গৌতম সরকার
এ কেমন ভোট বলুন তো? প্রচারে রোটি-কাপড়া-মকান নেই। নেতাদের ভাষণ মানেই বিভাজনের ডঙ্কা। কোথাও অনুপ্রবেশকারী, শরণার্থীর বিভেদ, কোথাও সরাসরি হিন্দুত্বের হুঙ্কার। কে কত বড় হিন্দু, তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভাগ্যিস মোদি সরকার হয়েছিল, তাই আবু ধাবিতে হিন্দু মন্দির হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পাঁচ বছরে যারা রামমন্দির করতে পারে না তারা আবার হিন্দুত্বের কী বড়াই করবে। দেখে আসুন তারকেশ্বরে, কী করেছি আমরা। দেশের শীর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে কেরলে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি বিশ্বাস আর প্রথার চৌকিদার। লক্ষ্য যে শবরীমালা, বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পালটা জওহরলাল নেহরুর স্বঘোষিত শিবভক্ত প্রপৌত্র নেমে পড়লেন কেরলের মন্দিরে মন্দিরে মাথা ঠুকে তিনি কত বড় হিন্দু, তা প্রমাণ করতে।
নির্বাচনের মূল ফোকাসটাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে, গরব সে কহো হাম হিন্দু হ্যায়। পাশাপাশি, মাঝে মাঝে বিভ্রম হচ্ছে, এটা ভোট প্রচার, না কুৎসার ফোয়ারা। নিজের মনেই প্রশ্ন ভিড় করছে, এঁরা কারা? যাঁদের মুখে নর্দমার ভাষা। ভঙ্গিতে কলতলার ঝগড়ুটে ভাব। কারও মনে হতেই পারে যে এঁদের ভোট দেওয়া হবে কেন? একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলছেন হরিদাস। পালটা নরেন্দ্র মোদির ভাষণে শুনছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়া, সিন্ডিকেট, প্রোমোটার রাজের সর্দার বলে গাল পাড়া চলছে। দেশের বিরোধী দলের নেতা তো দিনরাত প্রধানমন্ত্রীকে চোর না বলে এক গ্লাস জলও খাচ্ছেন না।
আর টিভি কিংবা খবরের কাগজ খুললে মনে হবে, অন্তত বাংলায় লড়াইটা মোদি ও মমতা। তৃণমূল বা বিজেপির কেউ নয়। উভয়েই আবার হিন্দুত্বের জয়গান করেন। যদিও মমতা নিজের মুসলিমদের ত্রাতা ভাবমূর্তিটাও ধরে রাখতে মরিয়া। হিন্দু না ওরা মুসলিম, ওই জিজ্ঞাসে কোন জন। কবি নজরুল যে কারণে কবিতার এই লাইনটি লিখেছিলেন, মমতা ভিন্ন অর্থে তার ব্যবহার করছেন। রোটি-কাপড়া-মকান নয়, হিন্দুত্বই এবারের লোকসভা নির্বাচনে মূল ফোকাস। ২০১৪-র লোকসভা ভোটেও এত প্রকটভাবে হিন্দুত্বর প্রচার দেখা যায়নি। এমনকি, আদবানির রথযাত্রার পর অটলবিহারী বাজপেয়ি সরকার গঠনের ভোটেও হিন্দুত্বের এমন মাতামাতি দেখিনি। কার্যত সব অর্থেই ভিন্ন ভোট ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায় আঁতকে উঠি। পরক্ষণেই মনে হয়, সঠিক কথাই তো উনি বলেছেন।
দিলীপ বলেছেন, জিততে না পারলে নীতি-আদর্শ ধুয়ে জল খেয়ে লাভ নেই। গালাগালির পালটা বলা মানে কুকথা নয়। যে ভাষা প্রতিপক্ষ বোঝে, তাতেই উত্তর দেওয়া ভালো। মনে মনে ভাবি, তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন— নীতিবাক্যটি কত সহজে উধাও করে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে নীরবে নিখোঁজ হয়ে গেল রাজনীতির সঙ্গে নীতি, আদর্শের সহজ, সরল সম্পর্কটি। রাজনীতি এখন নীতি, আদর্শ বর্জিত যে কোনও ছলে ক্ষমতা দখলের সোপান মাত্র। পারি অরি, মারি যে কৌশলে, এটাই এখন রাজনীতির কারবারিদের মূল কথা। এর আগে কোনও রাজনীতিককে এত খোলাখুলি ভাষায় এমন স্বীকারোক্তি করতে শুনিনি। যিনি বলছেন, তিনি আবার কেন্দ্রের শাসকদলের রাজ্য সভাপতি।
