শিবাংশু দে
ছোটবেলায় দেখা একটি লোকপ্রিয় সিনেমায় মহানায়কের একটা উক্তি মনে পড়ে। কোনও চাকরির ইন্টারভিউতে চাওয়া হয়েছিল প্রার্থী যেন শেক্ষপিরের মতো ইংরিজি, রবীন্দ্রনাথের মতো বাংলা আর তুলসীদাসের মতো হিন্দি জানে। তা মহানায়ককে যখন প্রশ্ন করা হল, তিনি কী বললেন? হ্যাঁ, আমি জানি। তবে একটু এদিকওদিক। মানে? তাঁর উত্তর, তিনি শেক্ষপিরের মতো বাংলা, রবীন্দ্রনাথের মতো হিন্দি আর তুলসীদাসের মতো ইংরিজি জানেন। হ্যাঁ, চাকরিটা তাঁর হয়ে গিয়েছিল।
গোস্বামী তুলসীদাস সম্বন্ধে বাঙালিদের ধারণা এর বেশি আর যায়নি কখনও। তবে শুধু তুলসীদাস কেন, বাঙালিদের কৃত্তিবাস ওঝা সম্বন্ধেও কোনও ধারণা নেই। দুজনেই প্রাচীনকালে নিজের ভাষায় ‘রামায়ণ’ রচনা করেছিলেন। ইশকুলের প্রথমযুগে বইয়ে পড়া এই তথ্যটুকু ছাড়া আর কিছু মনে থাকে না। এমনকি যখন বাঙালিরা কবিতা বিষয়ে আগ্রহী ছিল তখনও না। এখন তো কবিতা এক মুমূর্ষু শিল্প।
এহ বাহ্য, ‘রাম’কে বাঙালির তখনই মনে পড়ে, যখন তাঁর মুখোশ পরে এদেশে হিংস্র দুর্বৃত্তের দল নিরীহ নাগরিকদের থেকে ‘হিন্দুত্বে’র বা অহিন্দুত্বের পরীক্ষা নেয়। ‘রাম’কে চেনা বা না চেনার দায় এখন আর বিবেকী মানুষের কাছে ঐচ্ছিক বিকল্প হয়ে নেই। কারণ গোবলয়ের আগুনের তাত থেকে বাঙালি আজ খুব দূরে নয়। ‘রাম’ চিরকালই একটি শ্রেণীপ্রতীক। প্রাক ইতিহাসের উপজাতিক টোটেম হয়ে গেছেন তিনি, গত দেড় হাজার বছরের টানাপোড়েনে। সেই বিখ্যাত কব্বালির শব্দগুলি দিন দিন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। “ম্যাঁয় ক্যা জানুঁ, রাম তেরা গোরখধন্দা।” ‘রাম’কে নিয়ে এই ‘গোরখধন্দা’কে বুঝতে গেলে আগে জানতে হবে ভারতবর্ষে তুলসীদাস নামক একটি ইতিহাস-ধারণাকে। কারণ এই মুহূর্তে যে ‘রাম’কে নিয়ে ক্ষমতার চক্রান্ত চলেছে, তিনি তুলসীর রাম। বাল্মীকির ন’ন।
তুলসীদাস শুধুমাত্র কবি ন’ন। তিনি ছিলেন একটি বিস্তীর্ণ সভ্যতার বিবর্তিত মূল্যবোধের সেরিব্রাল প্রতিনিধি। এদেশে মধ্যযুগে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিশ্বাসস্থল, সনাতনধর্মের স্রোতে বিরাট বাঁক নেওয়া বিবর্তনের একজন পথিকৃৎ। ব্রাহ্মণ্যধর্মের চেনা সমাজব্যবস্থার ছকটা আদি শংকরের সময় থেকে তিন চারশো বছর ধরে নিষ্প্রাণতার শিকার হয়ে পড়ছিল। তাকে উদ্ধার করার জন্য যেসব মানুষেরা বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তুলসীদাস ছিলেন তার অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তুলসীদাস সম্বন্ধে বলেছিলেন: “……the greatest man of his age in India and greater than even Akbar himself.” বিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ জর্জ গ্রিয়ার্সন বলেছিলেন, “the greatest leader of the people after the Buddha” এবং “the greatest of Indian authors of modern times” (Notes on Tul’si Das)।
—————————–
