তেজনার শেষ নেই। শোনা যাচ্ছে, আজ তিনপক্ষেই বেশ কিছু নতুন জিভ দেখা যাবে। কিউব জ্বলতে নিভতে শুরু করেছে, সারা মাঠে ল্লল্লল্লল্ল নীরবতা … …
এবারে আলোটা বন্ধ হল। নীরবতা যেন একেবারে ছ্রিল্ক ছ্রিক্ল হয়ে উঠল। মাঠের প্রান্তে পৌঁছে গেছে সব ক’জন জিভ-বীর। আলো আবার জ্বলল বলে… সারা মাঠে সব প্রক্ষেপিত দর্শক অদৃশ্য হলেও একসঙ্গে দম ফেলল। আলো জ্বলেছে, দৌড় শুরু করেছে খেলোয়াড়রা। তখন তো আমরা খুব বাচ্চা, খেলোয়ারদের তখনও আমরা আলাদা করে চিনি না। সুতরাং কে যে ঘনকটা জিভায়িত করল, সেটা বুঝলাম না। কিন্তু মাঠে উপস্থিত হাতে গোনা জ্যান্ত দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও প্রবল উৎসাহে চেঁচাতে লাগলাম। ঘনক নিয়ে দৌড়াচ্ছে, জিভটা শক্ত করে একজন খেলোয়াড়, তাকে ঘিরে দৌড়চ্ছে অন্তত আরও জনাছয়েক জিভ-বীর। সবাইকে পাশ কাটিয়ে পাশ কাটিয়ে ঘনক-জিভায়িত খেলোয়াড় সীমানার দিকে দিল ছুট-লাফ! ওফফ, সে যে কী উত্তেজনা, সে আর কী বলব! তারই মধ্যে সীমানা ছুঁয়ে ফেলল খেলোয়ারটি। সারা মাঠ হাততালির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠল। আবার সব খেলোয়াড় সীমানায় লাইন দিল। আবার আলো জ্বলা-নেভা, আবার আরেক জন খেলোয়াড়ের ছুট, আবার সে ঘনক-জিভায়িত। আবার সীমানার দিকে ফেরত ছুট-লাফ।
এই করে চলল সব ক’জন খেলোয়াড়ের পালা। প্রথম দলের সব ক’জনের খেলা হয়ে গেলে দেওয়া হল কয়েক ‘ল্রিজ্র’ (মানে মিনিটের) বিশ্রাম। সেই সময়টা মাঠে উপস্থিত আমরা যারা ছিলাম তাদেরও খানিক বিশ্রাম হল। এবারে দ্বিতীয় দল খেলল। তারপর খেলায় যোগ দিল তৃতীয় দল। এই করে পুরো সেদিনের খেলা শেষ হল যখন, তখন আমরা খানিকটা হতাশ হয়ে দেখলাম যে তিনটে দলেরই প্রাপ্ত পয়েন্ট সমান সমান। অর্থাৎ, কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। আমরা যারা প্রথম খেলা দেখছিলাম— মানে প্রথম কোনও দীর্ঘ প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছিলাম— বেশ খানিকটা অবাকই হলাম। কেউ হারবে না, কেউ জিতবে না? তাহলে আর মজা কোথায়! পরে জেনেছি এটাই নিয়ম। প্রতিযোগিতার প্রথম খেলায় কারও হার জিত হয় না। প্রথমেই বলেছিলাম না, এটা ছিল একটা সৌজন্যমূলক ‘ফ্লিস্র’।
এই প্রথম খেলাটা দেখে আমাদের এত ভালো লেগেছিল যে আমরা প্রত্যেক সিজন পুরোটা দেখতে শুরু করেছিলাম। তার ফলে কাজকর্ম আমাদের শিরদাঁড়ায় নামতে শুরু করেছিল। ফলে আমরাই আমাদের খেলা দেখতে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেই। আমরা অবশ্য এই নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে স্থানীয় ‘ঠ্র্যাস্ক্র’ দপ্তরে ‘ল্মাম্ম্রা’ করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা কেউ কানে নেয়নি। পরে আবার নিজেরাই ঠিক করি, আমরা ঠিকই করেছিলাম। আমরা ভুল করিনি।
দাঁড়াও দাঁড়াও, কী আবোলতাবোল বকছ? ‘ঠ্র্যাস্ক্র’ দপ্তরে ‘ল্মাম্ম্রা’? মাথামুণ্ডু কিছুই তো বুঝছি না! মানে কী এসব কথার?
