অমিতাভ প্রহরাজ
অর্জুন বন্দ্যোর বঙ্কিম বা বঙ্কিমচন্দ্র বইটি নিয়ে আলোচনা করতে আমি খুবই সন্দিহান ছিলাম। তার কারণ দুটো। এক অর্জুনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়, সেটি এতটাই গভীর, দীর্ঘসময় বিস্তারী ও নিবিড় যে আমার পক্ষে অর্জুনের কোনও বই নিয়ে নির্মোহ আলোচকের দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া খুব কঠিন। আর দ্বিতীয় বঙ্কিম নিয়ে এত লোক এত ভালো ভালো কথা, মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়ে গেছেন যে এটি একটি বিখ্যাত বই ইদানীংকালের। আর বিখ্যাত বইদেরকে আলোচনার সময় কোনও গতানুগতিক-না-পসন্দ আলোচক স্বভাবগতভাবে এ্যান্টাগোনিস্টিক হয়ে পড়েন। খ্যাতিকে প্রশ্ন করতে চান প্রতি পদে পদে, এবং একসময় সেটি ছিদ্রান্বেষণের দিকে নিয়ে যাওয়ার এক প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাও দেবব্রত শ্যামরায়ের ভয়াবহ তাগাদায় আমি যখন আলোচনা করতে বসলুম, তখন আমি নিজেই এক সন্ধিক্ষণে, আর পাঁচ দিন বাদে বাংলা ছেড়ে পুনে প্রবাসী হতে চলেছি। এমন এক সময় আমি বঙ্কিমচন্দ্র আরেকটা রিপিট রিড করলাম, এবং লেখার আগে ওই নামকরণটি করলাম। ওটির রহস্য সবশেষে বলব।
বঙ্কিমচন্দ্র নিয়ে স্ট্রাকচারাল, এ্যানালিটিক্যাল, সব রকম আলোচনাই বোধহয় হয়ে গেছে। এটি একটি বই-এর ক্ষেত্রে যেমন শ্লাঘার, তেমনই অতীব বিপজ্জনকও বটে। বই প্রকাশের দু বছরের মধ্যেই যদি বইটি নিয়ে সবরকম সম্ভব আলোচনা ঘটে যায়, তাহলে যে সম্ভাবনার জন্ম নেয় তা হলো বইটিকে আবিষ্কার বা পুনরাবিষ্কারের অসম্ভাবনা। কেউ দেখতে চাইলে এই পেজে যেতে পারেন। এখানে অর্জুনদেব সেনশর্ম্মা, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়দের আলোচনা পড়লেই বঙ্কিমচন্দ্রের স্ট্রাকচারাল বা এ্যানালিটিক্যাল জায়গা নিয়ে কিছু অপরিসীম সুন্দর সন্দর্ভ পাবেন। ওঁদের চেয়ে আলাদা বা অতিরিক্ত কিছু বলার আমার সাধ্য নেই। তবে আমি কী বলব? দেখা যাক, এও এক মনোরম চ্যালেঞ্জ আমার কাছে।
বঙ্কিমচন্দ্র কী? আমি একে উপন্যাস বলছি না, প্রথমে বলে দেওয়া যাক। তব ন্যাস আছে এতে, প্রবল ন্যাস। উপ নয়, অভিন্যাস। অতিন্যাস। বোধহয় জানেন এর চরিত্র বঙ্কিমচন্দ্র, অরুণেশ ঘোষ, মাইকেল, কালীপ্রসন্ন, রামপ্রসাদ, নবারুণ, ঋত্বিক, ইলিয়াস, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধ, নিধুবাবু, দেরিদা। এখানে সময় চলাচল করে, সুড়ঙ্গ দিয়ে চরিত্র হতে চরিত্রের সুড়ঙ্গ। ফোঁকররচিয়তা লেখক, ফাঁক বুনে যান, যে ফাঁক দিয়ে কালচক্র ছোটে, ছোটে ইতিহাস, রাজনৈত চেতনা, (ইক দিনি)। ইন্টারটেক্সুয়ালিটি টাইপের বোদা শব্দ ব্যবহার করব না। ধরুন আপনি এক অবোধ পাঠক। আপনি কী পাবেন? আপনি পাবেন এক রেফারেন্স সমুদ্র, আপনি পাবেন এক ট্রিগার।