তাঁর এই উক্তি কিন্তু ব্যক্তিগত রুচি প্রসূত নয়। তাঁর দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শা প্রার্থী বাছাই পর্বে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কে জিততে পারবে, সেটাই বিচার্য। প্রার্থীর অতীত কী, তাঁর পেছনে কী কলঙ্ক আছে, সেসব দেখার দরকার নেই। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সেই এক কথা। যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা দখল। এ কথা শুনলে যে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, এ আবার নতুন কথা কী? চিরকালই তো সবাই ভোটে ক্ষমতা দখলই করতে চেয়েছেন। হক কথা। কিন্তু সেই সব ভোটে আম নাগরিক যাচাই করে নিতে পারতেন, কোন দল তাঁর সমস্যা নিয়ে ভাবছে। পছন্দের প্রার্থী বা দল বাছাইয়ে সেটাই ছিল মাপকাঠি।
নাগরিকের সমস্যা মানে কী? খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। কর্মসংস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের বন্দোবস্ত। কিন্তু এবারের রায়গঞ্জ লোকসভার নির্বাচনে সেই মাপকাঠিটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। কার্যত এসব সমস্যা নিয়ে রায়গঞ্জের প্রচারে কোনও আলোচনাই হয়নি। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে, রাজ্য সরকার এলাকায় জোর করে উর্দু ভাষা চাপাতে চাইছে। উর্দু ভাষার শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে দাড়িভিট হাই স্কুলে গোলমাল, গুলি, দুজন ছাত্রের মৃত্যু সেখানে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করল। প্রচারে গুরুত্ব পেল মসজিদের সামনে দিয়ে দুর্গার ভাসানযাত্রা যেতে না দেওয়ার বিষয়টি। বাম ও তৃণমূল রাজত্বে সরকার, প্রশাসন সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে সমস্যাটির প্রতিকার করার চেষ্টাই করেনি। বিজেপি সেই ক্ষোভের আগুনে সলতে পাকিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করেছে।
ভোটের আগেই ছিল রামনবমী ও নবির জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে দুই ধর্মের নামে কার্যত বাহুবলের প্রদর্শন দেখেছে ইসলামপুর। রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের মধ্যেই পড়ে এলাকাটি। বাংলায় মেরুকরণের ভোটের মডেল এবার রায়গঞ্জ। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নয়। ভোটের লড়াই সরাসরি হিন্দু বনাম মুসলিম। রাজনৈতিক দলগুলি কার্যত সেই দুই পক্ষের কোনও না কোনও দিকে আশ্রয় নিয়েছে মাত্র। পরিস্থিতি এমনই যে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমকে পর্যন্ত সেই মেরুকরণের স্রোতে গা ভাসাতে হয়েছে। বাম ভোটব্যাঙ্ক রক্ষার পাশাপাশি তৃণমূলের মুসলিম ভোট পক্ষে টানতে তিনি নির্বাচনের দিন ইসলামপুর এলাকায় কাটিয়েছেন দীর্ঘক্ষণ। সেখানেই তাঁর গাড়িতে হামলা হয়। ভোটে জেতার জন্য নীতি-আদর্শের কোনও দরকার নেই বলে খোলাখুলি মন্তব্য করেন অমিত শা, দিলীপ ঘোষরা।
মহম্মদ সেলিমের তৎপরতায় স্পষ্ট, সিপিএমও কিছু কম যায় না। এবং লেনিনের ভাষায় ‘পলিটিক্স ইন কমান্ড’ যদি না থাকে, তবে তার পরিণাম কী হয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সিপিএমও। বাম ভোট রামের ঝুলিতে যাওয়ার প্রবণতার মধ্যে সেই পরিণতি লুকিয়ে আছে। এবার তা আরও জোরালো হয়েছে। এক্ষেত্রে মডেল বলা যেতে পারে জলপাইগুড়িকে। সেখানেও দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছে। ভোটগ্রহণের আগের দিন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ খোলাখুলি স্বীকারই করেছিলেন যে সিপিএম ভোট ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব চলে যাচ্ছে পদ্মের ঝুলিতে। কেন? মহেন্দ্রের বক্তব্য ছিল যে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ধারণা হয়েছে যে তৃণমূলের টক্কর নেওয়া সিপিএমের কম্মো নয়। সেটা পারে একমাত্র বিজেপিই। তাই দলীয় কর্মী-সমর্থকরা মহেন্দ্রবাবুদের নাকি অনুরোধ করেছেন, এবারের ভোটটা অন্তত বিজেপিকে দিতে দিন।
