স্বাতী ভট্টাচার্য
প্লেন নামছে অদেখা শহরে, জানলা থেকে প্রথম দর্শন হবে এক্ষুণি। পুরো প্রাণটা জড়ো হয়েছে চোখ দুটোয়, কপাল জানলার কাচে ঠেসে ধরা, মনে-মনে মাথাটা বেরিয়ে আছে বাইরে। কত শহর কতভাবে ধরা দিয়েছে এমন আগ্রহ-বিস্ফারিত চোখের তারায়। কত বিচিত্র তাদের নকশা। কেউ সমুদ্র-মেখলা, কেউ পর্বত-দুহিতা, কারও বুকের মাঝে নদীর স্রোত। রাজপথ-উদ্যান-আবাসন-স্টেডিয়ামের কত না আড়ম্বর, আঁধার নামলেই ঝলমলে আলোর অলঙ্কার। কেউ চঞ্চলা বালিকার মতো ঘাঘরা ঘুরিয়ে রূপ দেখায়, কেউ একেবারে প্র্যাকটিকাল। ম্যাপটা বুঝে নাও, কাজে লেগে যাও। প্রথম দেখাতেই যেমন মানুষের চরিত্রের একটা আভাস পাওয়া যায়, তেমনই শহরেরও।
কিন্তু চোংছিং শহরটা প্লেনের জানলা দিয়ে দেখে বুকটা যেন ধক করে উঠল। ওগুলো কি সার সার হেডস্টোন নাকি? একি শহর, নাকি গোরস্তান? এক মুহূর্ত পরে সম্বিৎ ফিরল। ওগুলো তো বহুতল, আখাম্বা লম্বা, চৌকো, কোনও রকম স্থাপত্য-বৈচিত্রহীন। প্রত্যেকটাকে অন্যটার মতো দেখতে, একেবারে আইডেন্টিকাল। দুপুরের রোদের ঝাঁঝে রং দেখাচ্ছে সাদা, তাই মনে হচ্ছে যেন সমাধিপ্রস্তর। ওয়াশিংটনের আর্লিংটনে সেনা-কবর দেখেছিলাম, সার দিয়ে প্রায় আদিগন্ত চৌকো সাদা হেডস্টোন। ঠিক সেই দৃশ্য ঝলকে উঠল মনে।
চোংছিং (ChongQing) শহরটা দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সব চাইতে বড় শহর। এলাকার হিসেব ধরলে বেজিং-এর চাইতেও বড়, তবে সেটা নেহাৎ ভৌগোলিক হিসেব, গুরুত্ব বা জনবহুলতার নিরিখে তুলনাই হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কিছুদিন চিয়াং কাই শেক-এর রাজধানী ছিল চোংছিং। তবে এখন চিনের আর সব শহরের মতোই তড়বড় করে ঝকঝকে আধুনিক শহর হয়ে উঠতে চাইছে। গাড়ি করে চোংছিং ইউনিভার্সিটির দিকে যেতে যেতে যেমন শহর দেখা যায় তা পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, যে কোনও উন্নত দেশের শহর হতে পারত। বিশেষত্ব যদি কিছু থাকে, তবে তা বিশেষত্ব-হীনতা। একে আলাদা করে চিনের শহর বলে বোঝার কোনও উপায় নেই। এই একটা অস্বস্তি কাজ করে বেজিং-এও। খোদ রাজধানী বলে কথা, টুরিস্টরা থিকথিক করছে রাজাদের প্রাচীন প্রাসাদ ‘নিষিদ্ধ নগরী’ বা ফরবিডন্ সিটিতে। যত জায়গা জুড়ে পর পর এক একটা প্রাসাদ, তার চাইতে বেশি জায়গা তাদের মাঝে, আর সে সব স্রেফ ফাঁকা, শূন্য। মুঘলদের তৈরি লালকেল্লা বা আগ্রা ফোর্টে এমন করেই নবাবি মেজাজে স্পেস ব্যবহার হয়েছে। তবে সেখানে যেমন কার্ভড লাইনের প্রচুর ব্যবহার হয়েছে পাথরে পেলবতা আনতে, এখানে সিধে লাইন, আয়তাকার ক্ষেত্র বেশি। জ্যামিতির ছিমছাম সৌন্দর্য। সম্রাটের প্রতাপ শূন্যস্থানে প্রকাশ পায় বেশি, প্রাসাদের বাহারি কারিকুরি, আর আসবাবের মোড়কে সোনা-জহরতের চাইতে। এতটা জায়গা যে স্রেফ ফাঁকা ফেলে রাখতে পারে, তার এলেমটা বোঝো।