গল্পটা শুরু হবে আচার্য রামানুজের সময় থেকে। বেদান্ত অর্থাৎ মূলত উপনিষদের শিক্ষার পথেই শতধাবিভক্ত ভারতীয় লৌকিক ধর্মবিশ্বাস, অর্থাৎ শৈব, বৈষ্ণব, গাণপত্য, সৌর বা শাক্ত ইত্যাদি মতবাদী মানুষদের একটি ছাতার তলায় আনার কূট অধ্যাত্ম-রাজনৈতিক প্রয়াস শুরু হয়েছিল কালাডির আদি শংকরাচার্যের কুশল নেতৃত্বে। দাক্ষিণাত্যের ব্রাহ্মণ রামানুজ সনাতন অধ্যাত্মদর্শনের স্তম্ভ আদিশংকরের পর প্রধানতম ধর্মীয় দিগদর্শক ছিলেন এদেশের। শংকরের অদ্বৈত বেদান্তবাদী ভাবধারার পরবর্তী মান্য নায়ক ছিলেন তিনি। সৃষ্টি করেছিলেন শ্রী সম্প্রদায়। শংকরের মোক্ষবাদী দর্শনকে বিবর্তিত করে প্রস্তাব করেছিলেন বিশিষ্ট অদ্বৈত দর্শনের। যার ছিল তিনটি উৎস ধারা, নাম প্রস্থানত্রয়ী। উপনিষদ, ভাগবদগীতা এবং ব্রহ্মসূত্রের সারসংক্ষেপকে সম্মিলিত করেছিলেন অদ্বৈতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে। তাঁর প্রধান শিষ্য ছিলেন বৌধায়ন, টঙ্ক, গুহদেব, দ্রামিড় প্রমুখ। এর মধ্যে বৌধায়ন ছিলেন পূর্ব মীমাংসা অথবা মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা বা বেদান্তের এক জন প্রবাদপ্রতিম ব্যাখ্যাকার। স্বামী রামানন্দ ছিলেন সম্ভবত প্রয়াগের মানুষ। কিন্তু তাঁর কর্মভূমি ছিলো বারাণসী। পরবর্তীকালে তিনি বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদের শিক্ষা নিতে দাক্ষিণাত্যে যাত্রা করেছিলেন। দীর্ঘকাল সেদেশে রামানুজপন্থী গুরু রাঘবানন্দের কাছে শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসেন বারাণসীতে। কিন্তু তৎকালীন ব্রাহ্মণ্য রক্ষণশীলতায় পর্যুদস্ত বারাণসীর অধ্যাত্ম আবহে তিনি স্বস্তি পাননি। নাথপন্থী যোগীদের সংস্পর্শে এসে ঔপনিষদিক অদ্বৈতবাদ ও লৌকিক বৈষ্ণব চেতনার সংশ্লেষণে প্রবর্তন করেন ভক্তিবাদী আন্দোলনের রূপরেখা। মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের অধ্যাত্মচেতনার জলবিভাজক আন্দোলন ছিল সেটি। বৈদিক ব্রাহ্মণ্য বর্ণাশ্রমবাদী প্রস্তাবনার বিপরীত মেরুতে ইতর মানুষের অধ্যাত্মজিজ্ঞাসার উত্তর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ভক্তি আন্দোলনের উদ্বেল ধারা। পঞ্চনদ থেকে বঙ্গদেশ, সর্বত্র।
সনাতনপন্থীদের মধ্যে রামানন্দই এদেশে প্রথম একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সূত্রপাত করেন, রামানন্দি সম্প্রদায়, যেখানে বর্ণবাদ আমল পায়নি। একটি বিখ্যাত দোহা, যা পরবর্তীকালে রামানন্দের বিশ্রুত শিষ্য সন্ত কবীরের নামেই অধিক প্রচলিত, তাঁর নবদর্শনের ভিত্তি ছিল।
“জাতি না পুছো সাধো কী, পুছ লিজিয়ে জ্ঞান,
মোল করো তলওয়ার কো, পড়া রহন দো ময়্যান।।”
অর্থাৎ সাধুর কোনও জাতি হয় না। তার জ্ঞানই তার পরিচয়। যেমন তলওয়ারের পরিচয় তার ধারে, খাপের ভূমিকা সেখানে অর্থহীন। মানুষের জন্মগত জাতিগত পরিচয় ঐ খাপের মতো। অর্থহীন। সেকালে একজন ব্রাহ্মণ্যসামর্থ্যের প্রতিভূ দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতের এই অবস্থান শুধু দুঃসাহসীই নয়, যুগান্তকারী। রামানন্দ ছিলেন ক্রান্তদর্শী। তিনি বুঝেছিলেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভারতীয় সনাতনবাদী বিপুল জনসমষ্টিকে যদি নবধর্ম ইসলামের বিধ্বংসী প্লাবনের থেকে রক্ষা করতে হয়, তবে নিম্নবর্গীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ধর্মের মূলস্রোতে নিয়ে আসতে হবে। এর একমাত্র পথ বর্ণাশ্রমের বিভেদবাদী নীতি থেকে সরে এসে ভালোবাসার সনিষ্ঠ আবেগকে আশ্রয় করা। যে নীতির প্রয়োগ আমরা আরও পাঁচশো বছর আগে ইসলামে মহাত্মা আলির অনুগামীদের মধ্যে দেখেছি। যাকে পরবর্তীকালে সুফিধর্ম বলা হয়েছে। রামানন্দ এক্ষেত্রে বৈদান্তিক ঈশ্বরের ভূমিকা অপসারণ করে ‘হরি’কে আশ্রয় করলেন। এই হরি, কখনও রাম, কখনও বা কৃষ্ণ। তিনি কোনও রক্তচক্ষু প্রতিহিংসাপরায়ণ দেবতা ন’ন। নিতান্ত ঘরের লোক, প্রাণের আরাম। রামানন্দের প্রধান শিষ্যদের মধ্যে যেমন ছিলেন ব্রাহ্মণ অনন্তানন্দ, ভবানন্দ, সুখানন্দ, তেমনই ছিলেন ম্লেচ্ছ ও ‘অচ্ছুত’ কবীর, রবিদাস, সেনা, সধনা ও ধন্না। ছিলেন সেকালের বিচারে প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে দু’জন নারী সাধিকা সুরসরি ও পদ্মাবতী। বহুদিন পরে আমাদের বাংলার সাধক লালন সাঁইয়ের লেখায় যেমন পাই,
“ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই
হিন্দু কি যবন বলে কোনও জাতের বিচার নাই।”
যদিও আচার্য রামানুজের শিষ্য বল্লভাচার্য এবং নিম্বার্ক বৈষ্ণব ভক্তিবাদের পূর্ববর্তী পরিচিত প্রবক্তা ছিলেন, কিন্তু রামানন্দই ছিলেন এদেশে ভক্তি আন্দোলনের মূল স্রোতের প্রধান ভগীরথ। ভক্তি আন্দোলনকে একটা জন-আন্দোলনের আকার দেবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রামানন্দ। যে নামগুলি আগে করলাম, তাছাড়াও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ছিলেন শিখধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক, সন্ত জ্ঞানদেব, সন্ত নামদেব, সন্ত তুকারাম, সন্ত নাভাদাস, সন্ত একনাথ এবং আমাদের একান্ত বাঙালি শ্রীচৈতন্য। রামানন্দের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলির মধ্যে প্রধান,
১. আরাধ্য ঐশী লক্ষ্যলাভে জন্মগত জাতি বা বর্ণভেদ কোনও বাধা হবে না,
২. যাবতীয় আরাধনা পদ্ধতির মধ্যে লৌকিকতার জটাজাল যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। ভক্তি ও নিষ্ঠাই একমাত্র শর্ত,
৩. ‘ধর্মে’র নামে প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কারকে দূর করতে হবে,
৪. পণ্ডিত-পুরোহিত, মুল্লাহ-ইমাম ভিত্তিক লোকাচারকেন্দ্রিক অধ্যাত্মসন্ধান বিসর্জন দিয়ে ঐশী লক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি হৃদয়বন্ধন করতে হবে,
৫. সমস্ত উপাসনা বা আরাধনার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। সাবেকি সংস্কৃতভিত্তিক ব্রাহ্মণ্য আচারানুষ্ঠান গ্রাহ্য হবে না।
