শ্রীরূপা মান্না
খবরের কাগজে গত কয়েক বছর ধরে ‘লিঞ্চিং’, ‘গণপ্রহার’ কিংবা ‘জনরোষে মৃত্যু’ জাতীয় শব্দগুলো এতটাই বেশি আকারে উঠে এসেছে যে প্রাথমিক ভয়-আতঙ্কের পরিবেশ কাটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছেও যেন এটা শুধু একটা বা কয়েকটা ঘটনা আকারেই উপস্থিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষের সংসদীয় গণতন্ত্রের অজস্র ছিদ্র রয়েছে, সে নিয়ে সমালোচনাও থাকবে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে আপস করার কথা ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে উগ্র হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের রসায়নে বিশ্বাসী সঙ্ঘ পরিবার ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যেভাবে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নামিয়ে আনছে, তা অভূতপূর্ব। ফ্যাসিবাদকে এক কথায় কর্পোরেটবাদও বলা চলে। তাই বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আর এই ফ্যাসিবাদী আবহ যেভাবে দেশের আপামর সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বোধকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে, তা সত্যিই ভাবনার। কীভাবে তৈরি হল এই পরিস্থিতি?
ইতিহাস কী বলে
১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিপতি শ্রেণি অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছিল, বিশেষত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্বে যখন একটি নয়া উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছিল, সেই সময় একটি এলেমদার বুর্জোয়া দলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে যারা উদারনৈতিক শাসন চালাতে সক্ষম। বিজেপি এই শূন্যস্থান পূরণে সফল হয়। ভারতে ১৯৯০-র দশকে বিশেষত নয়া উদারনীতি গ্রহণ করার পর থেকেই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলির প্রতি শাসক শ্রেণির মনোভাব পাল্টাতে থাকে। এর পাশাপাশি বিগত নব্বই বছরে কোনও সামাজিক প্রকাশ ব্যতিরেকে আরএসএস নিজেদের সংগঠনকে পেশাদার ও পরিকল্পিতভাবে বানিয়ে তুলেছিল। ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণির অবস্থান, ক্ষমতা, শোষণ-পদ্ধতি ও কৌশলের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে একগুচ্ছ নতুন পন্থা গ্রহণ করেছিল। ২০১৪ সালে সুপরিকল্পিতভাবে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একযোগে শুরু হয় কর্পোরেট শোষণ ও ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন। ফ্যাসিবাদের জনক মুসোলিনির ভাষায় “ফ্যাসিবাদকে আরও ভালোভাবে বলতে গেলে কর্পোরেটবাদ বলা উচিৎ কারণ এটা রাষ্ট্র ও কর্পোরেট শক্তির সংমিশ্রণ।” আরএসএস ঠিক এই কারণেই একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ফ্যাসিবাদী সংগঠন। আরএসএস-এর উগ্র জাতীয়তাবাদবোধ এবং ধর্মীয় মেরুকরণের নীতি সেই একচ্ছত্র আধিপত্যকে আরও জোরের সঙ্গে কায়েম করতে প্রভূত সাহায্য করেছে।
খবরের পৃষ্ঠায়
এরই পরিণামে ভারতে বাড়ছে একের পর এক দাঙ্গা, গণ-পিটুনি, ধর্মীয় উন্মাদনা। মাত্র কয়েক বছরের চিত্র ও পরিসংখ্যান আমাদের হতাশ করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের দাদরির কাছে বাহান্ন বছর বয়সী মহম্মদ আখলাককে গরুর মাংস নিয়ে যাওয়ার সন্দেহে স্বঘোষিত গো-রক্ষকরা পিটিয়ে মেরেছিল, সেই ছিল নৃশংসতার শুরু। ২০১৬ সালে ঝাড়খন্ডে দুজন মুসলিম লোককে পিটিয়ে মারার ঘটনা, কিংবা শুধু ‘মুসলিম’ পরিচয়টুকুর জন্য বছর পনেরোর জুনেইদকে ঈদের আগের দিন পিটিয়ে মেরে ফেলার মত ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই। প্রতিটি ঘটনা নৃশংসতায়, ঘৃণার