ওঃ হো, এত বারে বারে কথার মাঝখানে কথা বলো কেন? বলছি, বলছি মানেটা কী। ‘ঠ্র্যাস্ক্র’ হল এমন একটা জায়গা যার দপ্তরে কমবয়সীরা নিজেদের বিরুদ্ধে ‘ল্মাম্ম্রা’ অর্থাৎ কেস করতে পারে। যখন তাদের মনে হয়, তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, আবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়, তারাই বোধহয় ভুল করছে, তখন তাদের নিজস্ব বয়সীদের কাছে তারা গিয়ে জানতে চায় তারাই কোনও ভুল করেছে কিনা। এই বিচারটা সমবয়সীরাই করে থাকে। তার ফলে কমবয়সীদের মনে কোনও রকম ভুল-বোঝাবুঝি জায়গা পায় না।
সেই প্রথম দিনের খেলা দেখার পর থেকে আরও কতবার যে কত খেলা দেখেছি সেটা হিসেব করে বলা খুব মুশকিল। একটা সময় এই খেলাটা নিয়ে আমরা একেবারে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তারপরে এমন একটা ঘটনা ঘটল যে আমাদের পাগলামিটা অনেকটাই কমে গেল। আসলে খেলাটা সম্পর্কে আমাদের মাথায় অদ্ভুত একটা শ্রদ্ধার ভাব ছিল। কিন্তু খেলাটাকে যে কেউ অশ্রদ্ধা করতে পারে, এটা যেন ভাবতেও পারতাম না। কিন্তু সেই রকমই একটা ঘটনা ঘটে গিয়ে আমাদের মেজাজটাই খিঁচড়ে গেল।
সেবারে সিজন সবে শুরু হয়েছে, তখন সবই সৌজন্যমূলক। আমরা প্রত্যেকটা খেলা যে দেখতে যাচ্ছি তাও নয়। মাঝেমাঝেই কাজে-কর্মে ক্ষহক ফিরে আসতে হয়। ‘ন্রক্ত’ থেকে ক্ষহক মাত্র দুই প্তক্রীম্র, মানে, আলোকবর্ষ। কিন্তু সেই সকালবেলা গিয়ে আবার বিকেলে অতটা পথ চলে আসতে সময় বেশি না লাগলেও বিরক্ত লাগে। আমাদের পারিবারিক ‘ন্রল্র-ক্ষ্রুপ্ল’-টা অনেক দিন সার্ভিস করা হয়নি, জ্রজ্র-রা, মানে বড়রা বলে দিয়েছেন আপাতত না সারিয়ে নিয়ে ‘ন্রল্র-ক্ষ্রুপ্ল’ চালানো যাবে না।
সেদিন— ‘দিন’ কথাটা বোঝার সুবিধার জন্য বললাম, আসলে আমাদের ওখানে দিন বলে না, ওটাকে বলে ‘প্রগ্ল’— ডান একটু অসুস্থ ছিল। আগের দিন থেকে মাথাটা খারাপ হয়েছে, বড্ড বেশি ফ্লফ্ল হচ্ছে, আমি একাই রওনা হলাম। এইটুকু পথ, মাত্র দু’আলোকবর্ষ, যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু যেটুকু সময় লাগবে সেটাও একা একা যেতে ভালো লাগে না। তার উপরে আবার যাব এজমালি গাড়িতে। সময় খানিকটা বেশি লাগবে। আমার আজকাল এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে গাড়িতে অন্য লোক থাকলে একটু অসুবিধা হয়। তার জন্য আমাকে অনেক বিদ্রুপ শুনতে হয়, কারণ এই ধরনের ‘ল্মিস্রফ’, মানে, একলষেঁড়েমি ক্ষহক-এ অপছন্দই করা হয়।
সে যাই হোক, সেদিন ন্রক্ত পৌঁছলাম যখন তখন খেলা প্রায় শুরু। কিন্তু একটু অবাক হয়েই দেখলাম মাঠ একেবারে ‘নাখ্রো’, এত ফাঁকা কেন, দেখে বেশ অবাক হলাম। চশমাটা খুলে ভালো করে মেখে নিলাম। কই, সব ঠিকই আছে! সারা মাঠে মাত্র চার-পাঁচ জন দর্শক ঘুরে বেড়াচ্ছে। খেলোয়াড়রাও কেমন যেন নিরুৎসাহ। জিভগুলো তেমন বিশেষ লকলক করছে না। আকাশের দিকে তাকালাম একবার। সেও তো দিব্যি সবুজ আছে, দিনটা ভালোই কাটবে। কালচে নীল ‘ম্রিয়া’, মানে আলো-বাহকরা ঘোরাফেরা করছে বটে, কিন্তু তাদের দরকার হবে বলে আদৌ মনে হয় না। এতক্ষণে বুঝলাম টিকিটের দাম আজকে এত সস্তা কেন। আসলে লোক নেই তো। এমনিতেই ন্রক্ত-তে থাকলে টিকিটের দাম কম লাগে, ক্ষহক-এ বেশিরভাগ লোক তো ঘরে বসেই মাঠে ঢুকে যায়। কিন্তু আজকে একটু বাড়াবাড়ি রকমের সস্তা।
যাই হোক, যথারীতি খেলা শুরু হয়ে গেল। আমি বেশ মজা করে একা একা খেলোয়ারদের পায়ে পায়ে ঘুরছি। বেশ ফুরফুরে লাগছে মন। যদিও খেলাটা খুব জমবে বলে মনে হচ্ছে না। এমন সময় ‘ফ্রল্র’-টা, তোমরা যাকে বল ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’, চালু হল মাথার ভিতরে। চমকে গেলাম। এরকম তো কখনও হয় না! কী ব্যাপার?