আজ বেজিং-এ ভয়ঙ্কর স্পেস-সঙ্কট। অগণিত বহুতল থিকথিক করছে, তার সংখ্যা আর বিস্তার ভারতীয় শহরে কল্পনাও করা যায় না। কলকাতার ষাটের দশকের বিচ্ছিরি সরকারি আবাসন-টাইপ বহুতল যেমন আছে, তেমনই স্টিল-ক্রোম-কাচের তৈরি, নিউ ইয়র্ক-নিন্দিত সুউচ্চ টাওয়ার, সব আছে। কিন্তু পরপর উনিশটা আইডেন্টিক্যাল বহুতল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা চাপ তৈরি হয়। স্থাপত্য তো আকাশ থেকে পড়ে না, তা একটা জীবন-দর্শনের প্রকাশ। যারা এমন শহর বানাতে পারে, তারা কেমন লোক?
চিনে দীর্ঘ দিন কাজ করছে আমার মার্কিনি সাংবাদিক বন্ধু। চোংছিং যাওয়া তাঁরই আমন্ত্রণে। তিনি বলছিলেন, চিনে জমির মালিকানা সবই সরকারের। আশির দশকে এসে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রয়োজনে তারা জমি দেয় প্রোমোটারদের। সরকার-ঘনিষ্ঠ প্রোমোটাররা সরকারি ব্যাঙ্ক থেকেই কম সুদে ঋণ পায়, শুরু হয় বাড়ি বানানোর পালা। সব ঋণ নাকি সিধে পথে নয়, এর মধ্যে ‘শ্যাডো ব্যাঙ্কিং’-ও (অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ) আছে। সে মার্কেটের এমন লজিক, যে মানুষের রোজগারের তুলনায় বাড়ির দাম দাঁড়িয়েছে বেশি। বিপুল সংখ্যক বাড়ি বিক্রি না-হয়ে পড়ে রয়েছে, কিন্তু তার দাম কমাতে পারছে না সরকার-কাম-বাজার। তাতে রিয়্যাল এস্টেট বাজারে ধস নামবে। চিনের ‘হাউজ়িং বাবল’ নিয়ে অনেক কথা লেখা হয় ইংরেজি কাগজে। চিনে কাগজে কী হয়, কে জানে। তবে এ কথা সবাই জানে যে, বেজিং-এ বাড়ির দাম, বাড়ি ভাড়া এমনই বেশি যে একটা থ্রি বেডরুম ফ্ল্যাটে তিনটে ফ্যামিলি থাকে। অনেক বাড়িতে বাসিন্দাদের জন্য কমন টয়লেট, নিজস্ব টয়লেট নেই। বেজিং-এর মস্ত চওড়া রাস্তা, দ্রুতগতির ট্রেন, অগণিত বহুতল দেখে যতই উন্নত শহরের বিভ্রম তৈরি হোক, রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাওয়া-আসা করছেন তাঁদের দিকে চাইলে চিনের শহর কলকাতা কি বর্ধমানের বেশ কাছাকাছি। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কঠিন চাপের ছাপ তাদের মুখে স্পষ্ট। ওদের মালবাহী ভ্যান তেমনই কষ্ট করে টানতে হয়, অটো-টাইপের গাড়ি আমাদের মতোই ঝড়ঝড়ে। রাস্তার ধারে দোকান করে এটা-ওটা বেচে সংসার চালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, দরাদরি করে কেনে খদ্দের। কাঁধের ঝাঁকায় পিচ ফল বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ, তাঁর কাছ থেকে কিছু পিচ কিনলাম আমরা। রস গড়াল কষ দিয়ে। দাম সামান্য।