‘তুলসী’কে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ভক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটটি জানা বিশেষ জরুরি। রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে সগুণ ও নির্গুণব্রহ্ম, উভয় মতেরই সাধকেরা ছিলেন। রামানন্দ নিজে কিন্তু সগুণ বা নির্গুণ কোনও মতের প্রতিই প্রত্যক্ষ পোষকতা করতেন না। তাঁর জন্য ভক্তির গভীরতাই একমাত্র বিবেচ্য। তাই কেউই তাঁর বৌদ্ধিক আশ্রয় থেকে প্রত্যাখ্যাত হতেন না। তাঁর বিখ্যাততম শিষ্য সন্ত কবীর ছিলেন নির্গুণপন্থী। আবার ভবানন্দ বা সুখানন্দ ছিলেন সগুণব্রহ্মের পক্ষপাতী। একটা উল্লেখযোগ্য সমীকরণ লক্ষ করা যায় এই বিভাজনের মধ্যে। ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জন্মগত ব্রাহ্মণদের মধ্যে সগুণপন্থী সাধকরা সংখ্যাগুরু। আবার ইতরবর্গীয় সাধকেরা ছিলেন মূলত নির্গুণপন্থী। সগুণপন্থীরা উপাস্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হয় রাম (তুলসীদাস) বা কৃষ্ণকে (সুরদাস)। রাম ও কৃষ্ণ, দুটি প্রতীকই সগুণ মনুষ্যমূর্তিতে কল্পিত হ’ন। নির্গুণপন্থীর আরাধ্য ছিলেন একটি ধারণা। যাঁর নাম শুধু ‘হরি’। তিনি নিরাকার, নির্গুণ, নিরঞ্জন ও অখণ্ড। তবে একথাও সত্য, তুলসী নির্গুণপন্থী সাধকদের মতো বর্ণাশ্রমবাদী ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে অস্বীকার করতে পারেননি। তিনি কোনও অবস্থাতেই ‘বেদোক্ত’ বর্ণবাদী অনুশাসনের বিরুদ্ধে যাবার সাহস দেখাতে সক্ষম হননি। এই নিয়ে অভিযোগও রয়েছে।
ভক্তি আন্দোলনের পুরোধা সমস্ত সাধকই কাব্য ও সঙ্গীতচর্চার মাধ্যমে নিজস্ব মতবাদ প্রচার করতেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের কবিত্বশক্তি তো ঈর্ষণীয়ভাবে আকাশছোঁয়া। কিন্তু গোস্বামী তুলসীদাস ছিলেন সবার মধ্যে অনন্য। তাঁর কবিত্বশক্তির গভীরতা ও প্রভাব অতি বিপুল। আধুনিক যে হিন্দিভাষা পরবর্তীকালে লোকস্বীকৃত হয়েছে তার শিকড় ছিলো তুলসীর ব্রজভাষায় রচিত সুবৃহৎ রচনাবলির মধ্যে। তুলসীকে নিয়ে গড়ে ওঠা উপকথা, কিংবদন্তির কোনও শেষ নেই। যদিও এসব গল্পকথা আসলে ভক্তকথা। অর্ধেক কল্পনা, অর্ধেক অতিশয়োক্তি। কিন্তু তা প্রতিষ্ঠা করে তাঁর লোকপ্রিয়তা ও জনজীবনে আকাশচুম্বী প্রভাবকে। যেমন একটি লোককথা দেখা যাক। জন্মস্থান রাজপুর থেকে প্রথমে যখন তুলসী বারাণসীতে আসেন, তখন অস্সিঘাট ছিল একেবারে জনহীন, অরণ্যসংকুল স্থান। তাই তিনি প্রহ্লাদঘাটের কাছে বসবাস করতে থাকেন। সেই সময়েই তাঁর সংস্কৃতভাষায় কাব্য রচনার প্রয়াসও শুরু হয়। তিনি সারাদিন ধরে যা কিছু রচনা করতেন, রাত হলেই তা কোথায় হারিয়ে যেত। এইরকম আটদিন চলার পর কাশীবিশ্বনাথ তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন সংস্কৃতভাষা পরিত্যাগ করে অওধিভাষায় কাব্য রচনা করতে। তাহলেই তুলসীর কাব্য সামবেদের মতো গরিমা অর্জন করবে। এই আদেশটি যখন তুলসীদাসের কাছে এসেছিল তখন তিনি ছিলেন আধো ঘুমে, আধো জাগরণে। আধো তন্দ্রায় তুলসীদাস নিজস্ব ভাষামাধ্যম বিষয়ে যে সিদ্ধান্তটি নেন তার তাৎপর্য ছিল অসীম। সমাজতাত্ত্বিক রূপকের দিক দিয়ে দেখলে মনে হবে, ইতরবর্গের দেবতা শিব স্বাভাবিকভাবেই চাইলেন তুলসীর প্রতিভার ফল যেন শুধুমাত্র বিষ্ণুপূজক সংস্কৃতজ্ঞ ব্রাহ্মণসমাজের উপভোগের জন্যই সীমাবদ্ধ না থেকে যায়। ইতর মানুষও যেন এ জাতীয় সৃষ্টির আশীর্বাদ সমানভাবে পেতে পারে। তুলসীর এই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল