হিন্দোল ভট্টাচার্য
পূর্ব প্রকাশিতের পর
কবিতার ভাষার উৎস আসলে কী? এ এক ভীষণ ধাঁধার মতো প্রশ্ন। কারণ এই প্রশ্নের বা এই ভাবনার উত্তর যেমন দেওয়া যায় এক এক করে, তেমন বোঝাও যায়, প্রতিটি উত্তরের ভিতরেই রয়েছে হাজারো সম্ভাবনা। আরও হাজার প্রশ্ন। একদিকে কিছু মানুষ যেমন ভাববেন বা বলবেন, শিল্প বা কবিতার ভাষা তো আকাশ থেকে পড়ে না। তার মানে, নিশ্চয়, কবির কোনও দার্শনিক ভাবনার যুক্তিজাল আছে। আবার কেউ কেউ বলবেন, কবিতার মুহূর্তের কথা। আমার মনে হয়, যুক্তি দিয়ে শিল্পের গোমুখ অনুসন্ধান প্রকৃতপক্ষে এক ইউরোপীয় আদি-আধুনিকতার কাজ। আদি-আধুনিকতা এই জন্যই বললাম, কারণ তা ভিক্টোরিয়ান ইউরোপের যুক্তিবিন্যাস ও বস্তুবাদকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে। যেমন, মার্কসবাদ। মার্কসবাদের ভিত্তি যে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, যে ফিজিক্স, তা নিউটোনিয়ান ডিনামিক্স। কিন্তু সেই ফিজিক্স, ভেঙে গেছে পরবর্তীকালে আসা আপেক্ষিকতাবাদ ও তারও পরের কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসার পরে। ফিজিক্স ক্রমশ সূক্ষ্ম থেকে আরও সূক্ষ্মের দিকে যাত্রা করলেও, আমাদের মনে এই একরৈখিক যুক্তিকাঠামোর জায়গাটি রয়ে গেছে বলেই, আমরা এখনও কার্যকারণ সূত্র খুঁজে চলি। আকস্মিকতা বা অপ্রত্যাশিতকে, আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত হিসেবেই গ্রহণ করাতে আমাদের যথেষ্ট অসুবিধা।
এর কারণ মনে হয় আমাদের দুঃখময় জীবন স্বয়ং। যদি আমরা কখনও ভাবতে বসে যাই, যে প্রকৃতই জীবনের অনিশ্চয়তার একটাই দিক, আর তা হল জীবন দুর্ঘটনাময়। অসংখ্য দুর্ঘটনার সমষ্টি আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত। ঠিক সেভাবে ভাবতে গেলে বাস্তবতা বলেও কিছু নেই, আবার বাস্তবতার কার্যকারণ সূত্র খুঁজেও কোনও উপকার হওয়ার নয়। প্রাচীন ভারতীয় অর্থে বলতে ইচ্ছে হয়, এই সব মায়াগুলিকে দিয়ে বাস্তবতার বিজ্ঞান রচনা করলে বা বাস্তবতার বিজ্ঞানকে বুঝতে চাইলে তা ক্রমশ মায়ার ভিতরে আমাদের দিশেহারা করে দেবে। বরং তার চেয়ে ভাবা ভালো বিস্ময় হল বিস্ময়, অপ্রত্যাশিত হল অপ্রত্যাশিত, আকস্মিক হল আকস্মিক। কিন্তু তখন ভাবতে ইচ্ছে হয়, আমরা কি তবে এতটাই অসহায়, যে কোনওকিছুর বিজ্ঞান-ই আমরা খুঁজে পাচ্ছি না? এ কথা বলারও মানে নেই। কারণ বিজ্ঞান হিসেবে যা খুঁজে পাওয়ার যোগ্য আমরা, সে সব এখনও খুঁজে পাইনি। তবু অনেক কিছুই যে বোঝার চেষ্টা করতে পারছি, সেটিও আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে বিজ্ঞান স্বয়ং। অনিশ্চয়তা ভাবনা তো বিজ্ঞানের নিজস্ব আবিষ্কার। কিন্তু বহুদিন ধরেই আমাদের কাব্যে, সাহিত্যে এই অনিশ্চয়তা ভাবনা নিয়ে কাজ হয়ে চলেছে। মানে, আমরা মনে মনে যা জানি, সেগুলিকে মনে মনেই মানতে পারি না, যদি না মন সেগুলিকে মানার মতো যুক্তি খুঁজে পায়। যেমন, ধরা যাক, আমাদের সভ্যতায় একটি বড় প্রহেলিকা হল মৃত্যু ও পুনর্জন্ম। হার্ড কোর বাস্তবতা এবং বস্তুবাদ আমাদের শেখায় যে লীন হয়ে গেলে তারা তখন তো মৃত। সত্যিই কিছুই থাকে না। কিছুই ছিল না। কিছুই থাকার কথাও নয়। গীতাকে আশ্রয় করা ছাড়া আমাদের গতি নেই। কিন্তু সেই