যে কোনও শহরেই সব চাইতে কম টাকায় সব চাইতে বেশি পরিশ্রম করেন সেই মানুষরা, যাঁরা আসছেন বাইরে থেকে। কোনও মতে মাথা গুঁজে শহরে থেকে দু’পয়সা রোজগার করছেন। চিনে এক-পার্টি তন্ত্র, সরকার রাতারাতি কয়েক লক্ষ মানুষের বাস তুলে শহরের বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে। বছর দুয়েক আগে বেজিং-এর মারাত্মক শীতের মধ্যে কয়েক হাজার পরিবারকে প্রায় রাতারাতি উচ্ছেদ করা হয়েছিল বেজিং থেকে। অজুহাত ছিল, তারা ‘বিপজ্জনক’ বাড়িতে বাস করছে। বেজিং-এর মধ্যবিত্ত নাগরিকরা উচ্ছেদ-হওয়া শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য কিছু সেন্টার খুলেছিল, স্যুপ দেবে, কম্বল দেবে বলে। পুলিশ সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। ইন্টারনেটে উদ্বাস্তুদের জন্য নাগরিক হেল্পলাইন-এর লিঙ্ক ব্লক করেছিল সরকার। এ সব শোনা কথা-পড়া কথা। কিন্তু বাসস্থানের সমস্যা যে বেজিং-এ তীব্র, এ কথা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে টের পাওয়া যায়। বাড়ির চেহারা দেখেও।
আমাদের কলকাতায় একটা বাড়ি হলুদ রং করলে পরের বাড়িটা বেগুনি, তার পরেরটা সবুজ দেওয়াল, গোলাপি কার্নিশ। চোংছিং শহরের বহুতলগুলো কেবল বাইরে থেকে এক রকম হবে তা-ই নয়, শুনলাম ভিতরের ফ্ল্যাটগুলোও একেবারে এক। সবাই এক রকম ফ্ল্যাটে থাকতে চায় কেন, সে প্রশ্নটা করতে আমার বন্ধুটি হাসলেন। সবাই এক রকম হবে, এই যখন প্রত্যাশা, তখন সবার এক রকম ঘর হবে, আশ্চর্য কী? পর্যটক হিসেবে চিনে গেলেও বেশ টের পাওয়া যায়, একনায়কতন্ত্র আর সর্বদা, সর্বত্র নজরদারি একটা দেশের চেহারা কেমন করে তোলে। এক সময় ভাবা হত, চিন অন্য গণতন্ত্রের মতো হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, অন্য গণতন্ত্রগুলো ক্রমশ চিনের মতো হচ্ছে। সর্বত্র, সর্বদা নজরদারি চলছে। টুরিস্ট হিসেবে চিনের যে কোনও দর্শনীয় জায়গা দেখতে গেলে আগে পাসপোর্ট স্ক্যান করে তবে ঢুকতে দেয়। মানে কেবল দেশে ঢোকা-বেরোনো চেক হয় না। কোথায় কখন যাচ্ছে টুরিস্ট, তা-ও চেক হয়।
নজর রাখার আর কত না উপায়। চিনে হোয়াটস্যাপ চলে না, চলে ‘উইচ্যাট’। সেটা ডাউনলোড করতে চাইলে এমন কারও রেকমেন্ডেশন লাগবে, যে বেশ কিছু দিন উইচ্যাট ব্যবহার করছে, এবং যে গত ছ’মাসের মধ্যে আর কারওকে রেকমেন্ড করেনি। মানে, আপনার পরিচয়ের সঙ্গে, চিনদেশে কে আপনার পরিচিত, তা-ও জানা গেল।
