প্রিয়ক মিত্র
গত সংখ্যার পর
“কেমন আছ নন্দলাল?”
ছিলিমে সুখটান দিতে গিয়ে বিষম খেল নন্দলাল। এ যে অবিশ্বাস্য।
এক পুলিশের বড়কর্তা বলেছিলেন যে প্রশাসনিক কাজে পুলিশ যতই দক্ষ হোক না কেন, গুপ্তচরবৃত্তি, মাথা খাটানো এসবে বাঙালিরা বেশি দড়। এর কয়েকবছরের মধ্যেই পুলিশের বাঙালি গোয়েন্দা হবেন প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। তার চর হিসেবেও কাজ করবে নন্দলাল। ত্রৈলোক্যা নাম্নী এক বেশ্যা, যে আরও পাঁচজন বেশ্যাকে খুন করে ত্রাসের সঞ্চার করবে, তাকে গ্রেপ্তার করার কাজে প্রিয়নাথকে যারা সাহায্য করবে তাদের মধ্যে একজন নন্দলাল। তবে এসব খানিক পরের কথা। জেমসনের প্রিয় গুপ্তচররা প্রায় সবাই ছিল বাঙালি। তার মধ্যেও তার অন্যতম প্রিয় এই নন্দলাল।
নন্দলাল এতকাল বাদে দেখল সাহেবকে।
বুড়ো হয়ে গেছেন জেমসন সাহেব। আগের মতন সেই তেজ তার চেহারায় আর নেই বটে। তবে চোখের দৃষ্টি এখনও রীতিমত ধারালো।
নন্দরাম চৌধুরীর যাবতীয় খবর জেমসনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল নন্দলাল। কিন্তু নন্দরাম এলেমদার বাবু, তাকে এত সহজে কব্জা করা গেল না! মাঝখান থেকে জেমসনের চাকরিটি খোয়া গেল।
নন্দলাল মনে মনে হাসে। এখন রানির আমল। কোম্পানির আমলে যেসব বাবুরা দানাপানি পেত নন্দরাম তাদেরই একজন। অথচ রানির আমলেও তার প্রতিপত্তি একফোঁটাও কমল না। খুনখারাপি করেও সে বহালতবিয়ৎ-এ রয়েছে। অথচ জেমসন, যার জাত কিনা এখন দেশের মাথায় বসে, তাকেই চাকরি খোয়াতে হল।
“এজ্ঞে সাহেব সব কুশল তো!”
ঢিপ করে একটা প্রণাম করে নন্দলাল।
জেমসন জিজ্ঞেস করল, “এখানে কী ধান্দা!”
নন্দলাল একবার তাকায় ইন্দ্রকমলের বাড়ির দিকে। তারপর মাথা চুলকে ‘হেঁ হেঁ’ করে বলে, “এজ্ঞে হুজুর, আপনার থেকে লুকোবনি। এই বাবুর ওপর একটু নজর রাখতে হবে আর কী!”
জেমসনের ভ্রু কুঁচকোল।
“কে নজর রাখার হুকুম দিয়েছে তোমায়? পুলিশ?”
“ইয়ে… মানে…”
“বলো!” ধমকাল জেমসন। “আমার সঙ্গে চালাকি করে লাভ হয় না সেটা তুমি জানো!”
“আপনার কাছে গোপন রেখে আমার কী লাভ বলুন। তাহলে বলেই দি। এজ্ঞে রমাকান্ত রায়ের নায়েব। বিশ্বনাথ!”
সচকিত হল জেমসন! তার সন্দেহ আরও দানা বাঁধল।
“মিনসেগুলোর মেয়েমানুষের দোষ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে কী বলব হুজুর। একজন দিনমানে মেয়েছেলে লুঠ করে, সক্কলের চোখের সামনে দিয়ে। আরেকজন রাতের আঁধারে তাকে বাড়ি বয়ে নিয়ে আসে। ছ্যা ছ্যা ছ্যা!”
জেমসন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। রমাকান্ত আবার কী ফন্দি আঁটছে? লেনদেন তো শেষ। তাহলে আবার এখানে গুপ্তচর পাঠিয়েছে কেন?
