সময়পটে সহসা প্রতিচ্ছবি। দৈনন্দিন পথের জীবন। রেলগাড়িতে চোখের আড়ালে থেকে যায় যারা, এখন ক্যামেরা বলবে তেমনই কিছু গল্প। বলবে ভেন্ডর কামরার কথা।
আমি পেশায় স্কুলশিক্ষক ও নেশায় শখের ফটোগ্রাফার। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বাধ্য করে প্রতিদিন পাঁচঘণ্টারও বেশি সময় ট্রেনে কাটাতে। একদিন হঠাতই উঠে পড়েছিলাম ভেন্ডরে। খেটে খাওয়া মানুষ, মূলত ছোট বা খুচরো ব্যবসায়ী— তাদের যাতায়াত এই কামরায়। তারা হট্টগোল করে বড়, ঝগড়াও লেগে যায়, কিন্তু এক অভূতপূর্ব মানসিক নৈকট্য থাকে অক্ষুণ্ণ। বিড়িতে টান দিয়ে তারা সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। বাড়িতে রেখে আসা পরিবারের বাইরে এক ভিন্নতর পরিবার গড়ে ওঠে। বেলা বাড়লে ভেন্ডরে ভিড় কমে, ক্লান্ত শরীর তারা এলিয়ে দেয় সিটে, গামছাই হয়ে যায় বালিশ। হকারেরা মুহূর্তের জন্য বেচাকেনা ভুলে আড্ডায় মশগুল হয়। কখনও কখনও ছদ্মবেশী ঈশ্বর সেই আড্ডায় নেমে আসেন। গল্প বলা হয়, নদীর মতো বয়ে যায় গাথা, আড্ডা চলতে থাকে। এ এক চলমান নাট্য— অন্যতর জীবনপ্রবাহ। আমার কৌতূহলী ক্যামেরা সেই গল্পদের ধরে রাখার প্রয়াস নেয়…
বুবুন চট্টোপাধ্যায় ব্যাসদেবের মহাভারতে আছে, “নৈমিষারণ্যে মহর্ষিরা দৈনন্দিন কর্ম সমাধান করতঃ সকলে সমবেত হইয়া কথা-প্রসঙ্গ সুখে”। অর্থাৎ আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এই আড্ডায় ঋষি লোমহর্ষণের ছেলে সৌতি কোথা থেকে এসে উপস্থিত হলেন এবং যথারীতি তিনিও আড্ডায় জমে গেলেন। সৌতি কোথা থেকে আসছেন, সেখানে কী দেখলেন, কী শুনলেন সব জমিয়ে…
স্বকৃত নোমান শাপলা হোমসের ছাদে বসে ড্রিঙ্ক করছিল মোর্শেদ, কামরুল ও বিপ্লব। তিনজন প্রায় সমবয়সী, বিয়াল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে, এবং শাপলা হোমসের তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। মোর্শেদ প্রাণখোলা মানুষ। রসিক। বসুন্ধরা সিটিতে দুটি দোকান আছে। জয়িতা বস্ত্রালয় ও জয়িতা ফ্যাশন অ্যান্ড কসমেটিকস। নিজে খুব একটা বসে না, লোক রেখে চালায়।…
জিয়া হক --মা, একটা জঙ্গির গল্প বলো। সইদ তার মায়ের চুলগুলো মুখে নিয়ে চিবিয়ে যাচ্ছিল। সইদের বোন রেবেকা দেড়বছুরে। সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। খোলা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে মেঘেরা কীভাবে চাঁদকে ঢেকে দেয়। জুবেদা বলল, বাবা, জঙ্গিদের গল্প শুনতে নেই। ছোট সইদ বলল, কেন মা? --জঙ্গিদের জীবন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত…