ঘেন্না-কথা, ভয়ের কথা ও দাঁত গজানোর বৃত্তান্ত – একটি নির্বাচনী পত্রালোচনা

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

প্রিয় নির্বাচন কমিশন,

সরাসরি প্রসঙ্গে আসি। উপক্রমণিকার সময় নেই। আর তাছাড়া এই স্পিচ-মার্কেটে এসব পানসে লাগতে পারে। কেন না, এখন লোক লক্ষ্য করে বলার। জিভ না আগলে বলার। কখনও নাম করে, কখনও না করে। পরিণতি, সেই ঘেন্না। আর আপনাদের অকর্মণ্যতা। হ্যাঁ, অকর্মণ্যতা। ওইটুকুই। আমাদের সাধারণ ভোটারদের থেকে লিখিত বা রেকর্ডেড মাধ্যমে এর চেয়ে উত্তেজক আর কী বেরোবে বলুন! এর চেয়ে বেশি কিছু চাইলে ওসব রাজনীতির শর্ট কোর্সে পাবেন। পড়তে হয়, নাহলেই পিছিয়ে পড়তে হয়। হ্যাঁ, রাজনীতি। পলিটিক্স। ‘লাস্ট রেসর্ট অফ দ্য স্কাউন্ড্রেলস’। বার্নার্ড শ। নস্ত্রাদামুস শ। দেখেছিলেন। বুঝেছিলেন। কে বলে, শুধু রবীন্দ্রনাথই দূরদৃষ্টির অধিকারী? এই দেখুন, সেই ভ্যানতারা করছি। প্রসঙ্গে আসি…

ঘটনাগুলো বলি? মানে, আপনাদের জন্য নয়। ও তো জানা। অনেকটা মেইল দেখে মাইক্রোসেকেন্ডের ভেতর ডিলিট করার অফিসিয়াল অভ্যেস আপনাদের। আমি বলছি বাকিদের জন্য। সচেতন সেইসব মানুষদের জন্য যারা একটা মেরুদণ্ড নিয়ে ঘোরেন। কাজের ভেতর সব খবরের নির্যাসটুকু ঠিকমতো পান না। অথচ, নির্বাচন শব্দটাকে সুস্পষ্ট নাগরিক অধিকার হিসেবে দেখেন, কোনও রাজনৈতিক দলকে পক্ষপাত বা বিরোধিতা দুটোকেই একটি সৌজন্যের সীমার মধ্যে রেখে সাংবিধানিক পথে হাঁটেন। সম্মান এবং এইসমস্ত উপক্রমণিকা তাঁদের জন্য। শুরু করি …?

একটা পাঞ্চ কিছু থাকবে না? জোরালো কিছু? রাহুল গান্ধি। এবং তাঁর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান। বিরোধী দলের গায়ে লাগতেই পারে, কিন্তু কোথাও অশ্লীলতা বা বিশেষ ধর্মীয় সংগঠনের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা নির্বাচনী মডেল কোড অফ কন্ডাক্টে আটকায় না এই কথা। বিরোধী দলের বিরোধিতাও কাম্য। এবং এই বিরোধিতার মধ্যেও কোনও অসুবিধে নেই। হিমাচল প্রদেশ। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি সৎপাল সিং শেট্টি। সিমলা লোকসভা কেন্দ্রের প্রচারে বলে বসলেন, ‘যার মা, ভগ্নিপতি এবং যে নিজে জামিনে আছে সে অন্যকে কিভাবে চোর বলছে।’ ন্যাশনাল হেরাল্ড মাথায় ছিল, রাফাল ছিল না। তবু, এটুকু বিরোধিতা অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এটুকু বিস্মরণ দোষের কিছু না। তাঁর পরেই দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধানতম মুখকে সৎপাল আখ্যা দিলেন একটি শব্দে। যদি প্রধানমন্ত্রী চোর হন, তবে রাহুল মাতৃসঙ্গমকারী। হ্যাঁ, সম্পাদক আটকাবেন বলে না, ন্যূনতম বোধ আছে বলে এর সহজতম প্রতিশব্দ লিখতে পারছি না আমি। প্রিয় পাঠক, মাফ করবেন। যাই হোক, কংগ্রেস সমর্থক, মিডিয়া চেপে ধরতে সৎপাল বললেন, জনৈকের ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে তাঁর এই বক্তব্য। নিজের কথা। এক দিক থেকে কিন্তু লুকিয়ে সমর্থন। কোথাও কোনও অনুশোচনা নেই।

