প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
তিনি বৃদ্ধ হলেন/বনস্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন
–কবীর সুমন
দৃশ্য ১
লোকসভায় প্রবল হইচই। রাফাল নিয়ে কেন্দ্রকে দুরমুশ করছে কংগ্রেস-সহ তামাম বিরোধী পক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল তাঁর। কিছু বলতেই উঠে দাঁড়ালেন ‘লৌহপুরুষ’ আদবানি। চোখ বড়বড় করে তাকালেন সামনে। ততক্ষণে তাঁর উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জে পি নাড্ডা, পীযূষ গোয়েল, মেঘওয়াল, নরেন্দ্র সিং তোমরের মত শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা। থামিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। একপ্রকার জোর করেই, মাঝপথে। অবাক চোখে নিজের দলের দিকেই তাকালেন আদবানি। স্পিকার মাইক অন করেও তা বন্ধ করে দিলেন। অপ্রস্তুত আদবানি বসে পড়লেন পুনরায় নিজ আসনে। দলের হুইপ অনুরাগ সিং ঠাকুর হাত নেড়ে ইশারায় সংসদ অ্যাটেন্ডেন্টকে বললেন জল এনে দিতে। তাঁর ডেস্কে এক গ্লাস জল রেখে গেলেও তাঁর দিকে চেয়েও দেখলেন না বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’। চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
দৃশ্য ২
স্পিকারের নির্দেশে লোকসভার কাজ শুরু হতে উঠে দাঁড়ালেন ‘ভাজপা’-র আরেক প্রবীণ নেতা অধ্যাপক ড. মুরলী মনোহর যোশি। ধীর, শান্ত গলায় অনুমতি চেয়ে নিয়ে সরাসরি আঙুল তুললেন লোকসভার কার্যনির্বাহী প্রক্রিয়ার দিকে। জানালেন, ‘বিজনেস লিস্টে’ ভুল তথ্য উল্লিখিত। এমনটি হওয়া মোটেই কাম্য নয়। এতে সভা ও শাসক দলের কর্মদক্ষতা নিয়ে ভুল বার্তা যাবে যা অনভিপ্রেত। প্রবীণ নেতার মুখে পরোক্ষে দল ও সংসদীয় কর্মপদ্ধতির সমালোচনা শুনে তখন রীতিমতো হাঁ গোটা সভাকক্ষ। কী বলা উচিত তা কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। যোশিজি নিজের বক্তব্য শেষ করে এসে বসতেই তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন প্রহ্লাদ পটেল এবং কিরীট সোমাইয়া। ফিসফিস করে কিছু বললেন নিচু গলায়। মুখ শুকিয়ে গেল প্রবীণের। বারবার ঘুরে তাকালেন পাশের বেঞ্চে। সেখানে কঠিন মুখে বসে অরুণ জেটলি। যোশি বারবার তাকালেও তাঁর দিকে ঘুরে তাকালেন না জেটলি। বোঝা গেল যা ছিল বলার, তা বলা হয়ে গেছে।
দৃশ্য ৩
মিতভাষী বলেই পরিচিত শান্তাকুমার। প্রবীণদের অন্যতম তিনি। চুপচাপ পার্লামেন্টে আসেন আর চুপচাপ বেরিয়ে যান। তবু সেদিন তিনি কেন্দ্রীয় বিদেশ নীতির কিছু জরুরি সংস্কার এবং বিবর্তন প্রসঙ্গে বলতে উঠেছেন। একটু বেশি সময় নিয়ে অতীতের ব্যাখ্যা টেনে বক্তব্য রাখছেন কুমার। এ সময় পিছনের বেঞ্চ থেকে ‘ফুট’ উড়ে এল। গোন্ডা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর অনুচ্চকথা বোঝা গেল ভালোই। পাল্লা দিয়ে হাসি উড়ে আসে অন্যান্যদের থেকেও। কিছুই বোঝার আর বাকি রইল না। তিন মিনিটের মাথায় স্পিচ শেষ করে মুখ লাল করে লোকসভা ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যান শান্তাকুমার।
পড়ুন — ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০১৯
