শিরোনামহীন
১.
এই অপেরাপ্রতিম বাইপাস
মাথার মধ্যে দিয়ে ছুটে যাওয়া আলোনিয়নের পথরেখা
এইখানে ডিভাইডারের পাশে চিৎ হয়ে শোয়া তোমার খোলা শরীরের ওপর
একটা কালো কাককে আমি ডানা মুড়ে বসে থাকতে দেখেছিলাম সেদিন সন্ধেবেলা
তখন ডিসেম্বর মাস, শীতকাল
তখন ঘন সাদা হয়ে কুয়াশা নামছিল যোগেন্দ্র গার্ডেন্সের রাস্তায়
তোমার গোলাপি গাউন ভেসে যাচ্ছিল নশ্বর শরীর পার হয়ে অনন্ত ফ্লাইওভারের দিকে
এমন মায়াবি এক মৃত্যুদৃশ্যের পাশে
জেব্রাক্রসিং-এর ওপর রাখা ছিল আমার চশমা আর এস্রাজ
আমার ঘোড়াদুটো ঘাস খেতে-খেতে চলে যাচ্ছিল দূরে
২.
বাড়ি ফেরার পথে পকেটে পাউরুটি কেনার পয়সাও থাকত না তখন
রাত্রির ভেতর একটা লম্বা টানা রেললাইন শুয়ে থাকত গোটা শীতকাল জুড়ে, তার পাশে
লোহার রেলিং-এ কারা টাঙিয়ে দিয়ে যেত তাদের রাতের কালো পোশাক
হাওয়ায় তাদের হাত-পাগুলো দুলত নিয়তিতাড়িত এলিজির মতো
রেলকলোনির সেইসব রাতে
আমি কতবার ভেবেছি তোমার মতো এক দেবদূতের সঙ্গে, সাদা জিনের সঙ্গে
একদিন নিশ্চয়ই দেখা হয়ে যাবে আমাদের
মুঠো খুলে তুমি আমাদের দেবে কাজুফল, কুমড়োর পুর-দেওয়া প্যাটি
তোমার কম্বল তুমি নিজে হাতে ভাঁজ খুলে আমাদের শোওয়ার জন্য পেতে দেবে
তারপর সেই রেললাইনের ধারে ভোররাতে
একদিন তোমায় চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখি
(ওঃ, সে কী ভয়ংকর রাত্রি)
তোমার পলিথিনের চপ্পলে শুকিয়ে থাকা রক্ত, ফর্সা গোড়ালিতে রাত্রিবেলার নিরন্ন, কালো ঘাস
তোমার সাদা আলখাল্লা খুলে নিয়ে ওরা ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছিল রেলিং-এ
সেদিনের পর থেকে সাইরেন ছাড়া আর কোনও বাজনা বাজতে শোনা যায়নি আমাদের বস্তিতে
৩.
জানলার কাচের শার্সির বাইরে একটা টিকটিকি,
আমি পড়ার টেবিল থেকে
একমনে তার সাদা মাখনের মতো নরম পেটটাকে লক্ষ করি
সাদা মাখনের মতো নরম, ভূমিকাবর্জিত ও স্ট্রেচমার্কবহুল
তার পেটের দু’পাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে কুঁচকি-পর্যন্ত খোলা চারটে পা
আকাশে এখন আশ্চর্য পার্পল রঙের সন্ধ্যা, সেই আলো
সনির্বন্ধ আঠার মতো জড়িয়ে রয়েছে তার নখে, চোয়ালে, লেজের ডগায়
সন্ধ্যার সেই আলোয় আমি একঝলক দেখতে পাই
পেছনে ছড়িয়ে থাকা ফ্লাইওভার দিয়ে ছুটে যাচ্ছে অফিসফেরত হেডলাইট
তাদের হাতে ছুরি ও সিগারেট
তাদের এফ এম রেডিওয় বেজে উঠছে, গান নয়, সাইরেন –
কিন্তু এই যুদ্ধকালীন তৎপরতা, এই প্রকাশ্য অথচ চোরাগোপ্তা প্রস্তুতি,
তার চোখ মাথার দু’পাশে বসানো থাকার ফলেই হয়তো,
সে ততদূর লক্ষ করে না…
সে ঠাণ্ডা কাচের ও’পাশ থেকে
কেবল আমাকে দেখতে থাকে একটানা…
(ছবি: ইন্টারনেট)
অনেকদিন পর অভীকের তিটে কবিতা পড়লাম। যথারীতি দারুণ ! আর লেখা চাই অভীক…অনেক লেখা
https://www.4numberplatform.com/?p=1786
অভীকবাবুর নতুন লেখা অঞ্জালি (মনে হয়, অঞ্জলি)। পড়ে দেখুন…