রামানন্দীয় প্রভাব। যদিও সমপর্যায়ের ক্রান্তদর্শী সিদ্ধান্ত এর আগে আরেকজন মানুষ প্রথম নিয়েছিলেন, শাক্যমুনি বুদ্ধ। সারনাথ থেকে তাঁর প্রথম উপদেশাবলী প্রচার করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন ইতরবর্গের ভাষা, পালি। উচ্চবর্ণের স্বীকৃত ভাবপ্রকাশের মাধ্যম দেবভাষা নয়। পঞ্চম শতক থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত ভারতবর্ষে আলো-আঁধারির মধ্যযুগ পেরিয়ে আর্য-ব্রাহ্মণ্য-ইসলাম-সুফি-ভক্তিবাদী সমন্বয়ের সুফলসম্পন্ন ক্ল্যাসিক একটা সংস্কৃতিবোধ নির্মাণ হল তুলসীদাসের রচনাবলির মধ্য দিয়ে।
—————————————————–
তুলসীদাস রামভক্তি আন্দোলনের প্রধান পুরুষ। রামানন্দ নিজে অনুগামীদের জন্য রাম, কৃষ্ণ বা অলখ নিরঞ্জন কোনও প্রতীকেরই নির্দিষ্ট রূপকল্প তৈরি করে দেননি। তাঁর এই উদার গণতন্ত্রপ্রিয়তা শিষ্যদের সৃজনশীলতার মধ্যে অশেষ বৈচিত্র্য এনে দিয়েছিল। রামানন্দের একমাত্র শর্ত ছিল তাঁর অনুগামীরা নিজের ইচ্ছেমতো ঐশীপ্রতিমা বেছে নিতে পারবেন। কিন্তু সেই আরাধ্যের প্রতি ভক্তি ও প্রেমে একবিন্দু ফাঁকি চলবে না। প্রশ্নহীন প্রেম, ব্যতিক্রমহীন ভক্তিই ছিল এই আন্দোলনের একমাত্র চালিকাশক্তি। সগুণপন্থীদের মধ্যে যেমন ছিল দুটি পক্ষ, রামভক্ত ও কৃষ্ণভক্ত; তেমনই নির্গুণপন্থীদের মধ্যে ছিল দুটি ভার্টিক্যাল। জ্ঞানমার্গী ও প্রেমমার্গী। প্রেমমার্গীরাই পরবর্তীকালে ভারতীয় সুফিধর্মের অনুগামী হয়েছিলেন। বাল্মীকির রামায়ণ মূলত আর্য ও অনার্য সভ্যতার মধ্যে পরস্পর ধর্ম-সংস্কৃতি, নীতিবোধের টানাপড়েনের ইতিকথা। বাল্মীকির রাম কিন্তু দোষমুক্ত, ঈশ্বরপ্রতিম কোনও অধিনায়ক নন। তিনি একজন আর্য রাজপুরুষ। মহৎ, কিন্তু রজোগুণ সম্পন্ন একজন মানুষের যা কিছু দোষ-গুণ থাকে, তাঁর মধ্যে সব কিছু রয়েছে। সারাজীবনে তিনি বহুবার ন্যায়ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। যে কোনও সাধারণ মানুষের মতোই। কিন্তু তুলসী এই রামচরিত্রটিকে সৃষ্টি করলেন ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম’ হিসেবে। যিনি মনুষ্যরূপেও বিষ্ণুর সাক্ষাৎ অবতার। একজন আদর্শ যোদ্ধা, পুত্র, ভ্রাতা, পতি, বন্ধু ও নৃপতি। তাঁর সবকিছুই শ্রেষ্ঠ। কোনও দোষ থাকতে পারে না। আমাদের পরিচিত নানা মানুষী দুর্বলতায় বিড়ম্বিত, খণ্ডিত রাজপুরুষ রাম চরিত্রটির প্রেক্ষিত বদলে দিয়েছিলেন তিনি। রাম তাঁর কাছে একজন লোকনায়ক। যিনি শূদ্রা শবরীর নিবেদিত উচ্ছিষ্ট ফল ভোজন করতে দ্বিধা করেন না। বাল্মীকির রামচরিত্রের যা কিছু ক্লিষ্ট লক্ষণ সব কিছুকে ভক্তি ও আনুগত্য দিয়ে তিনি ঢেকে দিতে চেয়েছিলেন। এর কিছু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার। নবধর্ম ইসলামে যেমন বার্তাবাহী পয়গম্বরের ভাবমূর্তির মধ্যে কোনও ধূসরতা বরদাস্ত করা হয় না। তাঁর আদর্শ উচ্চতম, প্রশ্নবিহীন। ভাবা হত তার জোরেই তাঁর অনুগামীরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হলেও এদেশের বিপুল জনসমষ্টিকে শাসন করার শক্তি অর্জন করতে পেরেছিল। ইসলামের এই দৈবী একনায়কতন্ত্রী নৈতিক অনুপ্রেরণার বিকল্প হিসেবে মধ্যযুগের সনাতনধর্মীয় সেরিব্রাল শিল্পীরা রাম বা কৃষ্ণের ভাবমূর্তিকে গরিমাময় একনায়কতন্ত্রী একটি অবস্থান প্রদান করেন। তুলসীর রামচরিত্র এই চিন্তনেরই প্রকাশ। তাঁর রচনার নাম তুলসীরামায়ণ নয়। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘রামচরিতমানস’। অর্থাৎ তুলসীদাসের মনোজগতে রামচরিত্র যে মহিমা, গরিমা, সর্বজয়ী নৈতিক শক্তি নিয়ে প্রতীত হয়েছিল, তারই কাব্যরূপ। গত পাঁচ-ছশো বছর ধরে এদেশে যে রামকে মানুষ চেনে, তিনি তুলসীর রাম। মনে রাখতে হবে মহাদেবী বর্মা যেমন বলেছিলেন, আজকের ভারতীয় সমাজব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে তুলসীদাস নির্মিত মূল্যবোধের ভিত্তির উপর এবং আজ ভারত যে রামকে চেনে, তিনি তুলসীর রাম। বাল্মীকির নয়। আজ এই অন্ধকার সময়ে রামের নামে যা কিছু রাজনৈতিক পাপ, হননপর্ব আমরা দেখতে পাই, তার উৎস রয়েছে তুলসীসৃষ্ট সর্বশক্তিমান মর্যাদাপুরুষোত্তম রামচরিত্রের ক্লিষ্ট অপব্যাখ্যার মধ্যে।
———–
দীর্ঘকাল ধরে গাঙ্গেয় অববাহিকায় গোস্বামী তুলসীদাস একটি ধারণা, ব্যক্তিবিশেষ নন। মধ্যযুগের প্রধান সন্তদের মতো তাঁর সম্পর্কেও অগণিত কিংবদন্তি, লোককথা বা কল্পিত আখ্যান প্রচলিত আছে। তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে এত ধরনের ভিন্নমুখী বর্ণনা রয়েছে যে কোনটি স্বীকৃত সত্য, কোনটা বা গল্পকথা ঠাহর হয় না। চার-পাঁচটি জন্মসন, প্রায় ততগুলো জন্মস্থান নিয়ে লোকে নিজেদের মধ্যে বচসা করে। তবে সরকারিভাবে এখন ঘোষণা করা হয়েছে ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে চিত্রকূটের কাছে রাজপুর গাঁয়ে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর সমসাময়িক ও পরবর্তীকালের বিশিষ্ট ভক্তকবি ও পণ্ডিতেরা তাঁকে নিয়ে যত লিখেছেন, ভারতবর্ষের আর কোনও সারস্বতসাধকের তা নসিব হয়নি। আমার নিজের ধারণায় বঙ্গদেশে বিশের শতকে যে মাত্রায় আমরা নিজেদের জীবনচর্যা ও যাপনবৃত্তে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করেছি, তিন-চারশো বছর ধরে তুলসীদাসকে বিস্তীর্ণ গাঙ্গেয় ভূভাগের আপামর মানুষ সেই মাত্রার গুরুত্ব ও প্রেয়ত্ব সহকারে গ্রহণ করে এসেছে। ব্রাহ্মণ্যচিন্তার বহুমুখী গভীরতা ও ঐশ্বর্য এবং ভক্তিবাদের প্রেম অনুভূতি, এই দু’টির সমন্বয়ে তুলসীদাস একটা স্বীকৃত মূল্যবোধের জনক। এই মূল্যবোধটি আজকের বিচারে হয়তো সামন্ততন্ত্র ও পিতৃতন্ত্রের ইশারা বহন করে আনে। কিন্তু ইতিহাসের বিচার সতত স্থান-কাল ও পাত্রের পরিপ্রেক্ষিতেই করতে হয়। সেই দৃষ্টিকোণে তুলসীদাসের অন্তর্দৃষ্টি ছিল গভীরভাবে মানববাদী। জীবনকথার নানা ইঙ্গিত বিভিন্ন সময়ে তাঁর রচনার মধ্যে পাওয়া যায়। কিংবদন্তির স্ফীত আবরণের ফাঁক দিয়ে তার সত্যবস্তু খুঁজে নেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। তবে এটা স্বীকৃত সত্য, যে সম্ভবত ব্রাহ্মণকুলে জন্ম নিলেও তিনি ছিলেন আজন্ম দরিদ্রতম, নিপীড়িত ভারতবর্ষের প্রতিনিধি। তাঁর পিতা-মাতা হিসেবে যাঁদের