কুক্কুটানন্দ তর্কবাগীশ
(পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় ‘রুরাল হসপিটাল’-গুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে বড় বড় নীল-সাদা বিল্ডিং তৈরি হয় কর্পোরেট হাসপাতালের ধাঁচে। সাধারণ মানুষ ভাবেন ঝাঁ চকচকে বাড়ি দিয়েই বুঝি রোগ-নিরাময় হবে। বিশেষ করে জঙ্গলমহল এলাকা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পাখির চোখ। তাই এই অঞ্চলেই তিনটি সুপারস্পেশালিটি বানানো হয়। শালবনি তাদের একটি। ৩১শে জুলাই, ২০১৭ সালে তার উদ্বোধন হয়। প্রথমে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলতে কিছুই প্রায় ছিল না। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়। পার্মানেন্ট ডাক্তারের পাশাপাশি অনেক স্নাতকোত্তর পরবর্তী বন্ডের আওতাধীন স্পেশালিস্ট ডাক্তার জয়েন করেন।
পরিষেবা বলতে কী কী ছিল এখানে?
২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি, জেনারেল ওপিডি, পিডিয়াট্রিক্স, মেডিসিন, গাইনি, অপথালমোলজি, ইএনটি, অ্যানাস্থেশিয়া, প্যাথোলজি, রেডিওলজি, সার্জারি।
তাছাড়া প্রাথমিক ল্যাব ইনভেস্টিগেশনের ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা এক্সরে, সপ্তাহে দু’দিন ইউএসজি-র ব্যবস্থা। মোটের উপর প্রায় ৬০ জন নার্সিং স্টাফ, ২৫ জন ডাক্তার ছিলেন।
ওপিডিতে রোগীর সংখ্যা থাকত দিনে অন্তত ৮০০-৯০০ জন। কখনও সেটা ১১০০-১২০০ ছাড়াত।
ইন্ডোরে সারা বছরই ১০০-র বেশি রোগী। কখনও সেই সংখ্যা ২০০-ও ছাড়িয়েছে।
ইন্ডোরে ছিল মেল-ফিমেল মেডিসিন, পিডিয়াট্রিক্স, নবজাতক শিশুদের ওয়ার্ড, গর্ভবতী মায়ের লেবার রুম, ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ইত্যাদি।
তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের পুষ্টি পুনর্বাসনের নিকটবর্তী কেন্দ্রতেও এখানকার শিশু চিকিৎসকরা পরিষেবা দিতেন।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে নার্সিং স্টাফ তুলে নেওয়া হয়। ডাক্তার তোলা হয়েছে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। হাসপাতাল চলে যাচ্ছে জিন্দালদের হাতে৷ সরেজমিন দেখে এলেন লালবিছে।)
সবকিছু নেড়েঘেঁটে দেখতে হাসপাতালে পা রেখেছিল লালবিছে। শুঁড় দুলিয়ে, পিলপিলিয়ে হেঁটে বেড়িয়েছিল হাসপাতালের অলিগলি। আউটডোর থেকে অফিস বিল্ডিং, ল্যাব থেকে লেবার রুম।
দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালটির বেসরকারিকরণ ঘিরে ঢাক গুড়গুড় চলছিল। পুরো ঘটনাই ঘটেছিল অত্যন্ত সন্তর্পণে। এমনকি হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরাও বিন্দুবিসর্গ জানতেন না। দিন কুড়ি আগে লালবিছে এক সিনিয়র নার্সিং স্টাফের সাথে কথা বলেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই দিদিমণি জানিয়েছিলেন, “গত বছর পুজোর পর থেকেই শুনে আসছিলাম যে কোনও দিন হাসপাতাল উঠে যাবে। সব সরকারি কর্মচারীদের ট্রান্সফার হয়ে যাবে। তারপর প্রতি দু’সপ্তাহ ছাড়া ছাড়া সুর বদল। বড্ড অনিশ্চয়তায় ভুগছি। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। আর এভাবে এত দোলাচলের মধ্যে কাজ করা যায় নাকি? কোথায় রোগীর কথা ভাবব তা না হয়ে প্রতিদিন ট্রান্সফার, নতুন কাজের জায়গা এইসব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এর চাইতে কিছু একটা এসপার-ওসপার হয়ে যাওয়াই ভালো।”
লালবিছে: আচ্ছা দিদি, শুনেছিলাম সরকারি হাসপাতালগুলোতেই নাকি নার্সিং স্টাফের আকাল। তাহলে শালবনির মত এরকম প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায় জিন্দাল গোষ্ঠী নার্স পাবে কোত্থেকে?