যোগী আদিত্যনাথ। একজন ‘সংবেদনশীল’, ‘বিবেচক’, ‘সুভাষী’ মুখ্যমন্ত্রী। মীরাটে দলের প্রচারে তুলে আনলেন আলি-বজরঙ্গবলি লড়াই। কী বললেন যোগী? ‘সপা, কংগ্রেস, বিএসপি গ্রিন ভাইরাস অর্থাৎ মুসলিম জীবাণু ছড়াচ্ছেন। এঁদের ‘আলি’ জোটের বিরুদ্ধে তাঁদের দলের ভরসা বজরঙ্গবলি। অর্থাৎ হনুমান। আলি প্রসঙ্গে সচেতনভাবেই মহম্মদ তথা মুসলিম ভাবাবেগকে খোঁটা। কমিশন, মানে আপনারা চুপ। যদি না কোর্ট …। সে প্রসঙ্গে পরে আসি। সেই যোগী কিছুদিন আগেই ভারতীয় সেনাকে ‘মোদিজি কি সেনা’ বললেন। কয়েকদিন পরে দলের আরেক সদস্য মুখতার আব্বাস নাকভি। একই শব্দগুচ্ছের ব্যবহার। সেই সেনা। প্রিয় কমিশন, একবার ভাবুন। সীমান্তে কঠোরতম লড়াই করা ছেলেগুলোকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার ব্যক্তিগত বাহিনী বলে প্রচারে নামছে দেশের সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিনিধিরা। গণতন্ত্র হচ্ছে? নাকি স্রেফ প্লেয়িং উইথ আ ডেভিল’স হ্যান্ড?

আজম খান। সমাজবাদী পার্টি। বিজেপি বিরোধিতার ভাবমূর্তি নিয়ে স্বচ্ছতার বাতাবরণে ব্যস্ত অখিলেশ যাদব। তাঁর উপস্থিতি। একই মঞ্চ। রামপুর। উত্তরপ্রদেশ। আজম উবাচ। ‘রামপুরের মানুষ ১৭ বছর সময় লাগল তাঁকে বুঝতে। আমি ১৭ দিনেই বুঝেছি তিনি খাকি রঙের অন্তর্বাস পরেন।’ পৌরুষ এবং চলে আসা দাদাগিরি, খিল্লির পূতিগন্ধময় রাজনীতি। লক্ষ্য জয়াপ্রদা। রামপুরের বিজেপি প্রার্থী। নীরব অখিলেশ। জয়ার এককালীন সঙ্গী। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিবাদ। প্রতিবাদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের। অথচ নীরব টিম অখিলেশ। অসৌজন্যের ট্র্যাডিশন। সমানে চলিতেছে…

মানেকা গান্ধি। যার হৃদয়ে চারপেয়ে অবলা। কিন্তু মানুষ? বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলমান হলে? কে জানে। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে মানেকার প্রচার। বক্তব্য। থ্রেট। ‘প্রিয় মুসলমান ভাই। আপনাদের ছাড়াই আমি জিতব। তবু, এভাবে জিততে খারাপ লাগবে। আপনাদের থেকে ভোট পাব না, অথচ কাজ করে যাব। তা তো হয় না। আফটার অল, আমি তো গান্ধি নই। কিছু পাওয়ার আশায় রাজনীতি করি। রাজনীতি, ভোট আসলে তো সওদা। ভোট দিন। নাহলে পরিষেবা বন্ধ …’ কোট আনকোট। শেষ কথাটা অতটা জোরালো উচ্চারণে বলেননি। কিন্তু মানেটা তাই। সওদা। সবকিছুই তো ব্যবসা। গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি। প্রিয় মানেকা, পশুপ্রীতির বদলে আপনি কী পান? জানতে ইচ্ছে করে…

