মাসুদ খান

প্রস্থান

 

 

কোনো একভাবে তো যেতেই হবে।

কর্কটে, হৃৎবৈকল্যে, অচেতনে, অস্ত্রোপচারে, আত্মঘাতে, বোমায়, বজ্রাঘাতে, বলাৎকারে, উদ্বন্ধনে, আগুনে, আঘাতে, গরলে, বা দুর্বোধ্য তরলে, প্লীহাদোষে, দৈবরোষে, পতনে, প্রপাতে, চাপাতিতে, ক্রসফায়ারে, বিমানধসে, দাঙ্গায়, দুর্বিপাকে, জাহাজডুবিতে, হিংস্র প্রাণীর মধ্যাহ্নভোজে, কিংবা অজানিত কোনো বদ্ধ প্রকোষ্ঠে চিরতরে আটকা পড়ে অনাহার-অনম্লজান দশায়, কিংবা অন্য কোনো অচিন্ত্য অচিহ্নিত পথে…

এত পথ! এত বিচিত্র উপায়! প্রস্থানচিহ্ন আঁকা যে কোন পথে!

বনের মধ্যে বসানো এক গর্জনশীল ভয়ালদর্শন যন্ত্রের সামনে
বেচারাথেরিয়ামের মতো বসে, তওবা করার ভঙ্গিতে
গুনগুনিয়ে ভাবছে লোকটি, মেঘলা দিবসে।

 

 

উদ্ভ্রান্তি

ঘুরনসিঁড়ির ধনু-বাঁকানো উদ্বেগ,
সিঁথিরেখা দুই ধারে ফুল্ল বেসামাল ঊর্ণা-খেলানো উচ্ছ্বাস,
রিভলভিং চেয়ারের ঘূর্ণ্যমান বিবেক এবং
আসবাবের অস্ফুট অশ্রুত অট্টহাসি – এই এদের দোহাই…
কী করে বোঝাই কত যে বকেয়া এখনো প্রদেয় প্রকৃতির কাছে!
পেয়েছ ভূভাগ্যগুণে এতটুকু সুফলা ভূভাগ।
আগুনে আলোক থাকে, তারও বেশি তাপ।

গাছে উঠে তোতাকে উড়িয়ে দিয়ে বারবার আতা খেয়ে যাবে
দুই ভাই সুশীল দুঃশীল,
ছন্ন হাঁড়িচাচাকে উড়িয়ে পাকা পেঁপে।
উত্তাপে রঙের জ্বালা, রঙেরই প্রতাপ।

আর এতসবের মধ্যেই
উচ্ছেদশিকার কোনো বস্তির উদ্ভ্রান্ত ছুটতে-থাকা নারী ও শিশুদের ভয়ার্তি
দ্রুত মিশে যেতে থাকবে গুঁড়নকলের ধোঁয়াগর্জনের সঙ্গে
বেদম বেঘোর ক্রূর বৃষ্টির ভেতর।

 

 

প্রলাপবচন

নদ এসে উপগত হবে ফের নদীর ওপর
দুই পারে জমে উঠবে কপট কাদার ঘুটঘুটে কেলেংকারি
মাঝখানে চোরাঘূর্ণি চোরাস্রোত
এলোমেলো এলোমেলো বাউরি ভাবনা এসে
পাক খেয়ে ঢুকে পড়বে বৃষ থেকে মিথুনের অধিক্ষেত্রে…

মাকাল ফলের মৃদু মনস্তাপ
করলা-লতার শ্যামলা আক্ষেপ
কোকিলস্য প্রবঞ্চনা, কাকের বাসায় উপঢৌকন
ভরা বিলের ওপর দিয়ে ভেসে আসা ভেজা-ভেজা সুর
হুদহুদ পাখির অস্থিরতা, অসমাপিকার লঘু তঞ্চকতা
ঘাড়-ত্যাড়া অশ্বের অস্মিতা, উগ্রবসনা আগুনের চঞ্চল রসনা…
আলগোছে সবকিছু পাশ কেটে গিয়ে
ওইদিকে বর থাকবে কনের বশে
খলনায়কের দাঁতের নিচে পড়বে কট্টরপন্থী কাঁকর
চার্জ করা হবে পশ্চিমের ব্লাস্ট ফার্নেসে
আর ঝাপটা এসে লাগবে পূর্বেরটা থেকে
খামাখা দিওয়ানা হবে রঙিলা বিড়ালিনী
ঘনঘন গণ-হাইপ উঠবে মামুলি ঘটনা ঘিরে এমনি-এমনি
হিস্টিরিয়ায় কাঁপতে থাকবে দেশকাল
সাত সাধু এক হবে, এক শয়তান সাত
দোষযুক্ত আলু নামবে হিমাগারের শ্রোণিচক্র থেকে…

এবং হয়তো আমি একদিন ঠিকই
পড়ো-পড়ো ঘরকে যোগাতে পারব
গাঁট-অলা তিন-বাঁকা শালকাঠের সমর্থন
নিশ্চিহ্নকে দেখাতে পারব কিছু লুপ্তপ্রায় চিহ্নের ইশারা
বিশেষকে কোনো ভ্রান্তিকর নির্বিশেষের আভাস
বেদিশাকে দিশার বিভ্রম…

আর দুম করে লিখে ফেলব এমন এক কবিতা একদিন,
যা পড়ে ভৌতিক সুর তুলবে একসঙ্গে সাধু ও শয়তান
সাপ-আর-অভিশাপে-গড়া মতানৈক্যে-ভরা গামারিকাঠের গিটারে
আর ‘চলে আয়’ বলে খোদ খোদাতালা টুইট পাঠাবেন দিব্য টুইটারে।

 

 

(ছবি: ইন্টারনেট)

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...