“তবে শুনলুম কত্তা, রমাকান্ত ভালোই দাঁও মেরেছে।”
জেমসন সন্দিহান চোখে তাকাল নন্দলালের দিকে।
“ইন্দ্রকমলের আংটি! সিংহ পরিবারের অভিজ্ঞান! সেই আংটি ইন্দ্রকমল হাতে করে তুলে দিয়েছে ওই চামার রমাকান্তর হাতে। ভাবুন, ওই এক মাগীর জন্য…”
জেমসন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বা রে লোভ! ওই আংটির কথা গোটা কলকাতাই জানে। জেমসন নিজে কখনও ও আংটি চোখে দেখেনি। কিন্তু তার মাহাত্ম্যর কথা অন্য সকলের মতন জেমসনও জানে। সেই আংটি রমাকান্তর হাতে তুলে দিল ইন্দ্রকমল। তাও এক নিরীহ গ্রাম্য রমণীর জন্য!
আর রমাকান্ত একটা মানুষ বেচে দিল ওই আংটির জন্য! চামার! রমাকান্তকে চামার বললে চামারের অপমান হয়!
সে ভাবে বোবা লোকটির কথা। তার স্ত্রীকে, তার প্রেয়সীকে সে ভালোবাসে। হাজার অত্যাচার, অনাহার, দারিদ্র্য আর ক্লেশের মধ্যেও সে তার স্ত্রীকে ভালোবেসেছে। তার স্ত্রী-এর জন্য সে জানপ্রাণ লড়িয়ে দিতে পারে। দেশের একজন কৃষকের সৎ ভালোবাসা অর্থের জোরে, বৈভবের জোরে কেনাবেচা করছে এই উড়নচণ্ডী বাবুর দল! এতটাই পাষাণ এরা?
নিজের জাতকেই এইজন্য দোষে জেমসন, মনে মনে। তারাই তো অর্থের লোভে এই কৃষকদের রক্ত চুষেছে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে জমিদারদের করে তুলেছে ফুর্তিবাজ কামুক লম্পট রক্তচোষা বাবু, আর শত অপরাধ করেও খুঁটির জোরে এরা পার পেয়ে যাবে। ওদিকে গ্রামেগঞ্জে নীলচাষিদের বিপক্ষে যে জমিদাররা দাঁড়াচ্ছে এখন, তাদের কিন্তু ছেড়ে কথা বলছে না ইংরেজরা।
জেমসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। মেয়েটাকে ছাড়িয়ে আনতেই হবে।
মুহূর্তের মধ্যে সে ভেবে নিল নন্দলালকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। তার পুরনো সহচরের ওপর সে সম্পূর্ণভাবে ভরসা করতে পারে।
প্যাটন আর চার্লি অস্থিরভাবে পায়চারি করছে নীলকুঠির ভেতরে।
এমন বেয়াদবি তারা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তাদের চোখের সামনে দিয়ে একটা চাষিকে তাদের চাবুকের মারের মুখ থেকে তুলে নিয়ে গেছে কালীনাথ। হুমকি দিয়ে গেছে, তাদের বউকেও উদ্ধার করবে কালীনাথ, সাহেবদের হারেমে ঢুকে। সাহেবদের ক্ষমতা থাকলে আটকাক।
এত বড় দুঃসাহস!
প্যাটনের মন চাইছে এক্ষুনি কুঠিতে তুলে এনে বেধড়ক ধোলাই দিয়ে কালীনাথের ইহলীলা সাঙ্গ করে।
কিন্তু কালীনাথের সঙ্গে এখন গোটা গ্রামের লোক একজোট!
আজকের ঘটনার পর তাদের সাহস আরও বেড়েছে।
এখন কালীনাথের গায়ে হাত উঠলে তাদের কপালে দুঃখ আছে-একথা ভালোই বুঝতে পারছে প্যাটন ও চার্লি।
প্যাটন তার স্থির রক্তচক্ষু দেওয়ালে নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত ঘষে নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠল, “ডার্টি নিগার!”
চার্লি ইজিচেয়ারে মাথা এলিয়ে সিলিং-এ তাকিয়েছিল, আর মাঝেমধ্যে অল্প ব্র্যান্ডিতে চুমুক মারছিল পেয়ালা থেকে। একবার নিস্পৃহভাবে সে তাকাল প্যাটনের দিকে। তারপর আবার সিলিং-এ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
“আমায় তলব করেছিলেন হুজুর?”