মায়াবতী। সিধু। প্রচারে প্রকাশ্যে মুসলিমদের ভোটব্যাঙ্কে ব্যবহার করছেন। বেরিলি, সাহারানপুরে বিজেপিবিরোধী মুসলিম ভোটাররা যাতে অন্য দলগুলিতে ভোট দিয়ে ভোট ভাগ করে কালক্রমে বিজেপির সুবিধে না করে দেন, তার আর্জি জানালেন। পরে অন্য একটি সভায় নভজোৎ সিং সিধুর সমর্থন। হেট স্পিচ নয়। কিন্তু প্রচারে রিলিজিয়াস মাইনরিটির নাম ধরে এমন আচরণ কেন? মাস-রিপ্রেজেন্টেটিভ? এঁরা? এই বিবেচনায়? এই রাজনীতিবোধে?

অথবা অমিত শাহ। প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধি কেরলের ওয়েনাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। ঘটনামাত্র। এবং সেখানেও সংখ্যালঘুবিদ্বেষ। রাহুলের মনোনয়ন জমা করার দিনের রোডশো’র ভেতর বেশ কিছু সবুজ পতাকা দেখে পাকিস্তানের কথা মনে পড়ছে অমিতের। নাগপুরের একটি প্রচারসভায় তাঁর কথা। রোডশোটি আসলে কোন দেশের বুঝতে নাকি কিঞ্চিত অসুবিধে হবে মানুষের। আর এহেন কেন্দ্রে রাহুল? প্রকাশ্য দেশদ্রোহ যে! ব্যঙ্গ? বিস্মৃতি? নাকি সত্যবিকৃতি? তাহলে সত্য কোথায়? ঘটনা হল, সবুজ পতাকাধারী মানুষজন আসলে কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন ফর মুসলিম লিগের কর্মী সমর্থক। গত পঞ্চাশ বছর ধরে যারা কংগ্রেস নেতৃত্বের ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট দলের শরিক। কোনওভাবেই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সেই অমিত। একটা উসকানি। কোটি কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ফরওয়ার্ড। হেট স্পিচ। এঁরা কি গাছের সবুজ দেখলেও পাকিস্তান গন্ধ পান?

এবং শেষে প্রধানমন্ত্রী। রাহুল গান্ধির ‘হিন্দু-টেরর’ শব্দে তাঁর, তাঁদের প্রবল আপত্তি। বিস্মৃত হয়ে গেলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা, স্বামী অসীমানন্দদের কথা। অবশ্য বিস্মরণ কেন? এঁরাই তাঁর দলের হয়ে ভোটের টিকিট। মালেগাঁও, সমঝোতা এক্সপ্রেস, আজমীর দরগার দুঃস্বপ্নগুলো আসলে তো অহঙ্কার। তো যাই হোক, রাহুল গান্ধি কেন কেরলের ওয়েনাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন? ওয়ার্ধার একটি র‍্যালিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোট আনকোট বক্তব্য, ‘ওয়েনাদ মুসলিম প্রধান এলাকা। রাহুল জানেন, সেখান থেকে নিরাপদে জিতবেন। হিন্দু-প্রধান এলাকা হলে হারতেন।’ পরিষ্কার মডেল কোড অফ কন্ডাক্টে আঘাত। ভোটের প্রচারে রিলিজিয়াস টাস। নাম করে। কোনও চাপাচুপি নেই। সর্বোপরি রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অ্যাক্ট, ১৯৫১-র সেকশন ১২৩ (৩)–এর ভাষায় এক ‘কোরাপ্ট প্র্যাকটিস’।