দিদি: আর বলবেন না… এসব কথা তো বলাও বারণ। কার ঘাড়ে কটা মাথা যে সত্যি কথাগুলো বলবে? বিএসসি বা জিএনএম পাশ করা স্টাফ হাতে গোনা। বেশিরভাগই অল্পদিনের ট্রেনিং নেওয়া জুনিয়র স্টাফ। আর যে সামান্য ক’জন পাশ করা স্টাফ আছে তারাও খুব খারাপ মানের বেসরকারি জায়গা থেকে পাশ। তাদের না আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, না আছে প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা। ন্যূনতম চ্যানেল করা, ইঞ্জেকশন দেওয়া, স্যালাইন চালানো এগুলোও ঠিকঠাকভাবে করতে পারে না। তাদের দিয়ে হাসপাতাল কেমন চলবে আপনিই ভাবুন…
লালবিছে এবার হাত-পা নেড়ে এক ডাক্তারবাবুর সামনে…
–আচ্ছা স্যার, এই হাসপাতালে তো আপনারা খুব ভালো কাজ করছিলেন। আমরা লোকের মুখে বা মিডিয়ায় বারবার খবর পাচ্ছিলাম। তারপর হঠাৎ এইভাবে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া… আপনি কী ভাবছেন?
ডাক্তার: তিলতিল করে হাসপাতালটাকে আমরা সাজিয়ে তুলেছিলাম। সরকার নির্ধারিত মানের চেয়ে রেফারেল রেট অনেক কমে এসেছিল। এলাকার মানুষের অন্যতম আশা-ভরসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই হাসপাতাল। অনেক স্পেশালিস্ট ডাক্তার নিয়মিত পরিষেবা দিচ্ছিলেন। ওপিডি অ্যাটেনডেন্স প্রায় হাজার-বারোশো ছুঁয়েছিল। চব্বিশ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি, ল্যাব সার্ভিস, এক্স-রে হচ্ছিল। ডুম্বা মুর্মু, আরাধ্যা, দিয়া-দের নাম আপনারা মিডিয়ায় দেখে থাকবেন। তারপর.. হঠাৎ একদিন শুনলাম হাসপাতাল নাকি জিন্দালদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে! আমাদের মন ভেঙে গেল। চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতিদিন নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার যে তাগিদ তৈরি হচ্ছিল তার ওপর এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! নিজেদের মধ্যে আলোচনাগুলো ‘রহিমের জ্বর ছাড়ছে না, রামের সুগার কমছে না’ থেকে ‘ট্রান্সফার কোথায় হবে’তে গিয়ে দাঁড়াল।
লাল বিছে: আচ্ছা, জিন্দাল গোষ্ঠী এত ডাক্তার কোথায় পেলেন?