সাবধান সাবধান সাবধান! আমাদের সমস্ত যন্ত্রপাতি কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বিকল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষুনি সবাই সবাইকে চোখের সামনে দেখতে পাবেন। যারা ক্ষহক-এ আছেন তাদের অত চিন্তা নেই। তাদের শুধুমাত্র লেজার চিত্র হিসেবেই দেখা যাবে। কিন্তু যাঁরা এইখানে আছেন তাদের লেজার চিত্র নয়, তাঁরা একেবারে সশরীরে মাঠের মধ্যে দৃশ্যমান হবেন। সকলের সঙ্গে সকলের ধাক্কা লেগে যাবার খুব সম্ভাবনা। দর্শকরা পারলে এক্ষুনি মাঠের বাইরে চলে যান। খেলোয়ারদের বলা হচ্ছে খেলা বন্ধ করে নিজের নিজের শিবিরে ঢুকে যান।
কেলেঙ্কারি কাণ্ড! আমার পিলে চমকে যাবার দাখিল। কোনও রকম ভাবনা-চিন্তার সময় পাওয়া গেল না। তাকিয়ে দেখি আমার ঠিক সামনে বিশাল বড় একটা জিভ। স্রীন্ল স্রীন্ল, মানে ভাগ্যিস, আমাকে দেখতে পেয়েছিল। চিত শুয়ে পড়ে বিরাট একটা লাফ দিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে পিছনে গিয়ে পড়ল। কিন্তু তার ঠিক পিছনে যে খেলোয়ারটি ছিল, সে আমাকে দেখতে না পেয়ে সোজা জিভ বাড়িয়ে দিল, আর আমাকে তুলে নিল। তার আঠালো জিভে আমি আটকে গেলাম। তারপর অভ্যেস মতো সে ছুটল সীমানার দিকে। পৌঁছেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলল সীমানার বেড়ার উপরে। এই হট্টগোলের মধ্যে আমি আমার পেটের কাছে ‘ভ্র্যীল’, মানে আপৎকালীন বোতামের জায়গাটা খুঁজেই পাচ্ছি না। সেটা টিপতে পারলে আমি এক সেকেন্ডে উড়ে গিয়ে পড়ব আমার জাহাজের আসনে। কিন্তু আমার তখন একেবারেই বেহাল অবস্থা। ভয় পেয়ে আছি আমার মুখটা ছিঁড়ে না যায়। তাহলে আর দেখতে হবে না। ওদিকে সমস্ত খেলোয়াড়রা ছুটেছে আবার মাঝ-মাঠের দিকে। শিবিরে ফিরে যাবার ঘোষণাটা তাদের কানে গেছে বলেই মনে হচ্ছে না। পরমুহূর্তে দেখলাম আমাকে কেউ আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে। পরক্ষণেই আমি ধপাস করে আবার আছাড় খেলাম মাটিতে।
ওদিকে পটপট করে সমস্ত লেজার ছবিগুলো নিভে গেল। আমার মতন যে ক’জন এখানে টিকিট কেটেছে তাদের অবস্থা খুব সঙ্গীন। আবার কানের মধ্যে ঘোষণাটা চালু হল।
সমস্ত খেলোয়াড়দের বলা হচ্ছে নিজের নিজের শিবিরের দিকে ফিরে যান। মাঠে উপস্থিত দর্শকদের কেউ জিভ দিয়ে তুলে নেবেন না। খেলা আপাতত বন্ধ। অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের যন্ত্রপাতি আবার চালু হচ্ছে।
এবারে খেলোয়ারদের কানে গেল আদেশ। তারা নিজের নিজের শিবিরের দিকে ছুট-লাফে চলে যেতে শুরু করল। আর ঘোষণা যাই হোক না কেন, ফেরার পথে তাদের সামনে যে ক’জন দর্শক পড়ল, তাদের সবাইকেই জিভ দিয়ে তারা ছুঁড়ে ফেলে দিল।
এইবার আমি নিজের দিকে নজর দিলাম। না। যতটা ভয় পেয়েছিলাম ততটা কিছু হয়নি। আমার প্ল্র-র (স্যুট) স্বয়ংক্রিয় রক্ষা-ব্যবস্থা আমাকে কোনও জিনিসের সঙ্গে গুঁতো খাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু তাহলে কী হবে, পিঠ-মাথা পুড়ে না গেলেও প্ল্র-র যেখানটাতেই জিভের ছোঁয়া লেগেছে সে জায়গাগুলো রীতিমত ঝলসে গেছে। ওই জিভগুলোতে যে আঠালো জিনিসটা আছে তা বেশ খানিকটাই ‘ফ্লঞ্জা’, মানে অ্যাসিডে ভরা। তবে বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে দেখলাম আমি মাঠের ‘মাটি’ থেকে ইঞ্চি-ছয় উপরে ভেসে আছি।
