দেবাশিস্ ভট্টাচার্য
থ্রিলারের রিভিউ লিখতে বসব, এমন বাসনা কোনওদিন মনে পোষণ করেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু, সম্পাদকীয় অনুজ্ঞায় নাকি বাঘেও ধান খায়, আর কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলনের কর্মী যে থ্রিলারের রিভিউ লিখতে কিবোর্ড বাগিয়ে বসবে, সে তো অতি সামান্য কথা। ইয়ে, শুধুই সম্পাদকীয় অনুজ্ঞা, নাকি যুক্তি-তক্কো-গপ্পের আকাঙ্ক্ষাও ছিল মনের মাঝারে? চলুন, দেখা যাক তবে।
গল্পকার দেবতোষ দাশ এক পরিচিত নাম, তাঁর লেখা থ্রিলার উপন্যাস ‘বিন্দুবিসর্গ’ প্রকাশিত হয়েছে আজ প্রায় বছর দুয়েক হয়ে গেল। যারা প্রকাশ করেছে সেই ‘পত্রভারতী’-ও বাংলা প্রকাশনায় এক পরিচিত নাম। সুন্দর বাঁধাই ও প্রচ্ছদে শোভিত উপন্যাসটি প্রকাশের পর কিঞ্চিৎ সাড়া ফেলেছিল। কৃতিত্ব-পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে, বইটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম প্রকাশিত হবার পর ওই বছরেরই নভেম্বরে আবারও ছাপা হয়।
বইয়ের গোড়ায় ‘কথামুখ’ অংশে লেখক জানাচ্ছেন, বাংলায় থ্রিলার লেখার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছেন ড্যান ব্রাউন-এর ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’ পড়ে। কথাটা মান্যতা পেয়েছে মান্যগণ্যদের কাছেও। এক অগ্রগণ্য কবি ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বাংলায় কেন ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এর মতো থ্রিলার লেখা হয় হয় না, সে নিয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ নাকি প্রশমিত করতে পেরেছে এই উপন্যাসটি। এটিকে ‘আনপুটডাউনেব্ল্’ বলে শংসায়িত করে কবি বলেছেন, এর মধ্যে, “পাণ্ডিত্যকে চিনির পানা করে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ঝাঁঝালো আরকের মত…।”
পাণ্ডিত্য? থ্রিলারে? আজ্ঞে হ্যাঁ, পাণ্ডিত্যই বটে, তা না হলে আর ড্যান ব্রাউন সায়েবের সঙ্গে তুলনা অইব ক্যাম্বায়?
বইটি ঘণ্টাচারেক সময় নিয়ে একটানা পড়ে উঠতে পেরেছিলাম। ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এর সঙ্গে অন্তত একটি মিল আমারও যে চোখে পড়েনি, এমন নয়। কী মিল, সেটা শেষে বলব। তার আগে, বইটি পড়ে কী মনে হল তার মোদ্দা কথাটা ভালো করে বলে নেওয়া দরকার, এবং সেটা করা দরকার দুটো ভাগে। এক, ‘পাণ্ডিত্য’, এবং দুই, গল্পটুকু। অর্থাৎ, এর মালমশলা হিসেবে যে সব তথ্য ও তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো কতদূর ঠিকঠাক, এবং, নিছক গল্প হিসেবেই বা এটি কেমন, পড়তে গিয়ে প্রকৃত থ্রিলারের টানটান উত্তেজনা টের পাওয়া যায় কিনা।
কেউ বলতে পারেন, প্রথমটি বাদ দিলেও তো হয়— তন্ত্রমন্ত্র-ভূতপ্রেত-ইউফো-মিকি মাউস-রাক্কসখোক্কস কত কিছু নিয়েই তো গল্প হতে পারে— গল্পটা ভালো লাগলে ও সবের সত্যি-মিথ্যে নিয়ে মাথা ঘামায় কোন বেরসিক?