এই যে ইন্দ্রিয় সংজ্ঞা, এতে আপনার ট্রিগার উৎপন্ন হবে। আপনি ভাববেন। তর্ক করবেন। বঙ্কিম এই তর্ক করায়। অবিরল, নিরলস।
ধরুন আমি বললাম—
তিস্রো মাত্রা মৃত্যুমত্যঃ প্রযুক্তা অন্যোন্যসক্তা অনবিপ্রযুক্তা।
ক্রিয়াসু বাহ্যাভন্তরমধ্যমাসু সম্যক প্রযুক্তাসু ন কম্পতে জ্ঞ।।
বুঝিয়ে বলি, এটি প্রশ্ন উপনিষদের শ্লোক। এর অর্থ হল, তিস্র মাত্রা, অর্থাৎ অউম বা ওঁ-এর তিন মাত্রা অ উ আর ম পৃথকভাবে প্রয়োগ করলে তা মৃত্যুর অধীন। কিন্তু অন্যোন্যসত্তা, অর্থাৎ পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত হয়ে প্রয়োগ করলে তা হয় অনবিপ্রযুক্তা, অর্থাৎ সঠিক কাজ। কারণ, বাহ্যভন্তরমধ্যমাসু, বা তিন দশা বাহ্য, অভ্যন্তর এবং মধ্যম (ভাবুন ফ্রয়েডের কতকাল আগে, কনশাস, সাবকনশাস, আনকনশাস-এর কনসেপ্ট!!) অথবা, জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি অবস্থার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর ধ্যান করেন, তিনি জ্ঞঃ ন কম্পতে, বা জ্ঞানতঃ কোনও কম্পন বা বিচলনের অধীন হন না। এবার আসুন বঙ্কিমচন্দ্রে। অর্জুন এক পাগল। এ এক পাগলের লেখা বই। যা গতায়াত করে জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তার মধ্যে। এই রাস্তা তৈরি করে নেওয়া নিজের ত্রি মনের মধ্যে— অ, উ আর ম-এর মধ্যে, এক ওঁ তুল্য কাজ। ফলে বইটিতে বিচলন নেই, কম্পন নেই। এ এক ধ্যান। যে ধ্যান সমগ্র তিন অবস্থাকে নিয়ে হয়, আর এই ধ্যানস্থ ব্যক্তিকে ক্রমাগত দেখতে থাকলে আপনিও একটা স্তরের পর ধ্যানমগ্ন হন।
অর্জুন এতে বহু কিছু জ্ঞান দেয়। বহু বুনন বোনে। আমি আপনাকে এক সারসত্য বলছি এটি পড়ার। খেয়াল করবেন, কোথায় এটি কনশাসলি আপনাকে ধাক্কা মারছে, কোথায় অবচেতনে, আর কোথায় অচেতনে। অচেতন আপনি বুঝবেন না। কী করে বুঝবেন? সহজ উপায় বলে দিই। অর্জুন কিছু অনুষঙ্গ আনবে। নকশাল, উত্তর কম্যুনিজম যুগ, ইত্যাদি। আপনি হঠাৎ দেখবেন, চরিত্র রামপ্রসাদ এলে, আপনি ভাবতে শুরু করেছেন অজান্তে যে রামপ্রসাদ শিক্ষিত না অশিক্ষিত। রামপ্রসাদ কি গ্র্যাজুয়েট? কালীপ্রসন্ন কদ্দূর পড়েছে। ও তো বড়লোকের ব্যাটা। কিন্তু শিক্ষা? রুচি? অজান্তেই আসবে। অচেনা, বা কম জানা চরিত্রে আপনি শ্রেণি খুঁজবেন, নিজের থেকে আলাদা বা এ্যালিয়েনেট করবেন বা নিজের স্কেলে মাপবেন। এমন করলে বুঝবেন লেখক আপনার অচেতন দূষিত করতে সক্ষম হয়েছে।
নাস্বদয়াৎসুখং তত্র নিঃসঙ্গ প্রজ্ঞয়া ভবাৎ — মাণ্ডুক্য উপনিষদের শ্লোক। অর্থ, যখন তুমি সুখ বা সুখদায়ক ভোগ্যবস্তুর সংস্পর্শে আসো, তখন সুখ আস্বাদন কোরো না, নিজের প্রজ্ঞার সাহায্যে নিঃসঙ্গ থেকো। এটি এক ঘোর মন্ত্র, শুধু বঙ্কিম নয়, যেকোনও ক্লাসিক পড়ার জন্য। যখনই তোমাকে লেখক নানা ভোগ্যবস্তু দেবে, রিডেবিলিটি দেবে, থ্রিল দেবে, অনুমান দেবে, সেই মুহূর্তে সন্দেহ করো, আর ওগুলোকে ভুলেও আস্বাদন কোরো না, এক অপলক একলা নিঃসঙ্গ বালকের মতো কাটিয়ে যেও। এই ট্র্যাপ, বঙ্কিমেও। লেখক আপনাকে প্রচুর লোভনীয় জিনিস দেবেন। কখনও অকল্প রিডেবিলিটি, মজা। কখনও আশ্চর্য দর্শন ট্রিগার। ফাঁদে পা দিও না। লেখক বারবার প্রলোভন দেখাবেন তোমাকে বঙ্কিম, অরুণেশ, নবারুণ, ঋত্বিক, সন্দীপনের স্টারকাস্টে একজন হয়ে ঢুকে যাওয়ার। ভুলেও যেও না যেন। জুনিয়র আর্টিস্ট হয়ে থেকে যাবে। একদম সৌধ দেখার নির্লিপ্তিতে একলা পেরিয়ে যেও একের পর এক মিনার। কারুকার্য দেখো, নিজেকে অংশ ইট ভাবতে যেও না। নিঃসঙ্গ প্রজ্ঞা নিয়ে পড়ো। যেকোনও পাঠের এ এক মূলমন্ত্র। বঙ্কিম তোমাকে এক অপরূপ পাঠকে উন্নীত করতে পারে, অথবা এক ফাঁদে পড়া দর্শক। কোনটা তুমি চাও? পাঙ্গা নাও লেখকের সঙ্গে। সে বড় চতুর নিরালা, তুমিও ততোধিক একলা হয়ে যাও তার সৃষ্টির কাছে। গলিঘুঁজি দেখো, ঘামগন্ধ নাও।
ধরুন, এত জ্ঞান দিচ্ছি কেন? সরি তুমি বলছিলাম, ভুলে গেছি। ধরো এত জ্ঞান দিচ্ছি কেন? কারণ বঙ্কিম বড় বিপজ্জনক বই। যে সমস্ত বই তোমাকে ট্রিগার করবে কিন্তু লেখাবে না বা তোমার নিজস্ব সৃষ্টিল্যাবে নিয়ে যাবে না। তার উদ্দেশ্যকে সন্দেহ করো, তার চলনকে সন্দেহ করো। বঙ্কিমকে শ্রেষ্ঠভাবে পেতে গেলে বইটিকে প্রথম পাতা থেকেই সন্দেহ করো। নানা রকম সন্দেহ। এমনকি এও ভেবো যে লেখক যে তথ্যাকারে যেসব দিচ্ছেন সেসব কি সত্যি না ম্যাজিকের মিসডিরেকশানের মতো মিসডিরেকশান। সারসত্য বলে দিই। এখানে নামগুলি নাম মাত্র। এখানে কোনও বঙ্কিম, কমলকুমার, সন্দীপন, ইলিয়াস কেউ নেই। হ্যাঁ, অরুণেশ আছেন। ইন রিয়ালিটি। আর সেটিই এই বইটির