ওই ভেসে থাকা অবস্থাতেই আমি আমার প্ল্র-কে নির্দেশ দিলাম মাটি থেকে অন্তত দুশো ফুট উপরে উঠে যেতে। এতক্ষণ চিত হয়ে ছিলাম, এবার উপুড় হয়ে নিচের দিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে আমার পেট কপালে ওঠার দাখিল।
পুরো মাঠটা প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। কেউ কোথাও নেই। শুধু কয়েকজন দর্শক মাঝ-আকাশে আটকে ঝুলছে। মাঠের অনেকটা উপরে বাতাস যেন ঢেউ খেলাচ্ছে। ঠিক মনে হচ্ছে এক পর্দা ‘ল্রিল্রিক্লক্ল’, মানে মহাকাশবাতাসী ধুলো, ঢেউয়ের মতো উঠছে-নামছে। বোঝাই যাচ্ছে, ওই ল্রিল্রিক্লক্ল-র পর্দা তাদের আটকে দিয়েছে। খুব অবাক হয়ে গেলাম। এইভাবে ল্রিল্রিক্লক্ল ব্যবহার পুরোপুরি বেআইনি। উচ্চতম নক্ষত্র আদালত অপরাধীকে কী মারাত্মক শাস্তি দিতে পারে তা ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়। যে জেলখানায় এই ধরনের অপরাধীদের আটকে রাখা হয় সেখান থেকে কেউ কোনওদিন পালাতে পারে না। একবার একজন পালিয়েছিল, সে গল্প অন্য কোনওদিন বলব।
আমার প্ল্র-কে বললাম চারপাশটা ভালো করে দেখতে। আমি তখন তুলনায় ছোট বলে, আমার প্ল্র অত তুখোড় নয়, তবে খানিকটা খানিকটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার যা আছে তা থেকে চারপাশের আকাশ-মহাকাশ এলাকা সে দেখে নিতে পারবে। কিন্তু সে কিছুই খুঁজে পেল না। বুঝলাম, যারা এই কাণ্ডটা বাঁধিয়েছে তারা কেউই মহাকাশে নেই, নিশ্চয়ই আছে গ্রহাণুর উপরেই। আবার চালু হল পাবলিক অ্যাড্রেস। কিন্তু তার আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল যে এটা পুরোপুরি ব্যক্তিগত কোন ট্রান্সমিটার থেকে আসছে।
সকলে শুনুন। কোনও সাধারণ ব্যক্তির প্রতি আমার কোনও বিদ্বেষ নেই। আমি একজন প্রকৃত জিভবল প্রেমিক। ইদানিং এই পবিত্র খেলাকে যেভাবে টিংটিংটিংটিং বদনাম করছে, তাতে আমি নিজেকেও অপবিত্র মনে করি। আমি মনে করি একটা প্রতিকার হওয়া আশু প্রয়োজন। একটা চক্র এই কুৎসিত ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, কিন্তু সবটাই কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ওই এক জঘন্য জিভ-কাপুরুষের মধ্যে।
কাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছে রে বাবা! কেউ তো শুনবার জন্য নেই এখানে! আর যতই যাই হোক, একটা খেলাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা করার কী আছে? এটা ঠিক যে এখানে জিভবল নিয়ে ভীষণ পাগলামি আছে, কিন্তু এর কথা শুনে নিতান্ত পাগলের প্রলাপ বলে মনে হচ্ছে না।
আমি কার কথা বলছি আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন না। আপনারা সবাই কোনও না কোনও সময় এর খেলা দেখেছেন। এটা ঠিক যে খেলায় ও খুবই পারদর্শী, কিন্তু ওর মধ্যে জিভবলের প্রতি কোনও রকম ভক্তির ভাব নেই। আমি বলছি হ্রল্র-র কথা। খেলতে এসে ও যেসব কাণ্ড ঘটায় তা শুনলে আপনারা ঘেন্নায় একেবারে শিউরে উঠবেন। যতক্ষণ না এই নোংরা বফবফবফব-কে জিভবল ফেডারেশন (ন্রন্রল্র ক্রদ্র) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করছে এবং তার সমস্ত দুষ্কর্মের শাস্তি বিধান করছে, ততক্ষণ আমি এই মাঠকে ‘দ্রেশ্রম্ফ্র’ করে রাখব, কোনও খেলা হতে দেব না।