নীতি-আদর্শের এই চরম দেউলিয়াপনাটাও এবারের লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর আগে আমার ৩২ বছরের সাংবাদিকতায় তো বটেই, ছয় দশকেরও বেশি জীবনে বোধ হওয়ার পর এমন নির্বাচন আগে কখনও দেখিনি। ১৯৬৭-র নির্বাচনের কথা প্রথম আমার মনে পড়ে। সেই প্রথম বাংলায় অকংগ্রেসি যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন হয়েছিল। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজলিঙ্গাপ্পা ও ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বে আদি ও নব কংগ্রেসের লড়াই শুরু হয়েছিল। পশ্চিমবাংলায় আমরা টের পেয়েছিলাম, ভিন্ন এক স্রোত। সেখানে গ্রামীণ বঙ্গসমাজে জমিটাই ছিল নির্বাচনের মূল ফোকাস। অস্পষ্টভাবে এখনও মনে আছে, সেই নির্বাচনে হাওয়া উঠেছিল, জমি কারও বাপের নয়, জমি হল দাপের।
নির্বাচন পরবর্তীকালে ষাটের দশকের শেষে বাংলা জুড়ে জমি দখলের লড়াইয়ের ইতিহাস কারও অজানা নয়। কীভাবে মানুষ কংগ্রেসি শাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছিলেন, তারও সাক্ষী আমি। আমার শিক্ষক বাবা রাজনীতির সাতে-পাঁচে থাকতেন না। শ্রী অরবিন্দের ভাবশিষ্য তিনি। কংগ্রেসের নেতারা যখন প্রচারে আমাদের বাড়িতে এলেন, তখন সেই শান্ত স্বভাবের বাবাকে গলা চড়িয়ে বলতে শুনেছিলাম, এবার আর আপনাদের ভোট দেব না। ৫২ থেকে আপনাদের ভোট দিয়েছি। কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারেননি আপনারা। তাই এবার আর দেব না। মুখের উপর এভাবে বলার সাহস এখন আর হয় না কারও। সেই পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। সহিষ্ণুতার বাতাবরণটাই যে ছিন্নভিন্ন।
সেদিন কিন্তু ছিল। ১৯৬৭-র সেই ঘটনায় বাবার সামনে চুপ করে কংগ্রেস নেতাদের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য এখনও আমার চোখের উপর ভাসে। সেই নেতাদের মধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন জেলাস্তরের কেউকেটারা। তারা সেদিন মুখ নিচু করে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৯-এ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যটা কেউ কল্পনা করতে পারেন? সেই মুহূর্তে কিছু না ঘটলেও পরে রাতের অন্ধকারে বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠা বা কারও লাশ হয়ে যাওয়ার পরিণতি এখন জলভাত। সচেতনতার স্তর তখন অনেক নীচে ছিল। মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে তত ওয়াকিবহাল ছিলেন না। রাজনৈতিক নেতারা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কার্যত প্রভুসুলভ আচরণ করতেন। তবু কিছু পরিসর ছিল। নির্বাচনটা ছিল খোলা হাওয়ার মতো। বড়দের রাজনৈতিক প্রচার শিশুদের প্রভাবিত করত। বাঁশের কঞ্চির ডগায় কোনও না কোনও দলের পতাকা ঝুলিয়ে তারা ইনকিলাব-জিন্দাবাদ বা বন্দেমাতরম চিৎকারে পাড়া মাথায় করত। বড়রা সেটাকে খেলা হিসেবেই দেখতেন। প্রতিপক্ষ শিশুদের প্রচারে নামিয়েছে বলে কোনও দল নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকত না। ১৯৬৭-র পর একে একে অনেক নির্বাচন চোখের সামনে দেখেছি। পরবর্তীকালে বেশ কিছু নির্বাচন কভার করেছে পেশাগত তাগিদে। এভাবে ধর্ম, নীতি-আদর্শহীনতা, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাকে কখনও প্রাধান্য পেতে দেখিনি। সে সময় দেখেছি, নির্বাচন মানে প্রচুর প্রতিশ্রুতি, আশ্বাসের ফুলঝুরি। বাস্তবে তার সিংহভাগই হয়তো হয়নি। কিন্তু মুখে যা বলা হত বা দলের ইস্তাহারে যা লেখা হত, তা ছিল মূলত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলিকে কেন্দ্র করে।
ফ্ল্যাশব্যাক ছেড়ে আসুন ২০১৯-এর বাস্তবে। মৌলিক চাহিদার কথা যদি বলেন, তবে তা ছিল কংগ্রেসের ইস্তাহারে। ন্যায় প্রকল্পের ঘোষণা-সহ গ্রামীণ কৃষক সমাজের হিতসাধনে গুচ্ছ সংস্থানের উল্লেখ ছিল সেখানে।
তুলনায় বিজেপির ইস্তাহারে ছিল দেশে এত বছর ধরে লালিত বিভিন্ন সংস্থান, যেমন ৩৭০ ধারা বিলোপ ইত্যাদির সদর্প ঘোষণা। আঞ্চলিক অন্য দলগুলির ক্ষেত্রে জাতপাত জনিত নানা সমস্যা শুনেছি। কিন্তু প্রচারের বাস্তব মাটিতে কংগ্রেসের ন্যায় তিন দফা ভোটগ্রহণ শেষ হতে না হতে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। কংগ্রেসের অন্য নেতারা দূরে থাক, রাহুল-প্রিয়াঙ্কার মুখেও এখন ন্যায়ের ঘোষণা তেমন শোনা যাচ্ছে না। চৌকিদার চোর হ্যায় স্লোগানে সুপ্রিম কোর্টকে জড়িয়ে কংগ্রেস সভাপতি একটার পর একটা আইনি জালে ফাঁসছেন।
রাহুল এখন ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিদের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণে। আমাদের রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের তরফে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেছিলেন বটে। তাতে আর্থ-সামাজিক নানা প্রসঙ্গ ছিল। কিন্তু প্রচারে তার কিছুই মুখে আনছেন না। বদলে তার মুখে শুধু মোদির নিন্দামন্দ। আর তিনি বা তার দল হিন্দুত্বের কত বড় রক্ষক, তা প্রমাণে তিনি মরিয়া। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি প্রমাণ করতে চাইছেন, হিন্দুত্বের বড় বিপদ তৃণমূল। ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা ওড়ানোর পরিবর্তে মমতা সভার পর সভায় প্রশ্ন করে চলেছেন, কী আমি আপনাদের দুর্গাপুজো করতে দিই না, কালীপুজো করতে দিই না? ওরাই তো পাঁচ বছরে রামমন্দিরটা তৈরি করে উঠতে পারল না।
সেনাবাহিনীও হয়ে উঠল নির্বাচনী প্রচারের বিষয়। আমাদের দেশে সেনা ইতিপূর্বে কখনই রাজনীতির কূটকচালিতে থাকত না। খোদ প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন ভোটের প্রচারে। বিজেপি নেতারা এমন ভাষায় কথা বলছেন যেন আধা সেনা তাদের ঘরের চাকর। সায়ন্তন বসু বললেই যেন সিআরপি কারও বুকে গুলি চালিয়ে দেবে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে মঞ্চে বলছেন, যতই বদলি করো, সমস্ত অফিসারই আমার। অর্থাৎ সেনা বা আধা সেনা মানে বিজেপির দাস আর বাংলার পুলিশ মানে তৃণমূলের আজ্ঞাবহ, এমন একটা ধারণা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে শাসকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ আগেই নেওয়া হয়েছিল। এখন ভোটের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষক ও নিরাপত্তা বাহিনীর নিরপেক্ষতাকে ভেঙে চুরমার করার প্রতিযোগিতা চলছে। সত্যিই অতীতের সমস্ত ভোটের সঙ্গে ২০১৯-এর কোন মিল নেই। বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশ, ভারতবাসী।