এক দুর্বল জায়গা। বহু কল্প চরিত্রের মধ্যে এক প্রখস সত্য বাস্তব চরিত্র বড় হাহাকার, আর্তনাদ করে। কষ্ট হয়। বাকি কেউ নেই। সময়? নাহ, সময়চলাচলও নেই। আসল আরেক সারসত্য বলি, বঙ্কিমের শ্রেষ্ঠ শয়তানি বলো, সৌন্দর্য্য বলো, যাই বলো, তা হল, এ এক সময়হীন উপন্যাস। একে তুমি ২০৪০-এ পড়ো, ২১৭০-এ পড়ো এক থাকবে। দেরিদার মুখ দিয়ে বলানো সময় সুড়ঙ্গ এক ভাঁওতা। এতে সময় নেই। কাল নেই। বরং কালোত্তীর্ণ হওয়ার এক কাঙ্খা বাঞ্ছা রয়েছে। এলিমেন্ট অফ ইম্মর্টালিটি। অর্জুন সময় খুন করেছে এতে। ওই সময় খুন করাটাকে যদি তুমি প্রত্যক্ষ করতে পারো তো এক স্বর্গীয় অপরাধ পাকড়াও করে ফেলবে। ইবলিশতুল্য ক্ষমতাধর লাগবে নিজেকে। প্রতি পদে, প্রতি বিষয়ে সময় খুন হয়। এখানে এক অন্তর্ঘাত চলে, উগ্রপন্থী নামে সময়ের সুপারি নিয়ে।
বঙ্কিমের ভাষা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিছু অবজার্ভেশান, চোখে লাগার মতো। কমলকুমার প্রথম এলেন সাধুভাষায় চড়ে, পরে চলে গেলেন বঙ্কিম, ইলিয়াস, সন্দীপনের কথ্য ভাষায়। প্রথম সাধু ভাষায় চড়ে আসাটা কি কিঞ্চিৎ ভীতি লেখকের? অভ্যেস? বাকি অর্জুনের ঢুকে পড়ার সিনট্যাক্স আর বঙ্কিম বা চরিত্রের সিনট্যাক্স সচেতনে আলাদা রাখা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ বদলায়নি। ফলে ছোট ফন্টে (যা কিনা অর্জুনের এন্ট্রি) মাঝে মাঝে চরিত্রদের খাটো গলায় বা চাপা গলায় কথা বলা বলে বোধহয়। সিনট্যাক্স আরও আলাদা করা উচিত ছিল। বঙ্কিমের রিডেবিলিটি টু এ্যাবস্ট্রাকশান টু রিডেবিলিটি এই পেন্ডুলাম দোলন অসম্ভব, শ্বাসরুদ্ধকারী। উৎকেন্দ্রিকতার লম্ফ অতুলনীয়। ওই যে বললুম, বঙ্কিম এক অন্তর্ঘাতের ছক, তবে ফুলপ্রুফ ছক নয়। খোঁচ আছে, আর সেটাই বোধহয় বইটিকে এত জীবন্ত করে তোলে, এত ইনট্রুসিভ, ঢুকে আসা নিজ পরিসরে করে তোলে।
প্রাণো ব্রহ্মেতি ব্যজানাৎ। প্রাণাদ্ধেব খ্বলিমানি ভূতান্তি জায়ন্তে। প্রাণেন জাতান্তি জীবন্তি। প্রাণং প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তীতি। — অর্থাৎ প্রাণ ব্রহ্ম ইতি ব্যজনাৎ, মানে প্রাণই ব্রহ্ম বা জীবনীশক্তি। ইমানি ভূতানি খলু প্রাণাৎ, বা প্রাণ থেকেই সবার সৃষ্টি। প্রাণেন জাতান্তি জীবন্তি, বা প্রাণের জন্যই সবাই বেঁচে আছে। প্রাণং প্রয়ন্তি অভিসংবিশন্তি ইতি অর্থাৎ আবার তারা প্রাণেই লীন হয়ে যায়, বা প্রাণেই ফিরে যায়। এই তৈত্তীরিয় উপনিষদের