ইতিমধ্যে, আমার চারপাশে তাকিয়ে দেখি অজস্র ছোট ছোট এক-সিট-ওয়ালা ‘ন্রল্র-ক্ষ্রুপ্ল’ মাঠের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আকাশে। এগুলো সব নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যক্তিগত বাহন। নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছে করলেই ল্রিল্রিক্লক্ল-র আস্তরণটাকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করে শুধু দাঁড়িয়ে আছে। কী ব্যাপার? হ্রল্র-কে আমি চিনি, ওর খেলা আমি কয়েকবার দেখেছি। সে আবার কী করল? আবার আওয়াজ ছাড়ল পাবলিক অ্যাড্রেস। সে গলায় এবার যেন একটু করুণ সুর।
আপনারা জানেন না, আমার অপূর্ব সুন্দরী সহচরী হ্রাল্রম্র-কে এই ন্নন্নন্নন্ম অজস্র মিথ্যে কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে। আমাকে ত্যাগ করে গেছে হ্রাল্রম্র। আমি যখন ন্রন্রল্র ক্রদ্র-র কাছে নালিশ জানালাম, তারা কোনও ব্যবস্থা তো নিলই না, উল্টে আমাকে ‘হ্রিপ্র’, মানে পাগল, প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লেগে পড়ল। আমি ওদের ছাড়ব ভেবেছেন? আমি জিভবল-কে যতই ভালোবাসি আর শ্রদ্ধা করি না কেন, হ্রাল্রম্র আমার প্রাণ। যে তাকে আমার কাছ থেকে হরণ করেছে, তার শাস্তি চাই! হ্রল্র-কে জিভবল জগত থেকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে। আমার বৈজ্ঞানিক ক্ষমতাকে আপনারা জানেন না, আপনারা ভাবতেও পারবেন না আমি আমার শক্তি দিয়ে কী কাণ্ড করতে পারি। আর এক ক্ল্রক্ল্র-র মধ্যে যদি আমার লিখিত দাবিগুলো না পূরণ করা হয়, তাহলে এই ল্রিল্রিক্লক্ল-র আস্তরণকে আমি স্থায়ী করে দেব, এই মাঠকে ওই য্রয্রয্রয্র হ্রল্র আর কোনওদিন অপবিত্র করতে পারবে না। এই আমার শেষ কথা। মনে রাখবেন, এক ক্ল্রক্ল্র… তারপরে যা ঘটবে তার জন্য আমি দায়ী থাকব না।
তখনই আমার প্ল্র-র পেটের নিচে লাগানো স্ক্রিনটা চালু হল। দেখি সেখানে একজন ঘোষক খবর বলছে। স্বভাবতই আজকের খবর একটাই। ইতিমধ্যেই জিভবল নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ করেছে। কী কী ঘটেছে তার একটা বর্ণনা দিয়ে ঘোষক বলল, ওই ন্রক্তইয়া লোকটির পরিচয় জানা গেছে ওই হ্রাল্রম্র-এর সূত্রে। সেই সুন্দরী নাকি নিজেই এসে সব বলে গেছে। বলতে বলতেই হ্রাল্রম্র-কে দেখা গেল পর্দায়।
অন্যান্য ন্রক্তইয়া-দের তুলনায় হ্রাল্রম্র বেশ লম্বা। জিভটা একটু সরু আর কোঁকড়ানো। পায়ের পাতাগুলোও কম ছড়ানো। পিঠের শিরদাঁড়ার নিচ থেকে ওদের তৃতীয় পা-টা থাকে। সেটাও অত পেশীবহুল নয়। হাতের আঙুলগুলো একটু ছরকুটে। কী দেখে ন্রক্তইয়া-রা স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করে জানি না। একে দেখে হ্রল্র প্রেমে পড়েছে যখন, তখন একে ‘নারী’ বলতেই হবে। হ্রল্র-র সুনাম আছে, তোমরা যাকে লেডিকিলার বলো, সেই হিসেবে। আমি অবশ্য হ্রাল্রম্র-কে দেখে একটুও … … যাকগে!