আর এসবের পরিণতি? প্রিয় নির্বাচন কমিশন। আপনাদের প্রস্তরমূর্তি। এবং একদম সম্প্রতি আরব আমীরশাহীর জনৈক প্রবাসী হারপ্রীত মানসুখানির একটি পাব্লিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের উত্তরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগই-এর নেতৃত্বে একটি বেঞ্চের হয়ে কমিশনকে সরাসরি বকুনি। আপনারা কী করতে আছেন? আপনাদের ক্ষমতা কী? কী করেছেন এই কেসগুলোয়? নোটিস! নির্বিষ কিছু নোটিস! সাংবিধানিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পিডিটি আচারির মতে, কমিশন নোটিস দিলে অভিযুক্ত দল উত্তর পাঠায়। কমিশন আজ পর্যন্ত কোনও নোটিসের উত্তরেই ব্যবস্থা নেয় না। যেন, সব উত্তরই স্যাটিসফ্যাক্টরি। মজার না? সেই নোটিস। আর বেকার কিছু অ্যাডভাইসরি। এ ছাড়া আর কী করেছেন? কমিশনের উত্তর, সত্যিই ক্ষমতাহীন তাঁরা। কিছুই করতে পারেন না। অভিযুক্ত দলকে বা প্রার্থীকে বহিষ্কার বা ‘ডিরিকগজাইজ’ করার কোনওরকম ক্ষমতাই কমিশনের নেই। কোর্টের প্রত্যুত্তর। তাহলে স্বীকার করুন আপনারা টুথলেস। এফআইআর? মডেল কোড অফ কন্ডাক্টের লঙ্ঘনে পুলিশি রিপোর্ট। কঠোরতম ব্যবস্থা। বৃহত্তর কোনও সময়ের পরিসরে নির্বাচন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা। এসবই বা কতটুকু হচ্ছে? কোর্টের এহেন কথায়, প্রিয় কমিশন, আপনাদের শক্তি ফেরানোর চেষ্টা। আদিত্যনাথ, আজমদের বাহাত্তর ঘণ্টা ভোটের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা। মায়াবতী, মানেকাদের আটচল্লিশ ঘণ্টা। শাস্তি, সন্দেহ নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বেলায় এখনও নীরব। হিন্দি ছবির ফর্মুলা গল্প। দাঁত বেরনোর জন্য কতটা সময় চাইছেন, প্রিয় কমিশন। আদিত্যনাথ এখনও ভোটের পরোক্ষ প্রচার করছেন। দলিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসাদ খাচ্ছেন। মন্দির-সে-মন্দির দিব্যি যাওয়া আসা করছেন। সরাসরি স্পিচ দেওয়ার চেয়েও আরও সহজতম এবং সরাসরি ভোট প্রচার। কোথায়, কোথায় কমিশন? কোথায় নিষেধাজ্ঞা? শাসক প্রিভিলেজের বিশেষ কোনও ছাড়পত্র আছে নাকি? ঠিক যেমনটি হয়েছিল ২০১৭-র গুজরাট নির্বাচনের সময়ে। অভিযোগ, কমিশন ভোটের দিনক্ষণের ইচ্ছাকৃত ১২ দিন দেরি করে দেয়। পরিণতি? তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ইন দ্য মিন টাইম গাদাগুচ্ছের সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করে পরোক্ষে নির্বাচনে জেতার সুযোগ পেয়ে যান। আর সেই মুখ্যমত্রীই আজ দেশের সর্বোচ্চ স্থানে গিয়েও যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাতে বিরক্ত হচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন কারা? রাষ্ট্রপতির কাছে বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষ কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠি লিখলেন। সই দিলেন। কারা জানেন? প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং। মুখ কতটা পুড়ল? আদৌ কি পুড়ল, কমিশন?