প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকেই আমাদের সাহিত্যের অন্যতম ভাবনার বিষয় মৃত্যু। আদৌ কি মৃত্যু আমাদের নিঃশেষিত করে চলে যায়? আদৌ এই যে আমরা, আমাদের অস্তিত্বের কোনও শুরু বা শেষ নেই? তাহলে আমাদের অস্তিত্বের অর্থ কী? কেন এসেছি? কোথায় চলেছি? কোথায় যাব? আর কেনই বা এত দুঃখ আমাদের? কেন এত ভালোবাসা? কেন এই জীবনকে সামান্য রূপে বুঝতে চাওয়ার জন্যও এত বেশি ছটফট করছি আমরা? সত্যিই কি আমাদের হাতে সময় কম? না কি আমরাও একটি দশার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি? আর আমরা যেমন মনে করতে পারছি না আমাদের শৈশবের অনুভূতিমালার খুঁটিনাটি, তেমনি আমরা মনে করতে পারছি না আমাদের এই অস্তিত্বের আগের দশা। অনুধাবন করতেও পারছি না আগামী কোন সময়ে আমাদের কোন দশা বা অস্তিত্ব আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
জীবন যদি হয় এভাবে দৃশ্য থেকে দৃশ্যের দিকে চলে যাওয়া, তবে তার কোনও আগু পিছু হয়ত নেই। বা, তার আগুপিছু হয়ত একরৈখিক বা একমাত্রিক ভাবে নেই। হয়ত তার সূত্র রয়েছে আবহমান অবচেতনার গভীরে এমন কোনও সময়ের মধ্যে, যাকে, সচেতন মনে হয়ত খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। জীবনানন্দ সেই কবে লিখেছিলেন- আমরা যাইনি মরে আজও, তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়। শুধু দৃশ্যের জন্ম হয়, তা তো নয়, তার সঙ্গে দ্রষ্টার জন্মও হয়। আমরা নিজেরাও কখনও কখনও দৃশ্যের অংশ হয়ে উঠি। এমনকী দৃশ্য হয়েও উঠি। আবার অপেক্ষা করে থাকি সেই দৃশ্যটি ভেঙে গিয়ে আবার নতুন কোনও দৃশ্যের জন্মের জন্য। এই যে অপেক্ষা করা, এর নাম হয়ত প্রেম। উন্মাদনাও হতে পারে। বা, সাধনাও।
কিন্তু ভাবনা দিয়ে তো কবিতা লেখা হয় না, লেখা হয় শব্দ দিয়ে। আবার শুধু সেই শব্দ , শব্দ নয়। অর্থাৎ একটি শব্দ কেবলমাত্র শব্দ নয়, সেই শব্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আবহমান অবচেতনাও। কিন্তু কীভাবে? কীভাবে সেই শব্দটি আমাদের মনের মধ্যে উদয় হয়? কবিতার তো কিছু করার নেই, নীরবতাকেও তাকে শব্দের মধ্যে দিয়ে, ভাষার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতেই হবে। হয়ত ভাষার ব্যবহারের নির্মেদ অনিশ্চয়তার মধ্যেই এই নীরবতা জন্ম নেবে। যেমন এই নীরবতাকে বোঝা যায় সুদূর প্রাচ্যের চিত্রকলার মধ্যে। বোঝা যায় একটি লাইনের সঙ্গে আরেকটি লাইনের মধ্যবর্তী স্পেস-এর মধ্যে। বা, একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের বিবাহের মধ্যেও। যদি যলি, ‘বিপন্ন বিস্ময়’ বা অন্তর্গত রক্তের স্রোত’ বা যদি বলি ‘আকাশের ওপারে আকাশে’ তাহলে হয়ত সেই শূন্যতার নীরবতাকে বলা সম্ভব, তার যাবতীয় সংকটগুলিকে ও বিস্ময়গুলিকে নিয়েই।
ধরুন আপনি কিছুই ভাবছেন না। নিজেকে করে তুলেছেন এক ক্যানভাসের মতো, বা একটি কলমের মতো। ধরুন আপনি বসে আছেন, আর আপনার সামনে দিয়ে হুহু করে বয়ে চলেছে জীবন, আকাশ, সময়। বয়ে চলেছে জন্ম, মৃত্যু। আসছে ভোর, আসছে সন্ধে। আসছে এক ভেজা দুপুর। আপনি শুধুমাত্র অপেক্ষা করছেন। বা ধরুন আপনি একটি ঘাট। আপনার পা ছুঁয়ে সেই কবে থেকে প্রবাহিত হয়ে চলেছে নদী। সেই নদী তো একটি নদী নয়। অসংখ্য নদী। সেই অসংখ্য নদী ঘাট স্পর্শ করে চলে যাচ্ছে