ভাবলাম এবার প্রেমিকপ্রবরকে দেখা যাবে। কিন্তু না… তার পরিচয় জোগাড় হলেও, ছবি পাওয়া যায়নি তখনও। সত্যি শ্রীমান পাকা বৈজ্ঞানিক প্রকৌশলী, নিজের ছবি লুকিয়ে ফেলেছে। বেশিক্ষণ পারবে না, আপাতত পরিচয় পেয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে।
ল্লঋন্রট্রিগ্র ন্রক্তইয়া বিজ্ঞান-পরিষদের বেশ উচ্চপদের সদস্য এবং বয়সও প্রচুর। সমস্ত ন্রক্তইয়া-দের মতোই উনিও জিভবল-পাগল। হ্রাল্রম্র সেখানে মাত্র একশো বছর আগে ফলেছে। (একটা ভুল হয়ে গেছে। আগেই মনে করা উচিত ছিল, তুমি জানবে কী করে, ন্রক্তইয়া-রা এক ধরনের চলনক্ষম উদ্ভিদ।) যে বৃক্ষচতুষ্টয় হ্রাল্রম্র-এর জনক তাঁরা প্রায় দশ হাজার বছর একসঙ্গে এই গ্রহে আছেন। তার আগে তাঁরা র্নগ-জগতের বাইরের কোনও নক্ষত্র-জগতে প্রস্ফুটিত ছিলেন। একটা আচমকা র্নগ-ঝড়ের ডগায় আটকে গিয়ে তাঁরা ন্রক্ত-তে এসে পড়েন। হ্রাল্রম্র তাঁদের তৃতীয় চারা। যখন ল্লঋন্রট্রিগ্র তাকে দেখে, তখন তার তৃতীয় পা গজায়ওনি। কিন্তু তখনই ল্লঋন্রট্রিগ্র ওর জন্য হ্রিপ্র। জেনে আমার বেশ একটু বিরক্তিই লাগল! আরে, এ তো প্রায়, তোমাদের ভাষায়, এক ধরনের যৌনবিকৃতি। তা সে যাই হোক, ঘটনাটা আগে বলি।
সংবাদ-ঘোষকের কথায় জানতে পারলাম, ল্লঋন্রট্রিগ্র সত্যিই পুরো হ্রিপ্র, হ্রাল্রম্র-র সঙ্গে তার কোনওদিনই কোনও সম্পর্ক ছিল না। এমনকি, হ্রাল্রম্র তাকে আদৌ চিনত না। আসলে সারাক্ষণ পড়াশুনা করে আর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে ব্যস্ত থেকে সে বেচারি অন্য কারও সঙ্গে মিশতেই পারেনি। ‘নারী’-জাতীয় কারও সঙ্গে মিলেমিশে কোনও রকম কলম-কাটা কী করে করা যেতে পারে সেটাই সে জানত না। তার একমাত্র বিনোদন ছিল জিভবল। সেই রকম কোনও একদিনের খেলার সূত্রে হ্রল্র-র আশেপাশে যেসব মেয়ে ঘুরে বেড়াত তাদের মধ্যেই ও প্রথম হ্রাল্রম্র-কে দেখে। দেখেই তার লতা-গুল্ম গজাতে থাকে, এবং কী করে কে জানে তার ধারণা হয় হ্রাল্রম্র তার প্রেমে পড়েছে এবং খুব শিগগিরই, মানে আরেকটু বাকল গজালেই, আর তৃতীয় পা তৈরি হলেই হ্রাল্রম্র তার কাছে নিজেই চলে আসবে। অনেকদিন সে এদিকে ডাল বাড়ায়নি। দূর থেকেই গুল্মতে তা দিয়েছে। যেদিন হ্রাল্রম্র একশো বছর পেরিয়েছে, সেদিনই ল্লঋন্রট্রিগ্র তাকে এক ডাল পাতা পাঠিয়ে দিয়েছে। তা দেখে হ্রল্র হেসে কুটিপাটি হয়ে সে সব ফেলে দেয়, আর হ্রাল্রম্র-ও বলে পাঠায় অত মোটা মোটা পাতায় তার কোন আগ্রহ নেই। একথা শুনে ল্লঋন্রট্রিগ্র কিছুদিন পাতা ঝরিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিছু সেই ঝরা পাতা আবার হ্রাল্রম্র-কে পাঠায়— যদি একটু সহানুভূতি পাওয়া যায়। এবার হ্রাল্রম্র হ্রল্র-র কাছ থেকে নিয়ে ক’টা কচি পাতা পাঠিয়ে দেয়। তাতেই ল্লঋন্রট্রিগ্র ক্ষেপে হলুদ হয়ে যায়। এটাও বেশ কিছুদিন আগে। সে এবারে প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করতে থাকে। হ্রাল্রম্র-র উপরে অভিমান থাকলেও, তার প্রতিশোধের লক্ষ্য হয় হ্রল্র। জিভবল খেলা থেকে ওকে ছাঁটাই করাই তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়। ল্রিল্রিক্লক্ল-র আস্তরণ বানানো তার কাছে ছেলেখেলা। এবারে সে অপেক্ষা করে ছিল আজকের খেলার জন্য। এসব খবর দিয়েছে ল্লঋন্রট্রিগ্র-র পরিষদীয় সহ-বৃক্ষরা।