প্যাটন ঘাড় ঘোরাল দরজার দিকে।
দরজায় দাঁড়িয়ে দেবীলাল। নীলকরদের খাস দেওয়ান। তার মতন অমানুষ খুব কম আছে। চাষিদের সর্বনাশে সে সিদ্ধহস্ত। তার নজর এড়িয়ে এখানে কোনও চাষি নিশ্বাসও ফেলতে পারে না। জুলুম যা হয় মঙ্গলগঞ্জে, তার সিংহভাগের কাণ্ডারী দেবীলাল। মঙ্গলগঞ্জকে চাষিদের নরক বানিয়ে তোলার পেছনে তার অবদান সবথেকে বেশি।
জমিদারবাড়ির দালানে গ্রামবাসীরা ঘিরে রয়েছে কালীনাথকে। মাঝে একটি লম্ফ জ্বলছে। কালীনাথ মধ্যমণি হয়ে বসে।
“তোমরা হয়তো শুনেছ, কদিন আগেই দীনবন্ধু মিত্তির বলে একজন ‘নীলদর্পণ’ বলে একখান নাটক লিখেছে। সে নাটক নিয়ে মামলা চলছে এখন আদালতে। সেই নাটক থেকে সবাই জানতে পেরেছে যে ফিরিঙ্গিরা কী জুলুম আরম্ভ করেছে এখানে। দাদনের টাকা দিয়ে চাষিদের দিয়ে জোর করে চাষ করাচ্ছে, আর দাদন শোধ করতে না পারলে বিনা দাদনেই চাষ করতে হচ্ছে। আর গোদের ওপর বিষফোঁড়া এই দেওয়ানগুলো। শম্ভু চাষ করতে রাজি হয়নি বলে দেবীলাল লোক লাগিয়ে ওর ঘর থেকে বউকে তুলে নিয়ে গেছে নীলকুঠিতে। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে শম্ভু আজ মার খেয়েছে। এসব কথা বড় সাহেবদের কানে গিয়ে পৌঁছচ্ছে। সবাই জানতে পারছে। তোমাদের দুর্দশা শিগগিরি দূর হবে।”
“হক্কলে জানতি পেরে আমাগো লাভ কী হইছে? আমরা যে তিমিরে সে তিমিরেই আছি!”
বুড়ো মদন। হাড় জিরজিরে চেহারা। কালো আবলুশ কাঠের মতন গায়ের রং। চোখের কোলে কালি। কিন্তু তার তেজ কী ভয়াবহ তা গাঁয়ের সকলে জানে। আর তাছাড়া সে মারণ উচাটন করে বলে একটা রটনা আছে, মোদ্দায় গাঁয়ের লোকজন খানিক সমঝে চলে তাকে।
কথার মাঝে বাধা পেয়ে একটু বিরক্ত হল কালীনাথ।
“নীলকুঠিতে যে এত জোরজুলুম হচ্ছে তা তো বাইরের লোক জানত না। এখন জানছে। আর ভালো ইংরেজরাও তো আছে। তাদের কানে খবর পৌঁছলে…”
আবার থামতে হল কালীনাথকে। সেই মদনের জন্যই।
তার গলাটা কর্কশ। আর রেগে গেলে তার চোখের দিকে তাকানো যায় না। মনে হয় শ্মশানের চিতা জ্বলছে চোখের মণির আশেপাশে।
“সাহেবরা কহনও ভালো হইতে পারে না কত্তা! উয়ারা আমাগো ঘরের মাইয়াদের আব্রু নষ্ট করে, আমাদের উপর এত্ত জোরজুলুম করে। আমাগো ভাতে মারতাছে। নীলের বিষ দিয়া আমাগো মারতে লাগছে। আর আপনি কইতে আছেন উয়ারা ভালো!”
কালীনাথ একটু ফাঁপরে পড়ল।
“আহা! সবাই খারাপ কেন হবে? ধরো দেবীলাল তো আমার মতই! দেবীলাল আর আমি কী এক?”
মদন হাসতে শুরু করল হঠাৎ। বাকি গ্রামবাসীরা হাঁ করে তাকিয়ে তার দিকে। কালীনাথ এবার সন্দিহান হল। বলতে কী চায় বুড়ো?
“এতে হাসার কী আছে?”
“অপরাধ লিয়েন না কত্তা। কিন্তু এতদিন অবধি আপনেরাই ঠেঙিয়েছেন। এখন সাহেবরা ঠেঙাচ্ছে।”
কালীনাথের চোখ একবার ধক করে জ্বলে উঠে নিভে গেল।
সেও হাসল খানিক। গ্রামবাসীরা কী বুঝল কে জানে। কিন্তু কালীনাথকে হাসতে দেখে এই সংকটের মুহুর্তেও একটা হাসির কলরোল উঠল।
আর ঠিক তার মধ্যেই এক দারোগা, দুই হাবিলদার সমেত দালানে প্রবেশ করল দেবীলাল।
“কালীনাথ রায়, তোমার যে শমন এসেছে!”