মাত্রায় ছাড়িয়ে গেছে যেন একে অপরকে। সবসময় ধর্মের নামেই হয়েছে এমনটাই নয়। ২০১৬-তেই গুজরাটে দলিত পরিবারের সাতজনের ওপর আক্রমণের ঘটনা এখনও তাজা। এমনকি বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০১৭-র জুনে পশ্চিমবঙ্গে তিনজন মুসলিম যুবক গণপ্রহারে মারা গেছে। এই বছরের গোড়ার দিকে গণপ্রহারে মারা গেল তবরেজ আনসারি। সেই করুণ মুখের ছবি কোনওদিন ভোলা যায় না। কিছুদিন আগেই বিহারে একটি লিঞ্চিং-এর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়, যেখানে যারা খুন করছে তারা মারতে মারতে ছেলেটিকে দিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ উচ্চারণে বাধ্য করছে। পশ্চিমবঙ্গে এই চিত্র বিরল না, কিছুমাস আগে শিয়ালদা থেকে ক্যানিং ট্রেনে উঠে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী লোকজন একজনকে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলিয়েছে, সেই ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। ঘটনার সংখ্যা অনেক, বীভৎসতা তার চেয়েও বেশি। গণমাধ্যমের পরিসংখ্যানে বলা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৬৩ জন খুন হয়েছেন, ১২৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনাগুলোর ৯৭ শতাংশই ঘটেছে বিজেপির ক্ষমতায় আসার পরে এবং ৮৬ শতাংশ ঘটনা শুধু ‘গো-রক্ষা’র নামে ঘটানো হয়েছে। কোনও সরকারি পরিসংখ্যান নেই তবে কয়েকটি গণমাধ্যম রয়েছে যেগুলি এই ঘটনাগুলিকে নথিভূক্ত করার চেষ্টা করেছে। ইন্ডিয়াস্পেন্ডের মতে, ২০১৫ সাল থেকে ভারতে ১১৭টি গো-রক্ষাজনিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কুইন্ট অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে সারা ভারতে লিঞ্চিংয়ে ৮৮ জন নিহত হয়েছেন।
এবার একটু ঘটনাগুলোতে চোখ বোলালেই দেখা যাবে এই মৃতদের প্রত্যেকেই কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে নিম্নবিত্ত শ্রেণির এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম অথবা হিন্দুদের নিম্নবর্ণের মানুষ। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে খুব সহজে যেটা দেখা যায়, তা হল যে অংশটি বারবার সংখ্যাগুরু ধর্মের উচ্চবর্ণের মানুষের রোষে পড়ছে তারা হয় সংখ্যালঘু ধর্মের নয় নিম্নবর্ণ। আবার লিঞ্চিং-এর কারণ হিসেবে যা যা উঠে এসেছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গো-রক্ষা একটি চাতুরির উদাহরণ। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের গো-রক্ষক চক্রের রাজত্বের অর্থ এই অঞ্চলগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ গবাদি পশু অর্থনীতির পতন। যে কৃষকরা আগে তাদের বন্ধ্যা গাভী এবং উৎপাদনহীন ষাঁড় বিক্রি করত তাদের এখন কোনও ক্রেতা নেই। এর ফলস্বরূপ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে প্রচুর পশুপালনের বিচিত্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষক তার গবাদিপশু বিক্রি করতে না পারায় আয়ের ক্ষয়ক্ষতি কেবলই নয়, বিক্রি না হওয়া এই প্রাণিগুলিও এখন কৃষকের ফসল খাচ্ছে। ছেড়ে রাখা পশুদের কারণে শহরাঞ্চলের রাস্তায় যানবাহন দুর্ঘটনাও বেড়ে গিয়েছে। এসব বিচিত্র সমস্যা বেড়েছে যে এমনকি আহমেদাবাদে, যে সমস্ত কৃষকরা গবাদি পশু ছেড়ে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। এভাবেই সরাসরি এই গো-রক্ষার নামে কৃষিজ অর্থনীতি ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে দাঁড়াচ্ছে। আসলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশের কম নেমে গেছে যে সময়ে, প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি প্রাইভেট কোম্পানির হাতে