ডাক্তার: (খানিকক্ষণ মুচকি হেসে) যেখানে সারা পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তার এবং নার্সিং স্টাফের হাহাকার সেখানে কোনও বিশেষ মন্ত্রবলে সুদূর জঙ্গলমহলে ডাক্তার-নার্স থৈ থৈ করবেন এটা বোধহয় হাসপাতাল কেনাবেচার দালালরাও ভাবতে পারেন না। অগত্যা, অন্য হাসপাতালের পার্মানেন্ট ডাক্তার তুলে এনে খেপ খাটানো (যা বে-আইনি) হচ্ছে। শোনা যায়, এমন কিছু (?) ডাক্তার আছেন যাঁরা বহুবার সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও যোগ্যতামানে আসতে পারেননি। মাথায় রাখবেন সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ডাক্তার বাড়ন্ত। সেখানে বিশেষত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্টারভিউ দিয়েও চাকরি পাবেন না এটা বেশ বিরল। তবে কি তাঁদের ডিগ্রির মধ্যেই কোনও জালিয়াতি আছে? এ প্রশ্নটাও উঠছে। বেশ কিছু ডাক্তারের এমবিবিএস ডিগ্রির পাশের ইউনিভার্সিটির নাম আমরা কোনওদিন শুনিনি। ‘পয়সা দিলে বাড়িতে আসে’ এরকম ডিগ্রিও আছে খানকতক। কয়েকজন দাবি করেছিলেন কোলকাতার নামকরা সরকারি হাসপাতাল থেকে পাশ করেছেন বলে যদিও আমাদের ঘোরতর সংশয় আছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বে-আইনিভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে হাউসস্টাফ ডাক্তার তুলে এনে জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহগুলো আরও বাড়ে যখন দেখি… তিনদিনের জ্বরে টাইফয়েড পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়, একবার জ্বর-তড়কায় মাথার এমআরআই, একইসঙ্গে কফ তোলা আর কফ বসানোর ওষুধ দেওয়া হয়, আর এক্স-রে?? কী বলব… ওনারা পারলে প্রেমে ছ্যাঁকা খেলেও এক্স-রে করে হার্ট দেখতে চান। ভর্তি হচ্ছে মূলত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা পেশেন্টরাই। কারণ জলের মত পরিষ্কার। স্বাস্থ্যসাথীর টাকা যেনতেন প্রকারে হাপিশ করা। শোনা যাচ্ছে, আবোলতাবোল বুঝিয়ে সাধারণ ভাইরাল ফিভার বা হাঁটুর ব্যথাকেও ছ-সাতদিন ভর্তি রেখে খাতাভর্তি ওষুধ কিনতে দেওয়া হচ্ছে। যার বিল প্রায়ই চার-পাঁচ হাজার ছুঁয়ে যায়। সেখানে অসংখ্য অযৌক্তিক ওষুধ, দু-তিনটি করে অবৈজ্ঞানিক ভিটামিন-টনিক। ভর্তি হলেই অজস্র অপ্রয়োজনীয় টেস্ট। অথচ সত্যিকারের ভর্তি করার মত রোগী যাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই তারা সটান রেফার। রেফার সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ। প্রাথমিকভাবে যেহেতু পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে না, সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নোংরা খেলাটা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। এর নাম যদি চিকিৎসা হয় তাহলে আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই। এমনিতেই আউটডোর ফাঁকা, প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৪-৫টি পেশেন্ট। শোনা যায়, ওনারা আবার বেশ কিছু দামী সরকারি যন্ত্রপাতি (এন্ডোস্কোপ ইত্যাদি) উপহার হিসেবে পেয়েছেন। সবই ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’ কেস। তবে কি কিছু হয়নি? হ্যাঁ, হয়েছে তো। নতুন নীল পর্দা বসেছে। এসি বসেছে চারদিকে। খাওয়ার দেওয়ার দিদিমণিদের এখন মাথায় ক্যাপ, গায়ে ইউনিফর্ম। ছোঁকছাকের কমতি নেই। কমেছে শুধু চিকিৎসার দিকটা। দিনে একবেলা রাউন্ড, অর্ধদক্ষ নার্স আর স্বাস্থ্য-ব্যবসা। সব মিলিয়ে শালবনি সুপারস্পেশালিটির অবস্থা এখন রবি ঠাকুরের ‘তোতাকাহিনী’র মতোই। হাসপাতালে উন্নতি হয়েছে মারাত্মক, শুধু নিন্দুকে বলে চিকিৎসাটাই যা ভ্যানিশ!! একে গরীব-গুর্বোদের জায়গা তায় আদিবাসী… তাদের আবার স্বাস্থ্যের অধিকার!!