নাম পাওয়া যায়, আত্মারাম দুবে ও হুলসি দেবী (কেউ বলেন তাঁরা সরযূপারিন, কেউ বলেন কনৌজিয়া) পুত্রের জন্মের সময় গ্রহনক্ষত্রের কিছু অশুভ যোগাযোগ থাকায় সদ্যোজাত সন্তানকে পরিত্যাগ করেন। শিশুটি পালিত হয় চুনিয়া নামে এক অন্ত্যজ নারীর আশ্রয়ে। শিশুটি প্রথম যে শব্দটি উচ্চারণ করে, তা ছিল ‘রাম’। তাই লোকে তার নাম দিয়েছিল ‘রামবোলা’। এই তথ্যটি তিনি নিজে বিনয়পত্রিকায় লিখে গেছেন। শিশুটি মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে আবার অনাথ হয়ে যায় পালিকামাতার মৃত্যুতে। সেই বয়স থেকেই তাঁকে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতে হয়। এই রকম কোনও একটা সময়ে রামানন্দস্বামীর শিষ্য সাধক নরহরিদাস তাঁকে আশ্রয় দেন। তুলসীদাসের শিক্ষাদীক্ষা এই গুরুর কাছেই শুরু হয়। সম্ভবতঃ সাত বছর বয়সেই তিনি সাধুব্রত গ্রহণ করেন। রত্নাবলীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ, পুত্রের জন্ম, পত্নীর ভৎর্সনায় গৃহত্যাগ ইত্যাদি আখ্যান পরবর্তীকালে কল্পিত হয়েছিল। গুরুর মৃত্যুর পর তিনি আবার রাজপুরে ফিরে যান এবং শুধুমাত্র রামকথাই তাঁর অবলম্বন হয়ে ওঠে। সারা জীবন তিনি আর্থিকভাবে হতদরিদ্র ভারতবাসীর প্রতিনিধি হয়েই জীবন কাটিয়েছেন।
——————–
শুধু অওধি নয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্রজভাষাতেও তিনি সমানে কাব্য রচনা করে গেছেন। এই দুটি ভাষার পাঠকগোষ্ঠী আলাদা। তাঁর লক্ষ্য ছিল সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। তাঁর মাথার উপর রাম বা শিবের আশীর্বাদ ছিল কি ছিল না তা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সম্পূর্ণ গাঙ্গেয় উপত্যকার মানুষের ভক্তিভালোবাসা অঝোরধারে তাঁর উপর বর্ষিত হয়েছিল। রামচরিতমানসের (মানস) দু’টি মূল পাণ্ডুলিপি প্রায় অবিকৃত, উদ্ধার হয়েছে। তাই এই কাব্যটিতে অন্য কোনও কবির বিক্ষিপ্ত অংশযোজনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তুলসীদাসের কাব্য পারদর্শিতা নিয়ে সারা পৃথিবীর পণ্ডিত ও পাঠকদের মধ্যে কোনও দ্বিধা নেই। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দের রামনবমীর দিন এই কাব্য তিনি লেখা শুরু করেন। শেষ হয় ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দের বিবাহপঞ্চমী’র দিন। এতে ১২৮০০ পংক্তি আর ১০৭৩টি চৌপাই বা স্তবক রয়েছে। বাল্মীকি রামায়ণের মতোই সাতটি কাণ্ড এবং সামগ্রিকভাবে ১৮ রকম ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তার মধ্যে দশটি শাস্ত্রীয় সংস্কৃত ছন্দ ও আটটি প্রাকৃত ছন্দ। ভারতবর্ষের কোনও কাব্যে ছন্দ নিয়ে এত ব্যাপক পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি। মধ্যযুগের অন্যান্য প্রধান সাধক ও দীপস্তম্ভ, যেমন কবীর, নানক, রহিম, নামদেব, রামদাস প্রভৃতির থেকে তুলসী ছিলেন বিশেষভাবে আলাদা। কারণ অধ্যাত্মসাধনার বিশাল পরিধিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর কাব্যশক্তির মহিমা।
————————————————-