চিনের নাগরিকদের উপর নজরদারি কতটা, সেটা আমরা এখনও চিন্তা করতে পারি না। চিনে ২০১৪ সাল থেকে একটা ‘সোশ্যাল স্কোরিং’ সিস্টেম চলছে। ট্রাফিক ফাইন থেকে কর মেটানো, সবই ধরা পড়ে তার মধ্যে। ‘নিষিদ্ধ’ বা ‘সন্দেহজনক’ ওয়েবসাইট সার্চ করছ কিনা, তা-ও নাকি দেখা হচ্ছে। স্কোর কমে গেলে জুটবে পানিশমেন্ট, প্লেনের টিকিট পাবে না, ট্রেনের বিজনেস ক্লাসে চড়তে পারে না, এমনকী ছেলেমেয়েকে ভাল ইস্কুলে ভর্তি করতে পারবে না। তাতেও শেষ নয়, শুনলাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এমন নজরদারির সিস্টেম নাকি শুরু হতে পারে (নাকি হয়ে গিয়েছে), যেখানে যে কোনও পাবলিক জায়গায় কত লোক জমছে, তা প্রত্যাশিতের চাইতে বেশি কিনা, তা মুহূর্তে জানা যাবে। এমনও সিস্টেম আসতে পারে, যাতে যে কারও মুখ স্ক্যান হয়ে যাবে। এমনকী তার মুখভঙ্গি পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা যাবে। হয়তো প্রোগ্রাম বলে দেবে, ওই লোকটা সন্দেহজনকভাবে ইতিউতি চাইছে, ওকে পাকড়াও। কিংবা, ক্লাসে ওই ছেলেটা জানলা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছে, ধমক দাও।
ভাগ্যিস, চোংছিং বিশ্ববিদ্যালয়টা শহরের থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ঘন সবুজ পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পথ, দু’পাশের সৌন্দর্য দেখে মনটা ভরে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরটি মার্কিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো, ছেলেমেয়েরা তেমনই পোশাক পরে ঘুরছে। তবে পড়ুয়ার সংখ্যা তাক লাগার মতো – কুড়ি হাজার। সব কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেই নাকি এই রকম। আমরা সবে ইস্কুলের সর্বশিক্ষায় আছি। ওরা ইউনিভার্সিটি অবধি সর্বশিক্ষা করে ফেলেছে। শিক্ষার মান কেমন, সে অবশ্য অন্য কথা। কলেজের ক্লাসে আমার বক্তব্য ছিল বলিউডের ছবিতে মেয়েদের ইমেজ নিয়ে। কেমন পরিবর্তন হচ্ছে সেই ইমেজে। কলেজ থেকে অনুবাদিকা এসেছিলেন। আমার চিনে-জানা আমেরিকান বন্ধুটি পরে জানালেন, আমার কথার তিরিশ শতাংশ মতো তিনি ঠিকঠাক অনুবাদ করেছেন। তার কতটা ভাষার দূরত্ব, আর কতটা সেন্সর, বোঝা কঠিন। ‘মি টু’ আন্দোলন চিনে নিষিদ্ধ, নারীবাদী কথাবার্তাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার নিষিদ্ধ পথে ঢুকে যেতে পারে। তবে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি শিখছে, হয়তো আমার কথা আরও দশ-বিশ শতাংশ বেশি বুঝেছে, সান্ত্বনা দিলেন আমার সাংবাদিক বন্ধুটি।
