পাঁচটি কবিতা
তুমি
বিষণ্ণতা ছাড়া তুমি পৃথিবীতে সত্যি বন্ধুহীন
অপছন্দ বলে একটি শব্দ আজ এসেছে জীবনে
স্বাতন্ত্র এসেছে, সঙ্গে এনেছে সে তীব্রতার দিন
সবারই ধারালো জিভ, লুকোনো বাঘনখ রেখে যারা
আলিঙ্গন করে, হাসে কী এক বিচ্ছিন্ন করা হাসি …
ধুর্ত কি বুঝেছে তাকে পড়ে রোজ নিরীহ বেচারা!
দুটি চোখে প্রিয় বন্ধু ঈর্ষারক্তঅস্ত্র তুলে নেয়,
নির্জনতা মুখে আনে অন্ধকার সিগারেট, ধোঁয়া,
স্বপ্নাদ্য বিষাদ আর দূরবর্তী রুগ্ন অপব্যয়
আমাদের পৃথিবীতে এসে গেছে ছায়াযুদ্ধ, যাকে
লোকে ডাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, শাস্ত্রে যার নিরাময় নেই!
কবি
দলের মণ্ডল থেকে উঠে গিয়ে যেই দেখলি ভোর
অজস্র ফুলের ঘ্রাণ, সামগ্রিক সূর্যাস্তের রূপ
নিজেকে কি মনে হল অগ্রগামী বল পুংকেশর?
দলের মণ্ডলে দীর্ঘ… হয়ে গেলি যোগাযোগহীন
মায়াবিনী পতঙ্গেরা কথা বলে, গায় ঘুরে ঘুরে
আঁখিপাখি তাহাদের নদী যেন অজানা, গহীন
যৌনতা বাগান যেন রেণু রেণু ভিতরমহলে
কী ভালো স্বপ্নের মতো আঁচলেরা দীর্ঘ চুল খুলে
জাদুর তর্জনী দিয়ে ছুঁয়ে দেয়, মগ্নকথা বলে!
অথচ একদিন সব জড়ো হয়ে বলেছিল – নেকু
জীবনে দেখেনি মেয়ে… মাগীবাজ… বিখ্যাত ছেনাল …
সরীসৃপের আত্মপ্রতিকৃতি
হিজড়ের সম্মান নেই। তোমারও কি সন্ধ্যেবেলা বাড়ি?
মনে মনে রঙ মাখো, কর্মক্ষেত্রে তালি দিতে হয়
স্ববিরোধী স্বর তুমি যোনিহীন পুরুষভিখারি …
বাড়ি ফিরে পা’টি তুলে খাটে বসে ধরিয়েছ বিড়ি
সম্পর্ক, টাউট, বেশ্যা, দালালের মায়াবি বাজার
সারাদিন হয়ে গেল, মনে মনে বলেছ – ফকিরি
মহালয়া মনে পড়ে… কখনও মহিষ তুমি, বীরও …
কখনও বা… হাসি পায়, হিজড়ে যে অবস্থানহীন
ছদ্মবেশ নিতে হয় বিজ্ঞানীর… কখনও বা কিরো
তালি দিয়ে তালি দিয়ে একদিন দেখেছ হাত মেলে
বাঁ-তালুর বৃহস্পতি, চলে গেছে মঙ্গলের ঘরে
হেম, শোনো হেম
বয়স বইছে জোরে, বিষাদ বলেছে কানে কানে
চলো হে ম্যাটিনি কাটি চারিমুদ্রা নির্জনতা দাও
দিনান্তের আলোঅলা চারপাশে যে দ্রুত ছায়া টানে…
কে আছ? অবাক গন্ধে শিমুল মৃত্যুরা এল কাছে
বয়ে যায় হাওয়া, দূরে পরিচিত আত্মীয়রা হাসে
আমাকে পাগল বলে জলোগন্ধ সহজিয়া মাছে
দিনান্তের দেশে ঘোরে নাগরদোলা নেশারু, আদিম
অন্ধ তুমি হাতদুটি ব্যস্ত রাস্তা হাওয়ায় ভাসাও
অভিশপ্ত ঘণ্টা বাজে ইস্কুলের, ফলাফলহীন
বিষাদ বলেছে ওহে তোমাকে মৃতের মতো লাগে
হলুদ রোদ্দুর হেম, সর্ষেফুলে ভরে ওঠা দুপুরের মাঠ …
দেশহীন
নীরবতা যেন এক প্রান্তরের সায়রের জল
উন্মুখর সাম্প্রতিক থেকে এসে ঝাপটা নিই রাতে
খুলে ফেলি একচ্ছত্র, আঁশটে কালো ভাষার শেকল
নিজেরই অসংখ্য ছায়া নিয়ে আসি, গোপনে জমাই …
রক্ত ধুয়ে ফেলি তবু অজস্র মুখোশ এসে পড়ে
এমন অজস্র মুখ সায়রের শান্তিতে ভাসাই
আমার সমস্ত ভাই এইভাবে চলে যায় ভেসে …