সৈকত রক্ষিতের কবিতা

ঝুমুর

 

 

১. নাচনি

 

বাঁশিয়াল রে, হামার বেদন কন্ সুরে তুই বাজাবি।
লোকলাজে মরি হামি আর কত
তুই লাজাবি।।

লোকে বলে রাধা রাধা
রাধার বেদন হামার আধা
দাগাবাজের পিরিত হামার

লুটিল নাকছাবি।।

হামার অঙ্গ হৈল কালি-ঝুলি
যৌবন ঢাকিল ব্রজধূলি
ঘরেও নাই ঘাটেও নাই হাটের মাঝে

হারালি সুখের চাবি।।

এখন ভ্রমি হামি পথে পথে
কেউয়েই নাই সঙে-সাথে
পিরিতের ফাঁইস গলায় নিয়ে

করুণার ভিখ মাঙি।।

সৈকত কহে জনে জনে
প্রেম দিল না আনজনে
জীবন-অরণ্যে অবলার

না রহিল কুসুমভাতি।।

 

২. দিদি লো, কুল গাছে বাঁকা কাঁটা

 

খাঁচি ভরা পাকা কুল
লুটে লিল দেওরে
হামি আর যাব নাই কুলতলে
দিদি লো, কুলগাছে বাঁকা কাঁটা আঁচলে বিঁধিল।।

অকালে ধরিলে ফল
বড় মিঠা লাগে হে
মিঠা ফলে সাধের দেওর
নেশাতে মজিল।

হামি আর যাব নাই কুলতলে
দিদি লো, কুলগাছে বাঁকা কাঁটা
আঁচলে বিঁধিল।।

কদম ফুইলা আঁচল হামার
প্রেম ডুরিয়া শাড়ি
শাড়ি ধরে আড়ে দেওর
হেঁচকা টান দিল।

হামি আর যাব নাই কুলতলে
দিদি লো, কুলগাছে বাঁকা কাঁটা আঁচলে বিঁধিল…

 

৩. কাঁসাই লদীর চিকন বালি

 

ঘরের বাইগন পরে খায়
ছাগল করে হায় হায়
মিছাই করি ক্ষেতিবাড়ি
কার লাইগে তরকারি ফলায়
বাড়ি নামোয় করলে চাষ চৌকিদারি চায়।।

ঝিঙা লাগালি জষ্টি মাস
শরাবনে খাবার আশ
পাতের আড়ে ডড়কা ঝিঙা বাঁদরে লুটে খায়
কাঁটাবাঁশে মাঁচা বাঁধা বঁধু গেল যে বৃথায়।।

পিপা ধরে জড়া জড়া
দেখ কেমন মনোহরা
গাছপাকা পিপার সাধ কোবো পালি নাই।
বারভূতে বাগানবাড়ি ছিঁড়ে-তাইড়ে খায়।।

সৈকত জুড়ে ঝুমৈর-কলি
রঙ্গে মাতো বেলাবেলি
সময় গেলে সাধন হবেক নাই
কাঁসাই লদীর চিকন বালি তলে-তলে যায়।।
বাড়ি নামোয় করলে চাষ চৌকিদারি চায়…

 

৪. অঙ্গ সারঙ্গ তুল

 

অঙ্গ সারঙ্গ তুল
ভ্রুবিভঙ্গ মধুর অতুল
চরণ তেমনি মঞ্জুল

পড়িছে অঙ্গনে

সখি, না চাহিও আনজনে।।

আসঙ্গ লিপ্সা জাগে
অনঙ্গ গুঞ্জরে বাগে
প্রেম তবহু মাগে

অনঙ্গমোহনে

সখি, না চাহিও আনজনে।।

সৈকত কহে অনুপমা
কুরঙ্গ-নয়ন সমা
না মাতিল তরঙ্গ-রঙ্গে

প্রেম মগনে

সখি, না চাহিও আনজনে…

 

৫. তুমার সীতার সিঁদুর

 

তুমার সীতার সিঁদুর দামিনী
চৈখের কাজল যামিনী
কানফুলটি কামিনী
করিছে ঝলমল
বঁধু, আর কী দিয়ে সাজাব তুমাকে
সিঁদুরে-কাজলে টলমল।।

তুমার হাতের চুড়ি রিনিঠিনি
পায়ে বাঁধা কিঙ্কিনী
নাকের লুলুক ফিনিফিনি
কাঁপিছে উজল
বঁধু, আর কী দিয়ে সাজাব তুমাকে সিঁদুরে-কাজলে টলমল

তুমার রূপের আঁখি রোহিণী
ঠঁটের হাসি মোহিনী
চালে চমক সোহিনী
মাতিছে ভূতল
বঁধু, আর কী দিয়ে সাজাব তুমাকে
সিঁদুরে-কাজলে টলমল

কহে সৈকত ভাবিনী
তুমিই প্রেম রাগিণী
তুমিই জগৎ জননী
করিলে চঞ্চল
বঁধু, আর কি দিয়ে সাজাব তুমাকে
সিঁদুরে-কাজলে টলমল…

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...