ক্রুর হেসে বলল দেবীলাল।
কালীনাথ হতচকিত হয়ে তাকিয়ে রইল দেবীলালের দিকে। দেবীলালের বাবা ছিল তাদেরই নায়েব। দেবীলাল বড়ও হয়েছে তাদের কাছারিবাড়িতে। এখন সে সাহেবদের দালালি করছে।
কালীনাথ উঠে দাঁড়াল। গম্ভীর গলায় বলল, “কী বলতে চাও!”
“বলতে কিছুই চাই না। দারোগাবাবু তোমায় গ্রেফতার করতে চান, তাই তাকে নিয়ে এলাম।”
গ্রামবাসীদের মধ্যে কলরোল উঠল।
“কেন গ্রেফতার করতে চান?” শান্ত গলায় বলল কালীনাথ।
“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ যে তুমি নীলকুঠির এক কর্মচারীর গায়ে হাত তুলেছ আজ সকালে। তারপর প্যাটন সাহেবদের কাজে বাধা দিয়েছ।”
“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ তুমি মঙ্গলগঞ্জের জমিদারবাড়িতে দাঁড়িয়ে আছ!”
দাঁতে দাঁত চেপে বলল কালীনাথ।
হো হো করে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল দেবীলাল। তার দেখাদেখি দারোগারাও।
“ফুটো কলসির এত আওয়াজ না দেখলে যে বিশ্বাসই হত না। জমিদার! হাহ!” তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথাটা বলে আবার হাসতে লাগল দেবীলাল।
গ্রামবাসীদের রাগের পারদ চড়ছে। সবাই রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে দেবীলালের দিকে।
কালীনাথ ঠান্ডা গলায় বলল, “পরোয়ানা কই?”
হাসি থামল দেবীলালের।
কালীনাথের দিকে কয়েককদম এগিয়ে এসে সে বলল, “আমাদের পরোয়ানা লাগে না কালীনাথ!”
তার গলায় চাপা হুঙ্কার।
“তবে রে হারামজাদা!”
পরিত্রাহি চিৎকার করে দেবীলালের দিকে এগিয়ে এল মদন, এবং দেবীলালের একটা থাপ্পড়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সে ভুলুণ্ঠিত হল।
সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা প্রায় চড়াও হল দেবীলালের ওপর।
দারোগা আর হাবিলদাররা এগিয়ে এল দেবীলালের উদ্ধারকল্পে।
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে চিৎকার করল কালীনাথ।
“থামো!”
কালীনাথের চিৎকারে সবাই স্তম্ভিত হয়ে তার দিকে ফিরল।
কালীনাথ শান্ত গলায় আবার বলল, “থামো তোমরা!”
তারপর দেবীলালের দিকে এগিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বলল, “গ্রেফতার করো আমায়!”
গ্রামবাসীরা হায় হায় করে উঠল।
দেবীলাল রাগে বিস্ময়ে কাঁপছিল। সে দারোগাকে আদেশ দিল, “শুধু একে নয়। এই ঘেয়ো কুত্তাগুলোকেও হাতকড়ি পরিয়ে নিয়ে চলো!”
“খবরদার!”
হুঙ্কার দিল কালীনাথ।
“আমায় গ্রেফতার করতে চাইলে করো। আমার প্রজাদের গায়ে যেন হাত না ওঠে!”
“প্রজা! বাঁশবনে শেয়াল রাজার আবার প্রজা!”
হাতের কনুই নিয়ে নাকের নীচে থাকা ঘাম মুছল দেবীলাল। তারপর দারোগাদের হুকুম দিল, “আগে একে নিয়ে চলো। তারপর দেখছি বাকিদের কী ব্যবস্থা করা যায়!”
কালীনাথকে হাতকড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। যাওয়ার আগে দেবীলাল পিছু ফিরল গ্রামবাসীদের দিকে।
“এক মাঘে শীত যায় না! এই বলে রাখলুম!”
বলে গটগট করে সে চলে গেল দালান ছেড়ে।
গ্রামবাসীরা হতভম্ব হয়ে ছিল।
প্রথম মুখ খুলল লক্ষণ চাষি। ধীর স্বরে সে বলল,
“গেল! আমাগো মাজা ভাইঙ্যা গেল!”
“না!”
কড়া স্বরে বলল মদন!
“আমাগো মাজা শক্তই আছে! আমাগো কাম অহনও ফুরোয় নাই!”
একটু হলেও গ্রামবাসীদের যেন রক্ত গরম হল মদনের কথা শুনে।
আবার আগামী সংখ্যায়