শ্লোকে প্রাণের জায়গায় অর্জুন করে দিন। বঙ্কিমের মূল জায়গা পেয়ে যাবেন। যত চরিত্র, যত রাজনীতি, সবই অর্জুনব্রহ্ম হতে উৎসারিত। যারা যারা বেঁচে আছে বইটিতে, সবাই অর্জুনকৃপাতেই বেঁচে আছে। জন্মের পর তারা অর্জুন দ্বারাই প্রতিপালিত। আর শেষ হয়ে গেলে তারা অর্জুনেই ফিরে যাবে বা লীন হয়ে যাবে। ফলে বইটি শেষ হওয়ার সময় যে বিস্ফোরণ, আর তারপর বাজপাখি উড়তে দেখা যায়, তাতে ওই পাখি শেষাবধি অর্জুন দাঁড়ে গিয়েই বসে। এ এক নার্সিসিজমের উদযাপন। কিন্তু আলোকিত নার্গিস ফুল। নিজমুখী নয়। এর সবকিছু আত্মনির্মাণ। এর বাক্য অর্জুন, চরিত্র অর্জুন, বিষয়ান্তর অর্জুন, টেকনিক অর্জুন, পেশকশ অর্জুন, মায় ত্রুটিও অর্জুন। এত বেহিচক, বেলেল্লা ধ্বক কোনও নির্মাণে আমি দেখিনি। অভূতপূর্ব শব্দটি চলেই আসে। হ্যাঁ, এই বয়ন নতুন নয়, উদয়নের “খালাসীটোলার আমি এক প্রডিগ্যাল খালাসী”তে এমন চরিত্র ও কালবয়ন আমরা দেখেছি, অরূপরতন ঘোষের সূর্যহীনে আমরা দেখেছি এই আপাত প্রাণহীন সংবাদপত্র, চিঠি, দলিল, দস্তাবেজকে রিডেবল ন্যারেটিভের অংশ করে তোলা। কিন্তু তবুও বঙ্কিমচন্দ্র এই কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র কারণ এক অতুল্য ধ্বক। অমোঘ নির্লজ্জতার সঙ্গে আত্মনির্মাণ, যা পাঠককে পদে পদে ত্রস্ত, বিচলিত, অসংলগ্ন করে। আর অকল্পনীয় মায়াময় এক সেলাই, ন্যারেটিভ সুতোর জরির ফোঁড় মুগ্ধ অপলক হয়ে দেখে যেতে হয়। আর অবশ্যই তর্ক, ডিসকোর্স, ক্রমাগত, অবিরল প্রশ্ন, যুক্তি, কূটাভাস তুলে চলে।
কিন্তু এসবের ঊর্ধ্বে এক এ্যাম্বিশান কাজ করে। শ্লোকের মতো অর্জুন নিজেকে এক ঔপনিষদিক সত্যকাম স্তরে নিয়ে যেতে চায়। এ লেখায় আব্রাহামিক কোনও চিহ্ন নেই, প্রবলভাবে অদ্বৈত ঔপনিষদিক। ঈশ্বর উত্তীর্ণ, যুক্তিপার জগতের সন্ধান পাওয়ার এক প্রবল কামনা (বাসনা নয়) হিংস্র জোৎস্নার মতো লাফিয়ে নেমে পড়ে। যা নির্মিত হয় এক বঙ্কিমের অর্জুনচন্দ্র। কালহন্তারক।
সমালোচনা— বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবেশকের ওই লাইনগুলি কিন্তু বিদ্যাপতি নয়। ওটি বিদ্যাপতি ভাষা নয়। বিদ্যাপতিতে ছিল “না পুড়াইও রাধা-অঙ্গ, না ভাসাইও জলে”। কবি বল্লভ অনুবাদে ওটি “মোর অঙ্গ” হয়েছে। দেহবাদীদের প্রতি প্রবল অসূয়াই “রাধা-অঙ্গ”-কে একটি পুরুষ কবির “মোর-অঙ্গ”-তে পরিবর্তনের নেপথ্য শয়তানি। এটি এক ক্ষুদ্র তথ্যগত সমালোচনা মাত্র।