অথচ প্রিয় কমিশন, এমনটা তো হওয়ার ছিল না। ১৯৮৯-এর আর ভি এস পেরি শাস্ত্রীর সময়ের নির্বাচন কমিশন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি নির্বাচনী দিনক্ষণকে নিজের সুবিধায় কাজে লাগানো বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শাস্ত্রী। পরিণতি? চটজলদি মাল্টি-মেম্বারড প্যানেল জুড়ে গেল কমিশনের প্রধানের পদে। অর্থ আর কিছুই নয়, নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমতা কমানো। শেষন। টি এন শেষন। ভারতবর্ষ দেখেছিল কাকে নির্বাচন কমিশন বলে। প্রথমবার মডেল কোড অফ কন্ডাক্টের প্রয়োগ, ভোটার আইডি কার্ডের ব্যবহার, ভোটের ফান্ডিং-এ তীব্র নজরদারি, কোন খাতে কে অর্থ যোগাচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব। সরকারি অর্থে হেলিকপ্টারে দেদার মদ্য এবং নোট বিলোনো বিলিওনেয়ারদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন শেষন। নরসিংহ রাওকে নির্দেশ দিলেন ভোটারদের অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর অপরাধে দলীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী সীতারাম কেশরী এবং কল্পনাথ রাই-এর বরখাস্তে। রাজি হননি রাও। অন্তত ঝড় উঠেছিল। বামপন্থীদের পক্ষ থেকে রাওয়ের ইম্পিচমেন্টের দাবি এসেছিল। কিছু হয়নি। এদেশে কিছু হয় না। তবু, চেষ্টা ছিল। সেই শেষন। ১৯৫৫-র আই এস টপার। যার কথায়, ‘আমি কিছুই করিনি। শুধু লক্ষ্য নিয়েছিলাম, জিরো ডিলে অ্যান্ড জিরো ডেফিসিয়েন্সি।’ সেই নির্বাচন কমিশন। ১৯৯০-১৯৯৬। পরবর্তীকালে কুরেশি বা লিংডোর আমলেও কিছুটা ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা। শেষমেশ ভেঙে পড়া। একটা নাম-কে-ওয়াস্তে আর্টিকল ৩২৪। অসহায় সংবিধান। বাবাসাহেব।

প্রিয়, কমিশন, আমাদের ভয়ের আরেকটা দিক আছে। যে মানুষগুলোর কথা শুরুতে লিখলাম, তাঁরা। মানেকা। বিরোধী পক্ষের মুসলিম ভোটারদের একঘরে করে দেওয়া। সুলতানপুরের কথা বললাম। পিলভিট বলিনি। যেখানে বরুণ গান্ধির প্রচারে মানেকার বক্তব্য, গ্রামগুলোকে ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে চারভাগে ভাগ করে দেওয়া। বিজেপি-কে ৮০, ৬০, ৫০ এবং ৫০-এর কম ভোট দেওয়া এলাকাগুলিকে এ, বি, সি, ডি করে দাগিয়ে দেওয়া। সর্বোচ্চ এবং ন্যূনতম পরিষেবা এবং উন্নয়নে প্রশাসনিক পার্থক্যের ওপেন থ্রেট। কোথায় গোপন ভোট? কোথায় ১৯৫১ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অ্যাক্ট? মনে পড়ছে ফর্ম টোয়েন্টি। ভোটের পরে প্রত্যেক দলকে এলাকার ইভিএম থেকে বের হওয়া সেই অঞ্চলের প্রত্যেক পোলিং বুথ থেকে কত শতাংশ এবং কতজন সেই দলকে ভোট দিয়েছেন তার একটা হিসেব চলে আসে। গুজরাটের গির অরণ্যের বিপদসংকুল বানেজ এলাকার পোলিং বুথে একা ভারতদাস দর্শনদাস থাকেন। ওই পোলিং বুথের একমাত্র ভোটার। ফর্ম ২০-র হিসেব থেকে পরিষ্কার বোঝা গেছে, এতদিন ধরে দেশের বর্তমান শাসক দলকে ভোট দিয়ে আসছেন ভারতদাস।

কী ভাবছেন? ব্যতিক্রম? এই ডিজিটাল যুগেও? ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরাঞ্চলের ফর্ম ২০ হিসেব থেকেও প্রত্যেক এলাকার বিরোধী ভোট এবং নিজেদের প্রার্থীর ভোটের চুলচেরা হিসেব চলে আসে প্রত্যেক দলের কাছে। গোপন ভোট? হাসাবেন না। সেসব নেই আমাদের দেশে। মানেকার বক্তব্য তাই বীভৎস ভয়ের। আদিত্যনাথ। প্রকাশ্যে মুসলিম থ্রেট। পরোক্ষে মব-লিঞ্চারদের মদত। সৎপাল সিং। ল্যাঙ্গুয়েজ অফ মডার্ন পলিটিক্স অফ ইন্ডিয়া। এই ভাষায় একদিন কথা বলবে আমাদের সন্ততিরা। ফুটবল মাঠ, চায়ের দোকান, পার্লামেন্ট— প্রকাশ্যে নিজের পুত্রের হাতে ধর্ষিতা হবেন জননী। মা। ভারতবর্ষ।

প্রিয় কমিশন, একটু পা চালিয়ে প্লিজ…

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...