উঁহু, না। ভূতপ্রেত আর মিকি মাউসের গল্পে ‘ট্রুথ ক্লেম’ বা সত্যের দাবি থাকে না, কিন্তু এখানে তা আছে ভীষণভাবেই। ‘কৃতজ্ঞতা স্বীকার’ পৃষ্ঠায় ‘মহর্ষি কলিম খান’ এবং ‘মহর্ষি রবি চক্রবর্তী’-র কাছে ঋণ স্বীকার করা হয়েছে, কারণ, তাঁদের ‘গবেষণালব্ধ ফল’ এ উপন্যাসে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া, ওই পৃষ্ঠাতেই আছে ‘সহায়ক বইপত্র ও তথ্যসূত্র’ হিসেবে খান পঁচিশেক বইয়ের তালিকা। আবার, এই দুই ‘মহর্ষি’ স্বয়ং এ উপন্যাস ‘অনুমোদন’ করেছেন। বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে, “ধর্ম-পুরাণ-মহাকাব্য ও ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস তছনছ-করা বিস্ফোরক মহা-উপন্যাস।” কাজেই, এখানে সত্যি-মিথ্যের প্রশ্নকে সিরিয়াসলি না নিয়ে উপায় কী?
“বিন্দুবিসর্গ”, দেবতোষ দাশ, পত্রভারতী, ২০১৭, ৩৭৫ টাকা
উপন্যাসের গল্পটা একটু বলে না নিলে বিষয়বস্তুতে ঢোকা অসম্ভব। কবীর খান একজন অপেশাদার গবেষক, যিনি আবিষ্কার করেছেন এক আনকোরা নতুন ভাষাতত্ত্ব, এবং সেই ভাষাতত্ত্বের সাহায্যে পৌরাণিক কাহিনীর প্রতীকের আড়াল ভেঙে উদ্ধার করেছেন প্রাচীন ভারতের এক অচেনা ইতিহাস, যা নাকি আঘাত হানবে হিন্দুত্ববাদী গর্বে। এক নামী প্রকাশনা-সংস্থার কর্ণধার সে গবেষণা ছাপতে চান, কিন্তু তাতে আতঙ্কিত হয়ে হিন্দু-সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তাঁকে খুন করে দেয়, আর কবীর খানকেও খুন করে তার সমস্ত কাজকর্ম লোপাট করে দিতে চায়। পুলিশের সন্দেহ প্রাথমিকভাবে গিয়ে পড়ে প্রকাশকের সেক্রেটারি নিবেদিতা আর কবীর খানেরই ওপর, তাই তারা দুজন ক্রমাগত পালিয়ে বেড়ায়, পুলিশ ও সন্ত্রাসী উভয়ের হাত থেকেই বাঁচতে। পুলিশের ডিসিডিডি রজত রায়, তার গোয়েন্দাগিরিপ্রবণ বন্ধু ধরণী কয়াল ওরফে ‘ডিকে’, আর নিবেদিতার চেষ্টায় শেষপর্যন্ত কীভাবে বাঁচানো গেল কবীর খান ও তাঁর পাণ্ডুলিপি, সে নিয়েই উপন্যাস, প্রায় সাড়ে তিনশো পাতার।
লেখকের কলমটি ভাল, ছোট ছোট সহজ বাক্যে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তিনি, পরিস্থিতি-বর্ণনা ও কথোপকথনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা দিতে পারেন চরিত্রদের। পড়া যায় তরতর করে। কিন্তু হলে কী হবে, তাঁর ‘মহর্ষি’-দের ভুয়ো ‘ভাষাতত্ত্ব’ ও ‘ইতিহাস’ তিনি এমন আশ্চর্য নিষ্পাপ সারল্যের সঙ্গে গিলেছেন যে, ততটা-অনবহিত-নন এমন যুক্তিমনস্ক পাঠক প্রতি পদে পদেই উত্ত্যক্ত বোধ করবেন। কবীর খান যখন গল্পের ঘটনাবলির ফাঁকে ফাঁকে এক অদ্ভুত গাম্ভীর্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর উদ্ভট তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে থাকেন মুগ্ধ শ্রোতাদের সামনে, তখন যুক্তিশীল পাঠক হেসে উঠবেন এই গুরুগম্ভীর অর্থহীনতায়, আর থ্রিলারের উত্তেজনার ওখানেই বেজে যাবে বারোটা পাঁচ। একই ঘটনা ঘটে প্রকাশক-সাংবাদিক বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুবেশী সন্ত্রাসী নীলকণ্ঠের দীর্ঘ কথোপকথনের সময়েও। তার কিছু দৃষ্টান্ত এবার পেশ না করলেই নয়। ১১১ পৃষ্ঠায় ‘জানা’ যাচ্ছে, ‘হিন্দু’ শব্দটাই নাকি আসলে ‘দলিত’ বোঝায়, কারণ, ‘হীন’ শব্দ থেকে ‘হিন্দু’ সৃষ্টি করেছিল প্রাচীন ভারতের এলিট-রা। ১১৬ পাতায় ‘জানা যাচ্ছে’, প্রাচীন ভারতের ‘মহান’ বা ‘মহ’ নাকি বিদেশে গিয়ে ‘হোমো’ (HOMO) হয়ে গেছে, এবং সেখান থেকেই নাকি ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’! ‘হোমো’ মানে যে মানুষ নয়, এ হল ‘জেনাস’ বা ‘গণ’, অর্থাৎ মানুষ জাতীয় প্রাণীদেরকে একত্রে বোঝাবার জন্য তৈরি একটি জীব-বৈজ্ঞানিক পরিভাষা, কাজেই তাকে কথার চাতুরিতে ‘মহান’ বানানো হাস্যকর, এ কথাটা ‘মহর্ষি’-দের কাছে মোটেই পৌঁছয়নি। পরের পাতাতেই আছে আরেকটি জরুরি সংবাদ— ভারতের ‘মনুঃ’ (=MAN-HU) একইভাবে বিদেশে উল্টে গিয়ে হয়েছে ‘হিউম্যান’। ওই পাতাতেই আছে, ‘মহানদের দ্বারা নির্মিত সমাজবৃক্ষ বা দারু’ নাকি শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মহান-জ-দারু’! ১৬৬ পাতায় পাচ্ছি, প্রাচীনকালে বেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিদাররা ভারত থেকে বিতাড়িত হয়, এবং তারাই নাকি আজকের ‘বেদে’ সম্প্রদায়, আরবে ‘বেদুইন’, ইউরোপে ‘জিপসি’। ‘জিপসি’ মানেই নাকি ‘বিতাড়িত বৈদিক’, এবং তারাই নাকি মিশরীয় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে। বলা বাহুল্য, এ সবই হল মহর্ষিসুলভ নিপাট অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত বিশুদ্ধ আগড়ম বাগড়ম মাত্র। আরবি বেদুইন-দের সঙ্গে এদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। ইউরোপের জিপসি-রা আদতে ভারতের লোক ঠিকই, কিন্তু তাদের ভারত ছাড়ার সঙ্গে ‘বেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা’-র মোটেই কোনও সম্পর্ক নেই, আর মিশরীয় সভ্যতা তাদের দ্বারা সৃষ্টি হবার প্রশ্নই ওঠে না। এরা ভারত ছাড়ে ছশো থেকে হাজার খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, আর মিশরীয় সভ্যতা খুব কম করে ধরলেও পাঁচ হাজার বছরের পুরনো! ‘জিপসি’ শব্দটির সঙ্গেও ‘বেদ’-এর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাচীন মিশরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম ছিল ‘হ্যুট্-কা-প্তাহ্’, অর্থাৎ কিনা, প্রাচীন মিশরীয় দেবতা ‘প্তাহ্’-এর আত্মার শান্তির স্থান (মানে সাদা বাংলায় মন্দির)। মিশরাগত প্রাচীন গ্রিকরা কথাটা উচ্চারণ করতে পারত না বলে একটু নিজেদের মতো করে নিয়ে তাকে বলত ‘ঈজিপ্তোস’, যা থেকে এসেছে আধুনিক ‘ইজিপ্ট’ শব্দটি। মধ্যযুগের ইউরোপীয়রা ভারত থেকে যাওয়া এবং ‘রোমানি’-ভাষায় কথা বলা সেইসব যাযাবর মানুষদের নাম দিয়েছিল ‘জিপসি’, যেহেতু তারা ভাবত ওরা এসেছে ‘ইজিপ্ট’ থেকে।
২৫৫ পৃষ্ঠায় পাচ্ছি, ইংরেজি ‘goods’ নাকি এসেছে বাংলা ‘গু’ থেকে! ২৬৬ পাতায় পাচ্ছি, ‘মল’-এর সংবাদ ছড়ায় বলেই বাতাসের নাম হয়েছে ‘মলয়’!