এইবার পর্দায় দেখা দিল ল্লঋন্রট্রিগ্র-এর ছবি। তোমাদের পৃথিবীতে বুড়ো বুড়ো অনেক বটগাছ দেখেছি। ল্লঋন্রট্রিগ্র ঠিক সেইরকম দেখতে। চারদিকে অন্তত গোটা দশেক ঝুরি নেমেছে। মূল গাছটা বেশ শুকনো। জিভটা দীর্ঘ, কিন্তু স্পষ্টতই একেবারে আঠাহীন। তিনটে পা-ই সরু সরু। চোখটা দেখা যাচ্ছে না। এর তো অন্তত পাঁচ হাজার বছর বয়স। এর পাশে হ্রাল্রম্র? ভাবাই যায় না। তবে বুড়ো বৈজ্ঞানিকের কথা ভেবে আমার একটু মন খারাপই করল।
ইতিমধ্যে বার-কতক অবশ্য মাথায় সুড় সুড় করেছে, খোঁচাও মেরেছে। যখন থেকে ক্ষহক-এ খবর পৌঁছেছে এখানে এরকম কাণ্ড হচ্ছে, তখন থেকেই জ্রজ্র-রা আমাকে তাড়া দিচ্ছে ফিরে যাবার জন্য। আসলে এই ধরনের ব্যাপার তো র্নগ-জগতে ঘটে না। পুরো ব্যাপারটাই সকলের অপরিচিত। চিন্তা তো স্বাভাবিক। সেই জন্যেই এখানেও নিরাপত্তার লোকজন প্রথমে ভেবে পাচ্ছিল না কী করা যায়। কী করতে হবে তার প্রশিক্ষণ নিরাপত্তা বাহিনীর আছে, কিন্তু কোনওদিন তা ব্যবহার হয়নি বলে সকলে প্রায় ভুলেই গেছে কী করতে হবে। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই তারা কোনও ব্যবস্থা নেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। অজস্র ‘ফ্রুক্রি’, মানে ছোট্ট ছোট্ট উড়ুক্কু ক্যামেরা, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ল্লঋন্রট্রিগ্র-র আস্তানা খুঁজে বার করতে। পাবলিক অ্যাড্রেসে তার কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে মোটের উপর কোথায় সে আছে সেটা জানা গিয়েছিল। এইবার ফ্রুক্রি-রা জায়গাটা জানিয়ে দিলেই বাহিনী গিয়ে ল্লঋন্রট্রিগ্র-র যন্ত্রপাতি বিকল করে তাকে এইরকম কাজ থেকে বিরত করবে। এমনিতে এই ধরনের কাজের জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ল্লঋন্রট্রিগ্র-র মতো বৈজ্ঞানিক, তাকে শাস্তি দেবার আগে সকলেই ভাবনা-চিন্তা করবে। তাছাড়া ন্রক্তইয়া প্রাণীগণ প্রেমঘটিত ব্যাপার সম্পর্কে খুবই ভাবপ্রবণ। শুধু তাই নয়, তারা এতে একেবারে গদগদ হয়ে পড়ে। কাজেই শাস্তি খুব একটা বিশেষ দেওয়া হবে না। শুধু ল্রিল্রিক্লক্ল ব্যবহারটা খুব নরমভাবে দেখা সম্ভব হবে না। একবার ছেড়ে দিলে এ নিয়ে ঝামেলা হবে। তাছাড়া, সকলকে ভয় দেখিয়ে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর তো শাস্তি একটা দিতেই হবে।
এইবারে আমার প্ল্র-র পর্দায় যা শুরু হল তাতে আমার বেশ বিরক্ত লাগতে লাগল। এত দূর থেকে এসে খেলাটা দেখতে পাচ্ছি না এটাই যথেষ্ট বিরক্তিকর, তার উপরে এই গ্রহের লোকেরা যে এত কথা বলতে পারে আর এত পরনিন্দা-পরচর্চা করতে পারে, তা শুনে শুনে আমার গোড়ালিতে তালা ধরে গেল। আরে, যত বড় প্রেমিকই হোক না কেন, অপরাধ তো একটা করেছে। আমাদের এই জগতে একটা অপরাধকে ছাড় দিলে পরে আরও পাঁচজন কোনও না কোনও অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। এই মূর্খ গাছের দলের একজন তো বলেই দিল ল্লঋন্রট্রিগ্র ঠিক করেছে। সত্যিই তো, আজকাল জিভবল সম্পর্কে শ্রদ্ধা একেবারেই কমে যাচ্ছে। যত রাজ্যের চারাগাছগুলো গিয়ে জিভ-বীরদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। ‘ন্রন্রল্র ক্রদ্র’ এক্ষুনি হ্রাল্রম্র-কে বাধ্য করুক ল্লঋন্রট্রিগ্র-এর কলম-প্রাপক হয়ে যেতে। বোঝো কাণ্ড! এতো নক্ষত্র রাজ্যের সম্পূর্ণ নীতিবিরুদ্ধ কথাবার্তা! বাধ্য করবে! করে দেখ না একবার!