উল্লিখিত ঘটনাগুলির কথা লেখার প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল। মনে পড়ল বারবার। আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নাম বাদ পড়া প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে বিজেপির ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’-র এই তিন নেতা অন্যতম। প্রবীণদের বাদ দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার মুখে মোদি-অমিত শাহ জুটি। বিরোধী রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিজেপিতেও উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গে ঘোর মতানৈক্য। কার্যত দুভাগ হয়ে গেছে দল। কেউ বলছেন, ঠিকই হয়েছে। অবসর নেওয়ার সময় হয়েছে অনেকেরই। নতুনদের যে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। অন্যপক্ষের মতে ইচ্ছাকৃতই সরিয়ে দেওয়া হল বিজেপির প্রবীণদের। পূর্বেই ‘মার্গদর্শক’ বানিয়ে এঁদের ক্ষমতা অনেকটাই কেড়ে নিয়েছেন মোদি। এবার নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়ন না দিয়ে একপ্রকার বাণপ্রস্থেই ঠেলে দেওয়া হল। চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল সংসদে তাঁদের আনাগোনা। ‘বাদ’ পড়ার তালিকা বেশ দীর্ঘই। উমা ভারতী, কলরাজ মিশ্র, বি সি খন্দুরি এবং কোশিয়ারি সহ বহু প্রবীণ নেতা ঠাঁই পেয়েছেন এই তালিকায়। জল্পনা উঠেছে দল গড়লেন যাঁরা তাঁদেরকেই অলিখিত ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ পাঠিয়ে ঠিক কী বার্তা দিতে চাইলেন মোদি? আদৌ কি এ সিদ্ধান্ত সঠিক? নাকি সময়ের দাবি? এই নিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে চড়ছে জল্পনার পারদ। পাশাপাশি রইল ‘না-চিজ’ কলমচির সামান্য পর্যবেক্ষণ।
যা কিছু শুরু হয়েছে, একদিন তার শেষ হওয়া অনিবার্য।
–উপনিষদ
২০১৪ সালে নির্বাচনে জিতে এসেই দলের মধ্যে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ গড়ার প্রথম পরিকল্পনা নেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। গঠিত হয় ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’। সে সময়েই মোদির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন দলের প্রবীণরা। পরে এই তিন প্রবীণকে মন্ত্রকের বদলে তিনটি পৃথক কমিটির শীর্ষে বসিয়ে ‘মানভঞ্জন’ করে ছিলেন মোদি। কিন্তু বুঝে গেছিলেন, দলের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম বয়ঃসীমা বিভাজন অত্যন্ত জরুরি। আসন্ন নির্বাচনে সেই নীতিকে কড়াভাবে বলবৎ করার সুযোগ পেলেন মোদি। সেই নীতিতে ভর করে দলের প্রবীণদের এই নির্বাচনে অংশ নিতে এই প্রথম সরাসরি বারণ করা হয় দলের তরফেই। পরিস্থিতির নিরিখে দলে নতুনদের স্থান দেওয়া যে প্রয়োজন, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আসন্ন নির্বাচনী তিথিতে সেই নীতিটিকে কাজে লাগাতে মরিয়া মোদি। সেই নীতি মেনেই আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আদবানি। প্রবীণ বিজেপি সাংসদ আদবানির ‘সুরক্ষিত’ গান্ধীনগরের আসন চলে এল অমিত শাহের পকেটে। প্রথমবার সংসদের যুদ্ধে নেমে গান্ধীনগরের জল মেপে সরাসরি তা বেছে নিলেন অমিত শাহ। শেষ হল রাজনীতির ‘লৌহযুগ’। এনডিএ-র অন্যতম শরিক ‘শিবসেনা’ প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যতই করুন না কেন, তিনি নিজেও জানেন বড় দেরি হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন থেকে সরে আসার অলিখিত ফরমান পেয়ে গেছেন মুরলী মনোহর যোশিও। আদবানির মতো তিনিও শুনে ফেলেছেন বিদায়ের তোপধ্বনি। তিনি ভালই জানেন তাঁর কানপুরের আসনটিও হস্তান্তরিত হওয়ার পথে। তবুও তিনি প্রত্যাশা বর্জন করে পুরোদমে দলের নীতি মেনে চলার পক্ষপাতী। সেই হেতু আগামী নির্বাচনের সূত্র ধরে দলের মধ্যে তাঁর ‘শালগ্রাম শিলা’র ভূমিকাই নেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না শান্তাকুমার, উমা ভারতীর মতো নেতাদেরও পরিস্থিতি তথৈবচ।