ভারতীয় জনমানসে তুলসীদাসের দিগদর্শন ও প্রভাব এখনও সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘস্থায়ী। যদি কেউ সন্ধান করে তবে উত্তরভারতের বিস্তৃত প্রত্যন্ত গ্রামে-প্রান্তরে তার প্রমাণ পেয়ে যাবে আজকের দিনেও। ঐ পর্যায়ের একজন ধীমান স্রষ্টা কিন্তু নিবেদিত ছিলেন লোকজীবনের মূল শিকড়ের প্রতি। অসংখ্য কাল্ট, গোষ্ঠী, স্বার্থসন্ধ দল-উপদলে বিভক্ত মধ্যযুগের ভারতবর্ষে একটা স্বীকারযোগ্য রোলমডেল না থাকলে যে সব নিপীড়িত দরিদ্র মানুষের নৈতিক শক্তি ধ্বস্ত হয়ে যাবে সেটা তুলসীদাস হৃদয় দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁর সৃষ্ট রাম নৈতিক শক্তির বাতিঘর। অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষ সেই দিকে তাকিয়ে জীবনের নৌকো বেয়ে যেতে পারে। ২০১৭’র বিশ্বদৃষ্টি দিয়ে তুলসীদাসকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ফতোয়া দেবার মধ্যে নানা বিপদ আছে। মৃত্যু ও ইতিহাসের অভিঘাত নিয়ে নানামুখী ব্যাখ্যা চলতে পারে। কিন্তু তাদের কখনও অস্বীকার করা যায় না। ঊনিশ শতকে ফ্রেডরিক গ্রাউস সাহেব ইংরিজিতে অনুবাদ করেছিলেন রামচরিতমানস। তিনি বলেছিলেন সমগ্র ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি’তে, কলকাতা থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত এই গ্রন্থের মতো প্রভাব ও অভিঘাত অন্য কোনও সাংস্কৃতিক সৃষ্টির নেই। তখনই রচনাটি পাশ্চাত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভিনসেন্ট স্মিথ তো অনেক অভিভূত মন্তব্য করেছিলেন।
“…..not merely as the greatest modern Indian epic, but as something like a living sum of Indian culture…………the tallest tree in the magic garden of medieval Hindu poesy,” (Akbar: The Great Mughal-Smith)।
গান্ধিজি তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছিলেন, “the Bible of Northern India……..the best and most trustworthy guide to the popular living faith of its people.” (Gandhi-Autobiography)। সন্ত নাভাদাস তুলসীর জীবৎকালেই ‘শ্রীভক্তমাল’ গ্রন্থে বলেছিলেন তুলসী আসলে বাল্মীকির অবতার। নবযুগে মানুষের কাছে নতুনভাবে রামায়ণকে প্রস্তুত করতে আবির্ভূত হয়েছেন। এহ বাহ্য, আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী জেনেছি বঙ্গভাষীরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলসীদাস বা সৃষ্টি হিসেবে রামচরিতমানসকে নিয়ে বিশেষ ওয়কিফহাল নন। এই মুহূর্তে যখন ‘রাম’ নামক পৌরাণিক চরিত্রটির ছায়ার আড়ালে মানুষের মুক্তচিন্তার উপর ক্রমাগত অস্ত্রাঘাত হয়ে চলেছে, তখন তুলসী ও তাঁর রাম আমাদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছেন। রাজনীতির এঁটে দেওয়া ভয়ের মুখোশটি ছিঁড়ে ফেলে ‘রামে’র পরিচয় জানতে চাইলে তুলসীর হাত আমাদের ধরতেই হবে। হয়তো একটু ফিলমি শোনাবে, কিন্তু এই সব গোমূর্খদের বলতে ইচ্ছে করে, “রাম কা নাম বদনাম না করো…”
(ছবি: ইন্টারনেট)
চমৎকার লেখা। প্রাসঙ্গিক, সুললিত, সমৃদ্ধ….
dhanyobad..