মোহানার দিকে। ঘাটটির এই প্রবাহকে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই। সে কোথাও যেতে পারছে না। যাওয়ার উপায় নেই তার। সে, যে আসছে, তার জন্য বরণডালা সাজিয়েও নেই, আবার যে চলে যাচ্ছে, তার জন্য শোক করছেও না। যখন জল তাকে স্পর্শ করছে, তখন সে নিজে হয়ে উঠছে জলের অংশ। আর যখন জল সরে যাচ্ছে, তখন তার কিছুটাও সরে যাচ্ছে বই কী! একজন কবি এভাবেই তার ভাষাকে খুঁজে পান। তিনি তো তাকিয়ে থাকেন। প্রকৃতি এসে তাঁকে স্পর্শ করে যান। প্রকৃতি এসে তাঁকে ছুঁয়ে চি্রকালের জন্য হারিয়ে যান অনন্তকালের দিকে। শুধু কি প্রকৃতি? সময়ও তো একই কাজ করে। তবে? তিনি তাকিয়ে থাকেন। তাঁর চোখের সামনে গড়ে ওঠে দৃশ্য। সেই দৃশ্যকে আত্মীকরণ করেন তিনি। সেই দৃশ্য তাঁর মনে জন্ম দেয় বোধি। তিনি মুহূর্তে বোধি প্রাপ্ত হন। কিন্তু বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বসে থাকেন না। বোধি সহ তিনি আবার দেখেন দৃশ্যকে। তিনি লেখেন সেই দৃশ্য। জন্ম নেয় চিত্রকল্প। জন্ম নেয় কাব্যভাষা। চিত্রকল্পকে যে দর্শন হয়ে উঠতে হয়, তা না হলে চিত্রকল্প চিত্র হয়ে থেকে যায়, ভাষা আর হয়ে ওঠে না। সেই যে বোধিপ্রাপ্ত হলেন কবি, তিনি কি সেই বোধি নিয়েই মুক্তির অপেক্ষায় থাকেন? না সম্ভবত। কারণ, তাহলে প্রত্যেক কবি কোনও একটি মহৎ কবিতা লেখার জন্যই শুধু অপেক্ষা করতেন। একটিই, আর তা লেখা হয়ে গেলে, নামিয়ে রাখতেন কলম। এর অর্থ, এই বোধি, তাঁকে এমন এক সাধনার মধ্যে নিয়ে গেল, যে তিনি কান পেতে অপেক্ষা করতে লাগলেন বোধিপ্রাপ্তির এই জেন মুহূর্তের জন্য। কিন্তু সেই কবির ধ্যান কি অনন্তের সাধনায় নীরবতার মাধ্যমে? তিনি কি সেই ভক্তের মতো, যিনি ধ্যান করছেন এই কথা জেনেই, যে ধ্যান-ই আসল, সাধনাই আসল, পূজাই আসল, প্রাপ্তি নয়। সেই বোধি-র মুহূর্ত তাঁর কাছে তো কোনও নিয়ম মেনে আসে না যে তিনি জানবেন, কিছু বিশেষ পদ্ধতির সাধনা করলে, বোধিপ্রাপ্তির দিকে তিনি অবশ্যই এগিয়ে যাবেন। হয়ত তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করলেন, কিন্তু সেই বোধি পেলেন না। আবার বোধি হয়ত পেলেন, তার সঙ্গে সাধনার কোনও সম্পর্ক থাকল না। অর্থাৎ, বোধি এল তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত ভাবে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হল তখন, যখন অজস্র উপকরণের মধ্যে, প্রাচুর্যের মধ্যে, দুঃখের মধ্যে, যন্ত্রণার মধ্যে, কবি, বুঝতে পারলেন, এই সামান্য অপ্রত্যাশিত ঘটনাটিই বোধি, জেন। এই জেন বা বোধিকে অনুভব করার একটি ভাষা যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে, সেই ভাষাকে অনুবাদ করারও।
এইবার শুরু হল, সেই সাধনাকে অর্জন করার সাধনা। তবে সেই সাধনা একজন ভাবুক সাধকের ক্ষেত্রে একরকম হয়, আর একজন কবির ক্ষেত্রে আরেকরকম। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এখানেই কবির ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক। কারণ তাঁকে ভাষায় সাধনা করতে হয়। ভাষা তাঁর কাছে সেই মাধ্যম যা অবলম্বন করে, তিনি যোগসাধন করেন। এই যোগসাধন না হলে, তিনি কখনওই কথা খুঁজেই পাবেন না। পাবেন না সেই বোধি এবং ভাষার সম্পর্ককে বুঝতে। অনেকের মতে কবিতা শব্দ দিয়ে লিখিত হয়, ভাবনা সেখানে সেই শব্দের জনক। শব্দ ভাবনার বাহক। আবার অনেকের মতে ভাবনা শব্দের বাহক। এইবার এই জায়গায় এসে সত্যিই গোলমেলে লাগে। কারণ ভাবনা দিয়ে বা আইডিয়া দিয়ে সত্যিই মহৎ কবিতা লেখা যায় না। কবিতা সত্যিই আকাশ থেকে পড়ে। কবিতা এমন এক অপ্রত্যাশিতের আগমন, যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখাই হল সাধনা। ভাষা নিয়ে খুব সচেতন প্রয়াস কোনও কবি করতেই পারেন, কিন্তু সেই সচেতন প্রয়াস মনে হয় কবিকে, আরও বেশি শব্দনিষ্ঠ করে তোলে। এই শব্দনিষ্ঠ হওয়া কিন্তু কাব্যনিষ্ঠ হওয়া নয় বলেই আমার মনে হয়। আসল ভাঙা তো কবির নিজের জগৎকে দেখার মধ্যে হয়। তার পর আসে, সে কেমন ভাবে সেই দেখাকে নির্মেদ করে শাঁসটুকু লিখে রাখছে তার কবিতায়।
এক্ষেত্রে একজন অগ্রজ কবি আমাকে বলেছিলেন বিশেষ একপ্রকার সিগনেচার ভাষা তৈরি না করতে পারলে কবি হিসেবে কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। আমার কাছে, বিশেষ একপ্রকার ভাষাটি হল, ব্যক্তিত্ব। কবির ব্যক্তিত্ব, যাকে আমরা পারসোনা বলতে পারি। সেই পারসোনা তিনি অর্জন করেন লিখতে লিখতেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার বিশেষ একটি ভাবনাও আছে। ভাবনাটি হল, একজন কবি সেই বিশেষ ভাষাটি ধরে রাখতে যদি সারাজীবন একরকম লিখে যান এবং নিজেকেই অনুরকরণ করতে শুরু করেন, তাহলে সেই বিশেষ ভাষাটি টিকলেও ব্যক্তিত্বটি টেকে না। তো, ব্যক্তিত্ববিহীন সেই ভাষাটিই তখন পড়ে থাকে, নদীহীন চড়ার মতো।
তাহলে এত সব কথা আলোচনা করার অর্থ কী, কবিতার ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ে? কবি হলেন এক অন্ধ পর্যটকের মতো, যিনি জানেন তিনি অনুভব করছেন, কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন না ঈশ্বরকে। কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে দেখছেন। এই অনুভূতিমালাকে তাঁকে অনুবাদ করতে হবে। করতেই হবে। কিন্তু যতক্ষণ না সে আসছে, সে তো আসছে না। অসম্ভব কুশলী বা দক্ষ এক ভাস্কর যদি পাথরের মধ্যে মূর্তিটিকে দেখতে না পান, তাহলে তিনি কীভাবে সেই মূর্তিকে পাথরের মধ্যে থেকে বের করে আনবেন? তাঁর কাজ তো, অপ্রয়োজনীয় পাথরগুলিকে স্রেফ আলাদা করে দেওয়া। এই কাজটিই করে ভাষার দক্ষতা। আবার এই কাজটিকে গভীর ভাবে জানার জন্যই রঁদ্যা যেমন রিলকেকে বলেছিলেন গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ( যার ফলে জন্ম নিয়েছিল প্যান্থার নামক অসামান্য কবিতা), সেই কাজটি হল ভাষাকে তৈরি করার সাধনা।
সুতরাং ভাষা বা ব্যক্তিত্বকে তৈরি করা কবির এক প্রাথমিক কাজ, যার পরে ঘটে ম্যাজিক। অপ্রত্যাশিত কিছু আসে আর সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে চলে যায়। তখন কবিতার জন্ম হয়। তখন রুদ্রবীণা বাজে।
আমরা শুধু তাকে শোনার কান আর লেখার কলমটিকে প্রস্তুত করে রাখতে পারি মাত্র। এছাড়া ভাষার আর কোনও কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না। তর্ক হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, কবিতা, অপ্রত্যাশিতর শিল্পই হয়ে থাকবে।
কিন্তু আমাদের অসঙ্গতির জায়গাটি হল, আমরা তাকেও কার্যকারণসূত্রে বাঁধতে চাই।
এও একধরনের ধর্ম।
যুক্তির ধর্ম। চূড়ান্ত অসঙ্গতি।
(চলবে)