বিক্রীত, বেকারত্বের পরিমাণ সর্বোচ্চ, সেই ধুঁকতে থাকা অর্থনৈতিক অবস্থায় ধর্মীয় শ্লাঘা একমাত্র উপকরণ যা ডিফ্লেক্টেড সাবজেক্টিভিটির জন্ম দেয়। সেটাকেই তুরুপের তাস করে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তানকে শত্রু বানানো যায়, দেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষের ওপর নিপীড়ন চালানো যায়, নিম্নবর্ণ– নিম্ন শ্রেণির ওপর অত্যাচার করা যায়। তাই আরএসএস-এর রাজনীতির ভিত্তি হিসেবেও উঠে আসে গো-রক্ষা, লাভ জিহাদ, কিংবা রামমন্দির বানানোর ধারণা।
প্রতিবাদের স্বর ও রাষ্ট্রের পদক্ষেপ
দিনের পর দিন এই লিঞ্চিং-এর ঘটনাগুলি নিয়ে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মধ্যে। কিন্তু এতই সুচতুর পরিকল্পনার সঙ্গে সদলবলে ঘটনাগুলিকে ঘটানো হয় এবং মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলি থেকে দূরে রাখা হয় যে না ব্যাপক অংশের মানুষের কাছে খবর পৌঁছায়, না সংগঠিত প্রতিবাদ গড়ে ওঠার রাস্তা থাকে। প্রতিবাদ যে হয় না তা নয়, কিন্তু ভয়ের যে পরিবেশ তৈরি করে রাখা হচ্ছে, তাকে ছাপিয়ে ওঠার মত কণ্ঠস্বর তৈরি হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ, রোমিলা থাপার, অভিনেতা নাসিরুদ্দিন, অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা অপর্ণা সেন, মণিরত্নম, এ গোপালকৃষ্ণন, লেখক অমিত চৌধুরী, পরিচালক শ্যাম বেনেগাল প্রমুখ সহ কালচারাল কমিটির ১৮৬ জন মিলে এ বছরই জুলাই মাসের ২৪ তারিখ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি খোলা চিঠি লেখেন যাতে এই লিঞ্চিং বা গণপিটুনিতে মেরে ফেলার ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন তাঁরা। এই ঘটনাগুলির উল্টোদিকে সরকার যাতে সচেতন পরিবেশ তৈরি করে এবং উপযুক্ত বিচার যেন পায় মৃতদের পরিবার, এই ছিল চাহিদা। ধর্মের নামে একের পর এক লিঞ্চিং-এর ঘটনা কেন ঘটছে, তার সদুত্তর চান তাঁরা। বিশেষ করে হিন্দুত্বের নামে একের পর এক আক্রমণ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, জাতীয় সংহতি আজ বিপন্ন এই বক্তব্যও তাঁরা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অসহিষ্ণুতার রাজনীতি এবং হিন্দুত্বের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের এই পদক্ষেপ ছিল খুবই কাম্য।
কিন্তু এই ঘটনার পরেই দ্রুত পটপরিবর্তন হয় রাজনীতির। স্বভাবতই এই প্রশ্নের মুখে পড়তে চায়নি বিজেপি বা আরএসএস। বিভিন্নভাবে হেনস্থার মুখে পড়েন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমিরেট প্রফেসর হিসেবে আছেন রোমিলা থাপার। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য কারিকুলাম ভিটা নতুন করে জমা দিতে বলেন। কর্তৃপক্ষের এরকম সুপরিকল্পিতভাবে প্রফেসর থাপারকে অপদস্থ করা, অসম্মান করার বিরুদ্ধে যদিও ছাত্রছাত্রী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ সরব হয়েছিলেন। নাসিরুদ্দিন বা অন্যান্য অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের আরও কদর্য আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম থেকে আরম্ভ করে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা সমস্ত কিছুকেই অতিক্রম করতে হয়েছে এঁদের প্রত্যেককে। সম্প্রতি ৪ঠা অক্টোবর স্থানীয় আদালতের নির্দেশে বিহারের মুজাফফরপুরের একটি থানায় এই বুদ্ধিজীবীদের ঊনপঞ্চাশ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং শান্তিলঙ্ঘনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। সদর থানার স্টেশন হাউস অফিসার মিথিলেশ কুমার ঝা জানিয়েছেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের নির্দেশে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে আইনজীবী এসকে ওঝা একটি আবেদন করেছিলেন। এই ঘটনার পর ফের সমাজের একটা বড় অংশ নড়াচড়ার মধ্যে দিয়ে যায়। গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সওয়াল করলেই যদি রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার চক্ষুশূল হতে হয় বা দেশদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় নিতে হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? আর দেশের সবচেয়ে উচ্চকোটির মানুষদের যদি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দেবার এহেন উপায় থাকে তাহলে দেশের আপামর জনসাধারণ, নিম্নবর্ণ ও শ্রেণির মানুষের আওয়াজ শোনানোর মত কোনও পরিসর কি আদৌ অবশিষ্ট রয়েছে এই দেশে, সেটাই তো প্রশ্নের মুখে। আদুর গোপালকৃষ্ণন সরকারের এই পদক্ষেপটিকে “অবিশ্বাস্য” বলে অভিহিত করেছেন। শুক্রবার ইসলামিক বিশ্বকোষ প্রকাশের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই চিঠিটি এমন দায়িত্ববান নাগরিকদের দ্বারা লিখিত হয়েছিল যারা বহুত্বের মতামতের জায়গার সঙ্গে দেশকে একটি গণতন্ত্রের পরিসর হিসাবে কল্পনা করেছিল… তাঁরা ক্ষমতায় থাকা সরকারের সঙ্গে একমত নন বলেই তাঁদের দেশবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। আমরা এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশের অংশ এবং প্রত্যেক নাগরিকের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা লোকদের কাছে লেখার অধিকার রয়েছে।” সাম্প্রতিকতম খবর অনুযায়ী এই সিডিশন চার্জ বাতিল করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। কিন্তু এই সম্পূর্ণ ঘটনা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে যা দেখায় তা হল, দেশের গণতান্ত্রিক পরিসরের সঙ্কুচিত অবস্থা। বস্তুত প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখা যদি দেশদ্রোহিতা হয় তাহলে এই রাষ্ট্র পারে যে কোনও মানুষের অধিকারের দাবিকে নস্যাৎ করে দিতে।
শেষের কথা
পুঁজিবাদ, উগ্র হিন্দুত্ববাদ বা জাতীয়তাবাদ আসলে এক-একটি শোষণকাঠামো। কৌশলে, দমন-পীড়ন নীতির সাহায্যে কখনও বা পারস্পরিক আঁতাত তৈরি করে শোষণ প্রক্রিয়াটি আরও জোরদার করা হয়। এই আঁতাত দৃঢ় করার লক্ষ্যে এবং শোষণের মূল উদ্দেশ্যটি চরিতার্থ করার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদ সময়বিশেষে তার কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসে তুলনামূলক সংবেদনশীল অন্য পন্থা অবলম্বন করলেও তার মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির লক্ষ্য থেকে কখনই বিচ্যুত হয় না। পুঁজিবাদ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের আঁতাতের ক্ষেত্রটিতে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিত্তের মালিকানার কারণেই পুঁজিবাদ সুবিধাজনক অবস্থানে এবং হিন্দুত্ববাদ অপেক্ষাকৃত দুর্বলতর অবস্থানে অবস্থান করছে। বলা বাহুল্য, পুঁজিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উল্কার গতিতে উত্থান সম্ভব হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই আঁতাত থেকে প্রাথমিকভাবে অধিক লাভবান হয় পুঁজিপতি শ্রেণি। পুঁজিপতি শ্রেণি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের এই অলিখিত চুক্তির পরিসরে এই দুই শক্তিরই ক্রমক্ষমতায়ন ঘটছে ও ক্ষমতার আন্তঃসম্পর্কের সমীকরণটি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। আর এর উল্টোদিকে সাধারণ মানুষ পড়ছে ভয়ানক অর্থনৈতিক শোষণ বঞ্চনার মুখে। তাই সাধারণের মধ্যে শ্রেণি রাজনীতির অক্ষই পারে এই আঁতাত ভেঙে নতুন কোনও ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।