কুশল সেন
এসএসসি-র ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থী শিক্ষকদের অনশন আজ চব্বিশ দিনে পড়ল। এই লড়াই-এর যৌক্তিকতা বা ন্যায্যতা নিয়ে নতুন করে আমার কিছু বলার নেই। জলের মত পরিষ্কার দাবি আন্দোলনকারীদের। দাদা-দিদি-ভাই-বোনেরা এসএসসি নির্বাচনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আপাতত ওয়েটিং লিস্টে আছেন। কিন্তু শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও নিযুক্ত হচ্ছেন না শিক্ষকেরা। চাকরি দিচ্ছেন না সরকার। এই পরিষ্কার বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ কিছু নেই।
একজন সচেতন ডাক্তার হিসাবে আমি ও অন্যান্যরা ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম এবং শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পক্ষ থেকে এঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি এবং করে চলেছি। ডাক্তার হিসাবে এঁদের পাশে থাকতে গিয়ে যেটা চোখে পড়ছে তা হল টানা চব্বিশ দিন এই রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এতজন হবু শিক্ষক চাকরির আশায় হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন ওই প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার উপর। মাথার উপর ত্রিপলটুকু টাঙানোর সুযোগ করে দেয়নি কেউ। টানা অনশন এবং রোদ-জল ঝড়ের দাপটে এঁদের শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করার মতো নয়। এখানে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব রয়েছে৷ মহিলাদের রাতে প্রস্রাব পায়খানা করার জায়গারও যথেষ্ট অভাব৷ দিনে দিনে এঁদের শরীরে দেখা দিচ্ছে খাদ্যতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ– বমি, পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা। পানীয় জল এবং পরিষ্কার প্রস্রাব পায়খানা করার জায়গার অভাবে মহিলাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে মূত্রনালীর সংক্রমণ, ঘন হলুদ প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় জ্বলন ইত্যাদি সমস্যা। এছাড়া ওরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শরীরে বাসা বাঁধছে রোগজীবাণু, দেখা দিচ্ছে জ্বর। চর্মরোগও দেখা যাচ্ছে৷ যাঁরা আগে থেকেই বিভিন্ন দীর্ঘকালীন রোগ (chronic disease)-এ আক্রান্ত, তাঁদের সেই রোগগুলোর লক্ষণ আরও বেশি করে দেখা দিচ্ছে, যেমন শ্বাসকষ্ট, হাত-পা কাঁপা আরও অন্যান্য অনেক কিছু। গর্ভপাত হয়েছে এক মহিলার। মহিলারা কমবেশি সবাই রক্তাল্পতায় ভুগছেন। এই ২৪তম দিনে দাঁড়িয়ে সবার শরীরই ডিহাইড্রেটেড। হাইপোগ্লাইসেমিক (রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া) অ্যাটাক হচ্ছে অনেকের। সব মিলিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে এঁদের পুষ্টিবিহীন শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। আর রোজই চার-পাঁচজন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ভর্তি হতে হচ্ছে হাসপাতালে। তবু দাঁতে দাঁত চেপে মনের জোরকে অস্ত্র করে তাঁরা এই শান্তিপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
চেঙ্গাইল থেকে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের অর্পিতা ওষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে এসেছিলেন। গতকাল কমবেশি ৪৫ জন রোগী দেখা হয়। বেশিরভাগই শারীরিক দুর্বলতার অভিযোগ নিয়ে আসেন। ৫-৭ জনের ছিল পাতলা পায়খানা, বমি। ছয়জনের কাশি গলাব্যথা। আর বাকি সবারই দুর্বলতা, শরীরে অস্বস্তি (যাকে আমরা ডাক্তারি পরিভাষায় nonspecific complaints বলে থাকি)। এর উপর স্বাভাবিকভাবেই কমবেশি সবাই দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের শিকার। আজও একই অবস্থা দেখেছি ক্যাম্প চালাতে গিয়ে।
রাতে মশার উপদ্রব আরেক বড় সমস্যা৷ শহরবাসী জানেন, কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগও আছড়ে পড়ছে মাঝে মাঝে। গতকাল নীতা পাল নামে এক অনশনকারী হাইপোগ্লাইসেমিক অ্যাটাক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। আজ ভর্তি হলেন তানিয়া শেঠ, ভয়ানক কম ব্লাড প্রেসার নিয়ে৷
পড়ুন — ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০১৯