লালবিছের মাথার পারদ চড়ছিল। এবার এক স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি পাশ থেকে ডাক্তারবাবুর কথা শুনছিলেন। প্রশ্নের আগেই ক্ষোভ উগরে দিলেন…
-আগে ডাক্তারবাবু, নার্সদিদিরা কখনও আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেননি। কোনওদিন এত ছোট করেননি আমাদের। এখন মনে হয় আমরা যেন ওনাদের বাড়ির চাকর!! কথায় কথায় দুর্ব্যবহার লেগেই আছে।
ততক্ষণে লালবিছের কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমছে। মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। এসে বসল পাশের চায়ের দোকানে। কান পাতল পাশে বসা দুই মধ্যবয়সীর কথোপকথনে…
-ইবারে মোদের কী হবে বল দিকিন? উয়ারা বলে নাকি হসপিটালে দেখ্যাইতে গ্যালে কদিন বাদ থেকানু পয়সা লিবে। আউদ্দোরে পাঁচ টাকা। এক্সিরা-ফেক্সিরা, রক্ত এগজামিন করল্যা পয়সা লিবে। না খেয়্যা মরতে হবে দেখিহ্রি। তাও আগে সারাদিন রক্ত এগজামিন হত। মোর ছ্যালাটাকে ভত্তি করছি, বল্যা কী সকাল দশটা না বাজলে রক্ত লিবেনি। রাতে বন্দ হোয়েইছ্যা।”
এসব ছিল মাসখানেক আগের কথা। তখন খাতায় কলমে হাসপাতাল জিন্দালদের হাতে চলে গেলেও সরকারি স্টাফেরা সবাই ছিলেন। মিলেজুলে একটা খিচুড়ি সিস্টেম চলত। এ মাসের শুরুতে সবার অগোচরে সেটাতেও কোপ পড়ে গেল!! সরকারি নার্সিং স্টাফ এবং ডাক্তারদের ট্রান্সফার হয়ে গেল। এসব ছোটখাটো ঘটনা খবরের পাতায় আসে না। আর শালবনি তো আর ঝাঁ চকচকে শহর নয়… এখানকার মানুষ আর তাদের স্বাস্থ্যের অধিকার প্রদীপের তলায় অন্ধকার হয়েই থেকে যায়। আবার শোনা যাচ্ছে, ওনারা বেসরকারি নার্সিং কলেজ খুলবেন। তার জন্য কুমিরছানা দেখানোর মত একটা ‘চালু হাসপাতাল’ দেখানোটা আবশ্যিক।অর্থাৎ, জিন্দালদের নিজস্ব সিমেন্ট কারখানায় কোনও প্ল্যান্ট হাসপাতাল বানাতে হল না, স্বাস্থ্যসাথীর টাকা হাপিশ হল, নার্সিং কলেজ থেকে টাকা উঠে এল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ডাক্তারদের জয়েন্ট প্লাটফর্মের এক প্রতিনিধি দল শালবনি গিয়ে পুরো ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন জিন্দালরা শুধুমাত্র দেখভাল করার দায়িত্ব নিচ্ছে এবং তারা উন্নততর পরিষেবা দেবে।
পুরোটা জানার পর লালবিছে শান্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। না, কোনও চিৎকার নয়, কোনও হৈ-হল্লা নয়… বিষের থলিটা একবার নেড়েচেড়ে দেখে নেয়। বিকেলের আরণ্যক এক্সপ্রেসে বাথরুমের এককোণায় উঠে বসে… মেদিনীপুর… খড়গপুর… পাঁশকুড়া… সাঁতরাগাছি… কোলকাতা যত কাছে আসে তত হৃৎস্পন্দন দ্রুত হতে থাকে লালবিছের। দপদপিয়ে ওঠে বিষথলি। গঙ্গার ধারে নীল-সাদা বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ায়…
হঠাৎ চমকে উঠে পেছন ফেরে লালবিছে। দেখে, সে একা নয়। কখন যেন আরও হাজার হাত, অযুত মুখ তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে!! তাদের সমবেত আওয়াজ ভেসে আসে…
স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিকীকরণ রোধ করুন… স্বাস্থ্য কোনও ভিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য আমার অধিকার… সবার স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই..
বুক চিতিয়ে সামনে এগিয়ে যায় লালবিছে..