এত কিছুই যখন হল, তখন বিগ ব্যাং আর কোয়ান্টামতত্ত্বই বা বাকি থাকে কী করে? ১৬১ পাতায় ‘জানা যাচ্ছে’, মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে বিগ ব্যাং-এর যা ভূমিকা, মানবসভ্যতার ক্ষেত্রে ‘দক্ষযজ্ঞেরও’ নাকি ভূমিকা একই। ২০৮ পাতায় দেখছি, “দর্শন হিসেবে অদ্বৈতবাদ এতটাই উন্নত যে কেবলমাত্র একালের কোয়ান্টাম-ফিজিক্সই এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।”
না, এত সব আশ্চর্য দাবির কোনও প্রমাণ দেবার চেষ্টা কোথাওই নেই। বস্তুত, নতুন কিছু দাবি করতে গেলে যে ‘প্রমাণ’ বলে একটা জিনিস লাগে, এই খবরটাই এই মহর্ষিদেরকে কেউ দেননি। ফলত, প্রামাণ্য আধুনিক ভাষাতত্ত্ব-ইতিহাস-বিজ্ঞান-যুক্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্করহিত এইসব উন্মত্ত প্রলাপ অবাধে চলতে থাকে পাতার পর পাতা জুড়ে, বাংলা-হিন্দি-সংস্কৃত-ইংরেজি-গ্রিক-ল্যাটিন থেকে এলোপাথারি শব্দচয়ন করে সেগুলো যেমন খুশি ঘেঁটে চটকে এক বিচিত্র বস্তু নির্মিত হতে থাকে। পড়তে গিয়ে এইসব উৎপাত মেনেও নেওয়া যায় না, আবার এগুলো সাময়িকভাবে উপেক্ষা না করলে পাঠও এগোয় না। ক্রমাগত এইসব উপেক্ষা করে করে সাড়ে তিনশো পাতা টানা পড়ে যেতে হলে এক সময় নিজেকেই উন্মাদের মত লাগে।
তবু, সেও না হয় সহ্য করলাম। কিন্তু, গল্পটা কেমন, পড়তে কেমন লাগে? দুঃখের বিষয়, এখানেও সব মাটি হয়ে যায় বেসিক লজিকের অভাবে। এইসব উদ্ভট আগড়ম-বাগড়মকে ভয় পেয়ে হিন্দুত্ববাদীরা খুনখারাপি শুরু করে দেবে, এই ব্যাপারটাই হাস্যকর লাগে। আর, হিন্দুত্ববাদী ইতিহাসবোধকে নস্যাৎ করতে তো আমাদের প্রামাণ্য পেশাদারি ইতিহাসচর্চাই যথেষ্ট, সেখানে এক আখাম্বা ঘোলাটে নতুন ইতিহাস বানাবার দরকারটাই বা কোথায়? এমনকি, এই প্রশ্নগুলো যদি সরিয়েও রাখি, তাহলেও তো পদে পদে গোলমাল। অত কষ্ট করে কবীর খানকে খুন করে পাণ্ডুলিপি হাতানো কি পণ্ডশ্রম নয়, যেখানে সহজেই তা ফটোকপি করে অনেককে দিয়ে দেওয়া যায়, বা স্ক্যান করে কয়েকজনকে ইমেল করে দেওয়া যায় (যদিও এখানে সে চেষ্টা করার কথা কারুরই মাথায় আসেনি)? পাকা সন্ত্রাসী নীলকণ্ঠ যখন প্রকাশক বিল্বদল-এর ল্যাপটপ থেকে কবীর