আমি তো এতক্ষণ সেই দুশো ফুট ওপরে নিচের দিকে মুখ করে ঝুলে আছি। এবারে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম একবার কান্না-ভরা কণ্ঠে কী যেন বলে উঠল ঠিক বুঝলাম না। শুধু একবার হ্রাল্রম্র-এর নামটা যেন শোনা গেল। তার পরেই দেখলাম ল্রিল্রিক্লক্ল-র আস্তরণটা আর কয়েকটা ঢেউ তুলে কোথায় মিলিয়ে গেল। যে ক’জন দর্শক তখনও ঝুলে ছিল, তারা ধপাস ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়ল। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে এইবারে শোনা গেল ‘ন্রন্রল্র ক্রদ্র’-র মুখপাত্রের কণ্ঠ।
সমস্ত দর্শক মণ্ডলী এবং ছাউনিতে উপস্থিত জিভ-বীরদের জানানো হচ্ছে, খেলায় যেটুকু বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, তা মিটে গেছে। আমরা এখনই আবার খেলা শুরু করাতে পারি, কিন্তু সকলেই খুব বিচলিত আছেন খেলা বিঘ্নিত হওয়ায়। সেই কারণে আমরা আজকের খেলা স্থগিত রাখছি। এই খেলা আবার শুরু হবে সতেরো ক্ল্রক্ল্র পরে। যেসব দর্শক টিকিটের দাম ফেরত নিতে চান, তারা কাল এসে দাবিপত্র পেশ করবেন। বাকিরা পরের খেলায় নতুন করে টিকিট না কেটেই ঢুকতে পারবেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সকলকেই এক প্যাকেট করে ল্রব্র ভাজা দেওয়া হবে। আপনাদের সকলের বাকি ‘প্রগ্ল’ ভালো কাটুক।
আমার প্ল্র-র পর্দায় আবার ঘোষকের মুখ দেখা দিল।
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিক ল্লঋন্রট্রিগ্র স্বাস্থ্যের কারণে একটু আগে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে এখন থেকে তিনি বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক র্নগীয় নন্দনতত্ত্বে মনোনিবেশ করবেন এবং একটি বয়স্ক-অরণ্য স্থাপন করে সেখানে অবসর জীবন যাপন করবেন।
ব্যক্তিটির কথা শুনে বোঝা গেল অনেক কিছুই চেপে যাওয়া হল। যাই হোক, আমি তো আর এখানকার কেউ নই, এই নিয়ে আমার মাথা ঘামাবার কোনও দরকার নেই। আমি এবারে প্ল্র-কে নির্দেশ দিলাম, নিয়ে চলো বাড়ি ফেরার শাটল যানে। প্রায় তৎক্ষনাৎ পৌঁছে গেলাম আমার সিটে। মাত্র দুই প্তক্রীম্র পথ। একটা স্বপ্ন দেখারও সময় হবে না।
আমার প্ল্র-র কপালের গ্ল্র-টাকে বললাম, দেখ তো কোনওরকমে একবার ল্লঋন্রট্রিগ্র-কে খুঁজে দেখা যায় কিনা। এক লহমায় র্নগ-জগতের সব চাইতে শক্তিশালী বৃহৎ গ্ল্র-র সঙ্গে যোগাযোগ করল সে। দেখতে না দেখতে আমার প্ল্র পর্দায় ফুটে উঠল যার ছবি তাকে দেখলে মন খারাপ হবেই। অতগুলি ঝুরি হারিয়ে গেছে। মূল কাণ্ডটাকে জড়িয়ে আছে তারা। আর সাধারণ পাঁচটা লম্বা গাছের মতই দেখাচ্ছে সেটাকে। হারিয়ে গেছেন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক ল্লঋন্রট্রিগ্র।
আমার টীকা:-
আপনারা দেখেছেন, আমি ক্ষীক্র ভাষার সব ক’টা শব্দই ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। কিন্তু এই শব্দগুলোর— টিংটিংটিংটিং, ন্নন্নন্নন্ম, বফবফবফব, য্রয্রয্রয্র— মানে বলা যাবে না। এই গল্প তাহলে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পড়তে পারবেন না। সম্পাদক এই গল্পকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।