ভারতী যদিও বলেছেন যে, তিনি নিজেই আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাজি নন। তাই আগেভাগে দলীয় হাইকম্যান্ডকে জানিয়ে রেখেছেন তাঁর অনিচ্ছার কথা, যদিও সেই দাবি মানতে রাজি নন দলের অনেকেই। উল্লেখ্য, ‘নিম্নমানে’র পারফরম্যান্স দেখিয়ে আগেই নানা মন্ত্রক খুইয়েছেন উমা। এবার নির্বাচন থেকে তাঁকে সরিয়ে এনে উমার কফিনের শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন মোদি। তবুও মুখরক্ষায় তাঁকে দেওয়া হয়েছে দলের উপসভাপতির পদ, যার সে অর্থে কোনও গুরুত্ব নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, উমার বয়সও পেরিয়েছে সাতের কোটা। তাই এবেলা তাঁর ‘সরে আসা’ই শ্রেয় বলে ভাবা হচ্ছে।
দলের তরফে এ বছর নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিরও। বলা বাহুল্য, জেটলি আদতে জননেতা নন, কিন্তু দক্ষ সাংসদ রূপে পরিচিত। গতবার অমৃতসর থেকে লড়ে পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বর্তমানে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংয়ের কাছে হারেন। এরপর সরাসরি তাঁর ঠাঁই হয় রাজ্যসভায়। পরে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে আসেন জেটলি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রামের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ভাঙা শরীরে তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা দল ও তাঁর উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকারক বলে মনে করা হচ্ছে। সংসদে তাঁর সম্ভাব্য অনুপস্থিতি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। হাজার হোক, লোকসভায় অরুণ জেটলির অসামান্য বাগ্মিতা, পাণ্ডিত্য যে প্রশ্নাতীত, সে বিষয়ে একমত সকল মহলই।
এবারের নির্বাচনে লড়ছেন না আরেক জনপ্রিয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ। দক্ষ নেত্রী, বাগ্মী ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশের ‘বিবেক’রূপে তাঁর পরিচয় সর্বজনবিদিত। কিন্তু এবার দাঁড়াচ্ছেন না তিনিও। শারীরিক অসুস্থতা ও বয়ঃজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে জেরবার সুষমা। এবারে তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সংসদে সুষমার না থাকা অপূরণীয় ক্ষতি বলে জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী স্বয়ং। মোদিও জানেন বিদেশ নীতিতে সুষমার বিকল্প পাওয়া দুঃসাধ্য। এবারের নির্বাচনে সরে দাঁড়াচ্ছেন বহু মানুষই। অশীতিপর প্রাক্তন মন্ত্রী কলরাজ মিশ্র তার অন্যতম। ভোটে লড়বেন না উত্তরাখণ্ডের জননেতা বি সি খন্দুরি (যার ছেলে মনীশ সদ্য যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে), বি এস কোশিয়ারির মতো নেতারাও। অংশ নিচ্ছেন না অভিনেতা ও সাংসদ পরেশ রাওয়াল ও অসমের বঙ্গনেত্রী বিজয়া চক্রবর্তীও। তালিকা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