খানের ফাইলগুলো ডিলিট করল, তখন ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক-টা ‘লো লেভেল ফর্ম্যাট’ করল না কেন— ডিলিট করা ফাইল পুলিশের কমপিউটর-বিশেষজ্ঞরা উদ্ধার করে ফেললে তার সমস্ত অপারেশনটাই কি পণ্ডশ্রম হয়ে যাবে না? নিবেদিতাই বা কবীর খানকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পালাতে গেল কোন বুদ্ধিতে— সন্দেহবশে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়াটা কি সন্ত্রাসীর হাতে খুন হবার চাইতেও খারাপ ব্যাপার?
এইভাবে, সুসংহত একটি যৌক্তিক কাঠামোর অভাবে কেবলই মনে হতে থাকে, উপন্যাসের চরিত্রেরা বুঝি সকলেই নির্বুদ্ধিতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে!
ইয়ে, ড্যান ব্রাউনের সঙ্গে মিলটা তবে কোথায়? একমাত্র মিলটি বোধহয় এইখানে যে, ব্রাউন সায়েবও তাঁর উপন্যাসে ব্যবহৃত তথ্যাবলি পুরোপুরি প্রামাণ্য বলে দাবি করার পরেও বিস্তর বাজে গল্প চালিয়েছেন, স্থানাভাবে এখানে আর সে কথায় ঢোকা গেল না।
কিন্তু, তবে কি এতে ‘থ্রিল’ বলতে কিছুই নেই ? আজ্ঞে, এত হতাশ হবেন না, থ্রিল আছে বই কি।
উপন্যাসের নাম ‘বিন্দুবিসর্গ’। নামটা এমনি এমনি দেওয়া নয়। মৃত্যুর সময়ে দেওয়া শেষ বিবৃতিতে প্রকাশক বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় একটি সংকেত বলে যান, এবং বিচিত্র সব তন্ত্রশাস্ত্রীয় অং বং চং পেরিয়ে সে সংকেত উদ্ধার হয়, সেখানে ‘বিন্দু’ এবং ‘বিসর্গ’ এই কথাদুটোর কিছু ভূমিকা ছিল (সবই তন্ত্রমন্ত্রের ব্যাপার, যুক্তির কথা তুলবেন না)।
উপন্যাসে এ কথার মানে দেওয়া হয়েছে, “গোটা — পুরোটা, সবটা — টোটাল” (পৃষ্ঠা ৭৮), এবং পরের পৃষ্ঠায়, “কোনও বিষয়ের সূচনা থেকে বিলোপ — সমগ্র অস্তিত্বটাই ধরা সেই বিষয়ের বিন্দুবিসর্গ জ্ঞানে।”
ভুল, ডাহা ভুল। ‘বিন্দুবিসর্গ’ মানে সামান্যতম, অণুমাত্র। ‘আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না’ মানে হল, আমি এর কিছুই জানি না। অর্থাৎ, নিজের উপন্যাসের শিরোনামটিরই সঠিক অর্থ লেখক স্বয়ং জানেন না।
বাংলা থ্রিলারের ‘থ্রিল’ বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, তো সে বুঝি শুধু এইটুকুই!