চোংছিঙে অসামান্য একটি সম্পদ দেখা হল, যার জন্য বিশ্বের যে কোনও দেশ থেকে মানুষ যেতে পারেন এই অঞ্চলে। তা হল দাজ়ু পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বৌদ্ধ ভাস্কর্য। দু-একটা গুহাও রয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগটাই পাহাড়ের গায়ে, একটা ন্যাচারাল কার্ভকে অনুসরণ করে এগিয়েছে ভাস্কর্য। যেন একটা গ্যালারি তৈরি হয়েই রয়েছে। পাকদণ্ডী দিয়ে উঠতে উঠতে তার উচ্চতা থেকে দেখা যায় ভাস্কর্যগুলিকে। ছবি বিষয়-কলাপ দেখে ইলোরার কথা মনে পড়বে। এখানেও খোদাই করা ছবিতে ইহকাল, পরকালের নানা পর্ব দেখানো হচ্ছে। কোনওটায় পাপীরা নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে, বিবিধ নির্যাতনের ডেমনস্ট্রেশন দিচ্ছে পাতালের কুকুরমুখো ওয়ার্ডেনরা। কোনওটায় আবার সাংসারিক চিত্র, তাতে মেলানো একটু জ্ঞানদান। ছেলেবেলায় বাপ-মা সন্তান পালন করছে, বুড়ো বয়সে সন্তান ঝাঁকায় করে বইছে বাপ-মাকে। মাঝে মাঝে রয়েছে কয়েকটি গুহা, তার ভিতরের আধা-অন্ধকারে নানা মূর্তি, কী ভাবগম্ভীর পরিবেশ, যেন অতীতকে স্পর্শ করা যায়। বুদ্ধ এবং বোধিসত্ত্বদের মস্ত মূর্তিগুলি যে কী অপূর্ব! তাদের গায়ের রং কিছু কিছু উঠে গেলেও এখনও কত অনবদ্য, সে বলে বোঝানো যায় না। রয়েছে পাশ-ফিরে শোয়া, নিমীলিত-চক্ষু বুদ্ধের বিশাল একটি মূর্তি, তার মুখের শান্তিমাখা ভাবটি অতি উদ্বিগ্ন প্রাণকেও দু’দণ্ড শান্তি দিতে পারে। একটু নজর করলে বোঝা যায়, কেবল ভাস্কর্যের বিষয়-নির্বাচনে নয়, তার মাপের মধ্যেও একটা বার্তা আছে। বুদ্ধের শায়িত মূর্তিটি অতিকায়, সামনে উপাসক, অনুগতদের মূর্তিগুলি ক্ষুদ্রতর। আর চির-নিমগ্ন এই মূর্তিগুলির সম্মুখে মানবদেহধারী দর্শকরা আরওই ক্ষুদ্র। মানে আধ্যাত্মিক স্কেল-এ কে কোথায়, একটু মনে করিয়ে দেওয়া হল আর কী। সপ্তম শতক থেকে শুরু হয়েছিল খোদাই, একাদশ শতক নাগাদ শেষ হয়েছে। দেখলে বোঝা যায়, অনেকাংশ অসমাপ্ত। শোনা যায়, মঙ্গোলদের আক্রমণে কাজ বন্ধ করতে হয়েছিল, তারপর আর কখনও তা আবার শুরু করা যায়নি। পাহাড়ের গায়ের এমন খোদাই নাকি চিনের অন্য শহরেও রয়েছে। যাঁরা কেবল চিনের প্রাচীর আর রাজার প্রাসাদ দেখেন, তাঁরা এই সব কম-জানা সম্পদগুলো মিস করে যান।
বন্ধুরা বলেন, চিনে গেলে, চিনে খাবারের কথা লিখবে না? ও নিয়ে লিখতে গেলে আর একটা লেখা লিখতে হবে। বরং শেষ করি চিনের টয়লেট দিয়ে। চিনেদের টয়লেট ভারতীয় টয়লেটের ধাঁচে, মেঝেতে বসানো। কমোড খুব কম। আর বাথরুমের কিউবেকলের ভিতরে টয়লেট রোল থাকে না, চুরি যাওয়ার ভয় আছে নাকি। অনেক বাথরুমে বাইরে একটা বড় টয়লেট রোল থাকে, তা থেকে ছিঁড়ে নিয়ে ঢুকতে হয়। অনেক সময়ে বাইরেও টয়লেট রোল থাকে না, আবার কিউবিকল-এ জলের ব্যবস্থাও থাকে না। অতএব বন্ধুগণ, চিনে যেতে হলে নিজ নিজ টয়লেট পেপার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ‘স্বচ্ছ চিন’ হতে এখনও দেরি আছে।