বিরোধী শিবিরেও দেখা দিয়েছে একাধিক সমদৃষ্টান্ত। বসপা সুপ্রিমো খোদ ‘বহেনজি’ মায়াবতী সরে এসেছেন নির্বাচনী মহড়া থেকে যা বিরোধী শিবিরের কাছে এক নিতান্ত দুঃসংবাদ বটেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ ড. মনমোহন সিংও জানিয়েছেন তার অনিচ্ছার কথা। সরে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের সুবক্তা ও বেজায় পণ্ডিত ‘হার্ভার্ডিয়ান’ সুগত বসুও। সরে এসেছেন সুব্রত বক্সি, সন্ধ্যা রায় বা উমা সোরেন-এর মত রাজ্য প্রতিনিধিরাও। অবশ্য আশার কথা, জেডিএস সুপ্রিমো এইচ ডি দেবগৌড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন পরে আবারও নির্বাচনে লড়বেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। তাঁরা যদি জিতে আসেন তা সংসদের মানবর্ধকরূপেই পরিগণিত হবে।
পলিটিশিয়ান-রা কখনও রিটায়ার করেন না। যতক্ষণ না তাঁরা মারা যান, বা কেউ তাঁদের মেরে না ফেলে।
–হু তু তু/গুলজার
পরিশেষে গুলজারের এই অমোঘ উক্তিটি মনে বারবার উঠে আসে। সত্যিই কি রাজনীতিকদের জীবনে অবসর বা ‘ওল্ড এজ হোম’ বলে কোনও নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে না? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দুরূহ। কিন্তু এটা ঠিকই রাজনীতিতে কোনও কিছু অপ্রাসঙ্গিক নয়। সেখানে মতাদর্শ, নীতিআলেখ্য বা জীবনদর্শনের ধারা ভিন্ন ভিন্ন যতই হোক না কেন, রাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে দেয় বারবার প্রত্যাবর্তন ও পুনর্জাগরণের তত্ত্ব। তাই পথ চলা এখানে সে অর্থে বন্ধ হয় না। নির্বাচনের প্রাকমুহূর্তে সংসদে শেষদিনে দেখা যায় এক অদ্ভুত সৌজন্য রীতি। শাসক ও বিরোধী একসুরে একে অন্যের ‘ফিরে আসা’-ই কামনা করেন, শুভেচ্ছা জানান উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে। তারপর ফিরে যান নিজ নিজ কেন্দ্রে, মানুষের মাঝে। কেউ কেউ জিতে আসেন, কেউ আসেন না। কেউ কেউ সমুজ্জ্বল থাকেন সংসদের বাইরে থেকেও, আবার কেউ কেউ উঠে আসেন স্পিকারের ‘অবিচুয়ারি’ পাঠ ও সাংসদদের স্মৃতিচারণের পন্থাস্বরূপ দুমিনিট নীরবতা পাঠের মধ্যে দিয়ে। ‘সেই ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলেছে’… বিরামহীন! এখানেই রাজনৈতিক প্যাঁচ-পয়জার, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, লোভ, হিংসা, রিরংসা এবং সুবিধেবাদী তত্ত্বের ঊর্ধ্বে উঠে জিতে যায় সংসদীয় গণতন্ত্র। তাই মনে হয় এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ একদিকে যখন কোনও নেতার অস্তিত্বরক্ষার দায় হয়ে উঠতে পারে, তখন একই সাথে ব্যক্তিগত ‘ক্যারিশ্মা’ও হয়ে উঠতে পারে তার পরিপন্থী। সত্যি সত্যি রাজনৈতিক মতাদর্শের চ্যুতি সম্ভব, রাজনৈতিক জীবনের নয়। কোনও কিছুই আসলে শেষ হয় না। যা হয়, তা নতুন করে চেতনা, বোধ, সাম্য, স্বাতন্ত্র্য ও আত্মানুসন্ধায়ী আত্মপ্রকাশের উন্মুক্ত উচ্ছ্বাস। এই সেই উচ্ছ্বাস যা লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁর ৯১ বছর বয়সে রাজনৈতিক জীবন থেকে ‘সরে আসা’ প্রসঙ্গে লিখে রেখে যান সেই রাজনৈতিক জীবনেরই তথাকথিত অবসানের শেষমুহূর্তে। বলে যান, শেষ বলে আসলে কিছু নেই। সমাপ্তি আসলে সূচনার ইঙ্গিতবাহী। আমাদের শুধু সেই শুরুর সূচনাপর্বটি চিনে নেওয়ার অপেক্ষা—
ক্লান্ত হয়েছি, বেশি দূর যেতে পারি না আর
তার মানে এই নয় হাঁটতে ভুলে গেছি আমি।
জানি কিছু মুহূর্ত সম্পর্কে দূরত্ব নিয়ে আসে
তার মানে এই নয় ভালোবাসতে ভুলে গেছি আমি।
হ্যাঁ… একলা হয়েছি কিছুটা মানুষের ভিড়ে
তার মানে এই নয় নিজস্বতা ভুলে গেছি আমি।