সিদ্ধার্থ মজুমদার

সিসিলি দ্বীপের এক বৃদ্ধের কথা

কোনো একজন মাথা ঝুঁকিয়ে মাটিতে বসে আছে,
দূর থেকে এটুকুই বোঝা যায় শুধু …
আরও কিছুটা এগিয়ে আসার পরে স্পষ্ট হয়,
বসে থাকা মানুষটি এলোমেলো পাকাচুল এক বৃদ্ধ।
আপন মনে ধুলোবালিতে কিছু একটা করে চলেছে …

রোমান সিপাহি আরও সামনে এগিয়ে এসেছে এখন,
দ্যাখে, বালিতে আঁকিবুঁকি দাগ কেটে চলেছে বৃদ্ধ
নিজের আঁকার সঙ্গে যেন বিড়বিড় করে
কিছু বলে যাচ্ছে সে ! চারপাশে কী হচ্ছে,
কোনো কিছুই যেন কানে ঢুকছে না তাঁর…

এখন রোমান সেনা, ওই বৃদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে ।
তন্ময় বৃদ্ধ টের পায় না কোনো কিছুই !
“কে তুই ? … কী করছিস এখানে … ?”
বৃদ্ধ নিরুত্তর । এতটাই বুঁদ হয়ে আছে যে,
শুনতে পেল না কোনো কিছু …

এবার ধমকে ওঠেঃ “এই যে বুড়ো,
কথা কি কানে ঢুকছে না ?”
মুখ না-তুলেই, এক রাশ বিরক্তি ছুঁড়ে দেয় বৃদ্ধ :
“ … আঃ হচ্ছে টা কী? … এখন যাও তো বাপু,
… আমি ভীষণ ব্যস্ত । বিরক্ত কোরো না ”।

সিপাহি এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল
খাপ থেকে তরবারি বের করে –
সামনের মাটিতে খোঁচা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে দেয়।
বৃদ্ধ তাঁর একটি হাত বাড়িয়ে অস্ফুট বলে ওঠে
“ এই সব রেখা আর বৃত্ত নষ্ট না হয় যেন,
চলে যাও এখান থেকে। “

বুড়োর ঔদ্ধত্যে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল ; সিপাহি
হুংকার দিয়ে সজোরে ধাক্কা দেয় বুড়োর পিঠে ।
দু-হাত বাড়িয়ে তাঁর আঁকাগুলি আড়াল করে বৃদ্ধ।

এরপর আর সময় দেয়নি রোমান সেনানী ,
‘তা হলে মর তুই ‘
এক কোপে নামিয়ে দেয় বুড়োর মাথা।

রক্তে ভিজে গেল মাটি আর বালি। বৃদ্ধর আঁকা
বৃত্ত ও রেখাগুলি রক্ত-রঙ জবা ফুলের মতন
কাটা মুন্ডুর পাশে মাটিতে পরে থাকল নিথর!

বৃত্ত, রেখা বা জ্যামিতি বোঝে না সেই সেনা। তবে ,
রোমান সেনাপতি মার্সেলাস, ভালো করেই জানত
বহু যন্ত্র উদ্ভাবক আর গণিতের বিস্ময় প্রতিভা
আর্কিমিডিসের কথা! তাই,ওই প্রবীণ বিজ্ঞানীকে
ধরে আনতে বলেছিল। তাঁকে একবার দেখবে বলে …

দু-হাজার বছর আগে, গ্রিসের সিসিলি শহরে,
আর্কিমিডিসের রক্ত-ভেজা গাণিতিক সমাধানগুলি,
পলাশ হয়ে, আজও ফুটে আছে জ্যামিতি-র পাতায় !

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...